Wednesday 20 July 2011

আ.লীগ নেতা তাহেরের ছেলে বিপ্লবের দণ্ড মওকুফ, আরও দুটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন খুনিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা



লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার রায়ে ২০০৩ সালে আদালত বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আরও দুটি হত্যা মামলায় বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে আটক আছেন।
দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় পলাতক থেকে বিপ্লব গত ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁর বাবা আবু তাহের ছেলে বিপ্লবের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিপ্লবের সাজা মওকুফ করেন। গত ১৪ জুলাই এই সাজা মওকুফের আদেশ কার্যকর হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে নুরুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এটি তখন দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। তখন সেখানকার পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরও সন্ত্রাসের ‘গডফাদার’ হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন।
২০০৩ সালে এই মামলার রায়ে বিপ্লবসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফসংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল মঙ্গলবার নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার বিচারিক আদালত চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। চিঠিটি পাঠিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক নুরশেদ আহমেদ ভুইয়া। চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ‘কারা শাখা-২-এর পি-২০/২০১১(অংশ)/২৭০, তারিখ ১১/০৭/২০১১’ এবং কারা অধিদপ্তরের স্মারক নং ‘পিডি/পরি/৭/২০১১/১৬৭৫(৩), তারিখ ১৭/০৭/২০০১’-এর বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘উপরোক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকের আলোকে মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিষয়োক্ত বন্দিকে বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, চট্টগ্রাম-৪৮/২০০৩ মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দির পিতা কর্তৃক ছেলের প্রাণভিক্ষার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি “মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করা হলো” লিখে স্বাক্ষর করেছেন। তাই সংশ্লিষ্ট বন্দি গত ১৪/০৭/২০১১ তারিখে মৃত্যুদণ্ড হতে খালাস পেয়ে অন্য মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে বর্তমানে অত্র কারাগারে আটক আছে।’
গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক নুরশেদ আহমেদ ভুইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি মামলায় বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেছেন। সেই আদেশ অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’ তিনি বলেন, আরও দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিপ্লব কারাগারে বন্দী আছেন।
কী বিচার পেলাম: বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফের খবর জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নুরুল ইসলামের স্ত্রী রাশিদা ইসলাম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাহলে আমরা কী বিচার পেলাম? আমার বাচ্চারা কী বিচার পেল? একটা স্বাধীন দেশে যদি খুনি ক্ষমা পেয়ে যায়, তাহলে আর কী বলব! শুধু কষ্ট হয়। এই খুনির ক্ষমা হয় কীভাবে?’
রাশিদা ইসলাম বলেন, ‘এখন তো আমি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, সে তো একজন খুনি। সে শুধু একটা খুন করেনি, আরও অনেক খুন করেছে। এখন আমরা কার কাছে নিরাপত্তা চাইব?’
হত্যা, মামলা ও বিচার: স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আবু তাহের ও তাঁর ছেলেদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর নানা অপরাধমূলক তৎপরতার কারণে লক্ষ্মীপুর ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। ওই সময় সেখানকার বেশির ভাগ বিএনপির নেতা-কর্মী হামলা ও মামলার মুখে এলাকাছাড়া ছিলেন। নুরুল ইসলাম ছিলেন তখন বিএনপির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি আইনজীবী হিসেবে এলাকায় অবস্থান করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলা পরিচালনা করতেন। আর তাঁর স্ত্রী-সন্তান ঢাকায় থাকতেন।
