Tuesday 27 April 2010

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি
by katukutu71 | Thursday, March 25, 2010 - 10:53am
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেননি। তাজউদ্দীন আহমদ ওই রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণার ছোট্ট একটি খসড়া তৈরি করে টেপরেকর্ডারে ধারণ করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে পড়তে দেন। বঙ্গবন্ধু খসড়াটি পড়ে নিরুত্তর থাকেন এবং এড়িয়ে যান। তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণাটি দিতে অনুরোধ জানালে বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে একটি দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।’ ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন সেটাও বোধহয় অবাস্তব কথা। চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন বলে যে কথা বলা হয়, তাও সঠিক নয়। ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা। এর মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। ভারত সরকারকে প্রত্যেকেই বলেছেন, কাউকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দীনকে বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে তাকে কিছুই বলা হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মীর্জার কথোপকথন নিয়ে প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন’ শীর্ষক বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এই ঐতিহাসিক তথ্য স্থান পেয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি, বর্তমানে তিনি সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি। মঈদুল হাসান ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও মূলধারা ’৭১ গ্রন্থের লেখক এবং এস আর মীর্জা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গঠিত যুবশিবিরের মহাপরিচালক।
তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথোপকথনে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টিও বিস্তারিতভাবে স্থান পেয়েছে। এ কে খোন্দকার বলেন, রেডিও কর্মীদের প্রচেষ্টায় ২৬ মার্চ দুপুর ২টার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। অবশ্য মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথমেই যে ঘোষণাটি দেন, সেটি ভুলভাবে দেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। ২৬ মার্চ দুপুরে স্বাধীনতার ঘোষণা এম এ হান্নান সাহেব যেটা পড়েছিলেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে মেজর জিয়া যেটা পড়েন, তার মধ্যে কিন্তু একটা পার্থক্য ছিল। ২৬ মার্চেরটা অনেকে শুনতে পাননি। অন্যদিকে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি, যুদ্ধের পরবর্তী সময়ও জানি যে, মেজর জিয়ার এ ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারাদেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মনে সাংঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, হ্যাঁ, এবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামলো। জিয়ার ২৭ মার্চ ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে যারা ছিল, তাদের মধ্যে যে একটা প্রচণ্ড উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সে সম্পর্কে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
মঈদুল হাসান বলেন, অন্যের কথা কী বলব, মেজর জিয়ার বেতার ঘোষণা শুনে আমি নিজে মনে করেছিলাম যে, না, সত্যি তাহলে সামরিক বাহিনীর বিপুল সংখ্যক লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এটা আমার মনে বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং আমি উত্সাহিত বোধ করি। আমি আশপাশে যাদের চিনতাম, তারাও এই ঘোষণায় উত্সাহিত হন। সুতরাং জিয়ার সেই সময়টুকুর সেই অবদান খাটো করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
এস আর মীর্জা বলেন, ২৫ মার্চের পর আমি সবসময় রেডিও সঙ্গে রেখেছিলাম। এম এ হান্নান সাহেবের ঘোষণাটি আমি শুনিনি। ২৭ মার্চ বিকালে পরিষ্কার শুনলাম, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষণা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম এই ভেবে যে, হ্যাঁ, এখন মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কারণ, তাদের সঙ্গে বাঙালি সেনারাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। শেখ মুজিব যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন এ নিয়ে কোনো কথা কেউ উত্থাপন করেননি বা বিতর্ক হয়নি। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনকালেও এ ব্যাপারে কথা ওঠেনি। এটা শুরু হলো সম্ভবত ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর কয়েক বছর পর। ১৯৯১ সালে বিএনপি নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করে। এরপর থেকেই বিবাদটা প্রকট আকার ধারণ করে।
তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার কথোপকথন হুবহু নিচে দেয়া হলো :
মঈদুল হাসান : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে, এ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করতে পারি।
এ কে খোন্দকার : আসলে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কোনো রকম আলোচনা কিংবা দ্বিমত কিংবা বিভাজন মুক্তিযুদ্ধের সময় কিন্তু ছিল না। এটা শুরু হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে। ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের আক্রমণ করল, সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তাহলে কথা হচ্ছে, স্বাধীনতার ঘোষণাটা কীভাবে এলো? ২৬ মার্চ তারিখে সারাদেশেই সান্ধ্য আইন ছিল। চট্টগ্রামে সেই সান্ধ্য আইনের মধ্যেও সেখানকার বেতার কেন্দ্রে কিছু বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কয়েকজনের নাম আমার মনে আছে—তখন তাঁদের ঠিক কার কী পদ ছিল এখন আমার মনে নেই। তাঁরা মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন যে কিছু না কিছু বেতারে বলা দরকার। তখন তাঁরা সবাই মিলে একটা স্বাধীনতার ঘোষণার খসড়া তৈরি করলেন এবং সেই খসড়াটি তাঁরা ২৬ মার্চ দুপুর দুইটার সময় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে নিজেরা তা চালু করে প্রচার করেন। সেই ঘোষণা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান পাঠ করেন। ধারণ করা এই ভাষণ সেদিন পুনরায় সাড়ে চারটা-পাঁচটার দিকে প্রচার করা হয়। তাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছে—এমন কথাগুলো ছিল।
এদিকে বেতার কেন্দ্রটি খোলা হয়েছে এবং কার্যক্রম চালু হয়েছে, সুতরাং এটাকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। এ অবস্থায় তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, মেজর জিয়া নামের একজন ঊর্ধ্বতন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সৈনিকসহ পটিয়ায় রয়েছেন।
তখন ২৭ মার্চ তারিখে সকাল ১০টার দিকে এইসব বেতারকর্মী পটিয়ায় যান। তাঁরা সেখানে গিয়ে যে আলোচনা শুরু করেন, তাতে কিন্তু ঘোষণার কোনো বিষয় ছিল না। তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার প্রশ্নে কথা বলতে। তাঁরা মেজর জিয়াকে বেতার কেন্দ্র রক্ষার জন্য কিছু বাঙালি সেনাসদস্য দিয়ে সাহায্য করার অনুরোধ জানান। মেজর জিয়া সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে সম্মতি দেন এবং বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি আমার সৈনিক দিয়ে সাহায্য করব।’ এরপর হঠাত্ তাঁদের কারও একজনের মনে হলো যে, যদি এই ঘোষণাটি একজন সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে বেতারে বলানো যায়, তাহলে এর একটা প্রভাব সারাদেশে ভালোভাবে পড়বে। এই চিন্তা থেকেই মেজর জিয়াকে অনুরোধ করা হয়, তিনি এই ঘোষণাটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পড়তে রাজি আছেন কিনা। আমি পরে শুনেছি, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এম আর সিদ্দিকী তখন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এম এ হান্নান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মেজর জিয়াকে প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজি হন এবং বেশ আগ্রহের সঙ্গেই রাজি হন। মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথম যে ঘোষণাটি দিলেন, সেটা ভুলভাবেই দিলেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণায় সবাই হতবাক হয়ে যান। এমন ঘোষণা তো তাঁর দেয়ার কথা নয়! এরপর তা সংশোধন করা হয়। ঘোষণা আগে থেকেই যেটি তৈরি ছিল, সেটি আবার জিয়ার কণ্ঠে টেপে ধারণ করা হয় এবং সেটি জিয়া পড়েন ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে। এভাবে বঙ্গবন্ধুর নামে এই ঘোষণাটি ২৬ মার্চ দুপুর দুইটা-আড়াইটার দিকে প্রথম পড়া হয় এবং সেদিন বিকাল চারটা-সাড়ে চারটায় তা পুনরায় প্রচার করা হয়। আর ২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে জিয়ার কণ্ঠে প্রথম ঘোষণা হয়। এটি হচ্ছে প্রকৃত সত্য ঘটনা।
মঈদুল হাসান : পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা আবদুল মোমিনকে। তিনি ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। আবদুল মোমিন আমাকে বলেন, তিনি যখন ৩২ নম্বরে যান, তখন দেখেন যে তাজউদ্দীন আহমদ খুব রেগে ফাইলপত্র বগলে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছেন। ফাইলগুলো তিনি সব সময় সঙ্গেই রাখতেন। ঘোষণা, পরিকল্পনা এবং অন্য জরুরি কিছু কাগজপত্র এর মধ্যে থাকত। তিনি যেখানেই যেতেন, সেটা সঙ্গে নিয়ে যেতেন, কাছছাড়া করতেন না। তিনি যখন রেগে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন ৩২ নম্বর বাড়ির দরজার বাইরে তাজউদ্দীনের হাত ধরে আবদুল মোমিন বললেন, ‘তুমি রেগে চলে যাও কেন।’ তখন তাজউদ্দীন তার কাছে ঘটনার বর্ণনা করে বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু এইটুকু ঝুঁকি নিতেও রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছেই।’
এরপর ৩২ নম্বর থেকে তাজউদ্দীন তার বাড়িতে ফিরে যান। রাত ১০টার পর কামাল হোসেন ও আমীর-উল-ইসলাম যান শেখ সাহেবের বাড়িতে। শেখ সাহেব তাদের তত্ক্ষণাত্ সরে যেতে বলেন। শেখ সাহেব নিজে কী করবেন, সেটা তাদের বলেননি। সেখান থেকে তারা দু’জন যখন তাজউদ্দীন আহমদের বাড়িতে গেলেন, তখন রাত বোধহয় ১১টার মতো হয়ে গেছে। সে সময় পাকিস্তানিদের আক্রমণ শুরু হতে যাচ্ছে। ওখানে তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাজউদ্দীনকে নিয়ে তারা দু’জন অন্য কোথাও যাবেন।
যাই হোক, ওই ঘোষণার খসড়া তাজউদ্দীন আহমদ ২৫ মার্চের কয়েক দিন আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন এ জন্য যে, এমন একটা অনিশ্চিত বা আকস্মিক অবস্থা হতে পারে। তার কথা, আমি আমার ডাইরিতে টুকে রেখেছিলাম ১৯৭২ সালেই। তিনি বলেন, ‘আমীর-উল ইসলাম ও কামাল হোসেন যখন এসে বলল যে, বাড়ি থেকে এখনই সরে যাওয়া দরকার, তখন আমি তাদের বলিনি; তবে আমার মনে হয়েছিল আমার কোথাও যাওয়া উচিত নয়।’ তাজউদ্দীন আহমদ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যেখানে আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা—যাকে এতবার করে বলেছি, আজকে সন্ধ্যাতেও বলেছি, তিনি কোথাও যেতে চাইলেন না এবং তাকে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য যে সংক্ষিপ্ত একটা ঘোষণা বা বার্তা টেপরেকর্ডে ধারণ বা ওই কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য বলায় তিনি বললেন, এটাতে পাকিস্তানিরা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারবে! তিনি এতটুকুও যখন করতে রাজি নন, তখন এ আন্দোলনের কি-ই বা ভবিষ্যত্?’ এদিকে আমীর-উল ইসলামদের সঙ্গে আলাপ শেষ না হতেই চারদিকের নানা শব্দ থেকে বোঝা গেল যে, পাকিস্তানি সৈন্যরা সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। তারপর তারা তিনজন বেরিয়ে পড়লেন। কামাল হোসেন গেলেন ধানমন্ডি ১৪ নম্বরের দিকে এক অজ্ঞাত উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তাজউদ্দীন যান লালমাটিয়ায়।
স্বাধীনতার ঘোষণার ওই যে ছোট্ট খসড়াটি তাজউদ্দীন আহমদ তৈরি করেছিলেন, ২৬ মার্চ সেটির প্রায় একই রকমের ঘোষণা দেখি, একই সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য কাগজে প্রচারিত হতে, ভারতের কাগজেও হয়েছে। সুতরাং আমি ধরে নিতে পারি, সে সময় তাজউদ্দীন আহমদ যে খসড়া করেছিলেন, সেটা অন্য কাউকে তিনি হয়তো দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তখন তরুণ কর্মীর কোনো অভাব ছিল না। বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তখনই স্বাধীনতা ঘোষণা চাইছিল। এদের মাধ্যমে যদি এটা প্রচারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমি বিস্মিত হব না। পরে ঘটনার প্রায় এক বছর পর বলা হয়, ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হওয়ার ঠিক আগে শেখ সাহেব নিজে ইপিআরের সিগন্যালসের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় খবর পাঠান। আমি যতটুক জানি, সিগন্যালস সব সময় অত্যন্ত বিশ্বাসী লোকদের দ্বারা গঠন করা হয়। সিগন্যালসই কোনো বাহিনীর আত্মরক্ষার ও আক্রমণের মূল যোগাযোগ মাধ্যম। আর ইপিআর ছিল মিশ্র বাহিনী। এই বাহিনীতে অনেক অবাঙালিও ছিলেন। সেখানে তো তাদের বাদ দিয়ে সন্দেহের পাত্র বাঙালিদের হাতে সিগন্যালস থাকতে পারে না। কাজেই ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে শেখ সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন—এটা বোধহয় অবাস্তব কথা।
পরে আরেকটি কথা বলা হয় যে, শেখ সাহেব চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের নেতারা স্বীকৃতিদানের প্রশ্নে ভারত সরকারকে খুব বেশি পীড়াপীড়ি শুরু করেন। তখন স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ভারত সরকার গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করে। তারা বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো প্রমাণ, কোনো দলিল, কোনো জীবিত সাক্ষ্য আপনাদের আছে কি? ভারত সরকার বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্য প্রধান নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, কাউকে কিছু বলে গেছেন কিনা শেখ মুজিবুর রহমান। এর মধ্যে জহুর আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। প্রত্যেকেই বলেছেন, কাউকেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলে যাননি। জহুর আহমদ চৌধুরী নিজে তাজউদ্দীনকে বলেছেন তাকে কিছু বলা হয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে ১৯৭২ সাল থেকে যে দাবিগুলো করা হয়, সেটা হচ্ছে ইপিআর সিগন্যালসের মাধ্যমে তিনি খবর পাঠিয়েছিলেন চট্টগ্রামে। আর তিনি যেভাবেই হোক, জহুর আহমদ চৌধুরীকে সেটা পাঠিয়েছিলেন। অথচ রাত সাড়ে ১২টায় টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেখ মুজিব যদি একটা ফোন করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে (এখন যেটা শেরাটন হোটেল) ভিড় করা যে কোনো বিদেশি সাংবাদিককে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা জানাতেন, তাহলে সারা পৃথিবীতে সঙ্গে সঙ্গে তা রাষ্ট্র হয়ে যেত। যাই হোক, এই ইপিআর সিগন্যালসের ব্যাপারটা সম্পর্কে খোন্দকার সাহেব কী জানেন, এটা তিনি বললে ভালো হয়।
এ কে খোন্দকার : আমি যতটুকু জানি, আমার স্মরণশক্তিতে যতটুকু মনে আছে, সেটুকু বলব। এই ঘোষণা সংক্রান্ত ব্যাপারে একটু আগে যা বললাম, তার বাইরে কোনো কিছু কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আর শোনা যায়নি। কেউ চট্টগ্রামে এ সংক্রান্ত সংবাদ পাঠিয়েছিল বা জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে পাঠিয়েছিল—এমন কোনো সংবাদ সে সময় আমরা শুনিনি। এ সম্পর্কে কথা শুরু হয় স্বাধীনতার পর। এখানে একটি কথা বলব, ২৭ তারিখে মেজর জিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বেতারের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী, এরাই কিন্তু এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ সত্যগুলো আমাদের মনে রাখতেই হবে; অর্থাত্ যা ঘটেছে। এরাই নিজ উদ্যোগে মেজর জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন, মেজর জিয়া তাদের কাছে যাননি। তবে এটা ঠিক, জিয়া তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে এ ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেননি। ২৬ মার্চ দুপুরে স্বাধীনতার ঘোষণা, এমএ হান্নান সাহেব যেটা পড়েছিলেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে মেজর জিয়া যেটা পড়েন—এর মধ্যে কিন্তু একটা পার্থক্য ছিল। ২৬ মার্চেরটা অনেকে হয়তো শুনতে পাননি। কারণ সেদিন তো সবাই বিভিন্ন কারণে উদ্বিগ্ন-হতবিহ্বল ছিলেন। কিন্তু হান্নান সাহেবের কথারও একটা মূল্য ছিল, যদিও তিনি বেসামরিক লোক ছিলেন। অন্যদিকে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জা�
http://priyo.com/forum/2010/mar/25/37599.html

