Sunday 27 March 2011

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা : ভালো নেই আড়াইহাজারের তাঁতমালিক ও শ্রমিকরা













আলাউদ্দিন আরিফ, আড়াইহাজার থেকে ফিরে
ভরদুপুর, বিদ্যুত্ও আছে। যে মেশিনটিতে কর্মব্যস্ত সময় কাটানোর কথা, সেটির পাশেই বিছানা পেতে শুয়ে থেকে অলস সময় কাটাচ্ছেন আইয়ুব মিয়া। তার কারখানাটি দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ। কোনো কাজ নেই। তাই হাতে অফুরন্ত সময়। সুতার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে কাপড় বুনে পড়তায় পোষায় না। তাই ছোট্ট এই কারখানাটির মালিক হাজী ইস্রাফিল সেটি সচল রাখতে পারছেন না। সুতার দাম যদি স্বাভাবিক হয়—এই আশায় অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ছাড়তে চাইছেন না। আইয়ুব মিয়া জানান, ‘সুতার দাম ডাবল দুই ডাবল বাড়ছে; পাউন্ডে বাড়ছে দেড়শ’ ট্যাহার বেশি। পড়তায় পোষায় না, তাই মেশিন বন্ধ।’ আশরাফ টেক্সটাইল নামে ছোট ওই কারখানাটির মালিক বসিয়ে রেখেই অল্পস্বল্প বেতন দিচ্ছেন ২০ জন শ্রমিককে। আইয়ুব মিয়ার কারখানাটি নারায়ণগঞ্জ জেলার দুপতারা ইউনিয়নের কালীবাড়া বাজারের কাছে পাটিতাপাড়ায়। এখানকার প্রতি ঘরে ছোট ছোট অসংখ্য তাঁতকল। সুতার দামের পাগলা ঘোড়ার কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্রামের মানুষ কেমন আছে দেখার জন্য আমরা গত সোমবার সরেজমিনে যাই ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায়। এ উপজেলাটি তাঁত ও শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ। এখানকার বাসিন্দারাও বেশ বিত্তবান। কিন্তু এখন তাদের সেই বিত্তে চিড় ধরেছে। এখন অনেকেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁতের কারখানাগুলো। ভোলাব, দাইদপুর, মাহ্মুদপুর, সাতগ্রাম, গোপালদী, বিশনন্দী, উচিতপুরা, খাগকান্দা, হাইজাদী, কালাপাহাড়িয়া, দু্পতারা, কালীবাড়ি, সদাসদী, ব্রাহ্মণদী, ফতেপুর, ছোট বিনাইয়েরচর ও আড়াইহাজার এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে মানুষের দুর্দশার চিত্র। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলেন, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। তার ওপর এলাকার অর্থনীতির মূলশক্তি তাঁতগুলোর প্রায় সবই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে উপজেলাজুড়ে অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা পল্লীবিদ্যুত্ সমিতির গ্রাহক হিসাব অনুযায়ী আড়াইহাজার উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে তাঁত কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৫৯৩টি। একেকটি কারখানায় কমপক্ষে ২০ থেকে ৫শ’ পর্যন্ত তাঁতকল আছে। গত এক মাসে ১২২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে; স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুত্ সংযোগ। ১৩টি কারখানার সংযোগ স্থায়ীভাবে কেটে দেয়ার জন্য গ্রাহকদের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। পল্লীবিদ্যুত্ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, যেসব কারখানায় এখনও বিদ্যুত্ সংযোগ আছে সেখানেও ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ তাঁতকল বন্ধ। পরে সংযোগ পেতে বিড়ম্বনা হবে বা শ্রমিক পাওয়া যাবে না—এই আশঙ্কায় মালিকরা এখনও বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুরো উপজেলা তাঁতকলশূন্য হয়ে পড়তে পারে বলে উপজেলা পল্লীবিদ্যুত্ সমিতির এক কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আড়াইহাজার উপজেলার যে কোনো সড়কের দু’পাশেই সারি সারি ঘরে হাজার হাজার তাঁতকল। দিন-রাত দুই শিফটে খটখট শব্দ করে সার্বক্ষণিক সচল থাকত তাঁতকলগুলো। এখন এসব ঘরে ঝুলছে তালা। শোনা যাচ্ছে না তাঁতের খটখট শব্দ। ছোটখাটো তাঁত মিলের অনেকে নিজের কারখানা বিক্রি করে কাজ নিয়েছেন অন্যের কারখানায়। ঋণের দায়দেনার ভয়ে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ।
দুপতারা এলাকার প্রমিজ টেক্সটাইলের ম্যানেজার কমলচন্দ্র দাস বলেন, সুতার দাম বাড়ায় তাদের ৪৮টি কলের ২৫টি বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কয়টি চালু আছে, সেগুলোও শ্রমিকদের অনুরোধে চালু রেখেছে মালিকপক্ষ। একদিকে সুতার বাড়তি দাম; অন্যদিকে লোডশেডিং—সব মিলিয়ে খুবই বিপদে আছেন তারা। আগে যেখানে একজন শ্রমিক দিনে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা রোজগার করতেন, এখন তাদের ১০০ থেকে ১৫০ টাকা রোজগার করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তাঁত কারখানায় কাজ করে ছোট বিনাইয়েরচর গ্রামের শফিকুল ইসলাম। আগে সপ্তাহে রোজগার করত ১৫শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। এখন কারখানা বন্ধ। মা-বাবা, ভাইবোনসহ ৫ জনের সংসার। কারখানা বন্ধ হলেও অভিজ্ঞ শ্রমিক হওয়ায় মালিক এখনও বিদায় দেয়নি। সপ্তাহে ৫শ’ টাকা করে দেন। এই টাকা দিয়েই চলছে তাদের সংসার। পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১০ হাজার টাকা লোন নিয়েছেন। এখন সেটার কিস্তি দেয়াই দায় হয়ে পড়েছে বলে জানালেন শফিকুল।
কালীবাড়ি বাজার এলাকার তারিকুল ইসলাম টিপু জানান, তাদের ১২টি তাঁতকল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন পুরোপুরি বেকার। অন্য কোনো কাজও তেমন একটা শেখেননি। ফলে নিদারুণ কষ্টে কাটছে তাদের দিন।
আড়াইহাজারের থানকাপড়ের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ও আমান উল্লাহ জানান, সুতার বাজার প্রতিদিনই ওঠানামা করছে। একদিন পাউন্ডপ্রতি ২-৩ টাকা দাম কমলে পরেরদিন আবার ১৫-২০ টাকা বেড়ে যায়। একই হারে কাপড়ের দাম বাড়ছে না। তার ওপর বড় মিলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না ক্ষুদ্র কারখানার শ্রমিকরা। ফলে দিন দিন তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা এ অবস্থার জন্য সুতার বাজারে সিন্ডিকেট ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে খুলনায় বাণিজ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ
















খুলনা অফিস

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন খুলনা জেলা ও মহানগর সংসদের উদ্যোগে গতকাল সকালে নগরীর প্রাণকেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সকালে যুব ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বাণিজ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকাসহ মিছিল নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড়ে আসে এবং তাতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে বক্তৃতা করেন যুব ইউনিয়ন খুলনা জেলা সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, হৃদয় সরকার, ওবাইদুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম শান্ত, মঞ্জুরুল ইসলাম সাগর, সুজন নাথ প্রমুখ। সমাবেশে নেতারা বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন