Friday 10 December 2010

দরপতনে শেয়ারবাজার টালমাটাল : বিক্ষোভ : বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ কারসাজি; খতিয়ে দেখা হবে : এসইসি



কাওসার আলম


পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) দুই সিদ্ধান্তের কারণে গতকাল টালমাটাল হয়ে ওঠে শেয়ারবাজার। লেনদেন শুরুর পর মাত্র সোয়া ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সবক’টি কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ মূল্যসূচকের পতন ঘটে ৫৪৭ পয়েন্ট। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এ ধরনের দরপতনের ঘটনা নজিরবিহীন। আর দরপতনের এ ঘটনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের দখলে ছিল শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত। এ সময় তারা রাস্তায় আগুন জ্বালায় ও গাড়ি ভাংচুর করে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের এ দরপতনের জন্য অর্থমন্ত্রী, এসইসি চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং ডিএসই প্রেসিডেন্টকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করতে পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে এ দরপতন ঘটানো হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বমহল, এসইসি, ডিএসইর সঙ্গে যোগসাজশ করে জুয়াড়ি চক্র দরপতন ঘটিয়েছে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। শেয়ারবাজারে দরপতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।
এদিকে শেয়ারজবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুপুর ১২টার দিকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পরপরই পাল্টে যায় শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি। পতন থেকে হঠাত্ করেই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে শেয়ারবাজার। এ যেন ম্যাজিক। দ্রুত দাম বাড়তে থাকে অধিকাংশ কোম্পানির। ৫৪৭ পয়েন্ট পতন থেকে বেলা ২টার দিকে ডিএসই সূচক বেড়ে যায় ৫৮৮ পয়েন্ট। চরম ঋণাত্মক অবস্থা থেকে ধনাত্নক ধারায় ফিরে আসে বাজার সূচক। বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ লেনদেনে অংশ না নেয়া সত্ত্বেও সূচকের এ পরিবর্তনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় নানা প্রশ্নের। তবে দিন শেষে ডিএসই সাধারণ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩৪ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৪৫১ পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে ডিএসই সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪৬৭ পয়েন্টের।
দরপতন এবং উত্থান বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা বলেন, লেনদেনের শুরুতে কারসাজি করে দরপতন ঘটানো হয়েছিল। এখন তারাই আবার দর বাড়াচ্ছে। যেভাবে পতন ও উত্থান ঘটানো হচ্ছে তাতে পুঁজিবাজার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ নয় বলে তারা মনে করেন। ১৯৯৬ সালের শেয়ারবাজারের পতনের ঘটনা উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীরা বলেন, তখনও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল, এখনও সে সরকারই ক্ষমতায় রয়েছে। তখনও পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল কয়েকটি চক্র। এখনও বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়ার একই প্রক্রিয়া চলছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজারে এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। বাজার অতিমূল্যায়িত এবং ঝুঁকিপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাজারকে জোর করে টেনে নামানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো ধরনের বিশ্লেষণ ছাড়াই একের পর এক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার সেসব সিদ্ধান্তও ঘন ঘন পরিবর্তন কিংবা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এসইসি। এসইসির এ ভূমিকার কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। আর গতকালের দরপতনেও রয়েছে এসইসির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এসইসি এ দায় এড়াতে পারে না।
দরপতনের এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিজেরাও অবাক হয়েছি এ ধরনের দরপতনের ঘটনায়। আমরা বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অনেক সময়েই পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে। এটি হতে পারে। ব্যাপক দরপতনের পর হঠাত্ বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া প্রসঙ্গে এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, স্টক মার্কেটে ব্যাপক দরপতনের পর আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ভারতের স্টক মার্কেটের উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে বোম্বে স্টক মার্কেটে একদিনে ৬০০ পয়েন্টের পতনের পর ৪০০ পয়েন্ট বেড়েছিল। সুতরাং এ ধরনের পতন ও উত্থান হতে পারে। আগামীকাল (আজ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বিনিয়োগকারীদের অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার এবং আস্থা না হারানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
অপরদিকে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহিরুল আলম বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হবে। দরপতনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসইসি দুটো সিদ্ধান্ত পরিপালনে স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেয়। এ দুটি সিদ্ধান্তের কারণে পতন হয়েছে কি না— তা আমরা নিশ্চিত নই। তবে এসইসি সিদ্ধান্ত দুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
