Friday 31 December 2010

সরকারকে শফিউল আলম প্রধান : হিন্দুস্থানি এজেন্ডা বাস্তবায়নে জাতির আর সর্বনাশ করবেন না

স্টাফ রিপোর্টার

‘শহীদ জিয়া বাংলাদেশী নন, তিনি বাংলায় কথাও বলতে পারতেন না’—আওয়ামী লীগ সরকারের জনৈক মন্ত্রীর এ ধরনের মিথ্যাচারের কঠোর নিন্দা করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, তাদের জন্ম ও সাকিন ঠিকানা কোথায়? কারা দিল্লিতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরে, দেশবাসী তা জানে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক, সেক্টর কমান্ডার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অপবাদ দিলে বাংলাদেশের জন্মই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
শফিউল আলম প্রধান বলেন, পাকিস্তানের নিরাপত্তা হেফাজতে কারা ছিলেন, যুদ্ধচলাকালীন খান সেনাদের রেশন ভাতায় ঢাকায় কারা বিলাসবহুল ও নিরাপদ জীবনযাপন করেছেন? এই প্রশ্নও জনগণ উত্থাপন করতে পারে। তিনি কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গিতে আওয়ামী নেতাদের সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান কখনোই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অথবা শেখ হাসিনা সম্পর্কে কটূক্তি করেননি। হিন্দুস্থানি এজেন্ডা বাস্তবায়নে আল্লাহর ওয়াস্তে জাতির আর সর্বনাশ না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শফিউল আলম প্রধান গতকাল দলীয় কার্যালয়ে বিগত বছরের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সমীক্ষা উপলক্ষে জাগপা, নগর জাগপা ও যুব জাগপার যৌথ প্রতিনিধি সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমানের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, এ কে আনোয়ার হোসেন, দফতর সম্পাদক আবদুস সালাম চৌধুরী, নগর জাগপা সভাপতি আসাদুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ সানু, বেলায়েত হোসেন মোড়ল, ইনছান আলম আক্কাস, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

Wednesday 29 December 2010

পেঁয়াজ ও তেলের বাজারে আগুন



অর্থনৈতিক রিপোর্টার

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) বাজারদর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেলের তথ্যমতে গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। গত সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রীয় কৃষি সমবায় সংস্থা নাফেডকে পেঁয়াজ রফতানি ছাড়পত্র দিতে নিষেধ করেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে সয়াবিনের দাম মিলগেটে ৮৩ টাকা ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। গতকাল তা বাড়িয়ে ৮৮ টাকা করা হয়। নতুন দাম অনুযায়ী ঢাকায় লুজ সয়াবিন প্রতি লিটার খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকা কেজি। টিসিবি জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। টিসিবির মতে, এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। গতকালও রাজধানীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে টিসিবি জানায়।
ভোজ্যতেলের উত্পাদন, বিপণন ও বাজার মূল্য নিয়ে ভোজ্যতেল মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল মতবিনিময় সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সচিব গোলাম হোসেন। সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ, অতিরিক্ত সচিব এটিএম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, প্রধান আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রক এমএ সবুর, টিসিবি’র চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা, সিটি গ্রুপের কর্ণধার মো. ফজলুর রহমান, এসএ গ্রুপের সাহাবুদ্দিন আলম, টি.কে গ্রুপের তারিক আহমেদ, নূরজাহান গ্রুপের জহির আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বর্ধিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় মিলগেটে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ৮৮ টাকা, যা আগে নির্ধারিত ছিল ৮৩ টাকা। চট্টগ্রামে মিলগেটে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাম অয়েল ঢাকায় মিলগেটে প্রতি লিটার ৮৪ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৮৬ টাকা এবং চট্টগ্রামে মিলগেটে প্রতিলিটার ৮৩ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৫ দিন পর আবারও তেলের দাম পুনর্নির্ধারিত হবে। এ পনের দিনের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দরেই ভোজ্যতেল বিক্রি হবে। তিনি দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩২০ ডলারে। সে হিসাবে প্রতি লিটারের দাম দাঁড়ায় ১২৪ টাকা।
চট্টগ্রামে পেঁয়াজ, চাল ও তেলের বাজারে আগুন : আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দর নগরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। পেঁয়াজ, চাল ও তেলের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা থেকে এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে চাল এবং তেলের দাম প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এক-দু’টাকা করে বাড়ছে। বাজারে দেশি চালের সঙ্কট চলছে। ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আতপ চাল দিয়ে এই সঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া মাছ, মাংস, তরিতরকারি ও শাক-সবজির বাজারও বেশ চড়া।
১৫/২০ দিন আগেও চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকা। গত দু’তিন দিন থেকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার একটি বিরাট অংশ মেটানো হয় ভারত থেকে আনা পেঁয়াজের মাধ্যমে। কিন্তু চলতি মৌসুমে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় সেখানেই দাম এখন আকাশচুম্বী। নিজেদের চাহিদা মেটাতে ভারত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আগে ভারত প্রতি টন পেঁয়াজ ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলারে রফতানি করত। এখন তাদের রফতানি মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ন্যূনতম ১ হাজার ২০০ ডলার। এ কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
অপর দিকে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলেও তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তাই দাম বাড়ছে হু হু করে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১১০ থেকে ১১৫ এবং খোলা ১০০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল

Friday 17 December 2010

সাকা চৌধুরী গ্রেফতার : নির্মম নির্যাতন : পাঁচ দিনের রিমান্ড



স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান ও দেশের আলোচিত রাজনীতিক সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপিকে গ্রেফতার করে পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যাক র্যাব ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোররাতে রাজধানীর বনানী এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আটকের সময় ও পরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় এবং ডিবি অফিসে তাকে দফায় দফায় নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে সাকা চৌধুরী আদালতে জানিয়েছেন। বিবস্ত্র করে বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে তার আইনজীবী জানান। নির্যাতনে তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠলে দ্রুত তাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্সা দেয়া হয়। আদালতে হাজির করার সময়ও তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। মুখ এবং হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখমের চিহ্ন দেখা যায়। তার পরনের জামা-প্যান্টেও রক্তের দাগ লেগেছিল। আদালতে নেয়ার সময় তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। পুলিশের কাঁধে ভর করে তাকে আদালতে হাজির করানো হয়।
বুধবার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের আবেদন করা হয়। সে আবেদনের শুনানি আগামী রোববার হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই তাকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতার দেখানো হলো ২৭ জুন বিএনপির ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজারে গাড়ি পোড়ানো মামলায়। যদিও গ্রেফতারের পর গতকাল ভোরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায়ই গ্রেফতার করা হয়েছে। এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একই কথা বলেছেন।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। নিজ এলাকা চট্টগ্রামে রোববার অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় এবং সেখান থেকে সংসদ সদস্য শাম্মি আক্তারসহ কয়েকজনকে আটক করে।
গ্রেফতারের পর ক্যান্টনমেন্ট থানা ও পিজি হাসপাতালের পর দুপুর পর্যন্ত তাকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে রাখা হয়। দুপুরের পর কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে পাঠিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায়। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আত্মীয়-স্বজনরা জানান, গতকাল ক্যান্টনমেন্ট থানা থেকে পিজি হাসপাতালে আনার সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাকে-মুখে ও গালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার শার্টে ও প্যান্টে রক্তের ছোপ লেগেছিল। শার্টের সামনের দিক দিয়ে ছেঁড়া ছিল। পরে তাকে পিজি হাসপাতাল থেকে হুইল চেয়ারে করে পুলিশের গাড়িতে তুলে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। দুপুরে দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে আদালতে বিচারকের এজলাসে নেয়া হয়। এ সময় তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। নাকে রক্ত লেগেছিল। আত্মীয়-স্বজনরা জানান, ডিবি কার্যালয়ে তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি।
আদালতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বক্তব্যের অনুমতি চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট ২ মিনিট সময় দেন। এ সময় গুরুতর অসুস্থ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আটকের পর আমাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের আঘাতের চিহ্ন ও রক্তের দাগ তিনি আদালতকে দেখান। রক্তাক্ত একটি রুমালও বের করে দেখান। বিচারকের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার কাছে আমি আর কী বিচার চাইব। এর বিচার আমি মহান আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলাম। আদালতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মানুষ ভালোবাসে বলেই বারবার তারা আমাকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেন, যদি শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাকে এ নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হতো না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো জানেন না আমার ওপর কী ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭৮ সালে মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর জাতীয় পার্টির আমলে সব কয়টি নির্বাচনে অংশ নেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। পরে এনডিপি গঠন করে চেয়ারম্যান হন। এনডিপি থেকে নির্বাচন করে ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপত্ভাবে অংশ নেন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বহু বৈঠকে উপস্থিত থেকে তখনকার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বৈঠকও হয়েছিল। একপর্যায়ে সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগও করেন আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়ে। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত জোট সরকারের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। গত বছর বিএনপি স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠিত হলে তিনি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য হন।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জাতীয় সংসদে এবং বাইরে বিভিন্ন সময় বক্তব্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে তার বোন হিসেবে সম্বোধন করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তাদের পারিবারিক সম্পর্কের কথাও বলেছেন বিভিন্ন সময়। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে গেলে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন বলেও বিভিন্ন সময় উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এক সাক্ষাত্কারে জানান, তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর হাত ধরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
যেভাবে গ্রেফতার : গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় র্যাবের গোয়েন্দা উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে র্যাব ও পুলিশের একটি যৌথবাহিনী বনানীর একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। বনানী ৮ নম্বর রোডের ২৫ নম্বরে তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার কক্ষে ছিলেন তিনি। ওই বাড়ির মালিক সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এক বন্ধু। গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হয়ে রাত ৩টার দিকে র্যাব, ডিবি, গুলশান থানা পুলিশসহ কয়েকশ’ পুলিশ ঘিরে রাখে। পরে সাদা পোশাকধারী র্যাব সদস্যরা দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে তাকে আটক করে নিচে নিয়ে আসে। অভিযানের সময় ওই বাড়ির প্রতিটি তলায় র্যাব ও পুলিশ অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় বাড়ির বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ সময় কাউকে বাসার বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি। এরপর তাকে কঠোর নিরাপত্তায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতনে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। সালাহউদ্দিন কাদের স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, দু’তিনদিন ধরে তার স্বামী বাসায় থাকেন না। মঙ্গলবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালানোর পর থেকেই তিনি অন্য স্থানে রাতযাপন করতেন। তবে বুধবার রাত ১টায় স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তবে তাদের ফোন গোয়েন্দা মনিটরিংয়ে থাকায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তিনি প্রশ্ন করেননি কোথায় রাতযাপন করছেন। তিনিও এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, ভোররাতে ফজরের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় তার মোবাইলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, আপনার স্বামী গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেননি। পরে স্বামীর মোবাইলে ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের স্ক্রলে গ্রেফতারের খবর দেখতে পান। খবর নিয়ে জানতে পারেন বনানীতে এক বন্ধুর বাসা থেকে র্যাব-গোয়েন্দারা তাকে গ্রেফতার করেছে। তবে কার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিশ্চিত নয় পরিবারের সদস্যরাও।
নির্যাতনের অভিযোগ : সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল ডিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী। ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, গ্রেফতারের পর তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এ নির্যাতনের চিহ্ন ঢাকতেই রাতে তার স্বামীকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়েছিল। ট্রানজিট ও সরকারের বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে তার মতামত ছিল সুস্পষ্ট। তাই সরকার ভীত হয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফাইয়াদ কাদের চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে বসে থেকেও তার বাবার সঙ্গে তিনি ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও দেখা করতে পারেনি। তিনি বলেন, তার বাবাকে একটি হুইল চেয়ারে করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তার বাবার শার্টের কলার ছেঁড়া ও রক্তের দাগও চোখে পড়েছে। ওই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল তার বাবার শরীরের বিভিন্ন অংশেও আঘাত করা হয়েছে। স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ডিবি অফিসে থাকা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ফোন করে বলেন, আমার গরম পোশাক প্রয়োজন, আমাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। একথা বলেই ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, তার স্বামীকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে। এ অভিযোগ করে ফারহাত কাদের বলেন, আটকের সময়ই যদি এভাবে নির্যাতন চালানো হয় তবে রিমান্ডে নিয়ে কী করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে হুমমাম কাদের চৌধুরী বলেন, বাবা এমন কোনো অপরাধ করেনি যে তাকে নির্যাতন করতে হবে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যক্তিগত আইনজীবী ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ জানান, ক্যান্টনমেন্ট থানা থেকে পিজি হাসপাতালে নেয়া হয় সালাহউদ্দিন চৌধুরীকে। সেখানকার ডাক্তার সায়ান্ত বলেছেন, মুখে রক্তের দাগ ছিল। তার গালে ও ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন এবং শার্ট ছেঁড়া ছিল। স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী জানান, ’৭১ সালের এপ্রিল থেকে ’৭৪ পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী করাচিতে ছিলেন। দেশে অনুপস্থিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনাকে অযৌক্তিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও সরকারকে খুশি করার জন্যই তার স্বামীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছে।
ডিবি অফিস এলাকায় বিক্ষোভ : ভোর থেকেই মিন্টো রোডে ডিবি কর্যালয়ের সামনে ভিড় করেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্বজন ও বিএনপি’র বিভিন্নস্তরের নেতা-নেত্রী। সকাল ৯টায় দেখা যায়, মহিলা দল নেত্রী শিরিন সুলতানা, বিএনপি নেতা খায়রুল কবীর খোকন, সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনিসহ ২০/৩০ জন নেতাকে। পরে সেখানে আসেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপির আরও নেতাকর্মী। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে ডিবির কর্মকর্তারা আমাকে দেখা করতে দেননি। আইনজীবী হিসেবে আসামির সঙ্গে দেখা করার বিধান থাকলেও এর তোয়াক্কা করেননি ডিবির কর্মকর্তারা। এদিকে ডিবির কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বেলা ২টা ৫ মিনিটে মিন্টু রোডের গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আদালতে নেয়া হয়। গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের, বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের, ছোট ছেলে হুমমাম কাদের, একমাত্র মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরীসহ আত্মীয়স্বজন এবং উপস্থিত বিএনপি ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোয়েন্দা কার্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথে তাকে বহনকারী গাড়ি বহরের সামনে দাঁড়ান। এসময় পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। দলীয় নেতাকর্মীরা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে বেশ কয়েকবার মিছিল করে। বেলা ২টার দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কোর্ট হাজত থেকে বের করে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম নজরুল ইসলামের চারতলার আদালতে নেয়া হয়। এ সময় তার পরনে ছিল প্যান্ট, শার্ট ও চাদর। পুলিশ ভ্যান থেকে নামিয়ে পুলিশের কাধে ভর দিয়ে অনেকটা পাঁজাকোলে করে তাকে আদালতের এজলাসে নেয়া হয়।
রিমান্ডের শুনানি : বেলা আড়াইটার দিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কোর্ট হাজতে নিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে বেলা পৌনে তিনটায় দু’জন পুলিশ তার দুইহাত কাঁধে নিয়ে ধীরে ধীরে তাকে সিএমএম কোর্টের ৪র্থ তলায় ১১নং এজলাসের কাঠগড়ায় হাজির করান। নির্যাতনে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজ শক্তির ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারেননি। এ সময় তার নাক দিয়ে থেমে থেমে রক্ত পড়ছিল। হাতের রুমাল দিয়েই তিনি তা মুছে নেন। মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম এজলাসে বসার পর অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে কাঠগড়ায় তার বসার ব্যবস্থা করেন।
আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মগবাজার এলাকায় গত ২৬ জুন একটি গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর ফজলুর রহমান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ আবেদনে বলা হয়েছে, এ মামলায় অন্যান্য আসামিদের নাম জানার জন্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ রিমান্ড আবেদনের পক্ষে পিপি আবদুল্লাহ আবু, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন আইনজীবী শুনানি করেন। শুনানিতে তারা রিমান্ড মঞ্জুর করার জন্য আদালতের কাছে প্রার্থনা জানান। রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জামিন দেয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, রমনা থানার যে মামলাটিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে ওই একই মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলের প্রায় সব নেতাকেই গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা সবাই এ মামলার অভিযোগ থেকে জামিন পেয়েছেন। সানাউল্লাহ মিয়া মামলার ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে বলেন, কথিত ও হাস্যকর অভিযোগ এনে দায়ের করা এ মামলার বিষয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এ গাড়িটিতে আগুন ধরেছে। অথচ এ মামলার সূত্র ধরেই সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ২৬ জুনের এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ এর তিন দিন আগে থেকেই তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন এবং তিন দিন পরে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এটা হলো বাস্তবতা। তিনি কি করে চট্টগ্রামে থেকে ঢাকায় গাড়িতে আগুন দিলেন তা বিশ্বের কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে না। অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দিকে ইঙ্গিত করে আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, মাননীয় আদালত, দয়া করে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের দিকে একটু তাকান। তিনি জাতীয় সংসদের ৬ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। অথচ তাকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করে ক্যান্টনমেন্টে ও ডিবি অফিসে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্যাতন করে তার জীবন মরণাপন্ন অবস্থায় নিয়ে এসেছে। রিমান্ড মঞ্জুরের আগেই যদি এমন নির্যাতন করা হয়, তাহলে রিমান্ডে তার ওপর কি পরিমাণ নির্যাতন করা হবে তা আপনি একটু অনুধাবন করুন। তার নাক দিয়ে এখনও রক্ত পড়ছে। তাকে এতটাই নির্যাতন করা হয়েছে যে, জরুরি ভিত্তিতে তাকে চিকিত্সার জন্য হাসপাতালেও নিতে হয়েছে। এটা কোনো মানুষের প্রতি মানুষের আচরণ হতে পারে না। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই রয়েছে। এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, অ্যাডভোকেট বোরহানউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেসবাহসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রেখে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।
এটাই হচ্ছে স্বাধীন আদালতের নমুনা : আদালত থেকে বেরিয়ে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আটকের পর একটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ঘটনার তিন দিন আগে থেকে যে লোকটা চট্টগ্রামে অবস্থান করছিল এবং ঢাকায় এসেছে ঘটনার তিন দিন পরে, তিনি কিভাবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় একটি গাড়িতে আগুন দিলেন তা অন্তত আমার বুঝে আসছে না। কিন্তু আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রহণ করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এটাই হচ্ছে আমাদের স্বাধীন আদালতের নমুনা। তিনি বলেন, বিচারের আগেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার এ ঘৃণ্য নজির ওয়ান ইলেভেনের জরুরি অবস্থার সরকারও করেনি। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য সরকার আবেদন করেছে। আগামী রোববার ওই আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। অথচ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলছেন যে, তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আদালতের নির্দেশে আটক করা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশ তাকে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে। এ ধরনের তুঘলকি কাণ্ড আমার ওকালতি জীবনে দেখিনি।
শুনানির সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। আদালত থেকে বেরিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী নির্দোষ। এর আগেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আদালত থেকেই নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ১৫টি মামলা করা হয়েছিল। তিনিও অনেক মামলায় ইতোমধ্যেই নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। আশা করছি একইভাবে আমার স্বামীও আদালতের রায়েই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। কেননা তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
আওয়ামী লীগের উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ : আদালতে আনা-নেয়ার সময় পুলিশের প্রোটেকশনে ঝাড়ু ও জুতা দেখায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা। এসময় তারা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার চেয়ে সেম্লাগান দেয়। এদিকে তাকে গ্রেফতারের খবরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উল্লাস করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসময় তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সেম্লাগান দেয় এবং মিষ্টি বিতরণ করে। পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা উল্লাস প্রকাশ এবং মিষ্টি বিতরণ করেছে। আদালত থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগের বেশ কিছু কর্মী গাড়ি লক্ষ্য করে ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করে। এছাড়া মিরপুরের ১নং গোলচত্বর, পল্লবী, পাইকপাড়া, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা পরিকল্পিতভাবে তাদের কর্মীদের আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো করে। এ সময় তাদের হাতে নতুন ঝাড়ু ও জুতা ছিল।

