Tuesday 26 April 2011

পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে জামায়াতের উদ্বেগ : পার্বত্য চুক্তি শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

গত রোববার খাগড়াছড়িতে ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের আক্রমণে চারজন বাঙালি নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
গতকাল এক বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে ওই এলাকার জনগণের সহায়-সম্পদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ১০ বছরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ১৯০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং ৪৫০ জনের মত পাহাড়ি ও বাঙালি নিহত হয়েছে। গত ৩ মাসে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার জনগণের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ চুক্তি অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যখন এ চুক্তি হয়েছিল তখনও আমরা বলেছিলাম, এ অসম চুক্তি ওই এলাকার জনগণের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আমাদের সে কথাই আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তথাকথিত শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে সেখানে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তদুপরি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য বাঙালি এবং সারাদেশের জনগণের মতামত উপেক্ষা করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করার ফলেই আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি খাগড়াছড়ির বানগড় উপজেলার বড় পিলাক কচু বাউন্তী এলাকায় রোববার পাহাড়িদের হামলায় ৪ জন বাঙালি নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি, নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান এবং ওই এলাকার সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অনিয়ম দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হয়ে এনটিআরসিএ বিলোপের সিদ্ধান্ত

রিয়াজ চৌধুরী

অনিয়ম-দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে একটি পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, যা শিক্ষকদের প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের ব্যবস্থা করা ছাড়াও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। তবে তা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে বলে জানা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার স্তরভিত্তিক বেসরকারি শিক্ষকের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞান ও দক্ষতার ভিত্তিতে ন্যূনতম শিক্ষক মান নির্ধারণ করা, তুল্যমানের একটি স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের ব্যবস্থা করা এবং তাদের তালিকা বা পুল তৈরি করা এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। অনৈতিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এনটিআরসিএ থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষক ভুয়া এনটিআরসিএ’র সনদ দিয়ে চাকরি করছেন। নিয়মিত এ বিষয়ে মাউশিতে অভিযোগ আসছে। কিন্তু মাউশির একটি অসাধুচক্র অনৈতিক পন্থায় ভুয়া সনদধারী শিক্ষকদেরও এমপিওভুক্ত করছে। এসব অনিয়মের পাশাপাশি অন্যান্য কারণেও সংস্থার ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দুর্নীতি ও অনিয়মে বেসামাল হয়ে সংস্থাটিকে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতিতে এনটিআরসিএকে বিলুপ্ত করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে যাতে শিক্ষক নিয়োগে কোনো ত্রুটি থাকবে না। দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নিতে হবে। পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন, তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকবে, সেই শূন্যপদের তালিকা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ফলে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব আর থাকবে না। তাহলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থায় ভুয়া সনদধারী ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের সংখ্যাই বেশি। এনটিআরসিএ’র নিয়োগ কমিটি গত বছরের ১৮ মে দুজন সহকারী পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ করে। কিন্তু সংস্থার তত্কালীন চেয়ারম্যান কবীর উদ্দিন আহমেদ সরকারি নিয়মনীতি, সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রবিধানমালা এবং এনটিআরসিএ আইন ২০০৫-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৬ জন সহকারী পরিচালক নিয়োগ দেন। গত বছরের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ অনিয়ম প্রমাণিত হয়। পরে সংস্থার ৩২তম নির্বাহী কমিটির সভায় ৫ জন সহকারী পরিচালকের নিয়োগ বাতিল করার জন্য ঐকমত্য পোষণ করা হয়। কিন্তু এ নিয়োগ আর বাতিল করা হয়নি। এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এনটিআরসিএ’র ৩৫তম নির্বাহী বোর্ডের সভায় সংস্থার এমএলএসএস মো. রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ তার নিয়োগকালীন দাখিলকৃত সনদপত্র ছিল ভুয়া। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড তার সনদপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর প্রমাণ পেয়েছে বলেও সভায় তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে ৬ষ্ঠ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল নিয়ে চলছে বিতর্ক। অভিযোগ রয়েছে, এ পরীক্ষায় শতকরা ৪ দশমিক ৫৭ ভাগ প্রার্থী উত্তীর্ণ হলেও সরকারিভাবে পরীক্ষায় পাসের হার ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে সংস্থায় তোলপাড় চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিআরসিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, ৬ষ্ঠ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ফল জালিয়াতি হয়েছে। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান, একজন সদস্য (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) ও একজন উপ-পরিচালক কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন করেছেন। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রায় তিনশ’ জনকে পরীক্ষায় পাস করিয়েছেন। এছাড়া আবশ্যিক বিষয়গুলোতে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান) বেশিরভাগ প্রার্থী ফেল করায় তাদেরকে গ্রেস নাম্বার দিয়ে পাস করানো হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি ওপেন সিক্রেট বলে ওই কর্মকর্তা জানান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করত ঢাকা বোর্ডের কম্পিউটার সেন্টার। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো বায়োমেট্রিক্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান ফলাফল তৈরির কাজটি করে। জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক এনটিআরসিএ’র এক সদস্যের (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাই জালিয়াতচক্র কম্পিউটারের গোপন নম্বর, কোড নম্বর জানত। যে কারণে ফলাফল ইচ্ছেমত পরিবর্তন করতে কোনো সমস্যা হয়নি। এদিকে পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী যতটা অবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তরে টিক মার্ক দিয়েছেন, তার চেয়ে কয়েক নম্বর বেশি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এ পরীক্ষায় যারা পাস করেননি, তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। গত ২০ মার্চ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের অবহেলা, উদাসীনতা, দুর্নীতি, খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ত্রুটির কারণে ষষ্ঠ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন পরীক্ষায় আমরা পাস করতে পারিনি। এ পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাইস্কুলের তিন শিক্ষিকার (তিনজনই সরকারদলীয় নেতার স্ত্রী) বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ নিয়ে এমপিওভুক্তির সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আসে মাউশিতে। কিন্তু এই সনদ জালিয়াতির দায়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। উল্টো যাদের বিরুদ্ধে সনদপত্র জালিয়াতির অভিযোগ আসে, তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীসহ সারাদেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে ভুয়া সনদ দিয়ে অনেকে চাকরি করছেন। এমনকি এমপিওভুক্তির সময় মাউশি কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এনটিআরসিএ’র সনদ যাচাই-বাছাইও করেন না।
সনদ জালিয়াতির বিষয়ে এনটিআরসিএ সদস্য (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) ও যুগ্ম সচিব ছামেনা বেগম আমার দেশকে বলেন, এনটিআরসিএ’র সনদ জালিয়াতচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৬৪ জেলা প্রশাসক এবং সব জেলা শিক্ষা অফিসারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সংস্থার নিজস্ব ও স্থায়ী অফিস নেই। আইন বিষয়ক একজন কর্মকর্তাও নেই, নেই পর্যাপ্ত জনবলও। তাই আমরা ইচ্ছা করলেই দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তিনি জানান, ভুয়া সনদের বিষয় চিহ্নিত হওয়ার পর এমএলএসএস মো. রাকিব হোসেন চাকরি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ৬ষ্ঠ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ফল ঠিকই আছে; কোনো অনিয়ম হয়নি।
মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর মো. নোমান উর রশিদ আমার দেশকে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের লাগাম টেনে ধরতে সরকার সংস্থাটিকে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতিতে একটি পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে। কত সময় লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি হুট করেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে কত বছর লাগবে এখনই বলা মুশকিল।
মাউশি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর দীপক কুমার নাগ আমার দেশকে বলেন, প্রায়ই এনটিআরসিএ’র ভুয়া সনদ চিহ্নিত করছে মাউশি। তবে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার যেসব শিক্ষকের এনটিআরসিএ’র সনদপত্র জাল বা সন্দেহজনক মনে হয়, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এনটিআরসিএ’তে পাঠানো হয়। এতে সনদপত্র জাল প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রচলিত বিধি অনুসারে দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ প্রদানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ বেতন সরকার প্রদান করলেও পরিচালনা পর্ষদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া বহুক্ষেত্রে নানারকম অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটে। এমনই প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এনটিআরসিএ। কিন্তু সেই সংস্থাও অনিয়ম-দুর্নীতির বেড়াজাল হতে বেরুতে পারেনি।

