Thursday 21 October 2010

ইবিতে শিক্ষককে রক্তাক্ত করেছে ৩ কর্মকর্তা

Thu 21 Oct 2010 6:51 PM BdST

ইবি, ২১ অক্টোবর (আরটিএনএন ডটনেট)-- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মেরে রক্তাক্ত করেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রতিবাদে শনিবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক সাদেক হোসেন নিজ অফিসে কাজ করছিলেন।

এ সময় ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শাখা কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার হারুন-অর রশিদ ওরফে হাতকাটা হারুন ও ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতির ভাই সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল হোসেন ও আরেক ছাত্রলীগ ক্যাডার রিপন তার রুমে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।

অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলে ওই তিন কর্মকর্তা রুমের দরজা বন্ধ করে শিক্ষক সাদেক হোসেনকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে রক্তাক্ত করে।

এ সময় সাদেক হোসেনের চিৎকারে আশপাশের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এগিয়ে এসে ওই কর্মকর্তাদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়ায় প্রেরণ করা হয়।

এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি শনিবার সকাল ১০টায় সাধারণ সভা আহবান করেছে। একইসঙ্গে তারা সকল কার্যক্রম বয়কট করেছেন বলে সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান জানান।

এ ব্যাপারে ভিসি অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিনের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।

আরটিএনএন ডটনেট/প্রতিনিধি/এসআই_ ১৮৪৫ ঘ.