নাকে প্রচণ্ড ঘুষি খেয়ে ঘুরে পড়ি : আদালতে সা. কাদের চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার

গ্রেফতারের সময় এবং পরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ও ডিবি কার্যালয়ে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্মম নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আদালতে তিনি বলেন, আমাকে আটকের পর চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্টের একটি অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে আমার সারাশরীরে একাধিক ব্যক্তি কিল ও ঘুষি মারতে থাকে। একটি শক্ত দণ্ড দিয়ে একজন আমাকে পেটাতে থাকে। এদের একজন আমাকে বলল- আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আপনাকে এ কথা স্বীকার করতে হবে। তার এ বক্তব্যের পর আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, এটা কি বললেন। কথা শেষ করার আগেই আমার নাকে প্রচণ্ড ঘুষি মারা হয়। তত্ক্ষণাত আমি ঘুরে পড়ে যাই। আদালতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মাননীয় আদালত আপনি আমার দিকে দয়া করে একটু লক্ষ্য করুন। আমার নাক দিয়ে এখনও রক্ত পড়ছে। আমার শরীরে নির্যাতনের এ চিহ্ন দেখেন। গতকাল ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করার পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতের কাছে কিছু বলার জন্য সময়ের প্রার্থনা জানান। এতে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা তীব্র আপত্তি করে বলেন, আদালতে আসামিকে কোনো কথা বলতে দেয়া উচিত নয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, তিনি যেহেতু কিছু বলতে চাচ্ছেন আর তার আইনজীবীরাও আবেদন করেছেন। আপনাদের একটু সহনশীল হওয়া উচিত। আদালত সময় মঞ্জুর করলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওই বক্তব্য রাখেন।
আদালতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আরও বলেন, আমি ওয়ান ইলেভেনের সময়েও গ্রেফতার হয়েছি। ওই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী দলের অনেক নেতাও গ্রেফতার হয়েছেন। কিভাবে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করা হয়েছে, এটা তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ওই সময় আমাদের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যে আচরণ করা হয়েছে। আজ আমার সঙ্গে একই কায়দায় একই আচরণ করা হয়েছে। ওই সময়ের সরকারের মধ্যে আর আজকের গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে কোনো তফাত্ দেখছি না। একই কায়দায় বর্তমানে আমাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে, আশা করছি দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। আজ আমাকে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তিনি আমার ওপর এ নির্যাতন হতে দিতেন না। তিনি নিজেই আমাকে এ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতেন। আমার ওপর যে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে, তা কোনো সভ্য সমাজের ঘটনা নয়। আদালতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ২৬ জুনের তিন দিন আগে থেকেই আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। চট্টগ্রামে থেকে আমি কীভাবে ঢাকায় গাড়িতে আগুন দিলাম? আদালত আজ স্বাধীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকারের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে প্রভাবিত না হয়ে আশা করি আদালত তার জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করে আমার ওপর ন্যায়বিচার করবেন। তিনি বলেন, আমি ৬ বার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছি। আমরা সংসদে আইন তৈরি করি। অথচ আমিই আজ নির্মম নির্যাতনের শিকার।

এভাবে ধরে এনে র্যাব-পুলিশ পেটাবে কেন : ফারহাত কাদের চৌধুরী



এম আবদুল্লাহ

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হলে বিচার হতে পারে, কিন্তু তার আগেই ধরে এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে সাজা দেয়া হলো কেন? ওয়ান-ইলেভেনের পর গ্রেফতার হলেও তিনি আর্মির টর্চারের শিকার হননি। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সরকারের আমলে তার ওপর এমন নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হবে—এটা কল্পনাও করতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত তাকে জীবিত ফেরত পাব কিনা এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান। তবে এসব নির্যাতনের মুখেও আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাব না, এ দেশেই থাকব। কথাগুলো বলেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য, প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহধর্মিণী ফরহাদ কাদের চৌধুরী। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে কথা হচ্ছিল ফরহাদ কাদের চৌধুরীর সঙ্গে। এ সময় তার চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। বারবার শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন স্বামীর জীবন নিয়ে। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বারবার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, আপনারা তো সাংবাদিক, আপনারা কী জীবনে দেখেছেন কোনো রাজনৈতিক সরকারের সময় এ মাপের একজন সিনিয়র রাজনীতিক এবং বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ওপর এভাবে জঘন্য, বর্বর ও অমানবিক কায়দায় নির্যাতন চালাতে? তিনি তো ৩২ বছর ধরে সংসদ সদস্য। জনগণ প্রত্যেকবার তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। উনার অপরাধ থাকলে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি হবে। এভাবে ধরে এনে পেটাবে কেন? এটা তো বিচারের আগেই সাজা দেয়া।

এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ কাদের চৌধুরী বলেন, একদিন আগে আমাদের ধানমন্ডির বাসায় পুলিশি তল্লাশির নামে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করার পর আমরা কেউই বাসায় ছিলাম না। আমি ছিলাম মেয়ের বাসায়। তিনি কোথায় ছিলেন তা আমি জানতাম না। যোগাযোগও হয়নি। কিন্তু ভোররাতে খবর পেলাম তাকে র্যাব-পুলিশ গ্রেফতার করেছে। খোঁজখবর নিতে গিয়ে তার সন্ধান পাচ্ছিলাম না। শুনলাম ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। সেখানে তার অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে নিয়ে আসা হয় পিজি হাসপাতালে। খবর পেয়ে আমরা পিজিতে আসি। সেখানে ডাক্তার বলেছেন, হাসপাতালে যখন আনা হয় তখন তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। হার্টের অবস্থাও ছিল খারাপ। ডাক্তাররা তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেও জোর করে তাকে নিয়ে আসা হয় ডিবি অফিসে। এখানেও তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে।
ফরহাদ কাদের চৌধুরী আমার দেশকে আরও বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেশের বহু মানুষ ভালোবাসেন। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে সংসদ সদস্য। শেখ হাসিনাও এতবার এমপি হতে পারেননি। যে মানুষটি জনগণের ভালোবাসা পেয়ে আসছিল, তার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তার জবাব একদিন তারা দেবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতারের অনুমতি চেয়েছে সরকার। তার ওপর শুনানি হবে আগামী রোববার। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি সেখানে আইনি লড়াই করব। কিন্তু ওয়ারেন্ট ছাড়া তাকে রাতের আঁধারে ধরে এনে যেভাবে পিটিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে হি হ্যাজবিন কনভিকটেড। বিচারের আগেই সাজা দিয়ে দেয়া হলো। এটা কোন সভ্যতা? আমরা কী রোববার ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে যাব? কেন যাব?
‘মাইরা ফেলেন’ : সকাল ৯টা ৪০ মিনিট। মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ছাড়াও গণমাধ্যমকর্মী ও শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের দৃষ্টি ডিবি অফিসের গেটের দিকে। এ সময় সিভিল পোশাকে ডিবি অফিস থেকে এক যুবক বেরিয়ে এলেন এক টুকরো কাগজ হাতে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা ফরহাদ কাদের চৌধুরীর দিকে কাগজটি বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এ ওষুধগুলো এনে দিতে বলেছে।’ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরিত কণ্ঠে ফরহাদ কাদের চৌধুরী বলেন, ওষুধ দেব কেন, দেব না, মেরে ফেলেন তাকে। ডাক্তার হাসপাতালে রাখতে বলেছেন, সেখানে না রেখে এখন ওষুধ চাচ্ছেন? আমি কী ডাক্তার, আমি কেন ওষুধ দেব? কী ওষুধ দেব? এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও মায়ের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, যান ওষুধ দেব না, মইরা যাক আগে। তারপর দেখব। ডিবি অফিস থেকে আসা যুবক একরকম ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে ফিরে যান।
সভ্য সমাজে কল্পনাই করা যায় না : এদিকে বিএনপি অফিসে এক প্রেসব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মেয়ে ফারজিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমার বাবাকে রিমান্ডে নেয়ার আগে যে নির্যাতন করা হয়েছে তা কোনো সভ্য দেশে কল্পনাও করা যায় না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফারজিন বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে একজন এমপিকে ধরে পুলিশ যেভাবে নির্যাতন করেছে তা কোনো সভ্য দেশে হওয়া সম্ভব নয়। বাবার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে। একজন এমপিকে যদি এভাবে পুলিশ ধরে নির্যাতন করতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে? অবিলম্বে তার বাবার ওপর নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানান ফারজিন।
এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে ফায়েজ কাদের চৌধুরী, ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জামাতা জাফর আই খানসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফারজিন বলেন, আমার বাবা যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন সে জন্য আদালত রয়েছে। আদালত তার বিচার করতে পারেন। কিন্তু পুলিশ কেন নির্যাতন করবে? তিনি বলেন, বাবার রাজনীতি নিয়ে আমরা গর্বিত। আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। কিন্তু সে জন্য নিরপেক্ষ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আপনাদেরও মা-বাবা আছে। আপনারা সবাই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীনদের হামলা : বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক পুলিশসহ আহত ৪০



ডেস্ক রিপোর্ট

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে। এতে আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশসহ ৪০ জন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর :
রাজাপুর (ঝালকাঠী) : রাজাপুরে বিজয় দিবসের শুরুতে সকাল সাড়ে ৭টায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা বিএনপির মিছিলে হামলা ও এর পরপরই সৃষ্ট সংঘর্ষে উপজেলা যুবদল সভাপতি, দুই সাংবাদিক, এক পুলিশ কর্মকর্তা ও বাসযাত্রীসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসার সময় বিএনপির মিছিলে এ হামলা হয়।
আহতদের মধ্যে যুবদল সভাপতি আলহাজ নাসিম আকনের অবস্থা বেশ গুরুতর। হামলার পরপরই আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিআরটিসির বাসসহ তিনটি যান ভাংচুর হয়। ভাংচুরের সময় বাসের কমপক্ষে ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
আহত নেতাকর্মীরা রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে আলহাজ নাসিম আকনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে নয়া দিগন্তের সাংবাদিক এনামুল হক ও বিপ্লবী বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক মো. কাওছার হোসেন ছবি তুলতে গেলে আওয়ামী সশস্ত্র কর্মীরা তাদের মারধর করে এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় এনামুল হক রাজাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে রাজাপুর থানার এসআই আবদুল হালিম আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে পৃথক মিছিল নিয়ে বাইপাস সড়কে দু’দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের মিছিলের মধ্য থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজাপুর উপজেলা যুবদল সভাপতি আলহাজ নাসিম আকনের ওপর হামলা হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় উভয় দলের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠিসোটা দিয়ে মারামারি শুরু হয়। ভাংচুর হয় তিনটি যানবাহন। এতে বাসের যাত্রীসহ উভয় দলের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। পুলিশ ও দু’দলের নেতারা চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। হামলার ঘটনায় থানা পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে। তারা হলেন ফোরকান, মজিবর ও আবদুল্লাহ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রদল মুক্তবাংলায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যায়। কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের পর ছাত্রদলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে আহ্বান জানায়। কিন্তু জাসদ ছাত্রলীগ জোর করে ছাত্রদলের আগে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মেইন গেটে জড়ো হয়। এ সময় ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ সম্মিলিতভাবে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি রতন অধিকারীসহ ১০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের শেখপাড়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। এ ব্যাপারে জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, বিজয় দিবসের মহান দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যেভাবে ছাত্রদলের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ক্ষমতাসীন দলের হামলা ও মঞ্চ ভাংচুরের ঘটনায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ওয়াজির হাইস্কুল মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সভা পণ্ড হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে জেলা কার্যালয়ে বিএনপির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গতকাল বিকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে স্থানীয় ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত সময় নেতাকর্মীরা সভাস্থলে আসতে শুরু করলে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা হামলা চালায় এবং মঞ্চ ভাংচুর করে। এতে বির্ধারিত সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। পরে দলের জেলা কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক এমপি মসিউর রহমানসহ নেতারা বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, একদল যুবক মঞ্চ ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে জানতে পেরে আমি সেখানে তাত্ক্ষণিকভাবে পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত নয়।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকার টিপরদী গ্রামে বুধবার রাতে বিজয় দিবস উপলক্ষে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, টিপরদী গ্রামে মঞ্চ করে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বুধবার রাতে মঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
আয়োজক কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন, সদস্য রাশেদুল ইসলাম ও রাহাতুল ইসলাম জানান, দুর্বৃত্তরা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড করার জন্য মঞ্চে আগুন দেয়। সোনারগাঁও থানার ওসি ইউনুস আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘৃণ্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জলঢাকা (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় গতকাল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় পণ্ড হয়ে গেছে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজক-দর্শক ও কুজকাওয়াজে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের দিগ্বিদিক ছোটাছুটিতে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশি প্রহরায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। জানা গেছে, সকাল ৯টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্থানীয় স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়ার আগ মুহূর্তে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় হট্টগোল। একপর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক শহিদ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অধ্যক্ষ আ. সালামের ওপর চড়াও হয়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাংচুর শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে স্থানীয় শহীদ মিনারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে স্থানীয় সাংবাদিকের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