Sunday 25 April 2010

তিন কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট

Manobzamin Monday, 26 April 2010
স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেটে দেওয়ান জুয়েলার্স নামের স্বর্ণের দোকান থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে পেছন দিকের একটি কসমেটিকসের দোকানের দেয়াল কেটে ভেতরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা। পরে সেখান থেকে প্রায় ৯৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় তারা।
খবর পেয়ে গতকাল রোববার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দোকানের মালিক তাজুল ইসলাম তাজু জানিয়েছেন, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের নিচ তলায় ২১/২২ নং দেওয়ান জুয়েলার্সের দোকানটি গত শনিবার রাত ৮টার দিকে বন্ধ করে কর্মচারীসহ তিনি বাসায় ফিরে যান। এরপর গতকাল সকাল ১০টার দিকে দোকানে গিয়ে দেখেন পাশের জ্যোতি কসমেটিকসের দেয়াল কেটে দুর্বৃত্তদের ভেতরে ঢোকার আলামত। তার দোকানের শো-কেসগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। আর প্রায় সাড়ে ৯শ’ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুণ্ঠিত। এর মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। দোকান বন্ধ করে যাওয়ার পর রাতের যে কোন সময় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে বলে তিনি ধারণা করছেন। কারণ, তিনি রাত ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে সাড়ে ৮টার মধ্যেই মার্কেট থেকে বের হয়ে যান। এর আগে গত বছরও একই মার্কেটের বিপরীত দিকের শাহআলী শপিং কমপেস্নক্সের দোতলা থেকে দেওয়ান জুয়েলার্স নামের আরও একটি দোকানে চুরি হয়। গত এক বছরে ওই চুরির সঙ্গে জড়িতদেরও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শাহআলী থানার ওসি আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, দেওয়ান জুয়েলার্সের ঠিক পেছনের জ্যোতি নামক একটি কসমেটিকসের দোকানের শাটার ভেঙে প্রথমে সেখানে লুটতরাজ চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে দুই দোকানের মাঝখানের দেয়াল কেটে জুয়েলার্সে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। চোরের দল যে পথ দিয়ে ঢুকেছে সেই একই পথ দিয়ে বের হয়ে যায়। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ৮ দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=12305&Itemid=83

Thursday 22 April 2010

সাংবাদিকদের গণপিটুনি দেয়ার হুমকি নাসিম ওসমানের

Friday, 23 April 2010 | Manobzamin
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান এবার সাংবাদিকদের গণপিটুনি দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। র‌্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নিহত ড্রেজার মাকসুদের কুলখানি অুনষ্ঠানে বুধবার সন্ধ্যায় এমপি নাসিম ওসমান সাংবাদিকদের প্রতি এ হুমকি দেন সন্ত্রাসী মাকসুদের নানা অপকর্মের চিত্র বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর নাসিম ওসমান মাকসুদকে ভাল মানুষ আখ্যায়িত করে সাংবাদিকদের তথ্য সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দেন।
সোমবার সকালে মাকসুদের জানাজা অনুষ্ঠানের আগেও এমপি নাসিম ওসমান একই ভাষায় সাংবাদিকদের বিষোদ্গার করেন। ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের প্রতি বিষোদ্গার এবং সর্বশেষ সাংবাদিকদের গণপিটুনি দেয়ার হুমকি- জাতীয় পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। উল্লেখ্য রোববার সকালে র‌্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টাপোলের রেড ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি নুরুল আমীন মাকসুদ ওরফে ড্রেজার মাকসুদের গুলিবিদ্ধ লাশ গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার তালটিয়া নাগদা ব্রিজের পাশ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। মাকসুদের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় মোট ১৭টি মামলা ছিল।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=12001&Itemid=83

গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে থমকে গেছে বিনিয়োগ* রপ্তানি আয় নিম্নমুখী, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে না

আবদুর রহিম হারমাছি সাহাদত হোসেন কিরণ। KalerKantho|ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ বৈশাখ ১৪১৭, ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০১০

দেশের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডেকো গ্রুপের চেয়ারম্যান। ব্যবসা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তার পাশে 'ডেকো টেক্সটাইল' নামে একটি বড় বস্ত্র মিল স্থাপনের সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। বেসরকারি একটি ব্যাংক এ প্রকল্পে ঋণ দিতেও সম্মত হয়েছিল। তবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে প্রকল্পটি লাভজনক হবে কি না সে হিসাব-নিকাশ কষতে গিয়ে সাহাদত হোসেন মিলটি স্থাপনের কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারপর তিনি এর কাজ শুরু করবেন।
শুধু সাহাদত হোসেন নন, সম্প্রতি গ্যাস ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকটে অনেক শিল্পমালিকই এখন নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও নিম্নমুখী। আর এ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায়ও দু-একটি ছাড়া অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ছিল। তবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বমন্দার ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব পড়ছে রপ্তানি আয়ের ওপর। চলতি অর্থবছরে প্রথম আট মাসে এই আয় কমেছে ৩ শতাংশের ওপরে। ফলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে সুসংবাদ নেই_এটা এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, তা দ্রুত কাটার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে সব ক্ষেত্রেই একধরনের হতাশা বিরাজ করছে।
এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি আয় ও বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতির অন্যান্য সূচক ইতিবাচকই বলা যায়। প্রায় সাত মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। রাজস্ব আদায় বাড়ছে। মন্দার কারণে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধস নামবে বলে আশঙ্কা করা হলেও তেমনটি হয়নি। তবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন মোটেই সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থায় গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী নেতারাও আশঙ্কা করছেন।
গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাহাদত হোসেন বলেন, 'আমার টেক্সটাইল মিলটি চালু হলে কম করে হলেও দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু বাধ্য হয়ে আমি মিলটি স্থাপনের কাজ বন্ধ রেখেছি। আমার মতো অনেকেই এখন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন না করে অপেক্ষা করছেন।'
তবে আশার বাণী শুনিয়েছে আন্তর্জানিক খ্যাতিসম্পন্ন দুটি ঋণমাণ (ক্রেডিট রেটিং) সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর (এসঅ্যান্ডপি) ও মুডিস। প্রথমবারের মতো এ দুটি সংস্থা বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের রেটিং করেছে। দুটি রেটিংয়েই বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এসঅ্যান্ডপির রেটিংয়ে বাংলাদেশ ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের কাতারে; শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ওপরে। আর মুডিস রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভিয়েতনামের চেয়েও তিন ধাপ ওপরে। দুটি রেটিংয়েই ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এ দুটি রেটিং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ-সহায়তার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতি ছাড়া আমাদের অর্থনীতি বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর রয়েছে। বিশ্বমন্দা আমাদের অর্থনীতিকে যতটা আঘাত করবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে ততটা হবে না। তার পরও আমরা বিশ্ব পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে আমরা নিজেরাও শংকিত। এ দুটি সমস্যা না থাকলে আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। এসঅ্যান্ডপি ও মুডিস রেটিংয়েও আমাদের এ সমস্যার কথা বলা হয়েছে।'
'তবে এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমরা (সরকার) গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, শিগগিরই এর ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে'_বলেন মুহিত।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, এক অর্থে মন্দা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলই বয়ে এনেছিল। মন্দার কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ প্রায় সব জিনিসের দাম কমে এসেছিল। আমদানি ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার এটাও অন্যতম কারণ। তবে গত কয়েক মৌসুম ফসলের (ধান ও গম) বাম্পার ফলন আমদানি ব্যয় কমাতে যথেষ্ট সহায়তা করেছে বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি আনিসুল হক বলেন, 'বাংলাদেশের এখন এক নম্বর সমস্যা হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ। আমাদের উন্নয়নের পথে এখন এ দুটি সমস্যাই প্রধান অন্তরায়। দ্রুত যদি আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে না পারি তাহলে আমাদের এতদিনের অর্জনও নস্যাৎ হয়ে যাবে।'
রিজার্ভ সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে
সাত মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে; যা দিয়ে ছয় মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। গত বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গতকাল রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন (এক হাজার ৫২ কোটি) ডলার।
রেমিট্যান্স বাড়ছেই
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ছেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশে ৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি আয় কমছে
বিশ্বমন্দার কারণে রপ্তানি আয় কমলেও তা আশঙ্কা অনুযায়ী কমেনি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলানায় দেশে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ রপ্তানি আয় কম এসেছে। এ সময় ১০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর আগের বছরের এ সময় রপ্তানি হয়েছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি পণ্য।
কমছে আমদানি ব্যয়ও
প্রতি মাসেই আমদানি ব্যয় কমছে। অর্থবছরের সাত মাসে অর্থ্যাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ায় জানুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৪৭ দশমিক ০৪ শতাংশ।
আট মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ
এ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় মোট ৩৫ হাজার ৭৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময় এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।
মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই
মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে উঠেছে। জুন মাসে এ হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। জুলাই মাসে ছিল ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যদ্রব্যসহ প্রায় সব ধরনের জিনিসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে (বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশে ওঠে। এর পর আস্তে আস্তে কমে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তা ৬ দশমিক ০৩ শতাংশে নেমে আসে।
বিনিয়োগে খরা কাটছে না
বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না। দেশি-বিদেশি দুই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই নাজুক অবস্থা। ব্যাংকগুলোতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা অলস (অতিরিক্ত তারল্য) পড়ে আছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মূল এডিপির ৩৯ শতাংশ মাত্র বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে সরকার মূল এডিপি থেকে দুই হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে পিপিপির মাধ্যমে (সরকারি-বেসরকারি অংশিদারি উদ্যোগ) দেশের উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

রাজধানীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে পুলিশের এসআই খুন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আছে




স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) গৌতম কুমার রায়কে (৪৩) গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে থানা থেকে বাসায় যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা সূত্রাপুরের লালমোহন শাহ স্ট্রিটে তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। এ ঘটনায় শামিম নামে তার এক বন্ধুও গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরনো ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারে দেয়ার বদলা হিসেবে গৌতমকে খুন করা হতে পারে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। কয়েক মাস আগে দারোগা গৌতম রায়কে ডাকাত শহীদ ভারত থেকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার হুমকি দিয়েছে। তিনি হুমকির কথা সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজনদেরও জানিয়েছেন। এরপর থেকেই তিনি ভীত ছিলেন। ডাকাত শহীদের টার্গেটে পড়ায় তিনি বদলির চিন্তাও করছিলেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন গৌতমের লাশ দেখতে এসে লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সাব-ইন্সপেক্টর খুনের ঘটনাকে তিনি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
বংশাল থানার ওসি আবদুল মান্নান জানান, সোমবার রাত পৌনে ২টায় গৌতম বাসার উদ্দেশে থানা থেকে বের হন। বন্ধু শামিমের জিপে করে ওয়ারীর বাসায় যাওয়ার কথা তার। এসময় তার সঙ্গে আজম নামে আরেক বন্ধু ছিলেন। গৌতম ছিলেন সাদা পোশাকে। তার সঙ্গে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি ছিল। শামিমের গাড়িতে করে প্রায়ই গৌতম বাসায় যেতেন। প্রত্যক্ষদর্শী আজম জানান, তারা গাড়িতে করে থানা থেকে ৩শ’ গজ দূরে লালমোহন শাহ স্ট্রিটে আশরাফ ইলেকট্রনিক্স দোকানের গলিতে গিয়ে নামেন। সেখানে আগে থেকেই শামিম উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে গৌতমসহ তিনজন হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছিলেন। গৌতম ছিলেন দুই বন্ধু থেকে একটু পেছনে। এসময় তিনি দেখতে পান রাস্তায় তিন যুবক ঘোরাফেরা করছে। তাদের দেখে সন্দেহ হলে গৌতম চ্যালেঞ্জ করেন। তিন যুবককে তল্লাশি করার জন্য এগিয়ে যান তিনি। একজনের দেহ তল্লাশি করার সময় তার কাছে অস্ত্র আছে বলে সন্দেহ হয়। এসময় সে দেহ তল্লাশিতে বাধা দিলে গৌতম সঙ্গে থাকা অস্ত্র বের করার চেষ্টা করেন। এসময় অদূরেই দাঁড়িয়ে থাকা দুই সন্ত্রাসী এগিয়ে এসে গৌতমকে চেপে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালায়। তার শরীরে তিনটি গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে চিত্কার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গৌতম। রক্তে ভিজে যায় রাস্তা। তাকে রক্ষার জন্য দুই বন্ধু এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তখন শামিমের ডান হাতে এক রাউন্ড গুলিবিদ্ধ হয়। পরে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে এলাকা ত্যাগ করে। গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় দুই বন্ধু গৌতমকে পুরনো ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিত্সকরা দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রাত ২টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেলে জরুরি বিভাগে পৌঁছার পর কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বন্ধু শামিমকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গৌতমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ প্রশাসনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার সহকর্মীরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে গৌতমের স্ত্রী ডলি রায় ও আত্মীয়স্বজনরাও ছুটে আসেন হাসপাতালে। তারা গৌতমের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বামীর লাশ জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে কাঁদতে থাকেন স্ত্রী ও দু’সন্তান। তাদের আর্তচিত্কারে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
জানা যায়, গৌতম রায়ের বন্ধু শামিমের ধোলাইখাল ভূঁইয়া মার্কেটে মোটরপার্টসের ব্যবসা আছে। তার দোকানের নাম নেয়ামুল মোটরস। গৌতমের সঙ্গে শমিম ও আজমের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। গৌতমের বাসায় যাওয়ার পথে শামিম ও আজমের বাসা। তাই প্রায়ই শামিমের গাড়িতে গৌতম বাসায় যেতেন। কখনও শামিম, আবার কখনও আজম সঙ্গে থাকতেন। ঘটনার দিন রাতে শামিম আগেই বাসায় যান। আজমকে নিয়ে শামিমের গাড়িতে করে বের হয়েছিলেন গৌতম। গাড়ি চালাচ্ছিলেন গৌতম নিজেই। সূত্রমতে, প্রতিদিন বাসায় যাওয়ার সময় সূত্রাপুরের ৫২/৪, লালমোহন শাহ স্ট্রিটে মহিউদ্দিন মার্কেটের গলিতে নেমে তিনজনে গল্প করে সময় কাটাতেন। এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে গৌতম বাসায় চলে যেতেন। প্রতিদিনের মতোই সেদিন রাতে গৌতম, শামিম ও আজম আশরাফ ইলেকট্রনিক্স মার্কেটের কাছে মহিউদ্দিনের গলিতে নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এসময় সেখানে আগে থেকেই তিন সন্ত্রাসী ওঁত্ পেতে ছিল। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর হবে। গৌতম রায় বাসায় যাওয়ার পথে রাতে যে ওই এলাকায় প্রতিদিনই আসেন, তা সন্ত্রাসীদের আগে থেকেই জানা ছিল। তাই পরিকল্পিতভাবেই সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। কেননা, তিন বন্ধুকে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিন যুবক গৌতমের কাছেই ছিল। তারা গৌতমের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করতে থাকায় সন্দেহ হলে গৌতম তাদের চ্যালেঞ্জ করে। তদন্ত সূত্র জানায়, ওই তিন যুবক ছিনতাইকারী হলে তারা গৌতমের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, সঙ্গে থাকা অস্ত্র ও ওয়াকিটকি নিয়ে যেত। গৌতমকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
সহকর্মীরা বলেন, গৌতম রায় ছিলেন পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি ৫ মাস ধরে বংশাল থানায় অপারেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে ৩ মাস ছিলেন চকবাজার থানায়। তারও আগে পৌনে দু’বছর ছিলেন সূত্রাপুর থানায়। সূত্রাপুরের আগে ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওয়ারী জোন ও কেরানীগঞ্জে চাকরিকালে এলাকার অপরাধীদের সম্পর্কে তার কাছে অনেক তথ্য ছিল। সূত্রাপুর থানায় থাকাকালে ডাকাত শহীদের ১৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করেন গৌতম। এর মধ্যে ক্রসফায়ারে ৪ জন মারা যায়। এসব কারণে পলাতক ডাকাত শহীদ তার ওপর ক্ষেপা ছিল।
বংশাল থানা পুলিশ জানায়, ’৯৮ সালে এসআই পদে প্রশিক্ষণ শেষে কাজ শুরু করা গৌতম রায় সর্বশেষ পরিদর্শক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ২০০৯ সালে বংশাল থানা উদ্বোধন হওয়ার ১ মাস পর তিনি চকবাজার থেকে বংশাল থানায় যোগ দেন। ৫ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড় গৌতম রায়ের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জে। তার বাবার নাম ইন্দুভূষণ রায়। দু’সন্তান গৌরব এবং অদিতি। গৌরব (১৬) এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে গাজীপুরের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে। অদিতি (৬) পড়ছে লক্ষ্মীবাজার সেন্ট প্রিপারেটরি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে।
এ ব্যাপারে সূত্রাপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ জানায়, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুরো এলাকায় তল্লাশি চলছে। পুলিশের ধারণা, ৭০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আহম্মদ কমিশনার হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। আহম্মদ কমিশনার হত্যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের একাধিক সহযোগীকে গ্রেফতার করার পেছনে গৌতম রায়ের ভূমিকা ছিল। ১৬/৯ ওয়ারী র্যাংকিং স্ট্রিটে ডমিনিয়ন অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জে। দুপুরে তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা।
এদিকে লাশ দেখতে হাসপাতালে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান শিকদার, ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হক, র্যাবের ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, অতিরিক্ত আইজি নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। ঘটনার পরই ঘাতকদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, সিআইডি পৃথকভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। র্যাবের গোয়েন্দা উইং পৃথকভাবে তদন্ত করছে। সিআইডি লাশের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে।
গৌরীপুরের বাড়ীতে শোকের মাতম
গৌরীপুর প্রতিনিধি জানান, গৌতম রায়ের মরদেহ গতকাল বিকাল ৫টায় তার নিজ বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ এসে পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাজার হাজার মানুষ গৌতম রায়ের লাশ একনজর দেখার জন্য সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও ভাইবোনদের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিহতের স্ত্রী ডলি রায় এ সময় বারবার মূর্ছা যেতে থাকেন। একমাত্র ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী গৌরব রায় বারবার বলতে থাকে, বাবা বলত আমাকে ভালো ফলাফল করতে হবে। আমি আমার রেজাল্ট কাকে দেখাব। ছয় বছরের শিশুকন্যা অবুঝ অদিতি রায়কেও এসময় ক্রমাগত কাঁদতে দেখা যায়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/21/28434

মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা স্থগিত করলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ মোজাম্মেল হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার
অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দেয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা স্থগিত করলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ মোজাম্মেল হোসেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দিতে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা গতকাল স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া আদেশের স্থগিতাদেশ চান। মিথ্যা ও ভুল তথ্যের বিষয়টি চেম্বার জজ আদালতের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের চাহিদা অনুযায়ী স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন প্রতিনিয়ত মঞ্জুর করা হচ্ছে চেম্বার জজ আদালতে। সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের কাছে আদালত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার দেশকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়াটাই যেন চেম্বার জজ আদালতের মূল কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশ চাওয়া হলেই হলো। অনেকটা মুখ দেখেই চেম্বার জজ আদালতে ইদানিং স্থগিতাদেশ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রবীণতম এই আইনজীবী।
আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে বলেন, কেউ আদালতকে মিথ্য বা ভুল তথ্য দিলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ বাতিল করে দিতে পারে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার রয়েছে সনদ বাতিল করে দেয়ার। তিনি বলেন, আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কোনো কিছু হতে পারে না। সত্য উদ্ঘাটন করে বিচার করাই হচ্ছে আদালতের দায়িত্ব। সুতরাং মিথ্যা বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো আদেশ হতে পারে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছয় বছর সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে দেয়া হলে তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেন। জবাবে মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতকে জানানো হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি কখনও কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন না। তখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দেয়া তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। মীর নাসির বলেন, চেম্বার জজ আদালতকে জানানো হয়েছে, তিনি ১৯৯৫ সালের ২৩ ফেবু্রয়ারি থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। তিনি বলেন, মাত্র সোয়া বছর তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালের উল্লেখিত তারিখ পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আরোহণের দিনই তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সুতরাং এসব বিষয় সরকারের ভালো জানা থাকার কথা। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কখনও তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন না এবং কখনও তিনি ৬ বছর সৌদি আরবে ছিলেন না। তার বক্তব্য আমলে না নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরের অসত্য তথ্যকে আমলে নিয়ে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয় বলে জানান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার কিছু বিষয়কেও গোপন করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দেয়ার জন্য। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে চেম্বার জজের কাছে দায়ের করা আবেদনে আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করে গোপন করা হয়েছে। এসব ভুল বা মিথ্যা তথ্য চেম্বার জজের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল তিনি সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। সেখানে তাকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে জানানো হয় ওপরের ক্লিয়ারেন্স না থাকায় তাকে যেতে দেয়া যাচ্ছে না। সৌদি আরবে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর রয়েছে। ওমরা হজ পালন, রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারত ও তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর জিয়ারত করার কথা ছিল। এজন্য তাকে এক মাসের ভিসা দিয়েছিল সৌদি দূতাবাস। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তিনি রিট অবেদন করেন।
বিদেশে যেতে বাধা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আবেদন করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। গতকাল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের আদালতে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দুই ছাত্রকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। জামিনের আদেশে বলা হয়েছিল, পরীক্ষা শেষ হলে তারা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবার আত্মসমর্পণ করবেন। জামিন আদেশের সার্টিফাইড কপি পৌঁছার পরও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে ফোন করা হয়েছে মর্মে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তি দেয়নি। ৬ দিন পর ১৫ ফেবু্রয়ারি চেম্বার জজ দুই পরীক্ষার্থীর জামিন স্থগিত করে দেয়। এতে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী মাসুম ও আলজাবের ইনস্টিটিউটের ছাত্র লুত্ফুল কবির মুক্ত অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেয় হইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। পরের দিনই হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনা স্থগিত করে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালতে শুনানিকালে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন বাবর অসুস্থ। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের সামনেই বলেন, বাবর মারা গেলে হত্যা মামলা কইরেন। তারপরও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি স্থগিত করে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে দিয়েছেন চেম্বার জজ। অনুরূপভাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে নারায়ণগঞ্জের একটি বোমা হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে একটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন তিনি। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ শুনানি শেষে তাকেও রিমান্ডে পুলিশ কাস্টডিতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। এটিও চেম্বার জজ আদালতের কাছে গেলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার আরিফকে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগ। তাকে পুলিশ কাস্টডি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে নিয়ে আসার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করায় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আইনজীবীকে তিরস্কারও করেছিল। সেই আদেশটিও স্থগিত করে পুলিশ কাস্টডিতেই জিজ্ঞাসাবাদে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ।
গত সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিকিত্সার জন্য বিদেশ যেতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত।
এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় জামিন পাওয়া আসামিদের না ছাড়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চায়। এতে ৩ শতাধিক মামলার আসামির জামিন চেম্বার জজ আদালত স্থগিত করে দেয়।
জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দিত আপিল বিভাগ। এ নিয়ে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো মামলা আপিল বিভাগে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বা নির্দেশনার বিরুদ্ধে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হয়। চেম্বার জজ সেই আবেদনের বিষয়ে যে কোনো রকমের আদেশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন। এছাড়া আপিল বিভাগের কোনো মামলা শুনানির তালিকাভুক্ত করতে বা শুনানির জন্য দিন ধার্য করতে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করতে হয়। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চেম্বার জজ হিসেবে দায়িত্ব দেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/21/28433

শিল্পখাতে ধস




সৈয়দ মিজানুর রহমান
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং স্থানীয়ভাবে নাজুক জ্বালানির পরিস্থিতির কারণে দেশের শিল্পখাতে ধস নেমেছে। শিল্প কারখানাগুলোয় গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে দৈনিক কর্মঘণ্টার অর্ধেক সময়ই উত্পাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উত্পাদন কমে গেছে ৫০ শতাংশ। আবার বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কারখানা চালু রাখতে উত্পাদন ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
তৈরি পোশাক, স্পিনিং ও বস্ত্রখাত, সিরামিক, প্লাস্টিক কারখানাসহ সব শিল্পেই চলছে দুরবস্থা। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শিল্পখাতে ধস নামায় চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ফেব্রিক মিল, স্পিনিং মিল, টেক্সটাইল, ওভেন গার্মেন্ট, নিটওয়্যার কারখানার উত্পাদন ৫৫ ভাগ কমে গেছে।
দেশের অন্যতম প্রধান ফেব্রিক্স কারখানা ‘মুন্নু ফেব্রিক্স’ গ্যাসের অভাবে ৭-৮ মাস ধরে বন্ধ আছে। কবে মিলটি চালু হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। আরেক বৃহত্ ওভেন কারখানা নোমান ওয়েভিং মিল নতুন করে কাপড়ের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্যাসের অভাবে স্থাপিত জেনারেটরও চালানো যাচ্ছে না। এতে মাসের অর্ধেক সময়ই মিল বন্ধ থাকে। ফলে উত্পাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে।
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে ১৪ হাজার শ্রমিক। এখানে বিনিয়োগ আছে হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছরও এই সময়ে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের হোমটেক্সটাইল ও অ্যাপারেল রফতানি হয়েছে প্রতি মাসে। এ বছর রফতানি কমে গড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। মোট উত্পাদন অর্ধেক কমে যাওয়ায় রফতানি আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন নোমান গ্রুপের কর্ণধার মোঃ নুরুল ইসলাম। গাজীপুরের ছোট গোবিন্দপুর এলাকার মাদার টেক্সটাইল মিলস্ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জ্বালানি সঙ্কটে তাদের কারখানায় গড় উত্পাদন কমেছে ৬০ শতাংশ।
গাজীপুরের সারদাগঞ্জের কাশিমপুর এলাকায় মতিন স্পিনিং মিল। কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক আবুল হোসাইন জানিয়েছেন, তাদের কারখানায় গ্যাস বরাদ্দ নেয়া আছে ১৫ পিএসআই। কিন্তু এখন গ্যাস পাচ্ছেন মাত্র ৩ পিএসআই। গ্যাসের অপর্যাপ্ত প্রেশারের কারণে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৪ লাখ টাকা। মাসে ক্ষতি ১৩৫ কোটি টাকা।
এসব মিলের বাইরে নরসিংদী, মাধবদী, মদনপুরসহ যেসব এলাকায় ছোট ছোট ফেব্রিক মিল আছে সেগুলোর অর্ধেকই বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ছোট মিলগুলো চলে বিদ্যুত্ দিয়ে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুত্ও পাচ্ছে না মিলগুলো। এসব কারণে স্থানীয়ভাবে কাপড় উত্পাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রিক কারখানাগুলোর মতো একই অবস্থা হয়েছে ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিলগুলোর। বিটিএমএ’র তথ্য মতে, দেশে প্রায় অর্ধসহস্রাধিক ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিল আছে। ফেব্রিক মিলের উত্পাদিত কাপড় ওভেন গার্মেন্ট মালিকরা কেনার আগে রঙসহ ফিনিশিংয়ের পুরো কাজই হয় এসব মিলে। গ্যাসের অভাবে এসব মিলের বেশিরভাগই এখন বন্ধ হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
রফতানি আয়ের ৭৬ ভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে এ খাত এখন চরম সঙ্কটে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দায় এরই মধ্যে দেশের রফতানি আয় অনেকখানি কমে গেছে। বিশ্বমন্দা কেটে যাওয়ায় রফতানি আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হলেও জ্বালানি সঙ্কটে তা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে চীন-ভারত-ভিয়েতনামসহ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো।
জানা গেছে, বিদেশি ক্রেতারা এখন বেশি বেশি কাজ দিতে চায় বাংলাদেশকে। কিন্তু কাজ নিতে পারছেন না এ দেশের উত্পাদকরা। যারা কাজ নিয়েছিলেন, তাদের বড় অংশই সময়মতো পণ্য সরবরাহের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ক্লাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল্লাহ আজিম আমার দেশকে জানিয়েছেন, তাদের গ্রুপের ৬টি গার্মেন্ট কারখানায় গত তিন মাসে গড়ে উত্পাদন কমেছে ৬০ ভাগ। এজন্য ক্লাসিক গ্রুপের ইউরোপ ও আমেরিকার বায়াররা এ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে আস্থা হারানোর উপক্রম হয়েছে। সময়মতো মাল দেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ অবস্থা আর এক মাস চললে বড় বিপর্যয় ঘটবে। বন্ধ করে দিতে হবে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান। তাতে কর্মসংস্থান হারাবে অসংখ্য মানুষ। নতুন বিনিয়োগ করা নয়, বিদ্যমান উত্পাদন-বিপর্যয় ঠেকানো নিয়েই মালিকরা এখন চিন্তিত বলে মনে করেন তিনি।
বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক পোশাক কারখানা, বেকার হাজার হাজার শ্রমিক : গত ৬ মাসে তৈরি পোশাকখাতের শতাধিক ছোট-বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানা বন্ধ হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহেই এক বা একাধিক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস দিয়ে সংগঠনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এজন্য দায়ী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে দেশে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
বিজিএমইএ’র গবেষণা সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে সংগঠনের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাহেদ ফ্যাশন, ওরিয়েন্ট নিটিং অ্যান্ড অ্যাপারেল, নূরজাহান নিটিং, এমকে ফ্যাশন, লাভলী গার্মেন্ট লিমিটেড, কেআরসি টপ শার্টস লিমিটেড, নোভা অ্যাপারেলস লিমিটেড, তমিজউদ্দিন ফ্যাশন লিমিটেড, বাঘশান গার্মেন্টস লিমিটেড, স্পার্ট অ্যাপারেল, শার্প লিমিটেড, উত্তরা নিটওয়্যার লিমিটেড, হক ইন্টারন্যাশনাল, নর্থ স্টার অ্যাপারেল, আলবিন অ্যাপারেল, শতাব্দী ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন কেয়ার লিমিটেড, এআরএন সোয়েটার, রাজ নিটিং অ্যাপারেল, ইরিন নিটওয়্যার, নাইস নিটিংসহ শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে গ্যাস-বিদ্যুত্ সঙ্কট এবং বিদেশে রফতানি বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায়।
গাজীপুরের বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি গার্মেন্ট কারখানার মালিক আরিফিন হক জানান, গত ৩ মাস ধরে দিনের বেলায় গড়ে ৪ ঘণ্টাও বিদ্যুত্ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছিল না তার কারখানায়। এ সময় জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালাতে গিয়ে তার লোকসান হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না দিতে পেরে বিদেশি ৩টি প্রতিষ্ঠানের দেয়া রফতানি আদেশও বাতিল হয়ে গেছে। অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সামনে কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়াই কঠিন। তাই কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন একের পর এক গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা যে কতটা বেকায়দায় আছি তা সরকারকে বোঝাতে পারছি না। গ্যাস ও বিদ্যুতের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা শিল্পের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ অবস্থা থেকে কি করে উত্তরণ সম্ভব তার কোনো উপায় আমরা দেখছি না।’
কমছে উত্পাদন, বাড়ছে খরচ : শিল্প কারখানাগুলোয় বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে একদিকে উত্পাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিকল্প জ্ব্বালানি দিয়ে উত্পাদন ঠিক রাখতে বাড়ছে ব্যয়। শুধু তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় বছরে প্রায় সাড়ে ২১ কোটি লিটার ডিজেল পুড়ছে। বিদ্যুত্ না পাওয়ায় কারখানার জেনারেটর চালাতে গিয়ে বাড়ছে ডিজেলের ব্যবহার। এতে মাসেই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিজিএমইএ’র গবেষণা সেল সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে পোশাক শিল্পে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৬২০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুত্ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ ভাগ কম । দৈনিক কর্মঘণ্টার (সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা) অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ডিজেলে জেনারেটর চালিয়ে বিকল্প বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে খরচ পড়ে প্রতি কিলোওয়াটে ১৪ টাকা। বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানিয়েছেন, পোশাক খাতে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে উত্পাদন খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৫৫ ভাগ।
পণ্য যাচ্ছে আকাশ পথে : নিজেদের রফতানি বাজার ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রফতানিকারকরা। উত্পাদন কমে যাওয়ায় এবং জাহাজীকরণ সময়মতো করতে না পারায় ভাড়া করা কার্গোবিমানে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। বিজিএমইএ’র হিসাব মতে, ভাড়া করা বিমানে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৪ মার্কিন ডলার, যা সমুদ্রপথে পাঠালে খরচ হয় ২০ থেকে ২২ সেন্ট। আর এভাবে প্রায় ২০ গুণ বেশি খরচ করে রফতানি করতে গিয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে দিন দিন কমে যাচ্ছে ক্রেতাদের আস্থা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, গত নভেম্বরে তারা ১ হাজার ৪৮৪ টন রফতানি পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছে। ডিসেম্বরে বিমানে পণ্য পরিবহন হয়েছে ৮৬৫ টন। গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৯০ টন এবং ফেব্রুয়ারিতে এ পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০১ টন। আবার ভাড়া করা কার্গোবিমানে গত নভেম্বর রফতানি পণ্য পরিবহন করা হয়েছে ৭ হাজার ২০৭ টন, ডিসেম্বর ৪ হাজার ৯৯৩ টন, জানুয়ারি ৭ হাজার ৮ টন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৭ হাজার ৩২১ টন। বিমানে পাঠানো পণ্যের ৯৮ ভাগই তৈরি ও নিট পোশাক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টারা।
পাঁচটি সারকারখানা বন্ধ : বিদ্যুত্ উত্পাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পাঁচটি সারকারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে চিটাগাং ইউরিয়া, যমুনা, ঘোড়াশাল, পলাশ ও কর্ণফুলী সারকারখানা বা কাফকো। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই কারখানাগুলো শতভাগ ক্ষমতায় চললে মোট গ্যাস দরকার হয় ৩০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছিল ২৫ থেকে ২৬ কোটি ঘনফুট। বন্ধ করার পরও কারখানাগুলোর অত্যাবশ্যকীয় কিছু কাজে প্রায় ৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
অচল ট্যানারি শিল্প : গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে ট্যানারিগুলো প্রায় অচল। বিশেষ করে গত দুই মাসে বিদ্যুত্ সঙ্কটে ট্যানারিগুলোর প্রসেসিং ক্ষমতা ৬৫ ভাগ কমে গেছে। ফলে বিশ্ববাজার চাহিদার কতটুকু পূরণ করতে পারবে বাংলাদেশ তা নিয়েই এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি রেজাউল করিম আনসারি আমার দেশকে জানিয়েছেন, গত বছর চামড়া খাতে অর্ধেক রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কয়েকশ’ বিদেশি ক্রেতা বিভিন্ন ট্যানারি চষে বেড়াচ্ছেন। রফতানি আদেশ নিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। তবে সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুত্ ও গ্যাস নিয়ে। তিনি জানান, যে রফতানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে তার ৬৫ ভাগও নেয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুত্ সরবরাহ পায় ট্যানারিগুলো। অথচ ট্যানারিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ থাকা জরুরি।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সার্বিক রফতানি আয় ও পরিমাণ কমে গেছে। এছাড়া শিল্পখাতে নতুন করে কোনো বিনিয়োগও নেই। এ অবস্থায় গ্যাস ও বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতির আশু অবসান না হলে বাংলাদেশী পণ্য বিশ্ববাজারে নিজেদের সক্ষমতা হারাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ‘সিরামিক, চিনিশিল্প, গ্লাস, প্লাস্টিক শিল্প, রি-রোলিং, কেমিক্যাল কারখানাসহ বেশিরভাগ ভারি শিল্পে টানা গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ রাখতে হয়। কোনোভাবেই হঠাত্ কারখানার উত্পাদন বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে এসব কারখানা মাঝে-মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুত্ সরবরাহ পাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উত্পাদিত পণ্যের মান।
জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে : মোট দেশজ উত্পাদনের প্রবৃদ্ধি বা জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছর এ অবদান কমে আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি’ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির মৌল ভিত্তি কৃষি, শিল্প ও সেবা। এ তিন খাতের অবস্থাই এখন ভালো নয়। এডিবি’র ভাষ্যমতে, বিশ্ব মন্দার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। অর্থনৈতিক মন্দা স্থানীয় ও বহির্বিশ্বে চাহিদা হ্রাস করেছে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতে ঋণ কমায় স্থানীয় বিনিয়োগও কমে গেছে; আর গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28262

মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা

সাবি্বর নেওয়াজ : Samakal ঢাকা | ১৯ এপ্রিল ২০১০
মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা বাড়ছে। গতি কমেছে প্রশাসনিক কাজে। জনদুর্ভোগও বেড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ কৃষি, পশুসম্পদ, সমবায়, থানা শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নথি নিষ্পত্তির গতি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এ মূল্যায়ন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখার। উপজেলা পরিষদ নতুন করে যাত্রা শুরু করার পর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও মর্যাদা নিয়ে চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও)। কাজের গতি কমার জন্য এই দ্বন্দ্বকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা মতো উপজেলা প্রশাসন চালাচ্ছেন ইউএনওরা। উপজেলা চেয়ারম্যানরা কোথাও কাজের সুযোগ পাচ্ছেন, আবার কোথাও একেবারেই পাচ্ছেন না। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান বাবেল গোলন্দাজের সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। সাংসদ যদি 'পূর্ব' বলেন, তবে উপজেলা চেয়ারম্যান সরাসরি বলে দেন 'পশ্চিম'। আর এ অবস্থায় চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার দশা হয়েছে ইউএনও খেনচানের। তিনি দু'জনকেই আস্থায় এনে প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করেও চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে স্থানীয় সাংসদ সুলতানা তরুণের পছন্দের প্রার্থীকে কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় সাংসদের
লোকজন ইউএনও নূরুজ্জামানকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। এরপর ওই ইউএনওকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। চাঁদপুরের কচুয়ায় দিনকয়েক আগে সরকারদলীয় ক্যাডাররা উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে আসে। এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে চলতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই গতি হারাচ্ছে মাঠ প্রশাসন।
মাঠ প্রশাসনের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান সমকালকে বলেন, 'উপজেলা পরিষদ নিয়েই নানা অস্পষ্টতা। সবার আগে সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে, উপজেলা পরিষদের ভূমিকা কী হবে আর সেখানে ইউএনওর ভূমিকাইবা কী হবে। এ বিষয়টি যতক্ষণ স্পষ্ট না হবে ততক্ষণ কোনো সমাধান মিলবে না।' তিনি বলেন, 'সরকার যদি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীই করতে চায় তবে সেখানে সরকারি কর্মকর্তার ভূমিকা কী হবে তা স্পষ্ট করে সরকারকে বলতে হবে।'
জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনে এখন সবচেয়ে তীব্র চাপের মুখে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। স্থানীয় পর্যায়ে তাদের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেড়েছে প্রচণ্ডভাবে। আইন ও সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অনেকে কাজ করতে পারছেন না। প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে নানারকম বরাদ্দ, হাট-ঘাট, জলমহাল ও বালুমহাল ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে চাপের মুখে অনিয়ম করতে হচ্ছে তাদের। এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ইচ্ছানুযায়ী তাদের কাজ করতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান দ্বন্দ্বে চরম কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন ইউএনওরা। সরকারি বিভিন্ন কর্মকালোঞ্ছিত হয়েছেন। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে তারা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। অনেক স্থানে জেলা প্রশাসকরা চেষ্টা করছেন সমঝোতা করে প্রশাসন চালিয়ে নিতে।
পাবনার একটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কয়েকদিন আগে সমকালকে জানান, মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে অবৈধ ক্লাবঘর তৈরি করে প্রতিদিন জুয়া খেলার আয়োজন করেছিল স্থানীয় কিছু যুবক। জানতে পেরে তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। ক্লাব পরিচালনাকারীরা সরকারি দল সমর্থিত হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তিনি ইউএনওকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।
ইউএনও বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি এখন ইউএনওকে ওই উপজেলা থেকে বদলি করে দিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নানা লোক দিয়ে প্রতিদিন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করাচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত একজন ইউএনও জানান, ঢাকায় অবস্থানরত তার একমাত্র ছেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়ে ঢাকা রওনা হয়ে যান। তবে সংসদ সদস্য তাকে যেতে নিষেধ করেন। এরপর ইউএনও ফিরে আসেন। দু'এক ঘণ্টা পর ছেলের অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে তিনি শেষতক ঢাকায় চলে যেতে বাধ্য হন। পরদিন সংসদ সদস্য উপজেলায় তার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে এসে ইউএনওকে না পেয়ে ফোন করে গালমন্দ করেন।
মাগুরার একজন ইউএনও সমকালকে বলেন, 'বাস্তবতা হলো অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যানরা উপজেলার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে চান। কিন্তু আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবার সরকারি চিঠিপত্রের ভাষা ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না।' তিনি বলেন, 'একজন ইউএনও একই সঙ্গে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটও। উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ইউএনও উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা, পাবলিক পরীক্ষা, ১৪৪ ধারা জারি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। এই ম্যাজিস্ট্রেসি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও অনেক চেয়ারম্যান হস্তক্ষেপ করতে চান।' পাবনার একটি উপজেলায় কর্মরত একজন ইউএনও বলেন, হাট-বাজার ও জলমহাল ইজারা কমিটির চেয়ারম্যান ইউএনও। একজন ইউএনও চান সরকারের সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে। অথচ চেয়ারম্যানরা অনেক ক্ষেত্রেই এ কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন দলীয় বিবেচনায় কাউকে কম টাকায় এগুলো ইজারা দিতে। একইভাবে ভূমি উন্নয়ন কমিটিরও আহ্বায়ক ইউএনও। খাসজমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারি দলের লোকদের বরাদ্দ দিতে সরাসরি এমপি বা চেয়ারম্যানরা চাপ সৃষ্টি করে থাকেন।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ইউএনও রদবদলে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের তদবিরে মাঠ প্রশাসনে রীতিমতো অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ডিও লেটার দিয়েও কাজ না হলে ইউএনও প্রত্যাহার চূড়ান্ত করতে অনেকে সরাসরি মন্ত্রণালয়ে এসে জোর তদবির করছেন। এতে মাঠ প্রশাসনে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। নিয়ম-কানুন না মেনে কোনো কোনো ইউএনও বাধ্য হয়ে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মন জুগিয়ে চলছেন। একজন উপ-সচিব জানান, প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ইউএনওকে সরিয়ে দেওয়ার তদবির নিয়ে আসেন।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের ১৪ মাসে এ পর্যন্ত শতাধিক এমপি এবং অর্ধশতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও রদবদলের জন্য সংস্থাপন সচিবকে ডিও লেটার দিয়েছেন। অনেকে তদবির করেন টেলিফোনে। কেউ আসেন সরাসরি অভিযোগ নিয়ে। গত এক মাসে ইউএনও রদবদলের জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন ২০ জন এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, পাবনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার কয়েকটি উপজেলা রয়েছে। ইতিমধ্যে ডিও লেটার দেওয়া কয়েকজনের প্রস্তাব কার্যকর করেছে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যৌক্তিক কারণ থাকলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমপি কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনও রদবদলে ডিও লেটার দিতে পারেন। তবে ইদানীং বদলি করার জন্য হরহামেশা ডিও লেটার দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয় না। ইউএনওকে না রাখার কারণ হিসেবে বলা হয়, ইউএনও কথা শুনতে চায় না। আর কথা না শোনা মানেই ধরে নেওয়া হয়, তিনি বিরোধী দলের সমর্থক কিংবা দুর্নীতিবাজ। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এভাবে প্রশাসন চালাতে গেলে একসময় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ওপর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। এতে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতাও ধরে রাখা যাবে না।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার গতকাল পাল্টা অভিযোগ করে সমকালকে বলেন, 'একজন ইউএনও যত অন্যায়ই করুন না কেন তাকে তার জেলা প্রশাসক রক্ষা (সেভ) করেন। আবার ডিসিকে সেভ করেন বিভাগীয় কমিশনার। কমিশনারকে সেভ করেন সচিব। এভাবে তারা একটা চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে রক্ষা পেয়ে যান। এখন পর্যন্ত তাদের কারও মনোভাবই গড়ে ওঠেনি জনপ্রতিনিধিদের অধীনে কাজ করার জন্য। এটা দুঃখজনক।'
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'ইউএনওরা চাকরি করেন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের সেদিকে আনুগত্য রয়েছে। আবার তাদের বলা হচ্ছে উপজেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা করতে। কাঠামোগত আইনের দুর্বলতার কারণেই মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'আইনের আওতায় ইউএনও-উপজেলা চেয়ারম্যান পরস্পরকে সহযোগিতা ও সম্মান করলে জনগণের উপকার হবে। এতে কারোরই ক্ষমতা খর্ব হবে না। কারণ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজ করতে গেলে একজন সরকারি কর্মকর্তা তার লাগবেই। আবার সরকারি কর্মকর্তাদেরও বোঝা উচিত, জনপ্রতিনিধিদের অধীনেই তাদের কাজ করতে হবে। কারণ এটাই স্বাভাবিক, এটাই জনগণের রায়।'
ত্রিমুখী বিরোধ মিটিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে কীভাবে কার্যকর করা যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আসলে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এসব সমস্যা দূর করা কোনো ব্যাপারই নয়। সরকার কি আসলেই চায়, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় হোক? খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় যেভাবে একের পর এক সার্কুলার মাঠ প্রশাসনে পাঠাচ্ছে, তাতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাজ করার কোনো সুযোগই থাকছে না। আবার সরকার প্রত্যেক এমপিকে সরাসরি ১৫ কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অনেক মন্ত্রণালয় সরাসরি অনেক প্রকল্প মাঠ পর্যায়ে ইউএনওদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। এটা না করে সম্মিলিতভাবে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এগুলোর বাস্তবায়ন করা দরকার।' ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, সাংসদের পরামর্শও এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিতে হবে। কেননা, তারাও জনরায় নিয়ে এসেছেন। তাদের ওপরও জনগণের প্রত্যাশা রয়েছে।'

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=04&d=19&action=main&option=single&news_id=60118&pub_no=311

জনশক্তি রফতানিতে ধস

আবদুল মজিদ | সমকাল 16 এপ্রিল ২০১০
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি ব্যাপক হারে কমেছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০০৯ সালে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। তবে গড়ে রফতানির হার কমে গেলেও কোনো কোনো দেশ থেকে রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে। জনশক্তি রফতানি বাড়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালে একটি সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানির এখনও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে এগিয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যেই এর সুফল পাওয়া যাবে। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত এবং এর সমাধানে গাইডলাইনও তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ গাইডলাইনও অনুসরণ করা হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সমকালকে জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি ওই গাইডলাইন সংগ্রহ করে এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন
মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করলে জনশক্তি রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।
জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে বিভিন্ন দেশে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন বাংলাদেশি গেছেন। ২০০৯ সালে গেছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৬০ হাজার ৮৯৬ জন। জনশক্তি রফতানির এ রকম হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বছরের জনশক্তি রফতানি পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি ও জনশক্তি রফতানি বাড়াতে একটি গাইডলাইন তৈরি করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকার অনেক দেশ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, আলজেরিয়া, মালি, তাঞ্জানিয়া, বতসোয়ানায় দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে মরিশাসে ১২ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে মরিশাস আর শ্রমিক নেবে না এমন ঘোষণা দিলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সে দেশ সফরের পর সমস্যা কেটে গেছে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আলজেরিয়ায় কোরীয় কোম্পানি দাইয়ু তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ থেকে ২শ' বাংলাদেশি চিকিৎসক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না নিলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে সেদেশে জনশক্তি রফতানি আবার শুরু হয়েছে। বতসোয়ানা বাংলাদেশ থেকে ২৩৬ জন চিকিৎসক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এরই মধ্যে ৮১ জন চিকিৎসক সেদেশে গেছেন। এদিকে সুদানের সঙ্গে জনশক্তি রফতানি বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ খুবই সীমিত। তবে দেশগুলোতে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ১৪ ভাগ বেড়েছে এবং একই বছরে রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৫৭৫.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইউরোপে ৭ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই রয়েছেন কমপক্ষে ৫ লাখ। ইতালিতে কমপক্ষে ১ লাখ, স্পেনে ১২ হাজার, জার্মানিতে ১০ হাজার, সুইডেনে ৮ হাজার ও ফ্রান্সে ৭ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে অনেক অদক্ষ শ্রমিক ইতালি গেছেন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে শেফ ও রান্নাঘরের জন্য পেশাজীবী শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। রোমানিয়ায় দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সে বাংলাদেশের দূতাবাস। এরই মধ্যে সেখানে ৮শ' পোশাক শ্রমিক গেছেন। সুইডেন দূতাবাস জানিয়েছে, সুইডেন ও ডেনমার্কে আইটি এবং কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার জন্য পড়াশোনার ও চাকরির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, রাশিয়ায় বাংলাদেশি ছাত্রদের লেখাপড়া করা ও পরে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি অভিবাসন ব্যবস্থাপনা চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ে অবকাঠামো নির্মাণ ও কৃষি খাতে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বড় ধরনের আবাসিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সেদেশের সরকার। যেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক প্রয়োজন হবে। সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানিতে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের বেশিরভাগই জাহাজ নির্মাণ ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে কাজ করছেন। গত নভেম্বরে কমপক্ষে ৩৮ হাজার শ্রমিক সিঙ্গাপুরে গেছেন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৬৫ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৯২ ভাগ বেশি। মালদ্বীপে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে সমঝোতা সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
জনশক্তি রফতানি সমস্যা ও সমাধানের ওপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন : ২০০৭ সালের অক্টোবরে 'বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি : সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও কৌশলসমূহ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে জনশক্তি রফতানির সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়। বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় উচ্চ অভিবাসন খরচ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনশক্তির সাধারণ বাজার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। দুর্বল নীতি ও সরকারি এজেন্সির উদাসীনতা, অসাধু এজেন্টদের নীতিবহির্ভূত প্রতিযোগিতার কারণে ওইসব দেশে জনশক্তি রফতানি কমে যাচ্ছে। শ্রমিকরা কম বেতনে চাকরি নিয়ে ওইসব দেশে গিয়ে অধিক অর্থের লোভে বৈধ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অবৈধ পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এভাবে ওই দেশে বাংলাদেশ শ্রমবাজার হারাচ্ছে।
এছাড়া নানা কারণে শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের সঙ্গে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। শ্রমিকরা যথেষ্ট দক্ষ না হওয়াও এর অন্যতম কারণ।
বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নানা কর্মকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড হতাশাজনক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশের বর্তমান যে জনশক্তি রয়েছে তা ধরে রাখতে জনশক্তি রফতানির নতুন বাজার তৈরি করতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি কৌশল : একটি কার্যকর নীতি তৈরি করা যাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো উচ্চ ফি নিয়ে বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে না পারে। অতীতের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসীদের কল্যাণে মিশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সরকারি পর্যায়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের আসা-যাওয়া করতে হবে। রেমিটেন্স পাঠানোর সহজ উপায় বের করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
মধ্যমেয়াদি কৌশল : জনশক্তি রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যেমন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও লবিস্ট, যারা বিদেশে কর্মসংস্থান করেন, এয়ারলাইনস কোম্পানি, মানবসম্পদ তৈরিকারক (প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো) এবং অন্য সব জনশক্তি রফতানির সমস্যা দূর করা ও প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপায় খুঁজে বের করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের একটি ডাটাবেস তৈরি করতে হবে। কোথায় জনশক্তির চাহিদা রয়েছে তা সময় সময় মূল্যায়ন করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মিশনগুলোর লেবার উইংকে শক্তিশালী করতে হবে ইত্যাদি।
দীর্ঘমেয়াদি কৌশল : প্রবাসে কর্মসংস্থানের বিষয় 'থ্রাস্ট সেক্টর' হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের কারিকুলাম নতুন করে তৈরি করতে হবে। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ভাষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশেষ পেশা যেমন নার্স ইত্যাদির চাহিদা বিবেচনায় বেশি করে সেই পেশার জনশক্তি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ইত্যাদি।
জনশক্তি রফতানিকারকদের বক্তব্য : জনশক্তি রফতানির সমস্যা ও রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে রফতানিকারকদের বক্তব্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে অনেক মিল রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সহ-সভাপতি শেখ এম আবদুল জলিল সমকালকে বলেন, জনশক্তি রফতানি গত বছর অনেক কমে গেছে। এর কারণ হলো, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছে। লিবিয়ায় শ্রমিক রফতানি স্বল্পমাত্রায় শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শেখ এম আবদুল জলিল বলেন, এ মুহূর্তে সারাবিশ্বে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়িয়ে অধিক রেমিটেন্স আয় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য : জনশক্তি রফতানির বর্তমান পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে গত রোববার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সমকালকে বলেন_ এটা সত্য, জনশক্তি রফতানি কমেছে। জনশক্তি গ্রহণকারী দেশগুলোতে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তা জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নয়নে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক প্রচেষ্টাসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া প্রয়োজন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সেই কাজটিই করছে।
২০০৭ সালে তৈরি করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি বাস্তবায়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল কি-না জানতে চাইলে ড. জাফর খান এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করে বলেন, জনশক্তি রফতানির ওপর গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনটি তৈরি করে থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব ভালো কাজ করেছে বলতে হবে। এটি এ মন্ত্রণালয়ে এসেছে কি-না খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। না এসে থাকলে এটি সংগ্রহ করা হবে। প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=04&d=16&action=main&option=single&news_id=59508&pub_no=308