যে দুটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিল এসইসি : শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এসইসির সার্ভিল্যান্স বিভাগ থেকে গত ৬ এবং ৭ তারিখে দুটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরিত এসইসির নির্দেশে বলা হয়, গ্রাহকের বিও একাউন্টের হিসাবে টাকা জমা করে তা ক্লিয়ারিং করে নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো গ্রাহক শুধু চেকের বিপরীতে শেয়ার ক্রয় করতে পারবে না। এসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, চেক নগদায়নের আগে ক্রয়াদেশ বাস্তবায়ন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৬(এ) ধারার পরিপন্থী। এজন্য ডিএসই এবং সিএসইকে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ক্রয়াদেশ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর এসইসি ম্যাচিউরড শেয়ার বিক্রয় না করে শেয়ার ক্রয়ে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং পোর্টপোলিও ম্যানেজার বিনিয়োগকারীদের আগাম অর্থায়ন সুবিধা বন্ধ করে দেয়। বিক্রয়কৃত সিকিউরিটিজের মূল্যের সঙ্গে আগাম অর্থায়িত তহবিলের সমন্বয় সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী উল্লেখ করে এসইসি স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও পোর্টপোলিও ম্যানেজারের কাছে পত্র পাঠায়। বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এসইসির পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এসইসি প্রকৃতপক্ষে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। আগেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছিল না। শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন করে এসইসির পক্ষ থেকে তা পরিপালনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাত্র। কিন্তু গতকাল এসইসি বাজারের আরও বড় ধরনের পতন ঠেকাতে সিদ্ধান্ত দুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু এর ফলে শেয়ারবাজার আরও বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
চেয়ারম্যান জানে না : যে দুটি সিদ্ধান্তের কারণে গতকাল বাজারে ধস নেমেছে এ ব্যাপারে এসইসি চেয়ারম্যান আগে কিছু জানতেন না। এসইসির সদস্য মনসুর আলমের পরামর্শে এ দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মনসুর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিদ্ধান্তের বিষয়টি চেয়ারম্যানকে পরে জানিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা নতুন কোনো সার্কুলার জারি করিনি। তাহলে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দরপতনের কারণ : গতকাল লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীরা তাদের ম্যাচিউরড শেয়ারের বিপরীতে শেয়ার ক্রয় করতে চাইলে ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংক তার অনুমতি দেয়নি। শেয়ার বিক্রি না করে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে এসইসির নির্দেশ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। ফলে অনেক বিনিয়োগকারীই বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। একই সঙ্গে এ বিক্রি শুরু হলে দ্রুত শেয়ারের দরপতন হতে থাকে। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর দরপতনের কারণে সূচকেরও দ্রুত পতন হতে থাকে। দরপতনে বিনিয়োগকারীরা আরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে শেয়ার বিক্রিতে অস্থির হয়ে পড়েন। তা সংক্রমিত হতে থাকে অন্যদের মাঝেও। বেলা সোয়া ১২টার দিকে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪১টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৬টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়। আর দরপতন ঘটে ২৩৫টি কোম্পানির। আর এ দরপতনে ডিএসই সাধারণ সূচক কমে যায় ৫৪৭ পয়েন্ট। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এ ধরনের দরপতন এটিই প্রথম। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, জুয়াড়িচক্রকে সুযোগ করে দিতেই পরিকল্পিতভাবে দরপতন ঘটানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর সদস্য আবদুর রশীদ লালী বলেন, এসইসির সিদ্ধান্ত দুটি নতুন নয়। কিন্তু এতদিন তা কার্যকর করা হয়নি এবং এসইসিও বিষয়টি ওভারলুক করে আসছিল। কিন্তু গত সোম এবং মঙ্গলবার বাজারে স্বাভাবিক দর সংশোধন হয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিক দর সংশোধন যখন হচ্ছিল তখনই এসইসির পক্ষ থেকে এগুলো কার্যকর করতে বলা হয়েছে। দুটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়েই বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চেক ক্লিয়ারিং ছাড়া শেয়ার ক্রয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করায় এবং ম্যাচিউড শেয়ারের বিপরীতে শেয়ার কেনার সুযোগ না দেয়ায় বিনিয়োগকারীদের নগদ টাকায় শেয়ার কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজারকে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় আনার ফলে কোনো গ্রাহক একবারে নগদ ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা গ্রহণ বা প্রদান করতে পারছেন না। একদিকে নগদ টাকায় লেনদেনে বাধ্য করা অপরদিকে ৫ লাখ টাকার বেশি নগদ লেনদেনে বাধা—এ দুয়ের কারণে এবার বাজারে পতন হলেও তা ঠেকানোর জন্য কোনো সাপোর্ট ছিল না। সিদ্ধান্ত দুটি প্রত্যাহারের ফলে পুঁজিবাজার বড় ধরনের সঙ্কট থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তা না হলে এটি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক থার্স্টডে’ হিসেবে পরিগণিত হতো।
বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ : শেয়ারবাজারে দ্রুত দরপতনে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে মিছিল শুরু হয়। মিছিলকারীরা অর্থমন্ত্রী, এসইসি চেয়ারম্যান, ডিএসই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। আরও দরপতন হতে থাকলে এবার বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারী রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় তারা মতিঝিলস্থ শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাকের মোড় দখল করে নেয়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট, যান চলাচল। ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা এ সময় দুটি গাড়ি ভাংচুর করে। ডিএসই ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। রাস্তা অবরোধ করে তারা মুহুর্মুহু স্লোগানে কাপিয়ে তোলে রাজপথ। কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেয়। বিনিয়োগকারীদের অনেকে জানান, পুঁজি হারিয়ে তাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বেশ কয়েকজন যুবক জানান, তারা চাকরি না পেয়ে শেয়ারবাজারে এসেছেন। কিন্তু এসইসি, ডিএসই এটিকে জুয়ার বাজার বানিয়ে আমাদের পুঁজি লুট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন চক্রকে সুযোগ করে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করলেও পুলিশ অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করে। তবে বেলা ১টার দিকে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে র্যাব সদস্যরা যোগ দেয়। রাস্তা থেকে বিনিয়োগকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। পুলিশ তাদের হটিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে। এতে কয়েকজন বিনিয়োগকারী আহত হন। তবে বেলা দুইটার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করে।
বিনিয়োগকারীদের নানা অভিযোগ : শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। তবে তাদের বেশিরভাগই এসইসির কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, এসইসি বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে। তাদের কারণে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রিমিয়ামের নামে কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজার থেকে অতিরিক্ত অর্থ তুলে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে তারা বলেন, কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামের নামে বাজার থেকে টাকা হরিলুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা প্রিমিয়াম নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকতাভুক্তির সুযোগ বন্ধ করে দেয়ার পরও বাণিজ্যমন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপকে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে এসইসি। তাদের অভিযোগ, এসইসির কর্মকর্তারা জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগসাজশ করে শেয়ারবাজারে পতন ঘটিয়েছে। পারভেজ আলম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এসইসি ২ দিন পর পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। ফলে বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে। ইকবাল বাহার বলেন, মার্কেটে শেয়ারের দাম ১০ টাকা ২০ টাকা করে কমবে। কিন্তু একদিনেই ১০০ টাকা পড়ে যাবে—এটাকে বাজার সংশোধন না বলে বাজার ধ্বংস বলা যায়। আর এজন্য এসইসি দায়ী। নুরূল আমিন নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, দরপতনের কারণে তার ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকাই শেষ হয়ে গেছে।
পদত্যাগ দাবি : ঘোষণা দিয়েও সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে আনতে না পারার কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, জুন মাসে ২৬টি সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারের ছাড়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি শেয়ারও আসেনি। আবার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৮টি, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ২৬টি সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হবে বলা হলেও অর্থমন্ত্রী তা করতে পারেননি। অথচ শেয়ার সরবরাহ না থাকার কারণে বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া অভিহিত মূল্য পরিবর্তনে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বলে তারা মনে করেন। শেয়ার আনতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তারা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হিসেবে উল্লেখ করে এসইসি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার এবং ডিএসই প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভীর পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
ডিএসই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সাক্ষাত্ : এদিকে বাজারে ব্যাপক দরপতন হলে ৫ জন বিনিয়োগকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে ডিএসই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। এ সময় ডিএসইর নির্বাহী কর্মকর্তা সতীপতি মৈত্র, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহরুল আলমসহ ডিএসইর অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রতিনিধি দলটি বলেন, তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এসইসির ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে লংটার্ম বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সব সময় এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে একজন বলেন, অভিহিত মূল্য পরিবর্তনে সম্মতি দিয়ে তিনি শেয়ারবাজারকে জুয়ার বাজারে পরিণত করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এটি কার স্বার্থে করা হয়েছে? এর মাধ্যমে মার্কেটকে ধ্বংস করা হয়েছে। তারা শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে রোডম্যাপ দেয়ার জন্য ডিএসই কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানান। তারা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি চাই না। শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল দেখতে চাই। প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফয়সাল আহমেদ, রবিউল ইসলাম, আতাই গাজী মাহবুব, আহমেদ উল্লাহ ও শাহজাহান জুয়েল।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণে শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলটি এসএসকে রোডের রয়্যাল ক্যাপিটালের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে প্রায় তিন শতাধিক বিনিয়োগকারী অংশ নেন

No comments:

Post a Comment