বহিষ্কৃত আ’লীগ নেতার কাণ্ড : বিজয় দিবসের আগের দিন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রাণনাশের হুমকি

রূপগঞ্জ (না’গঞ্জ) প্রতিনিধি

রূপগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্য ও উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের পলখান গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমানকে (৬২) গতকাল মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তা চেয়ে তিনি রূপগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, দাউদপুর ইউনিয়নের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত শেষে কালনী এলাকায় একটি পানের দোকানে গেলে সন্ত্রাসী নুরুল ইসলাম ওরফে জাহাঙ্গীর মাস্টার তার বাহিনী নিয়ে ৭/৮টি হোন্ডাযোগে এসে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় উপস্থিত ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধার সহযোগিতায় প্রাণে বাঁচেন তিনি। জাহাঙ্গীর মাস্টার তার হোন্ডাবাহিনী নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইকারীদের মদত দেয়ার অপরাধে ১১ নভেম্বর দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মাস্টারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। হোন্ডাবাহিনীর আতঙ্কে দাউদপুরবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মিজান। তাকে মারার জন্য হুমকি দেয়া হয়নি। ভয় দেখানো হয়েছে।

পদুয়া দখলের প্রতিবাদ : ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পদুয়া গত ১৪ ডিসেম্বর দখল করে নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলেছে, ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
এছাড়া জাগপা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়া গণতান্ত্রিক মোর্চা ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের নেতারা সীমান্তে যৌথ জরিপ চলার সময় বিএসএফ কর্তৃক পদুয়া দখলের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গতকাল অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তিনশ’ বিএসএফ সদস্য ও দুইশ’ ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশের আধা কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে ১২৭০ ও ১২৭১ নম্বর পিলার সংলগ্ন ৩০০ একর বাংলাদেশের ভূমি দখল করে নেয়। এ সময় তারা লাল পতাকা উঁচিয়ে ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে সীমান্তবাসী পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের কয়েকশ’ বাংলাদেশী নাগরিক লাঠিসোটা নিয়ে বিএসএফকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে চরম সংযম প্রদর্শ করে এ সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভারত সরকার বা তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিক থেকে কোনো আশাপ্রদ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট রাষ্ট্র হিসেবে যাবতীয় হুমকির মুখে থেকেও বাংলাদেশ বরাবর আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের সীমানা, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই গত কয়েক দিন ধরে যৌথ আন্তর্জাতিক সীমারেখা নির্ধারণে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিল। কিন্তু ভারত সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্থিতিশীলতা রক্ষায় বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে। যখন সীমান্তে জরিপ কাজ চলছে ঠিক তখনই বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারী অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশ ও দখলের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি ধারণা করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই যে, ঘটনাটি হঠাত্ এবং বিছিন্নভাবে ঘটেছে।
অধিকার বলেছে, আমরা বিএসএফের যে আচরণের সঙ্গে পরিচিত তাতে একে তাদের ধারাবাহিক অস্থিতিশীলতা তৈরির অংশ বলেই মনে হচ্ছে। সীমান্তে এ সময় এরকম একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি ও সীমানা নির্ধারণের সময় বাংলাদেশের ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টির কৌশলের অর্থ খুব পরিষ্কার। তারা যেভাবে চায়, যতটুকু চায়, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশকে তার ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। এটাই তারা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এখানে কোনো আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতে ভারত প্রস্তুত নয়। শান্তিপূর্ণভাবে সীমানা নির্ধারণে ভারতের সদিচ্ছার প্রতি আস্থা রাখাটা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে, যেন ভারত জোর করেই আমাদের একটি সংঘাতময় অবস্থার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
অধিকার মনে করে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সেই রাষ্ট্রের কোনো অংশ দখল করে নেয়া আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। পদুয়া বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত তা অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল। ১৯৯৮ সালে বিডিআর বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তা উদ্ধার করেছিল। ভারতের এ আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা আবার হুমকির মুখে পড়েছে।
অধিকার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং অবিলম্বে ভারতের দখল থেকে পদুয়া দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে।
সরকারের নতজানু নীতি বিএসএফকে পাদুয়া দখলের সাহস দিয়েছে : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সিলেট সীমান্তে পাদুয়া এলাকা দখল করায় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সরকারের নতজানু ও তাঁবেদারি নীতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ভারতের এ আগ্রাসী তত্পরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলে আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের পাদুয়া এলাকা দখলে নেয়। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে বিএসএফ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়াগণতান্ত্রিক মোর্চা এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের নেতারা গতকাল এক বিবৃতিতে পাদুয়া দখলের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, হাসিনা সরকারের তাঁবেদার নীতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নেতারা সব গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে হিন্দুস্থানি হানাদারদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড পাদুয়া দখল কিসের আলামত? চেতনাওয়ালি সরকারই বা নীরব কেন? তিনি বলেন, ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করলাম আমরা। রক্ত দিল এদেশের জনগণ। অথচ আমাদের স্বাধীনতার দলিলে সই করল হিন্দুস্থান আর পাকিস্তান। গদিতে বসেই আওয়ামী লীগ আমাদের ভূখণ্ড বেরুবাড়ী দিল্লিকে নজরানা দিলেন। ফারাক্কা চালুর অনুমতি দিয়ে আমাদের ভাতে-পানিতে মারার বন্দোবস্ত করা হলো। ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রে গদিতে বসে এখন শেখ হাসিনা সরকার ইনাম হিসেবে পাদুয়া দিল্লির হাতে তুলে দিতে চায়। তিনি বলেন, যারা বেরুবাড়ী-পাদুয়া হিন্দুস্থানের হাতে তুলে দেয়, তাদের মুখে মুক্তিযোদ্ধার চেতনা শোভা পায় না।

জবিতে ছাত্রলীগের হামলায় ৫ ছাত্রদল কর্মী আহত

জবি রিপোর্টার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ৫ ছাত্রদল কর্মী আহত হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রস্তুতিমূলক শোডাউনে ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা অতর্কিত হামলা করলে এ ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে ছাত্রদলের আসাদুজ্জামান রানাকে গরুতর আহত অবস্থায় সুমনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেয়া কর্মসূচি সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান হোসেন মানিক গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।
ছাত্রদলে কর্মীরা শোডাউন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের কাছে পৌঁছালে সেখানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আগে থেকেই অবস্থানরত ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের কর্মী সঞ্জীব বসাক, শাহাদাত, সুমন, সাইফ, তানভীর ও আনিসসহ ১৫/২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী অতর্কিতে ছাত্রদল কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় ছাত্রদল কর্মী আসাদুজ্জামান রানা, মিজানুর, পলাশ, ইব্রাহীম কবির ও মোরশেদ আহত হয়। আহতদের স্থানীয় সুমনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে রানার অবস্থা গুরুতর।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিজয় দিবসে বিএনপির আলোচনা : শেখ মুজিব কখনই স্বাধীনতা চাননি চেয়েছেন স্বায়ত্তশাসন



স্টাফ রিপোর্টার

বিজয় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা ’৭১ সালে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কে কে জীবন দিয়েছেন—তার তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন। নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব কখনই এদেশের স্বাধীনতা চাননি, চেয়েছেন স্বায়ত্তশাসন। তার ঘোষিত ৬ দফায়ও স্বাধীনতার কথা ছিল না। ১৯৭১ সালের ২৮ ফেবু্রয়ারি শহীদ মিনারে এক সমাবেশে শেখ মুজিব স্বায়ত্তশাসনের কথাই বলেছিলেন।
গতকাল বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের সভাপতিত্বে বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও বক্তৃতা করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দল সভাপতি নূরে আরা সাফা, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৭ মার্চ তাকে জোর করে মাইকের সামনে এগিয়ে দেন ছাত্রলীগের কিছু নেতা। তিনি বলেন, ‘৭ মার্চই যদি স্বাধীনতার ঘোষণা হবে, তাহলে শেখ মুজিব পরে কেন ইয়াহিয়ার সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় বসলেন? এর কারণ হলো শেখ মুজিব চেয়েছিলেন স্বায়ত্তশাসন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রামকে তাদের একচেটিয়া সম্পত্তি মনে করে। ক্ষমতার বাইরে থাকুক আর ভেতরেই থাকুক, তারা এটাকে প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা করছে না। কিন্তু দেশবাসী আজ জানতে চায় মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতারা কে কোথায় ছিলেন? নিজেদের জান বাঁচাতে কোথায় পালিয়েছিলেন? কোন নেতার কোন সন্তান, কোন ভাতিজা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন।
খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, কোনো দল এদেশকে স্বাধীন করেনি, এর মূল কৃতিত্ব জনগণের। ২৫ মার্চ জাতি যখন দিশেহারা, তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন। অন্যদিকে শেখ মুজিব স্বেচ্ছায় পাকসেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সহায়তা করে প্রতিবেশী দেশ ভারত নিজেদের স্বার্থে বিশেষ একটি দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। এই বিশেষ দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই দেশের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে কাজ করেছে, এখনও করছে। এর অংশ হিসেবে তারা এখন দ্রুত রেল, নৌ, স্থল ট্রানজিট দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারা আপ্রাণ লড়াই করতে প্রস্তুত হয়ে আছে। তিনি সরকারকে ব্যর্থতার দায়ভার মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান।

২৯৮ কর্মকর্তার উপসচিব পদে পদোন্নতি বঞ্চিত ১১৫ জন

স্টাফ রিপোর্টার

সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার ২৯৮ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে উন্নীত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তাদেরকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকার পরও ১১৫ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পদোন্নতিবঞ্চিতদের কয়েকজন। পদোন্নতির তালিকায় ৩১৫ কর্মকর্তার নাম থাকলেও ১৭ জন লিয়েনে রয়েছেন। ফলে তাদের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। লিয়েন শেষে এসব কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিলে তাদের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ৮১ ব্যাচের অবশিষ্ট ১ জন, ৮২ ব্যাচের ৯ জনের মধ্যে ১ জন, ৮৪ ব্যাচের ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন, ৮৫ ব্যাচের ৩৪ জনের মধ্যে ১০ জন, ৮৬ ব্যাচের ৯ জনের মধ্যে ২ জন, ৯ম ব্যাচের ১৪ জনের মধ্যে ৮ জন, ১০ম ব্যাচের ৪৮ জনের মধ্যে ৩৪ জন, ১১তম ব্যাচের ১৯৩ জনের মধ্যে ৫৭ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ১৩তম ব্যাচের পদোন্নতির বিবেচনায় আনা হয়েছিল ২৭ জনকে। এদের মধ্যে ১৪ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত ২৯৮ কর্মকর্তার মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের মোট কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩৪ জন এবং অবশিষ্ট ৫৪ জন অন্যান্য কর্মকর্তা।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি অতিরিক্ত সচিব মেজর (অব.) মুুুহম্মদ আবুল হোসাইনকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত সরকারের আমলে এ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। তখন থেকে তিনি ওএসডি রয়েছেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার চাকরি দু’বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত ওএসডি যুগ্ম সচিব রূপন কান্তি শীলকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (উপসচিব) শেখ জসিম উদ্দিন আহমেদকে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
পদোন্নতি বঞ্চিত করার পাশাপাশি এবারের পদোন্নতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে চাকরি জীবনের ৩০ বছর পর পদোন্নতি পাওয়া। ১৯৮১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা এবার পদোন্নতি পেয়েছেন। বয়সসীমা পূর্ণ হওয়ায় কয়েকদিন পর তিনি অবসরে যাবেন। তার ব্যাচের বেশিরভাগ কর্মকর্তা এরই মধ্যে অবসরে চলে গেছেন। কয়েকজন এখনও সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮১ ব্যাচের সেই কর্মকর্তাকে চাকরি জীবনে প্রথম পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত মাসে ১৫৮ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে ওই সময় বঞ্চিত হয়েছেন ১৮২ জন।

জঙ্গি দমনের নামে নাটক সাজানোর অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে : ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি ইজহার গ্রেফতার



চট্টগ্রাম ব্যুরো

ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গতকাল বিকালে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের বিরুদ্ধে জঙ্গি দমনের নামে নাটক সাজিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ বেশকিছু অভিযোগ আনার পর পরই তাকে গ্রেফতার করা হলো।
দুপুরে তিনি তার মাদ্রাসায় র্যাবের সাম্প্রতিক একটি অভিযান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানের দুর্গম এলাকায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ট্রেনিং শিবিরের সন্ধান ও সেখান থেকে হুজির ৫ নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনা ছিল র্যাবের সাজানো নাটক। এই ৫ জন কোনো জঙ্গি নয়। তাদের মাসাধিককাল আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপহরণের পর জঙ্গি শিবির থেকে গ্রেফতার দেখিয়েছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য দেয়ার ঘণ্টাখানেক পর বেলা ২টার দিকে র্যাবের শতাধিক সদস্য লালখান বাজার মাদ্রাসা ঘিরে ফেলে। তারা মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে তারা কোনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। এ সময় মাদ্রাসার কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভের মুখে বিকাল ৪টার দিকে র্যাব সদস্যরা মুফতি ইজহারকে কালো কাঁচে ঘেরা একটি গাড়িতে করে নিয়ে চলে যায়। অভিযান চলাকালে র্যাব চট্টগ্রামের কমান্ডার লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব চট্টগ্রামের অ্যাডজুটেম্লট মেজর আশরাফ জানান, মুফতি ইজহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। তবে তার মাদ্রাসা থেকে কোনো অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যায়নি।
এদিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুফতি ইজহার বলেন, র্যাবের অতিউত্সাহী কিছু সদস্য ১২ ডিসেম্বর রাউজান থেকে জঙ্গি গ্রেফতার ও বিস্ফোরক উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমাণ করতে এ ধরনের তত্পরতা চালানো হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, গ্রেফতারকৃতদের কেউই জঙ্গি তত্পরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাদের সবাইকে মাসাধিককাল আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে অপহরণ করে। পরে ১৩ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তাদের জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করে মিডিয়ার সামনে । ট্রেনিং শিবির থেকে তাদের আটক করার যে তথ্য র্যাব দিয়েছে তা ডাহা মিথ্যা। কারণ তাদের এর আরও আগেই অপহরণ করা হয়। সারাদেশে যে বিচারবহির্ভূত অপহরণ ও হত্যা চলছে, তারই ধারাবহিকতায় ৫ জন নিরপরাধ মেধাবী আলেমকে জঙ্গি সাজানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম হচ্ছে। আলেম সমাজসহ দেশের মানুষকে সুকৌশলে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। তিনি র্যাবের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গি তত্পরতায় সম্পৃক্ত নন। তাদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকার ও বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মুফতি ইজহার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মাওলানা আবুল কালাম ইসলামী ঐক্যজোটের গণসংযোগ কর্মকর্তা। ৪ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার বনানী এলাকায় ভায়রার বাসা থেকে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেয়ার জন্য বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে গত ১০ ডিসেম্বর তার ভাই শামসুদ্দিন গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রায় ৯ দিন গুম করে রাখার পর র্যাব ১৩ ডিসেম্বর মিথ্যা ব্রিফিং দিয়ে সাংবাদিকদের জানায়, তাকে নাকি রাউজানের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইভাবে মাওলানা সালাহুদ্দিন, আবু ফারাহ রুম্মান, আবদুল্লাহ আল আমীন ও মাহফুজুর রহমানকেও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক মাস আগে অপহরণ করা হয় সাদা পোশাকে। তাদেরও রাউজানের ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে র্যাব।
মুফতি ইজহার বলেন, সরকার দাড়ি-টুপিওয়ালাদের ধরে নিয়ে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনের নামে এলোপাতাড়ি প্রচারণা ও অভিযান চালিয়ে দেশকে অরাজকতা এবং সংঘাতের পথে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের এ ধরনের তত্পরতা চলতে থাকলে আলেম সমাজ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে আমাদের জানালে আমরা নিজেরাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা তার বিশেষ দূত বর্তমান বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে পাঠিয়ে আমাকে ডেকে নেন। শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না এমন ১১টি শর্ত মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিলে আমি তখন মহজোটে যোগ দিই। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন। তিনি জানান, তিনি এখন আর মহাজোটে নেই। চারদলীয় ঐক্যজোটেই আছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চারদলীয় জোট প্রার্থীর জন্য তিনি কাজ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি আবদুর রহমান, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা হাছান, মুছা বিন ইজহার, কস্ফারী ফজলুল করিম, মাওলানা সানাউল্লাহ ফিরোজ প্রমুখ।