---------------------------------------------------------

প্রধান দুই বাজারে কমেছে রফতানি বেড়েছে ফেরত আসা

কিসমত খোন্দকার
দেশের জনশক্তি রফতানির প্রধান দুই দেশ সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। একই সঙ্গে দেশ দুটি থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী ফেরত পাঠানো হচ্ছে। জনশক্তি রফতানির শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে
সৌদি আরব এখন অষ্টম স্থানে রয়েছে। কর্মী ফেরত আসার দিক থেকেও এ দেশটি এখন শীর্ষে।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে গেছে মোট এক হাজার ৪৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৬০৭ জনে। মার্চে শ্রমিকের এ সংখ্যা আরও কমে ৬০২ জনে দাঁড়ায়। অন্যদিকে দেশটি থেকে জানুয়ারিতে ১ হাজার ৪২৫, ফেব্রুয়ারিতে ৯২৪ এবং মার্চে ১ হাজার ৬৬১ জন শ্রমিক দেশে ফিরে আসে। এর মধ্যে মাত্র আটজন পাসপোর্ট নিয়ে ফিরেছে।
গত তিন মাসে মালয়েশিয়া থেকে মোট ২ হাজার ৯৮০ জন শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সময়ে মাত্র ৯২ জন শ্রমিক সে দেশে গেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ৯৯ হাজার ১৪০ জন শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে এসেছে মোট ১১ হাজার ১২১ জন। এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আর সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ফিরে এসেছে।
সূত্র জানায়, গত তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২ হাজার ২৫৫ জন শ্রমিক সৌদি আরবে গেছে। এই সময়ে সেখান থেকে ফেরত এসেছে প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪ হাজার ১০ শ্রমিক। এই শ্রমিকদের ৮ জন ছাড়া বাকি সবাইকে আউট-পাস দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত তিন মাসে জনশক্তি রফতানির দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ সময় দেশটিতে মোট ৫৬ হাজার ২৭৫ শ্রমিক কাজ করতে গেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৯ হাজার ১৯৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৫ হাজার ৪২২ জন এবং মার্চে মোট ২১ হাজার ৬৫৬ জন শ্রমিক সেখানে গেছে। আর এ সময় দেশটি থেকে ফেরত এসেছে ১ হাজার ৭০৪ জন।
বছরের প্রথম তিন মাসে অন্যান্য দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরে ৮ হাজার ৫৬৮, ওমানে ৬ হাজার ৯১০, লিবিয়ায় ৬ হাজার ৮৫০, বাহরাইনে ৪ হাজার ৭৮৫, লেবাননে ৩ হাজার ২২৩, কাতারে ২ হাজার ৪৯৪, ইতালিতে ১ হাজার ৬১৯, ইরাকে ১ হাজার ১৪১, মরিশাসে ৮০৪, ব্রুনাইয়ে ৪৯২, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৩০, মিসরে ১৭৮, জর্ডানে ১৬৫, মালয়েশিয়ায় ৯২, যুক্তরাজ্যে ৬৪, কুয়েতে ১১, সুদানে ১২, জাপানে ৬ এবং অন্যান্য দেশে ৬৪৫ জন শ্রমিক গেছে। এছাড়াও জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে আরও ১ হাজার ৯০৪ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তিন মাসে ১ হাজার ৭০৪, কুয়েত থেকে ১৬৮, ওমান থেকে এক হাজার ৯, সিঙ্গাপুর থেকে ১৬৪ এবং অন্যান্য দেশ থেকে ১ হাজার ৮৬ জন শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=04&d=16&action=main&option=single&news_id=59515&pub_no=308

--------------------------------------------------------------------

মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক ৫৫ হাজার জনের ভিসা বাতিল চূড়ান্ত

আবু হেনা মুহিব
মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য যেতে ইচ্ছুক এমন কমবেশি ৫৫ হাজার ব্যক্তির ভিসা বাতিল চূড়ান্ত। বাতিলকৃত এসব ভিসার বিপরীতে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা। তারা বলছে, মালয়েশিয়ায় আপাতত কর্মী পাঠানোর আর কোনো সম্ভাবনা নেই জেনেই ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ফেরত দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কবে এই টাকা ফেরত দেয়া হবে সে বিষয়ে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি এখনও।
প্রসঙ্গত, কূটনৈতিক ব্যর্থতা, ক্ষমতাসীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য, সরকার সমর্থক এক শ্রেণীর মিডিয়ার অপ্রচারণার কারণেও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জনশক্তি রফতানিতে ধস নামে। এর অংশ হিসেবে ভিসা দেয়া সত্বেও মালয়েশিয়া সরকার ৫৫ হাজার বাংলাদেশীর বৈধ ভিসা বাতিল করে দেয়। তারপর তিন বছর থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া লোক নেয়া বন্ধ করলেও হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র নেপাল ও ভারত থেকে লোক নিচ্ছে।
বায়রা সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে কমবেশি ৫৫ হাজার কর্মীর তালিকা আছে, যারা আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে কলিং (ভিসা) পাওয়ার পরও নিষেধাজ্ঞার কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এদের সবার টাকা ফেরত দেয়া হবে। সার্ভিস-চার্জ হিসেবে নেয়া এই অর্থ মানবিক কারণে ফেরত দেয়া হবে বলে বায়রা সভাপতি গোলাম মুস্তাফা জানান। তিনি জানান, বায়রা সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, যেহেতু মালয়েশিয়ায় খুব শিগগির কর্মী রফতানির আর কোনো সুযোগ নেই, তাই আঙ্গুলের ছাপ দেয়া বাবদ নেয়া অর্থ যেন তাদের ফেরত দেয়া হয়। মূলত সেই দাবির ভিত্তিতে বায়রা নীতিগতভাবে এ টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বায়রা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে দুই দেশের সরকারের সমঝোতা স্মারকের আওতায় দেশের জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশী কর্মীদের প্রত্যেকের আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার জন্য দায়িত্ব পায়। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রথমবারের মতো চালু করা এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল কর্মী প্রেরণে জাল-জালিয়াতি ঠেকানো। এই প্রক্রিয়ায় পাসপোর্টে কোনো ধরনের ভিসা স্ট্যাম্পিং করার প্রয়োজন ছিল না। শুধু ঢাকায় কর্মীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তা অনলাইনে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ভারে পাঠালেই তা যাচাই-বাছাই করে যোগ্য কর্মীদের একটি তালিকা ঢাকায় পাঠানো হতো। তালিকাভুক্ত কর্মী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে বিমানবন্দরে আবার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে তারপর সেদেশে ঢোকার অনুমতি পেতেন।
সূত্র বলছে, বায়রা সেসময় আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার প্রক্রিয়ার জন্য কর্মীপ্রতি অফেরতযোগ্য ১ হাজার টাকা করে ফি নেয়। বায়রা সভাপতি গোলাম মুস্তাফা জানান, বায়রা অফিসে সর্বমোট কত কর্মীর আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয়েছে এ তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে কমবেশি ৫৫ হাজার কর্মী, যারা কলিং পেয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, আপাতত তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কবে এই অর্থ ফেরত দেয়া শুরু হবে জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, এটা এই কমিটির একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা আগামীবার নির্বাচিত হলে ইনশাআল্লাহ এই টাকা ফেরত দেব। এদিকে, জনশক্তি রফতানিকারকদের অনেকেই বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বায়রার বর্তমান কমিটি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে।
আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার শর্তে মালয়েশিয়ার সরকার ২০০৬ সালে তাদের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত করে। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের মাথায় তা আবার বন্ধ করে দেয় তারা। কর্মী প্রেরণে বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনিয়ম, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা ইস্যুকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28297

মৃত্যু ! খুন !!

মতলবে ডায়রিয়ায় চারজনের মৃত্যু, আক্রান্ত দুই হাজার

Prothom-alo মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি | তারিখ: ২৩-০৪-২০১০


চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ২০ দিনে (১-২০ এপ্রিল) এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ব্যক্তি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) মতলব শাখায় ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৯৬৯ জন।
আইসিডিডিআরবিতে নেওয়ার পথে মারা গেছে চারজন। ২০ এপ্রিল ফরিদগঞ্জ উপজেলার তাছলিমা আক্তার (৩০), ১৯ এপ্রিল কচুয়া উপজেলার রফিক মিয়া (০৩), ১৭ এপ্রিল মতলব উত্তর উপজেলার ইন্দুরিয়া গ্রামের আক্কাছ আলী (৬৫) এবং ১২ এপ্রিল কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার জয়দুরুন্নেছা (৪০) মারা গেছেন।
কর্মরত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা সহকারী মিজানুর রহমান জানান, ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশির ভাগই এসেছে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, কচুয়া, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ এবং শাহরাস্তি উপজেলা থেকে। কিছু এসেছে শরীয়তপুর, কুমিল্লা, বরুড়া, লাকসাম এবং লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা থেকে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তি।
আইসিডিডিআরবি মতলব শাখার ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ফিজিশিয়ান আল ফজল খান বলেন, ‘মূলত দূষিত পানি পান, পচা-বাসি খাবার গ্রহণ এবং ভাপসা গরমের কারণেই এত বেশি হারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। তীব্র পানিস্বল্পতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে ২৫ শতাংশ রোগী। আক্রান্তদের খাবার স্যালাইন, শিরায় স্যালাইন এবং ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সামনে অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত স্যালাইন, ওষুধ মজুদ রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখানে অতিরিক্ত একজন চিকিৎসক, তিনজন সেবিকা এবং চারজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর স্থান সংকুলান না হলে প্রয়োজনে বাইরে তাঁবু খাটিয়ে রোগীদের জায়গা করে দেওয়া হবে।
রাঙ্গুনিয়ায় দুই দিনে ভর্তি ৩০১ রোগী
আমাদের রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার চারটি হাসপাতালে বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার ৩০১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরও ৭৬৪ জন রোগী হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে।
সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা, সরফভাটা, কোদালা, শিলক, পদুয়া, চন্দ্রঘোনা, হোছনাবাদ, মরিয়মনগর, রাজানগর, পারুয়া ও স্বনির্ভর ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট চলছে। এসব এলাকার মানুষ খাল, বিল ও পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক স্মৃতি বিকাশ বড়ুয়া জানান, গত দুই দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আরও ১৭৯ জন বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রার আবুল কাশেম জানান, গত দুই দিনে ৮১ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১৫৩ জন। পদুয়া সুখবিলাস শারজাহ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার নূর মোহাম্মদ জানান, দুই দিনে ৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা নিয়েছে ১৯৯ জন। চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান মিশনারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রার প্রভুদান মনু জানান, দুই দিনে ৯১ জন ভর্তি হয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ২৩৩ জন রোগী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা বিজন কান্তি বিশ্বাস বলেন, ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-23/news/58312


২০০ শিক্ষার্থী অসুস্থ

চুয়েট প্রতিনিধি | তারিখ: ২৩-০৪-২০১০


চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চারটি আবাসিক হলের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী গত তিন দিনে ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
চুয়েটের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মুরতজা রেজা খান বলেন, ‘অতিরিক্ত গরম, দূষিত পানি বা নোংরা খাবার থেকে পেটের পীড়া হতে পারে। তবে আসলে কোন কারণে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, চারটি ছাত্রাবাসের ছাত্ররা কয়েক দিন ধরে পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, আমাশয় ও ঘন ঘন পাতলা পায়খানাসহ এ ধরনের রোগে ভুগছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ আসেনি। তবে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-23/news/58313


আগানগর গ্রামের এক যুবককে পিটিয়ে মেরেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু লায়েছের বাড়ির বাদল নামের এক যুবক | পাকা ধান ডুবলেও গ্রেপ্তারের ভয়ে কাটতে যাচ্ছে না কেউ

সুমন মোল্লা, ভৈরব | তারিখ: ২৩-০৪-২০১০


উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে মেঘনা নদীর পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের দেড় হাজার একর ফসলি জমি। ডুবেছে পাকা ধান। সমস্যা সমাধানের পথ সহজ—ধান কেটে বাড়িতে তোলা। কিন্তু এ সহজ কাজটিই করতে পারছে না, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর গ্রামের মানুষ। একটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আত্মগোপন করেছে গ্রামের সব পুরুষ। বাইরে থেকে মজুর দিয়েও তারা ধান কাটাতে পারছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল ইসলাম বলেন, দেড় হাজার একর জমির পাকা ধান তিন দিন ধরে পানির নিচে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে এ ব্যাপারে মতবিনিময় করেছি। কালকের (শুক্রবার) মধ্যে ধান কাটা শুরু করা না গেলে ধান আর ঘরে তোলা সম্ভব নয়। যা করার এক দিনের মধ্যেই করতে হবে।
জানা গেছে, গত শনিবার সৌদি আরব থেকে টেলিফোনে আগানগর গ্রামে জানানো হয়, সৌদি আরবে অবস্থানরত পাশের জগমোহনপুর গ্রামের যুবকেরা আগানগর গ্রামের এক যুবককে পিটিয়ে মেরেছে। তিনি হলেন আগানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু লায়েছের বাড়ির বাদল নামের এক যুবক। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আগানগর গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জগমোহনপুর গ্রামের বাড়িঘরে হামলা চালায়। পাল্টা হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আগানগর গ্রামের লোকজনও।
পুলিশ গিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেনি। একপর্যায়ে পুলিশ আগানগরের কয়েকজন যুবককে আটক করে। আগানগরের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় পুলিশ আগানগরের ৬০০ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার পর ওই গ্রাম থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে কিছু বয়স্ক নারী ও শিশু ছাড়া আগানগর থেকে অন্যরা চলে যায়। এর মধ্যে মেঘনা নদী উপচে পানি এসে চরাঞ্চলের ফসলি জমি ডুবিয়ে দেয়।
গত বুধবার আগানগর গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কিছু বৃদ্ধা ও শিশু ছাড়া আর কেউ নেই। ট্রলারযোগে বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বড়বিল, গজারিয়াবাইদ, চুক্কাবাইদ, ভারচর, ডিকচর, শুঁটকি হাটারচর, মুরাঙ্গীরচর, পুরানচর, টুকচাঁনপুরচর ঘুরে দেখা যায়, এসব চরের ৯৫ ভাগ বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ডুবে যাওয়া পাকা ধান রক্ষায় চরে কোনো কৃষককে দেখা যায়নি।
আগানগর মধ্যপাড়ার দারুগার মা (৬০) বলেন, ‘পুলিশের ডরে তাইনে (স্বামী) ময়মনসিংহ চইলা গেছে। এইদিক দিয়া খেত লইয়া গেছে পানি। কইত্তে খামু বাবা।’ এই কথা বলে চোখের পানি মোছেন তিনি।
আবু লায়েছের স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০) বলেন, ‘ধান কাটা শুরু হইয়া গেছিল। এমন সময় কাইজ্জা হইছে। বাড়ির কয়েকজনরে ধইরা নিয়া যাওয়ার পর সবার মনে ডর ঢুকছে। কামলা দিয়া যে খেত দাওয়ামু তার জু নাই। অহন ৫০০ টেহা দিয়েও কামলা পাওয়া যায় না। এই করতে করতে দুই দিন আগে উজানের পানি সব ফসল লইয়া গেছে।’
কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মীর রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধী ছাড়া পুলিশ কাউকে ধরেনি। কৃষকেরা নির্ভয়ে জমিতে যেতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো ঝামেলা করবে না।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-23/news/58314



সিলেটে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ খুন


নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ২৩-০৪-২০১০


সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগরে শাহেনা বেগম নামের এক গৃহবধূ খুন হয়েছেন। গত বুধবার মধ্যরাতে সংঘটিত এ ঘটনার পরপরই স্বামী লায়েক আহমদ গা-ঢাকা দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে একটি রক্তমাখা ছোরাসহ লায়েককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এর আগে পুলিশ গৃহবধূর শাশুড়ি মালাই বিবিকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন ও মামলার এজাহারে শাহেনা বেগম আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শাহেনার মা তেরাবুন বিবিও তাঁর মেয়ের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী ও গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে খাদিমনগর ইউনিয়নের হানাপাড়া গ্রামের মদরিছ আলীর মেয়ে শাহেনা বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের এলাইছ মিয়ার ছেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লায়েক আহমদের বিয়ে হয়। তাঁদের ছয় ও চার বছর বয়সী দুটি মেয়ে রয়েছে। সম্প্রতি লায়েকের (৩২) আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি শাহেনার (২৮) পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করেন। এ নিয়ে প্রায়ই দুজনের মধ্যে ঝগড়া হতো। এতে শাহেনা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। গত বুধবার লায়েকের চাচা মারা গেলে শাহেনা স্বামীর বাড়িতে আসেন। এ সময় প্রতিবেশীরা স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মিটিয়ে দেন।
লায়েকের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, ওই দিন রাতে লায়েক ও শাহেনার মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিৎকার-শোরগোল শুনে কয়েকজন প্রতিবেশী ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন, শাহেনা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরিবারের কেউ এগিয়ে না আসায় প্রতিবেশীরা তাত্ক্ষণিক সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে ঘটনাটি রাতেই পুলিশকে জানানো হয়। রাত তিনটার দিকে পুলিশ লায়েকের বাড়িতে যায়। পুলিশ গৃহবধূর শাশুড়ি মালাই বিবিকে পেয়ে থানায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিল না।
খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বশির আহমদ জানান, যৌতুক না দেওয়ায় লায়েক তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে খুন করেছেন—গতকাল ভোর থেকে এমন খবর গ্রামবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী দল বেঁধে লায়েককে খুঁজতে থাকে। দিনভর খোঁজাখুঁজির পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে গ্রামবাসী হানাপাড়ার পার্শ্ববর্তী আলাইবহর গ্রামের একটি বাড়িতে লায়েকের খোঁজ পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সেখান থেকে লায়েককে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি রক্তমাখা ছোরা উদ্ধার করা হয়।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে লায়েক, তাঁর মা, বোনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গৃহবধূর বাবা মদরিছ আলী হত্যা মামলা করেছেন। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-23/news/58315

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ

শরিফুল হাসান | Prothom-alo তারিখ: ২১-০৪-২০১০

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। অথচ বর্তমান সরকারের ১৫ মাসে ওই দেশে গেছেন মাত্র ১৬ হাজার ৯২১ জন বাংলাদেশি কর্মী। একই সময়ে সেখান থেকে ফিরেছেন ৩১ হাজার ৩০৬ জন। আগের বছরগুলোতে গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ লোক সৌদি আরবে গেছেন। জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি খাতে গত তিন দশকের মধ্যে কখনোই এমন বিপর্যয় হয়নি।
একই অবস্থা কুয়েতেও। গত ১৫ মাসে কুয়েতে গেছেন মাত্র ২১ জন কর্মী। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিতে গড়ে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশি যেতেন। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি চার দেশের মধ্যে কাতার, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও জনশক্তি রপ্তানি কমেছে। তবে কিছুটা বেড়েছে বাহরাইনে।
৭০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে ৪০ লাখই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। এর মধ্যে সৌদি আরবে প্রায় ২০ লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ লাখ, ওমান ও কুয়েতে আড়াই লাখ করে পাঁচ লাখ, বাহরাইনে দেড় লাখ ও কাতারে এক লাখ ২৪ হাজার।
জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অভিযোগ, কিছু বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যে খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে, সৌদি আরবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এসবের পাশাপাশি গত ১৫ মাসে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি মহল দেশে-বিদেশে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু সরকার কূটনৈতিকভাবে এর জবাব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরও পরিস্থিতি বদলায়নি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংকট উত্তরণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে কেন হঠাৎ করে এভাবে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে, তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার চলছে। দূতাবাসগুলো এর জবাব দিতে পারছে না। এমনকি দূতাবাসগুলোর কোনো গণমাধ্যম শাখাও নেই। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে এখন মধ্যপ্রাচ্যে একটি ভুল ধারণা জন্মাচ্ছে। ফলে তারা বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া রাতারাতি কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনশক্তি খাতকে বাঁচাতে হলে যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার ঠিক করতেই হবে। এ জন্য সরকারের সম্ভাব্য যা যা করণীয়, সবই করা উচিত।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ সরকার জনশক্তি রপ্তানি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কাজেই এ খাতের সব সমস্যাই সমাধান করা হবে। তবে রাতারাতি সেটি সম্ভব নয়।
মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা নানা সমস্যা করছে। কুয়েতে কিছু বাংলাদেশি বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। এসব কারণে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌদি আরবে লোক যাওয়া বন্ধ হয়নি। বরং তারা কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া আধুনিক (বায়োমেট্রিক্স) করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগুলোর বাজার খুব শিগগিরই আরও ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়গুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া শাখার মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। এ বিষয়ে জানতে ওই শাখার মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাফরের সঙ্গে গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক বিষয়সহ অন্যান্য বিষয় দেখে। মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি একান্তই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখভাল করে। কাজেই তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জাফর আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তার সবই নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের পর সেখানকার পরিস্থিতি ইতিবাচক। কুয়েত লোক না নিলেও সেখানে এখন কর্মীরা আকামা পরিবর্তন করতে পারছেন। আরব আমিরাত খুব শিগগির আরও লোক নেবে। মন্দা, কিছুসংখ্যক বাঙালির অপরাধসহ নানা কারণে বাজার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে খুব শিগগির বাংলাদেশ আবার বাজার ফিরে পাবে। এ জন্য করণীয় সব কিছুই করা হবে।
আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৌদি আরবে: বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত কতজন বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন, সে হিসাব সংরক্ষিত আছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে।
সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালেও এক লাখ ৩২ হাজার ১২৪ জন কর্মী এবং ২০০৭ সালে দুই লাখ চার হাজার ১১২ জন কর্মী সেখানে গিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ নয় হাজার ৫১৩। ১৯৭৬ সাল থেকে গত ৩৩ বছরের সংরক্ষিত হিসাব থেকে দেখা গেছে, ’৭৬ সালের পর প্রতিবছরই সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ছিল। আশির দশকে প্রতিবছর গড়ে সেখানে গেছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক। ১৯৯২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই গড়ে গেছেন এক থেকে দেড় লাখ কর্মী। কিন্তু ২০০৯ সালের শুরু থেকে হঠাৎ করেই এ সংখ্যা রাতারাতি কমে যায়।
বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়া রাতারাতি কমিয়ে দিলেও বিশ্বের একমাত্র হিন্দুপ্রধান দেশ নেপাল ও ভারত থেকে লোক নিচ্ছে সৌদি আরব। শুধু জনশক্তি রপ্তানি কমানো নয়, সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্রও (আকামা) বদল করতে দিচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছয় থেকে সাত লাখ কর্মীকে।
সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের নেতাদের এখানে প্রচণ্ড দাপট। মূলত তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সৌদি সরকারকে বোঝাচ্ছেন, বাংলাদেশে ইসলামি দলগুলোর বিরুদ্ধে নিপীড়ন চলছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া শুরুর পর নিপীড়ন বেড়েছে। ফলে খুব সহজে বাজার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
দরজা বন্ধ কুয়েতে: গত ৩৩ বছরে কুয়েতের জনশক্তি রপ্তানির চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৭৬ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর ১০ হাজার লোক কুয়েতে গেছেন। ’৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে কুয়েতের পক্ষে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের সুনাম বেড়ে যায়। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে গেছেন ২৫ হাজার লোক। ২০০১ সালের পর তা বাড়তে থাকে এবং প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোক কুয়েতে যেতে থাকেন। তবে ২০০৯ সালে এসে এ ধারা এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। ২০০৯ সালে মাত্র ১০ জন লোক কুয়েতে গেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কুয়েতের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে এখনো ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি।
অন্য চার দেশের অবস্থা: ২০০৮ সালে ২৫ হাজার ৪৪৮ জন কর্মী কাতারে, ৫২ হাজার ৮৯৬ জন কর্মী ওমানে এবং চার লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ জন কর্মী সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। আর গত ১৫ মাসে ১৪ হাজার ১৬৬ জন কাতারে, ৪৮ হাজার ৬১৪ জন ওমানে ও তিন লাখ ১৪ হাজার ৬২৩ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন। আগের বছরের তুলনায় এই তিন দেশে জনশক্তি রপ্তানি ১৫ মাসে এক লাখ ২০ হাজার কমেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে একমাত্র বাহরাইনেই জনশক্তি রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০০৮ সালে বাহরাইনে গিয়েছিলেন ১৩ হাজার ১৮২ জন কর্মী। আর ২০০৯ সালে ২৮ হাজার ৪২৬ জন কর্মী দেশটিতে গেছেন। গত তিন মাসে দেশটিতে গেছেন আরও পাঁচ হাজার কর্মী।
বায়রার সভাপতি গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরবের অবস্থা খুবই খারাপ। এই বাজার চালু করতে না পারলে ভবিষ্যৎ খুবই সংকটাপন্ন। এ জন্য এখনই জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরও কেন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না, এখন কী করলে সমস্যার সমাধান হবে, সে বিষয়গুলো খুঁজে বের করা দরকার।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-21/news/57844

বিভিন্ন স্থানে চারজন খুন

Prothom-alo বিশাল বাংলা ডেস্ক | তারিখ: ২০-০৪-২০১০

জয়পুরহাট, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় চারজন খুন হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
আক্কেলপুর (জয়পুরহাট): জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে হাফিজার রহমান (৪৫) নামে এক ভ্যানচালককে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে তাঁর ভ্যান নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার রাইকালী এলাকার একটি বোরো খেত থেকে গতকাল সোমবার সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি উপজেলার নুরনগর গ্রামে। ভ্যান ছিনতাই করার জন্য তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার আন্দুয়া কলাগাছিয়া গ্রামে মাসুদ খান (৩৬) নামে এক যুবককে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সকালে ওই এলাকার নদী থেকে মাসুদের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, জমি নিয়ে মাসুদের সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই রিপন খানের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। শনিবার রাতে মাসুদকে ডেকে নিয়ে যায় রিপন। এরপর থেকে মাসুদ নিখোঁজ ছিল।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার রায় জানান, এ ঘটনায় পুলিশ রিপনের স্ত্রী জরিনা বেগম (৩০) ও সুজন (২৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বিল্লাল কাজি (২৫) নামের এক যুবককে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরী গোপীনাথপুর গ্রামের একটি জমি থেকে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তিনি খুন হয়েছেন বলে পুলিশ ধারণা করছে।
নিহত বিল্লাল কাজির বাড়ী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরী গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতনা নদীর রঘুনাথপুর নামক স্থান থেকে রোববার সকালে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের (৩০) লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন, গায়ে চেক শার্ট ও পরনে লুঙ্গি ছিল। সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক আজিজুর রহমান জানান, ধারণা করা হচ্ছে কেউ শ্বাস রোধ করে ওই যুবককে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে গেছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-20/news/57623