আবারও অস্থির পণ্যবাজার : মাছ-গোশত চাল চিনি তেল রসুনের দাম বেড়েছে, ইলিশের কেজি ১০০০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার

আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছ-গোশত, চাল, চিনি, তেল, রসুনসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অনুসন্ধানে গত সপ্তাহে তিনটি পণ্য তেল, চিনি ও রসুনের দাম বেড়েছে বলে ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের প্রথম সপ্তাহে বিকিকিনি বেশি হওয়ার সুযোগ নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নামি দামি কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ফলে বাজারে সৃষ্ট কৃত্রিম সঙ্কটের সুযোগে দাম বেড়ে যায়। ক্রেতারা জানান, সবশ্রেণীর ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা লুটে নেয়। তারা বাজার মনিটরিংয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। রাজধানীর একাাধিক বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, মাছ ও গোশতের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশ মাছের কেজিপ্রতি দাম দ্বিগুণ বেড়ে এক হাজার টাকায় উঠেছে। ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ৭-৮শ’ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, পাঁচদিন পরই বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ। এ উত্সবের অন্যতম অনুষঙ্গ পান্তা-ইলিশ। এ কারণে দাম বেড়েছে। তবে ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, মাছ ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অন্যান্য মাছের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি শিং মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা, আইড় মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, রুই ও কাতল মাছ ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে মাছের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে গোশতের দামও। প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৩৫০-৪০০ টাকা, ব্রয়লার ১৩০ টাকা, লেয়ার ১২৫ টাকা, গরুর গোশত ২৮০ টাকা ও খাসি ৪৫০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। ডিমের দাম প্রতি হালি ২৪ টাকা।
টিসিবি’র হিসাবে গত সপ্তাহে তিনটি পণ্য তেল, চিনি ও রসুনের দাম বেড়েছে। সংস্থার মতে, পাম তেল (খোলা) লিটারে ৩ টাকা, চিনির দাম কেজিতে ১ টাকা ও রসুনের দাম ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাম তেলের লিটার ৯১-৯৩ টাকা থেকে বেড়ে ৯৪-৯৫ টাকা, চিনির দাম ৫২-৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩-৫৬ টাকা ও রসুনের দাম ১০০-১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১২৫-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাম তেল (খোলা) প্রতি লিটার ১১০ টাকা, চিনি (খোলা) ৫৫-৫৬ টাকা ও রসুন ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১২০ টাকা, তীর ব্রান্ডের ৫ লিটার ৫৬০-৫৭০ টাকা, রূপচাঁদা ৫৭০, নূরজাহান ৫৬৫, দাদা ৫৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মিনিকেট চাল কেজি ৫৪-৫৫ টাকা, পারি ৪১-৪২ টাকা, বিআর (২৮) মানভেদে ৫০-৫১ টাকা, নাজিরশাইল মানভেদে ৪৪-৫০ টাকা, স্বর্ণা ৩৬-৩৭ টাকা, হাসকি ৩৬-৩৭ টাকা ও পোলাও চাল মানভেদে ৬৫-৮০ টাকা। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩০-৩৩ টাকা, প্যাকেটজাত ২ কেজি ৭০-৭২ টাকা, মসুর ডাল দেশি ১০৫ টাকা কেজি, ক্যাঙ্গারু ১১০-১১৫ টাকা, মোটা দানা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসলাজাত পণ্যের মধ্যে দেশি আদা প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা, দেশি রসুন ৬০-৭০ টাকা কেজি, আমদানি রসুন ১৪০-১৬০ টাকা, পেঁয়াজ ২০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা এবং হলুদ ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সবজির বাজারে চড়াভাব বিরাজ করছে। করলা প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, গোল বেগুন ২৫-৩০ টাকা, লম্বা বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, পটল ৩৫ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, শসা ২০-২৫ টাকা, আলু ১০ টাকা, মরিচ ৪০ টাকা এবং টমেটো ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।