Friday 15 October 2010

প্রশাসন অসহায়

কাদের গনি চৌধুরী
সরকারি দলের নিয়োগ সন্ত্রাসের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রশাসন। যেখানে নিয়োগের উদ্যোগ সেখানেই হামলে পড়ছে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গদল যুবলীগ-ছাত্রলীগ। যার ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পরীক্ষার নামে চলছে প্রহসন। সরকারি দলের নিয়োগ সন্ত্রাসের কারণে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা কিছুটা নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, সেখানে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের ওপর নেমে আসছে নিপীড়ন। এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। দলীয় লোক ছাড়া অন্য কাউকে নিয়োগ না দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর নির্দেশের পর সরকারি কর্মকর্তারা আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন বলে কয়েকজন আমার দেশকে জানান। প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা সোমবার সকালে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আগামীতে কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৩৫০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে। দলের পরীক্ষিত কর্মী ছাড়া বাইরের কাউকে এ চাকরি দেয়া হবে না। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, এরই মধ্যে এ ব্যাপারে সিস্টেম করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাউকে চাকরি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার এ ধরনের নির্দেশের কারণে চাকরি প্রার্থীদের মাঝেও হতাশা নেমে এসেছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানান। এদিকে মন্ত্রী-এমপিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় সোমবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনকে।
ক’দিন ধরে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। গতকাল যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার কারণে কাজে যোগদান করতে পারেননি ভোলার নবাগত সিভিল সার্জন ডা. এটিএম মিজানুর রহমান। দু’দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েও তিনি কাজে যোগদান করতে পারেননি। নিয়োগ পেয়ে মঙ্গলবার তিনি কর্মস্থলে যোগ দিতে গেলে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা অস্ত্রের মুখে তাকে কক্ষ থেকে বের করে তাতে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিভিল সার্জন অফিসে এক নেতার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে সিভিল সার্জন দাবি করেন। সিভিল সার্জন ডা. মিজান আমার দেশকে জানান, মঙ্গলবার কাজে যোগদান করতে গেলে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা তাকে গালিগালাজ করে। এ সময় তারা আমাকে জানিয়ে দেন তোফায়েল আহমেদের লিস্টের বাইরে এখানে কোনো চাকরি হবে না। পুলিশের উপস্থিতিতেও তারা কয়েক দফা আমার ওপর হামলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে আমি সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় ফিরে আসি। গতকাল আবারও আমি কর্মস্থলে যোগ দেয়ার চেষ্টা চালাই। এ সময় আমাকে জানানো হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশে ফেরা পর্যন্ত সাবেক সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। একই সঙ্গে মাইকিং করে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মচারী নিয়োগ স্থগিত করা হয়।
জানা যায়, ভোলা সিভিল সার্জন অফিসের ৬৪ জন কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ায় গত ৯ সেপ্টেম্বর তত্কালীন সিভিল সার্জন ডা. শাহে আলম শরীফকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়। ভোলার সিভিল সার্জন হিসেবে সদর হাসপাতালের আরএমও, স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) জেলা সম্পাদক ডা. এটিএম মিজানুর রহমানকে বদলি করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের এক প্রবীণ নেতার আশীর্বাদপুষ্ট ডাক্তার শাহে আলম শরীফ অনেক দেনদরবার করেও বদলি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। অন্যদিকে নতুন সিভিল সার্জন যাতে কাজে যোগদান করতে না পারেন সেজন্য তার কক্ষে অতিরিক্ত দুটি তালা লাগিয়ে রাখা হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দিলে ভোলার সিভিল সার্জন হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনের জন্য মঙ্গলবার অফিসে আসেন। অফিস স্টাফদের সহযোগিতায় তালা খুলে তিনি তার কার্যক্রম শুরু করেন। বিকাল ৪টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা কক্ষে হামলা চালিয়ে তাকে বের করে সেখানে তালা লাগিয়ে দেয়।
গত সোমবার পঞ্চগড়ে লিখিত পরীক্ষায় পছন্দের প্রার্থীরা উত্তীর্ণ না হওয়ায় সিভিল সার্জন অফিসের গাড়ি ভাংচুর করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা। এমনকি পরীক্ষার খাতা ও ফলের তালিকাও নিয়ে গেছে তারা। পটুয়াখালীতে শুধু ভাংচুরই নয়, প্রধান অফিস সহকারীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এছাড়া যশোরে আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে গেছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। পিরোজপুরেও স্থগিত করা হয়েছে নিয়োগ কার্যক্রম। এর আগে পাবনা জেলা প্রশাসনে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। জেলা প্রশাসনের নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুলের ঘটনা নিয়ে পাবনা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শাসক দলের একটি অংশের চাপের মুখে পাবনা ছাড়তে চাইছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, চাপের কারণে তাদের পাবনায় চাকরি করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সোমবার পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক বৈঠকে বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তারা তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন।
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসনের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের পরীক্ষা কেন্দ্রে হামলা ও ভাংচুর করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ওই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান, বর্তমান সভাপতি আহম্মেদ শরীফ ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জহির হাসান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হানসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে দুটি মামলা করে জেলা প্রশাসন। অপরদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে হুমকি দিচ্ছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা। এমনি পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তারা সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বৈঠক করেন। এতে জেলা প্রশাসক এএফএম মনজুর কাদির, পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ, সিভিল সার্জন একেএম আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত তিন জেলা প্রশাসক, জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা, আনসার, সমাজসেবা অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলার নিন্দা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠকে জেলা প্রশাসককে বলেন, শাসকদল থেকে নানাভাবে তাদের ওপর চাপ আসছে। অন্যায় তদবির না শুনলেই গালাগাল-হুমকি দেয়া হচ্ছে। এভাবে চাকরি করা যায় না। কাজেই প্রয়োজনে সবাই একযোগে পাবনা ছেড়ে চলে যাবেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা আলাদাভাবে তদবির নিয়ে আসেন। যার কারণে সবাইকে খুশি করা যায় না। তাছাড়া তারা যেসব দাবি নিয়ে আসেন তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে লেনদেনের বিষয় জড়িত থাকে। দলীয় লোকদের জন্য নয়, তারা তদবির করতে আসেন যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাদের জন্য। বৈঠকের একপর্যায়ে বিসিএস ক্যাডারের ২৬ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে গণবদলির আবেদন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সব জানানো হয়েছে। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, যা করার তারাই করবেন।’ এ পর্যায়ে কর্মকর্তারা শান্ত হন। তারা জীবনের নিরাপত্তা এবং মানসম্মান নিশ্চিত করার দাবি জানালে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