আওয়ামী লীগে রাজাকার গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায় : মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বিএনপিতে যত মুক্তিযোদ্ধা আছে আওয়ামী লীগে তত নেই। আওয়ামী লীগ প্রচারের মাধ্যমে এমন একটা ভাব দেখায় যে, মনে হয় তারাই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র পক্ষশক্তি। আওয়ামী লীগে রাজাকার গেলেও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়ে যায়।
গতকাল বিকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি শামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম ইলিয়াস আলী, মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক ইউং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ।
হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব— উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, স্বাধীনতার সময় আওয়ামী লীগের কোন নেতা কি করেছেন সবকিছুর আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমরা কি বুঝেছিলাম। কারো লেজুরবৃত্তিক পররাষ্ট্রনীতি পরিহার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সমান অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আজকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এই তিনটি মূল ভিত্তির একটি চেতনাও তারা রক্ষা করতে পারেনি। তারা ভারতের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপস করেছে। দেশের গণতন্ত্র এখন স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আইনের শাসনের নামে আওয়ামী লীগের শাসন চলছে। অর্থনৈতিক মুক্তি বলতে কিছুই নেই।
বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দাবি করে মওদুদ বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি না করে সরকার সংঘাতের রাজনীতি তৈরি করছে। যে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই সে দেশ মধ্য আয়ের দেশ হতে পারবে না। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮-১০ ভাগ করতে হলে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা প্রয়োজন।
ড. ইউনূস এ দেশের মুকুট ও গৌরব দাবি করে মওদুদ বলেন, এমন কোনো দেশ নাই যেখানে তাকে সম্মান দেখানো হয় নাই।
অথচ আমরা তাকে ছোট করতে চাইছি। যারা তাকে ছোট করতে চাইছে তারাই ছোট জাত।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সেক্টর কমান্ডার উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীর প্রতীক বলেন, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম গঠিত হয়েছে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার টাকায় ও তাদের পক্ষে কাজ করতে। তা না হলে তারা এক এগারো সরকারের সময় সারাদেশে শত শত সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশের খরচ কোথা থেকে এলো। সেক্টর কমান্ডার ফোরামের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একে খন্দকার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। যুদ্ধের সময় সে কোলকাতায় বসে থাকত। ওসমানীর সঙ্গে তার মতের মিল ছিল না বলে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ওসমানী তাকে কোনো দায়িত্ব দেননি। কেএম শফিউল্লাহ আসামে পালিয়ে ছিল, মেজর রফিকুল ইসলাম ও সি আর দত্তের কোথাও যুদ্ধের রেকর্ড নাই।
বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, এত বছর পর সরকার ভীন দেশিদের সম্মান জানাতে চায়। কারণ তাদের খুশি করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়। ইতোমধ্যেই তাদের ট্রানজিট কড়িডোরসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে ফেলেছে।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জহির রায়হান বলেছিলেন যুদ্ধের ৯ মাস আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে কি করেছেন তা আমার সেল্যুলয়েডে বন্দি রয়েছে। আর সেজন্যই জহির রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে।

বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার কেন হয়নি আ’লীগকে বলতে হবে : আজহার

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়, তারা ওই সময় পর্যন্ত দেশেই অবস্থান করা নিরাপদ মনে করেছিলেন। ১২ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী এ দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তারপরও ১৪ ডিসেম্বর কারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল, স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও জাতি তা জানতে পারল না। তিনি বলেন, আওয়ামীলী অনেক বড় বড় কথা বলে। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা সাড়ে ৩ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে এ নিয়ে একটি মামলাও করেনি। মামলা হয়েছে ২৫ বছর পর ১৯৯৭ সালে। তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ, অন্য কেউ তো ছিল না। তারপরও মামলা করতে সমস্যা কোথায় ছিল? তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুরে হারিয়ে যান। তখন এ দেশের দায়িত্ব কার হাতে ছিল? পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের এত দিন পর জহির রায়হান নিখোঁজ হলেন কেন? তিনি বলেন, প্রতিবছর দিবস এলে অনুষ্ঠান করে, শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়া আর কান্নাকাটি করে একদিকে যেমন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের খাটো করা হয়েছে, অন্যদিকে হত্যাকারীদের আড়াল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী সময়ও ক্ষমতায় ছিল। তারপরও বিচার না করার কারণ তাদের জাতির সামনে অবশ্যই একদিন বলতে হবে। হয় এর বিচার তারা করেনি অথবা এর পেছনে শক্তিশালী কোনো দেশ থাকায় তারা বিচারের সাহস পায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল বিকালে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে পুরানা পল্টনের মহানগর অফিস চত্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপির সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল ও সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম।
এটিএম আজহার সাভারে গার্মেন্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, দেশ সবার। এ দেশের শিল্প-কারখানার ক্ষতি হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, দেশের রফতানি আয়ের ৭০-৮০ ভাগ আসে গার্মেন্ট সেক্টর থেকে। মুখস্থ কথা না বলে, কাউকে দোষারোপ না করে, কারা এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই দেশের পাটকলগুলোতে আগুন দিয়ে সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচালিত পাটকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। সেই আওয়ামী লীগই এখন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গার্মেন্ট কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটছে। তিনি উল্লেখ করেন, ৭২-৭৫ সালে পাট শিল্পকে যেমন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, বর্তমানেও গার্মেন্ট সেক্টরকে ধ্বংসের জন্য গভীর চক্রান্ত চলছে। সব রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে ওঠে, সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকরা বলেন, এসবের সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত না। বাইরের লোক জড়িত। এই বাইরের লোক কারা? সরকার এত কিছু বের করতে পারে, এই বাইরের লোকদের কেন বের করতে পারে না? এখানে সরকারের কী কোনো দুর্বলতা আছে? তিনি নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, না হলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
আজহারুল ইসলাম বলেন, ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিলেন, তারা ভারতে যাওয়া নিরাপদ মনে করেননি। ভারতের মাটিতে যুদ্ধ করাও পছন্দ করেননি। স্বাধীনতার পর তাদের তাঁবেদারি মেনে নিতে পারত না, মনে করেই হয়তো বৃহত্ শক্তি তাদের হত্যা করতে পারে। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের নামে ব্যক্তি বা দল বিশেষ নিয়ে কুত্সা রটানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইতিহাসকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যাবে না। সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই। তিনি জহির রায়হানেরর পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃৃতি তুলে ধরে বলেন, জহির রায়হান একজন ভারতীয় ব্রিগেডিয়ারের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর আর ফিরে আসেননি। তিনি বলেন, জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়ার জন্য যারা দায়ী, তারাই ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা জড়িত, তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন।
জামায়াত নেতা বলেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির সম্পদ। তারা জাতির কল্যাণে কাজ করে থাকেন। তারা জাতির কল্যাণে যখন যা বলা প্রয়োজন তা বলে থাকেন। তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের সময় আমরা দেখেছি, অনেক বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বিতরণ করেছেন। তারা আজ কোথায় হারিয়ে গেছেন? তাদের বুদ্ধি কী লোপ পেয়েছে? তারা কী অন্য কোথাও বিক্রি হয়ে গেছেন? না কি সরকারের অত্যাচারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন? তিনি বলেন, ইভটিজিং চলছে, ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়ে দেয়া হচ্ছে, বন্দর অবাধে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, প্রতিদিন গড়ে ১১ জনের বেশি খুন হচ্ছেন, কোনো বুদ্ধিজীবীকে তো বিবৃতি দিতে দেখা যাচ্ছে না। বুদ্ধিজীবীর নামে বুদ্ধি বিক্রি করে দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা পিণ্ডির গোলামির পরিবর্তে দিল্লির গোলামি চাননি। কিন্তু বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেই স্বাধীন অস্তিত্বে আঘাত হানা হচ্ছে। তাই যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায় না তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছিল বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে পরনির্ভরশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় জহির রায়হানকে গুম করা হয়। এটা ছিল প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। এ দেশকে ভারতের পদানত রাখার জন্যই এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীতে কিশোরকে শ্বাসরোধে হত্যা : ইভটিজিংয়ে আত্মহত্যা কিশোরীর



স্টাফ রিপোর্টার

থানার এসআই নাজিরউদ্দিন জানান, নিহত কিশোর কাগজ কুড়াত।
উদ্ধার করা লাশে কোনো আঘাতের দাগ পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, বন্ধুদের কারও সঙ্গে শত্রুতার জের ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।
কিশোরীর আত্মহত্যা : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্লিনার রেশমা আক্তার বীনার (১৪) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে দক্ষিণখান থানা পুলিশ বীনার বাসার দরজা ভেঙে ঘরের আড়ায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দেয়া অবস্থায় তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
দক্ষিণখান থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, বীনার বিমানবন্দরে যাতায়াতের সময় আমান নামে এক যুবক তাকে
প্রতিদিনই উত্ত্যক্ত করত। এতে অতিষ্ঠ হয়ে বীনা আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ মনে করছে। নিহত বীনার বাবার নাম লিয়াকত আলী। বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। সে দক্ষিণখান থানার ২৮৬, দক্ষিণ গাওয়াইর এলাকায় থাকত। পুলিশ জানায়, বখাটে আমানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নিহত বীনার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।
যুবক গ্রেফতার : রাজধানীর মানিকনগর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রকি (২২) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে রকিকে মান্ডার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পরও বিয়ে না করায় রকির বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় সবুজবাগ থানা পুলিশ মান্ডার বাসা থেকে রকিকে গ্রেফতার করে। সবুজবাগ থানার ওসি আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, গত এক বছর আগে রকি ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ওই ছাত্রী রকিকে বিয়ে করতে বললে সে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে টাকা দিয়ে রকি তাদের সম্পর্কের রফা করার প্রস্তাব দেয়। ওই স্কুলছাত্রী সবুজবাগ থানায় ধর্ষণ আইনে মামলা করে।
মুদ্রাসহ যাত্রী গ্রেফতার : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে ২২ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ গোলাম রব্বানী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। মুদ্রাগুলো তার লাগেজে ছিল বলে কাস্টমসের সূত্র জানায়। গ্রেফতারকৃত গোলাম রব্বানী আমিরাত এয়ারের ফ্লাইটে দুবাই যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
গুলিতে ব্যবসায়ী আহত : রাজধানীর খিলগাঁওয়ে গতকাল দিনে-দুপুরে ছিনতাইকারীদের গুলিতে ব্যবসায়ী মাহে আলম (৬৫) আহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনার সময় তার ব্যাগে ১০ লাখ টাকা ছিল বলে খিলগাঁও থানার এসআই জাকির জানান। তাকে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ব্যবসায়ী আলম খিলগাঁও সোনালী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলেন। তিনি টাকার ব্যাগ নিয়ে নিজের গাড়িতে খিলগাঁও আইডিয়াল স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাকে গুলি করে চলে যায়। এসআই জাকির আমার দেশকে জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে ব্যবসায়ী আলমকে গুলি করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।

নাটোরে বিএনপি নেতাসহ বিভিন্ন স্থানে ৮ জন খুন

ডেস্ক রিপোর্ট

নাটোরের সিংড়ায় এক বিএনপি নেতাকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে ত্রিমহনী গুরনই নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য স্থানে আরও ৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের খবর :
নাটোর ও সিংড়া : নাটোরের সিংড়ায় কলম ইউনিয়নের নাছিয়ারকান্দি গ্রামে আসলাম মোল্লা (৪০) নামের এক বিএনপি নেতাকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে ত্রিমহনী গুরনই নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আসলাম মোল্লা কলম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি আবদুর রহমানের ছেলে এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল মোল্লার ছোট ভাই। আসলাম মোল্লা এক সন্তানের জনক।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, আসলাম মোল্লা প্রতিদিনের মতো সোমবার রাত ৯টার দিকে পূর্বপাড়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজখুঁজির পরও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে গুরনই ত্রিমহনী নদীতে আসলামের লাশ দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পরে সিংড়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নাসিরুল ইসলাম, সার্কেল এসপি আপেল মাহমুদ, র্যাবের এএসপি হুমায়ন কবির, সিংড়া থানার ওসি ফয়জুর রহমান।
নিহতের বড় ভাই মোজাম্মেল চেয়ারম্যান বলেন, আসলাম মোল্লার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল ফটিক বলেন, নিহতের ভাইয়েরা দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার
বিরোধ থাকতে পারে।
সিংড়া থানার ওসি ফয়জুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কোন্দলের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : বাবার সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পার্বতীপুর উপজেলায় বড় ভাইকে খুন করেছে ছোট ভাই। ঘটনাটি ঘটেছে চণ্ডিপুর ইউনিয়নের বড় হরিপুর মধ্যমেড়েয়া গ্রামে সোমবার রাতে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের মোহাম্মাদ হোসেন কবিরাজের ছেলে মাহাতাব আলী (৩৩) তার বাবার সম্পত্তি একটি ব্যাংকে রেখে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে আসছিল। এ নিয়ে অন্য ভাইয়েরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। ছোট ভাই জিকরুল হক জিকু (২১) সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় তাকে ডেকে নিয়ে বাড়ির বাইরে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : উপজেলার মীরগাং গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরে সোমবার রাতে গৃহকর্তা আবু বক্কার সরদারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
সোমবার রাতে খাওয়া শেষে ঘুমাতে যাওয়ার পর গতকাল সকালে পরিবারের সদস্যরা মীরগাং গ্রামের মৃত ছাকাত সরদারের ছেলে আবু বক্কার সরদারকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রী রেহেনা বেগমের সঙ্গে স্থানীয় এক যুবকের পরকীয়ার জের ধরে রাতে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল ভোরে তড়িঘড়ি করে দাফনের খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : শায়েস্তাগঞ্জের কাজীরগাঁও থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত ব্যক্তি হবিগঞ্জ শহরতলির জালালাবাদ গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে সাহাব উদ্দিন (৩৬)। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ বাবর আলী জানান, ২৬ নভেম্বর হবিগঞ্জ শহর থেকে টমটমচালক ওই সাহাব উদ্দিন নিখোঁজ হন। এরপর ২৭ নভেম্বর টমটমের মালিক স্বপন মিয়া হবিগঞ্জ সদর থানায় একটি জিডি করেন। ১৮ দিন পর শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ খবর পেয়ে ওই গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট সফিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা) : নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন পর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শেরপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে সোহেল রানা রিপনের লাশ পাওয়া গেছে ঝালেঙ্গী গ্রামের আখক্ষেতে। ঘাতকরা তার ডান চোখ উত্পাটনের পর ছুড়িকাঘাতে হত্যা করেছে। নিহত সোহেল রানা রিপনের (১৬) এবার সাদুল্যাপুর উপজেলার ইদ্রাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে রোববার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সোমবার দুপুরে তার লাশ পাওয়া যায়। এ নিয়ে পলাশবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকালে বাড়িতে রিপনের লাশ নিয়ে যাওয়া হলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মংলা (বাগেরহাট) : মংলা শহরতলির কুমারখালী এলাকা সংলগ্ন খাল থেকে জোসনা খাতুন (১০) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে মোড়গঞ্জের বড় বাঁশবাড়িয়া এলাকা থেকে জোসনা খাতুন বাবা শহিদুল ইসলামের সঙ্গে মংলা যান। গত ৩-৪ দিন আগে সে নিখোঁজ হয়। সোমবার সকালে তার লাশ স্থানীয় খালে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে গতকাল সকালে বাগেরহাটে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এ ব্যাপারে বাবা শহিদুল ইসলাম বাদী একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মিঠাপুকুর (রংপুর) : মিঠাপুুকুর থানা পুলিশ গতকাল সকালে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের বৈরাগীগঞ্জ এলাকা থেকে আ. ছাত্তার (৬০) নামের এক ইউপি সদস্যের লাশ উদ্ধার করেছে। তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর বৈরাগীগঞ্জ ব্রিজের পাশে ফেলে রাখা হয়। নিহত আবদুস ছাত্তার রংপুর কোতোয়ালি থানার দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তার বাড়ি পূর্ব নাজিরদীগর গ্রামে। থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ : বিয়ের মাত্র ৫ দিন আগে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হলেন হাজেরা খাতুন (১৮) নামের এক তরুণী। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশে প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হাজেরা ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের রফিউদ্দীন চৌধুরীর মেয়ে। ২০ ডিসেম্বর হাজেরার বিয়ের দিন ছিল।
হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি জানিয়েছেন, প্রেমঘটিত কারণে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে হত্যাকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।