২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে লক্ষ্মীপুরের পৌর এলাকার মজুপুরের বাসা থেকে নুরুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়। এরপর আর তাঁর সন্ধান মেলেনি। পরদিন থেকে এটা দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ‘গডফাদার’ আবু তাহের ‘সাংবাদিকদের হাত-পা ভেঙে মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়ার’ হুমকি দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, পরবর্তী পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, তাহেরের তিন ছেলে বিপ্লব, লাবু ও টিপুর নেতৃত্বে নুরুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই তাহেরের বাসায় তাঁর স্ত্রী নাজমা তাহেরের উপস্থিতিতে নুরুল ইসলামকে জবাই করা হয়। এরপর লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পরদিন লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি এইচ এম তারেক উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম উল্লেখ ছিল না।
এ ঘটনার ১০ দিন পর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির সাংসদদের একটি দল লক্ষ্মীপুরে যায় এবং ৩৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করে পুলিশ সুপারের কাছে মামলার একটি এজাহার জমা দেয়। কিন্তু পুলিশ বিএনপির মামলা নেয়নি। আগের এজাহার বহাল রাখে।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মামলার তদন্তের নতুন মোড় নেয়। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই আবু তাহের, তাঁর স্ত্রী নাজমা, তিন ছেলেসহ ৩১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলাটি তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০০৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলার নথি আসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এরপর শুরু হয় বিচার কার্যক্রম।
আদালত তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহবুবুল আলম, পুলিশ সুপার ইরফান আলীসহ ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় দেন। তাতে তাহেরের তিন ছেলেসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তাহের ও তাঁর স্ত্রী নাজমাসহ তিনজন খালাস পান। বিপ্লব এই মামলার পর থেকে পলাতক ছিলেন।
কারা সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে বিপ্লব লক্ষ্মীপুরের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর গত ১৯ মে সকালে লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে পুলিশ পাহারায় বিপ্লবকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ ছাড়া বিএনপির কর্মী কামাল হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল বিপ্লবের অপর দুই ভাই এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু ও আবদুর জব্বার লাবলু ওরফে লাবুর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। কামাল হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় আবু তাহের, তাঁর বড় ছেলে বিপ্লব ও দলীয় কর্মী খালেক, বাবর এবং মারজুর। পরে বিপ্লব ও খালেক ছাড়া বাকি চারজন হাইকোর্ট থেকে খালাস পান।
বিএনপির কর্মী কামালকে ২০০০ সালে হত্যা করা হয়।

Thursday 7 July 2011

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার






সৈয়দ মিজানুর রহমান
বাজারে এক কেজি চিনির খুচরা দর ৬৭ থেকে ৬৯ টাকা ছুঁয়েছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। লুজ সয়াবিন বেড়ে হয়েছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা লিটার। মোটা চালের দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা কেজি। রোজার আগেই ছোলার কেজি ৭০ থেকে ৭৩ টাকা। বাড়ছে পেঁয়াজ, রুসন ও আদার দর। ব্রয়লার মুরগি, ডিম, রুইমাছ ও ইলিশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবু এগুলোর দরও বাড়ছে সমান তালে। নিত্যপণ্যের বাজার যেন বেসামাল। এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ও হ্রাস, টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি, মনিটরিং কমিটি গঠন, পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠনসহ বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এসব উদ্যোগের কিছুই কাজে আসেনি। সুফল পায়নি ক্রেতা-ভোক্তারা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের তুলনায় মহাজোট সরকারের আমলে বর্তমানে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের মূল্যই দ্বিগুণ বেড়েছে। বিগত জরুরি সরকারের তুলনায়ও কোনো কোনো পণ্যের দর বর্তমানে বেশি। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, গুঁড়োদুধ, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, লবণসহ সব ধরনের পণ্যের বাজারই এখন নিয়ন্ত্রণহীন। লাগামহীনভাবে এসব পণ্যের মূল্য বাড়লেও, বাজারে যেমন সরকারের কোনো মনিটরিং ব্যবস্থাও নেই, তেমনি দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর কোনো ভূমিকাও নেই সরকারের। ভোজ্যতেল : বাজারে লুজ বা খোলা সয়াবিনের দর বর্তমানে প্রতি লিটার ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। পাম অয়েল মেশানো এসব সয়াবিনের ক্রেতারা সাধারণত নিম্নআয়ের মানুষ। তবে উন্নত মানের লুজ সয়াবিনের দর প্রতি লিটার ১২০ টাকা বলে জানিয়েছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের তেল বিক্রেতারা। আবার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে প্রতি লিটার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে। টিসিবি’র হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে সয়াবিনের দর বেড়েছে গড়ে ৫০ শতাংশ। টিসিবি জানায়, গত ২০০৬ সালের এই সময়ে বাজারে প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা দরে। জোট সরকারের তুলনায় সয়াবিনের দর বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বাজারে বর্তমানে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৯৭ থেকে ১০২ টাকা দরে। নিম্নমানের এসব পাম অয়েল সাধারণত সাবান তৈরির নামে বাংলাদেশে আমদানি হয়। তবে সুপার পাম অয়েলের দর বর্তমানে প্রতি লিটার ১০৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সুপার পাম অয়েলই মূলত খাবার তালিকায় ভোজ্যতেল হিসেবে আমদানি হয়। তবে আমদানিতে সুপার পাম অয়েলের পরিমাণ খুবই কম। টিসিবি’র বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, গত এক বছরে পাম অয়েলের দর বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। তবে ২০০৬ সালে বাজারে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হতো ৩৯ থেকে ৫২ টাকা লিটার, যা বর্তমানে দ্বিগুণেরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনি : খুচরা বাজারে এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ৬৭ থেকে ৬৯ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে চিনির দর ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। তবে টিসিবি’র রোববারের বাজার দর তথ্যে দেখানো হয়েছে কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, হাতিরপুল বাজারসহ বেশ কিছু বাজারে চিনির খুচরা দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে গত এক মাসেই চিনির দর বেড়েছে শতকরা হিসাবে সাড়ে ৭ ভাগ। এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশ। ১৯৯৬ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত টিসিবির বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গতকালই এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে চিনির দাম। টিসিবি জানায়, ১৯৯৬ সালে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দর ছিল সর্বনিম্ন ২৯ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪২ টাকা। ’৯৭-এ চিনি বিক্রি হয়েছে ২৯ থেকে ৩৬ টাকা দরে, ’৯৮-এ ৩১ থেকে ৩৪ টাকা, ’৯৯-এ ৩১ থেকে ৩৩ টাকা, ২০০০ সালে ৩০ থেকে ৩৭ টাকা, ২০০১ সালে ৩০ থেকে ৩৩ টাকা, ২০০২ সালে ২৯ থেকে ৩৪ টাকা, ২০০৩ সালে ২৮ থেকে ৩৬ টাকা, ২০০৪ সালে ২৮ থেকে ৩৪ টাকা, ২০০৫ সালে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুর দিকে চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ২৭ থেকে ৩৭ টাকা। ২০০৮ সালে চিনি বিক্রি হয় ২৯ থেকে ৪৩ টাকা। বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের দিন (৬ জানুয়ারি ২০০৯) চিনির দর ছিল ৩০ থেকে ৩৩ টাকা কেজি। ছোলা : রোজার আগেই এ বছর ছোলার দর অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৩ টাকা দরে। রাজধানীর রহমতগঞ্জের পাইকারি ছোলা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা এবং সরকারের কোনো নজরদারি না থাকায় পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দরে বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে। রহমতগঞ্জের সুমন ডাল বিতানের মালিক ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি নেসার উদ্দিন গতকাল আমার দেশকে জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে গতকাল উন্নতমানের প্রতি কেজি ছোলার দর ছিল ৫৯ থেকে ৬০ টাকা। নিম্নমানের ছোলা বিক্রি হয়েছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। তবে টিসিবির বাজার দর তথ্যে বলা হয়েছে, রোববার প্রতি কেজি ছোলার খুচরা মূল্য ছিল ৭০ টাকা। টিসিবি জানিয়েছে, গত এক মাসে ছোলার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বৃদ্ধির হার ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। ২০০৬ সালের এই সময়ে টিসিবির বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৩৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৪৫ টাকা : কোনো কারণ ছাড়াই ব্রয়লার মুরগির বাজার ঊর্ধ্বমুখী। টিসিবি জানিয়েছে, গত ১২ জুন থেকে কয়েক দফা দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। শতকরা হিসাবে গত এক মাসে ব্রয়লার মুরগির মূল্য সাড়ে ১২ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। বাজারে যেমন ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে, তেমনি দেখা দিয়েছে সঙ্কটও। চাহিদার অর্ধেক ঘাটতির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে খুচরা দামে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে গড়ে ৮১ টাকা ৪৫ পয়সা দরে। তবে সে বছর ৭০ টাকা দরেও ব্রয়লার মুরগি কিনে খেয়েছেন ক্রেতা-ভোক্তারা। ২০০৭ সালে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ৮৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ২০০৮ সালে গড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দর ছিল ১০৫ টাকা। অন্যদিকে সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দিন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি (ফার্মের মুরগি) বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা দরে (খুচরা দাম)। সে দিন বাজারে দেশি মুরগির দর ছিল প্রতি কেজি ২০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দর চড়া থাকায় দাম বেড়েছে দেশি মুরগির।ডিম : দেশে ডিম আমদানি হয় না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিমের দাম বাড়ল কি কমল তার হিসাব করে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়া বা কমার কথা নয়। তবে গত এক মাস ধরেই বেজায় চড়া ডিমের দর। টিসিবির হিসাবেই গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। তবে বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত এক মাসে ডিমের দর বেড়েছে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ।গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি হালি ফার্মের ডিমের দর ছিল ২৭ থেকে ২৯ টাকা। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, হাতিরপুল বাজার, মৌলভীবাজার, ঠাঁটারিবাজার, সূত্রাপুর, ফকিরাপুল, মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি হালি দেশি মুরগির ডিমের দাম ছিল ১১ থেকে ১২ টাকা। এখন একই ডিমের দাম ৩২ থেকে ৩৪ টাকা হালি। ফার্মের ডিমের দাম ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১১ টাকা।রোজার আগেই চড়া মাছ-মাংসের বাজার : রোজার মাসে সাধারণত মাছ ও মাংসের বাজার কিছুটা চড়া থাকে। তবে এ বছর রোজার এক/দেড় মাস আগেই মাছ-মাংসের বাজার চড়া। বাজারে বর্তমানে এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। দুই বছরে এক কেজি গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে এখন ৪৬০ থেকে ৪৮৫ টাকা কেজি দরে। দুই বছরে এক কেজি খাসির মাংসের দর বেড়েছে প্রায় ৯৫ টাকা। বাজারে এক কেজি রুই মাছের দাম এখন ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা পর্যন্ত। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে বাজারে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে দেড়শ’ টাকা কেজি দরে। রুই মাছের দর গত দুই বছরে প্রতি কেজিতেই বেড়েছে প্রায় ১১০ টাকা পর্যন্ত। এই হিসাব ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া। বাড়ছে চালের দর : চালের ভরা মৌসুমে প্রতি কেজি সরু জাতের মিনিকেট, নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৫০ টাকায়। টিসিবি’র দেয়া তথ্যানুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে এ চালের দাম বেড়েছে ১০ ভাগ। মাঝারি মানের পাইজাম, লতাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকায়। এক বছরে বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৬ ভাগ। মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকায়। এক বছরে এ চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫ ভাগ। ভেস্তে গেছে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ : নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেয়া উদ্যোগ ইতোমধ্যে ভেস্তে গেছে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে—কিছু পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার ও হ্রাস, টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি, বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটি গঠন, স্থায়ীভাবে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠন, আমদানিকারকদের আমদানিতে উত্সাহিতকরণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধ্যাদেশ জারি এবং ঢাকা শহরে চারটি কাঁচাবাজার স্থাপন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারের এসব উদ্যোগের অনেকগুলোই চালু হয়েছে। তবে কার্যত এর কোনো সুফল পায়নি ক্রেতা-ভোক্তারা। শুল্ক হ্রাসের সুযোগ প্রায় পুরোটাই নিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় ৯টি পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটরিং করতে ইতোমধ্যে ‘কোর ফুড বাস্কেট’ গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আটা, গুঁড়োদুধ, লবণ, চিনি, আলু ও পেঁয়াজ। এর মধ্যে চারটি পণ্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও গম স্পর্শকাতর পণ্য বলে এগুলোর ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে এসবের কিছুই কাজে আসেনি। বাজারে বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্য।