বৈঠকে পুলিশ সুপার বলেন, অবৈধ তদবির শুনিনি বলে আমাকে গালাগাল শুনতে হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। সেদিন যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই সন্ত্রাসী। সিভিল সার্জন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় সরকারি দলের একজন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, তার প্রার্থী এখনও আসেননি। কাজেই পরীক্ষা শুরু করা যাবে না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইকরামুল হক বলেন, অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের জন্য আমার ওপর চাপ আসছে। না শুনলেই গালাগাল শুনতে হয়।
পঞ্চগড়েও ঘটেছে একই ধরনের ঘটনা। সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত পরীক্ষায় পছন্দের প্রার্থীরা পাস না করায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা রোববার গভীর রাতে অফিস এবং গাড়ি ভাংচুর করেছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা সিভিল সার্জনের সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করে পরীক্ষার খাতাপত্র ও রেজাল্টশিট নিয়ে যায়। পছন্দের প্রার্থীরা উত্তীর্ণ না হওয়ায় প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সিভিল সার্জন অফিসে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল; কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জন অফিসের সম্মেলন কক্ষে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা জরুরি সভা করে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
পটুয়াখালীতে নিয়োগ নিয়ে সোমবার দুপুরে সিভিল সার্জন অফিসে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শাসকদল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অফিসের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর এবং অফিসের প্রধান সহকারী মো. আবুল কালামকে মারধর করলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
যশোরে ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপের কারণে সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। সোমবার যশোর সিভিল সার্জন অফিসে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা হানা দেয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। নেতাদের পছন্দমতো প্রার্থীদের চাকরি দেয়ার দাবিতে নিয়োগ পরীক্ষায় বাধা দেয়ার এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। সিভিল সার্জন ডা. তরুণ কুমার শিকদার সাংবাদিকদের জানান, দুপুরে এ ঘটনার পর বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হলে বিকালে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত সংক্রান্ত মৌখিক নির্দেশ জারি করা হয়।
পিরোজপুরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পিরোজপুর সিভিল সার্জন অফিসের সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা সোমবার স্থগিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫২ পদে প্রায় ২ হাজার ২০০ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। সোমবার দুপুরের পর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে সিভিল সার্জন তা স্থগিত ঘোষণা করেন।
এদিকে শরীয়তপুর সিভিল সার্জনের অধীনে আধুনিক সদর হাসপাতালসহ ৬টি উপজেলা হাসপাতালের ১৩টি শাখায় ৮৫টি শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল গত মাসের প্রথম সপ্তাহে। নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য ৮৫ পদের বিপরীতে আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৩ হাজার ১৮৯টি। আবেদনকারীর অনেকেরই আশঙ্কা, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদের প্রভাবে তারা প্রত্যাশিত চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন। এরই মধ্যে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা তদবির শুরু করায় এমনটি ভাবছেন চাকরি প্রার্থীরা।
শুধু সরকারি দলের নেতারাই নন, মন্ত্রী-এমপিরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা মতো কাজ না হওয়ায় নিজ দলের সংসদ সদস্যদের রোষানলে পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন। সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে তালিকা নেয়ার পরও সে তালিকা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় সোমবার সংসদের অধিবেশন কক্ষে মন্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন তারা। এমপিরা মন্ত্রীকে বলেন, আপনি মন্ত্রী সেজেছেন। আমরা না হলে আপনি কীভাবে মন্ত্রী হতেন? আমাদের অপমান করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? কাজ করতে না পারলে তালিকা চাইলেন কেন? মন্ত্রী এ সময় নীরব ছিলেন। ষষ্ঠ অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে মাগরিবের বিরতি দিয়ে স্পিকার আসন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীকে নিজ দলের ৮ থেকে ১০ মহিলা সংসদ সদস্যসহ প্রায় ২৫ সংসদ সদস্য ঘিরে ধরেন। এর আগে একইভাবে এমপিওভুক্তি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে নিজ দলের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের রোষানলে পড়তে হয়। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগেরও সিদ্ধান্ত নেন। পরে অন্যরা বুঝিয়ে তাকে শান্ত করেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেখানেই নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে প্রভাব খাটিয়ে দলীয় লোকদের চাকরি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে সরকারি দলের চাপের কাছে নিয়োগ কর্মকর্তারা মাথানত করেননি, সেখানেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। গত এপ্রিলে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত না হওয়ায় ঢাকা বিভাগের খাদ্য অধিদফতরে নিয়োগ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন জজ আদালতেও একই কারণে কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রেও হয়েছে মহাকেলেঙ্কারি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ১৫৫ কর্মকর্তার মধ্যে ৫৫ জনেরই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বয়স ছিল ১০ বছরের নিচে। তাদের দু’জনের বয়স ছিল ৫ বছর, ৯ জনের ৬ বছর, ১৬ জনের ৭ বছর, ১১ জনের ৮ বছর এবং ১৫ জনের ৯ বছর। সহকারী বনসংরক্ষক নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।