হিমাগারের ৫৩ হাজার বস্তা আলু পচে গেল | অব্যাহত লোডশেডিং

Prothom-alo দিনাজপুর অফিস | তারিখ: ২০-০৪-২০১০

দিনাজপুর সদর উপজেলার মেসার্স উত্তরা হিমঘর লিমিটেড নামের একটি হিমাগারে রাখা প্রায় ১০ কোটি টাকা দামের ৫৩ হাজার বস্তা আলু পচে গেছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে ১৬ হাজার বস্তা আলু বেশি রাখা এবং অব্যাহত লোডশেডিং ও জেনারেটর নষ্ট থাকায় এ অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে। হিমাগারের বর্তমান মালিক ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মির্জা আশফাক হোসেন। কৃষকদের অভিযোগ, সভা করে তাঁদের আলু রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মির্জা আশফাক। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না। এমনকি বস্তাপ্রতি ভাড়া ১৮০ টাকার জায়গায় তাঁদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়া হয়।
পচে যাওয়া আলুর মালিক প্রায় ১৫ হাজার কৃষককে বাঁচাতে গত রোববার কৃষক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকেরা প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের মুজাহিদপুর এলাকায় মেসার্স উত্তরা হিমঘর লিমিটেড নামের এ হিমাগারটি নির্মাণ করেন নূর নেওয়াজ নামের এক আমেরিকা প্রবাসী। হিমাগারের অফিস সহকারী মোফার উদ্দিন জানান, পরবর্তী সময় হিমাগারের বেশির ভাগ শেয়ার মির্জা আশফাক কিনে নেন। ২০০৮ সাল থেকে তাঁর তত্ত্বাবধানেই এটি পরিচালিত হচ্ছে।
হিমাগারের কর্মকর্তারা জানান, হিমাগারের ধারণক্ষমতা চার হাজার টন অর্থাৎ ৩৭ হাজার বস্তা। কিন্তু গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত এখানে ৫৩ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়েছে, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে ১৬ হাজার বস্তা বেশি। গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে ভিড় করেছেন। হিমাগারের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে শত শত পচা আলুর বস্তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পচা আলুর দুর্গন্ধ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিরল উপজেলার পার ফরাক্কাবাদ গ্রামের কৃষক বীরেন্দ্রনাথ রায় (৬৮) জানান, তিনি এখানে বীজ ও খাওয়ার জন্য ৩০০ বস্তা আলু রেখেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দাম উঠিলে আলু বেচি বাড়িত টিন দিবার আশা করি কলেস্টরত আলু থুইছি। কিন্তুক হারা মরি গেইনো বা।’ সদর উপজেলার বাঙ্গীবেচা ঘাট এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘খাই না খাই মুই ২০০ বস্তা আলু থুইছিনু। আলুর বস্তাপ্রতি ভাড়া আছিল ১৮০ টাকা। কিন্তু কারেন্ট না থাকিলে জেনারেটর দিয়া কলেস্টর চালাবি, এইতনে মালিক মন্ত্রীর কিবাটা (এপিএস) হামাক ধরি মিটিং করি ১৮০ টাকার ভাড়া আড়াই শ টাকা করিছে। হারা মানি নিছি। কিন্তুক এখন জানা পাছি, জেনারেটার খারাপ। আলু পচি গেইছে। এখন গলাত দড়ি দেওয়া ছাড়া হামার গতি নাই।’
বিরল উপজেলার মালঝাড় গ্রামের আলু ব্যবসায়ী এ হিমাগারে দুই হাজার ১৯ বস্তা আলু রেখেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আলু থুবার সমে মির্জা আশফাক কহিচলো আলু রাখেন, বিদ্যুতের কুনো সমস্যা হবে নায়। কুনো কলেস্টরত কারেন্ট না থাকিলেও হামারটাত থাকিবি। এখন আলু পচি গেইছে শুনি ওয় পালাইছে।’
হিমাগারের কর্মকর্তা ফুলেশ্বর রায় জানান, হিমাগারের জেনারেটর ১০ বছর ধরে নষ্ট। চারতলা পাটাতনবিশিষ্ট হিমাগারে পচা আলুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পচা রস গড়িয়ে পড়ছে পুরো হিমাগারে। শ্রমিকেরাও কাজ করতে চায় না।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ফোন করলে মির্জা আশফাকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হিমাগারের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তিনি এখন চীন সফরে রয়েছেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-20/news/57621

Saturday 17 April 2010

নববর্ষে বস্ত্রহরণ খাবার লুট শিল্পীকে লাঞ্ছনা : ঢাবিতে ছাত্রলীগ নেতার কনসার্ট বাণিজ্য : অর্ধশত তরুণী লাঞ্ছিত

নববর্ষে বস্ত্রহরণ খাবার লুট শিল্পীকে লাঞ্ছনা : ঢাবিতে ছাত্রলীগ নেতার কনসার্ট বাণিজ্য : অর্ধশত তরুণী লাঞ্ছিত
স্টাফ রিপোর্টার
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে তরুণী লাঞ্ছনার রেকর্ড গড়েছে ছাত্রলীগ। কনসার্টের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় কমপক্ষে ৩০ তরুণীসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক নারী লাঞ্ছনার শিকার হন। অবশ্য পুলিশ ২০ তরুণী লাঞ্ছিত হওয়ার খবর স্বীকার করেছে। টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের কনসার্টের এক শিল্পী এবং এফ রহমান হলে এক শিক্ষককেও মারধর করে ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতারা। সন্ধ্যার পর টিএসসির কনসার্টের আশপাশ এলাকায় সম্ভ্রম রক্ষায় তরুণীদের চিত্কার ও ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। এক তরুণীকে উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা বিবস্ত্রও করে ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে রমনা থানার এডিসি নূরুল ইসলাম জানান, টিএসসির কনসার্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে ১৫ তরুণীকে পুলিশ নিরাপদে উদ্ধার করেছে। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তরুণীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। তবে তাদের কেউই নির্যাতন সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ করতে রাজি হননি। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসে নগরবাসী আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে বুধবার বাসায় ফিরেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার সময় এক তরুণীর অভিভাবকসহ কয়েকজনকে পেটায় ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহমান জীবনের অনুসারীরা। ওই ঘটনার তদন্তের পর কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে লোক দেখানো সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। বুধবারের ঘটনায়ও তারাই জড়িত ছিলেন।
বর্ষবরণের দিনে ক্যাম্পাসের তিনটি স্পটে কনসার্ট ও শতাধিক দোকান নিয়ে বসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাম দিয়ে বড় বড় কোম্পানির স্পন্সর নিয়ে তারা কনসার্ট আয়োজন করেন। টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে কবি জসীম উদ্্্্্দীন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহমান জীবন, বটতলায় চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার জামিল ইকবাল আজাদ এবং মলচত্বরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদুল মাহমুদ রাসেল কনসার্টের আয়োজন করেন। আর এই তিনটি কনসার্টের আয় ভাগবাটোয়ারা নিয়েই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা চলে। এতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশাসহ বেশ কজন সিনিয়র নেতা। বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও টাকার লেনদেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও জড়িত বলে ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নববর্ষের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ নেতারা অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।
নববর্ষে তরুণী লাঞ্ছিত : বুধবার পহেলা বৈশাখের আনন্দ-উল্লাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রলীগ ও বহিরাগতের হাতে অর্ধশতাধিক তরুণী লাঞ্ছনার শিকার হন। রাত ১০টা অবধি টিএসসি, কলাভবন, মলচত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট ও শাহবাগ এলাকায় এ লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। নারীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করলেও গতকাল তা বেমালুম অস্বীকার করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
প্রত্যক্ষদর্শী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ধ্যা নামতেই টিএসসির সামনের গেটে দু’দফায় আটজন, পেছনের গেটে তিনজন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভেতরের প্রবেশদ্বারে চার তরুণী লাঞ্ছিত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছাড়াও বহিরাগতরা ছিলেন।রাত ৮টার দিকে টিএসসির পূর্বপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথে চার যুবতীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উঠতি বয়সের কিছু যুবক। দুষ্কৃতকারীরা চার যুবতীর কামিজ ছিঁড়ে ফেলে, ওড়না টেনে নিয়ে যায় এবং তরুণীকে ঝাপটে ধরে। নিজেকে রক্ষা করতে ওই তরুণী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিত্কার শুরু করে। এ সময় দু’যুবক নিজের গায়ের শার্ট খুলে দিয়ে বিবস্ত্র তরুণীর সম্ভ্রম রক্ষা করেন। টিএসসির সামনের গেটে নির্যাতনের শিকার হন পাঁচ ছাত্রী। এ অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ উদ্বিগ্ন এক তরুণীকে রক্ষা করে। অন্যরা আগেই টিএসসির ভেতরে ঢুকে নিজেদের উজ্জত রক্ষা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ওপর কয়েকজন যুবক হামলে পড়লে টিএসসির সাংবাদিক সমিতির নিচের গেটে আশ্রায় নেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে তিনজন ও কলাভবনের সামনে আরও দু’ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র রোকন জানান, ডাসের সামনে দুই ছাত্রীকে অপরিচিত কয়েক যুবক লাঞ্ছিত করে। উপস্থিত ছাত্ররা এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। পরে তারা শাহবাগ থানার এএসআই মনিরুল ইসলামের সহায়তায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বাসায় ফেরেন। জানা গেছে, ছাত্রী নির্যাতনকারীরা অধিকাংশই জিয়াউর রহমান হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী।
রাত সোয়া ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে ১৫/১৬ জন ছাত্রী ও যুবতী লাঞ্ছিত হন। মোবাইল কোম্পানি ‘বাংলালিংক’-এর অর্থ সহায়তায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবান সাংস্কৃতিক সংসদ’ নামে নতুন একটি সংগঠন এ কনসার্ট আয়োজন করে। এ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি হচ্ছেন কবি জসীম উদ্দীন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহমান জীবন। এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম একাধিকবার ঘোষণা করা হলেও রাত সোয়া ৮টার দিকে মঞ্চে ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদের ‘মেলায় যাইরে’ গান পরিবেশনের আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি টিপু ও সাধারণ সম্পাদক বাদশার নাম ঘোষণা করতে বলেন জীবন। গানের আগে ওই শিল্পী নাম ঘোষণায় অনীহা প্রকাশ করায় মঞ্চেই তাকে গালাগাল করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি টিপু, সাধারণ সম্পাদক বাদশা ও কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলমের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মঞ্চে উঠে হট্টগোল শুরু করেন। গান শেষ হওয়ার পর বিশ্রাম কক্ষে গেলে মাকসুদ ও যন্ত্রশিল্পীদের ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করে। এ সময় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টিপু মাইকে আগামী দু’বছরের জন্য শিল্পী মাকসুদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় হট্টগোলের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মীরা কনসার্টে আসা ছাত্রী ও তরুণী মেয়েদের নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। কয়েকজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা জাতি কখনও প্রত্যাশা করে না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা অবশ্যই একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের রচনা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে দু’চারজন তরুণীর উদ্বেগের খবর আমাদের কাছে আছে। তবে যুবকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগের কথা লোকমুখে শুনছি। কনসার্টে টাকার লেনদেন নিয়ে অভিযোগ থাকলেও তাতে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে প্রক্টর দাবি করেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোর ৬টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবকরা দলে দলে ক্যাম্পাসে ঢোকে। এর মধ্যে টিএসসির রাস্তায় কনসার্টের কারণে সেখানে ব্যাপক ভিড়ের সৃষ্টি হয়। ভিড়ের মাঝে কয়েকদফা শিশু ও মহিলাদের নিয়ে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে পুলিশের রমনা থানার এডিসি নূরুল ইসলাম জানান, কনসার্ট সংলগ্ন জায়গা থেকে ১৫ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। মানুষের ভিড় এতো বেশি ছিল যে, চলাচলের কোনো জায়গা ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে একজন তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসে। টিএসসি ব্যাংকের সামনেও তরুণী লাঞ্ছনার অভিযোগ শুনেছি। তবে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তেমন পরিস্থিতি পায়নি। এভাবে নানা ঘটনা ঘটেছে, তবে তরুণীদের সরাসরি লাঞ্ছনার ঘটনার বিষয়টি আমাদের চোখে পড়েনি। আবার একেবারেই যে কিছু ঘটেনি, এতো ভিড়ের মাঝে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, নিরাপদে সরিয়ে নেয়া তরুণীদের কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় কাউকে আটক করা হয়নি।
অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য : বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র, ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, ক্যাম্পাসে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বর্ষবরণ উপলক্ষে ব্যবস্যা খুলে বসেছিল। তার থেকে লব্ধ আয় প্রক্টর, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দু’শীর্ষ নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। বাকিরা না পাওয়ায় সব তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে বাংলালিংক, মল চত্বরে প্রাণ ফ্রুটো, কলা ভবনের সামনে ফোন কোম্পানি রবির অর্থসহায়তায় প্রভাতফেরির উত্সব থেকে ৪০ লাখ টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রধান দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার জামিল ইকবাল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক বাদশা ও তার অনুসারীদের ডিঙ্গিয়ে আয়োজন ও দরকষাকষিতে না মেলায় ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এসব অনুষ্ঠানের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপসরফার পর আয়োজিত হয় এসব অনুষ্ঠান। রবির কাছ থেকে ছাত্রলীগ ৫ লাখ টাকা নিয়েছে বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদ মাহমুদ রাসেলের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব মলচত্বরে প্রাণফ্রুটোর অর্থ সহযোগিতায় কনসার্ট আয়োজন করে। এখান থেকে প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে। তবে টিপু-বাদশা টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক ও প্রভোস্ট লাঞ্ছিত : এএফ রহমান হলের ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের খাবার হরিলুটের ঘটনা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে রেফায়েত ও সুমনকে মারধর করে রেজা সেকান্দর গ্রুপের সমর্থকরা। এসময় প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি রেজা সেকান্দার। এসময় প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুস সাত্তারসহ চারজন আবাসিক শিক্ষককে হল মেসে প্রায় একঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে রেজা সেকান্দার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দফতর সম্পাদক অঙ্কুর।
এ বিষয়ে নির্যাতিত শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, হলে মারামারি হয়েছে। আমাকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এটা কেন করা হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, রেজা সেকান্দারের নেতৃত্বে কিছু ছেলে আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। ওই ঘটনায় হল ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুজ্জমান ফারুক গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে। এরপর থেকে হলে নতুন দখলদার হয়েছেন রেজা সেকান্দার।
পাঁচ হলে সংঘর্ষ : বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সায়েন্স এনক্সে ভবনের সামনে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে শহীদুল্লাহ ও অমর একুশে হলের ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয় । অমর একুশে হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ ইসলাম ও শহীদুল্লাহ হলের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মাসুম বিল্লাহসহ পাঁচজন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরের খাবার বণ্টনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মী মাসুম ও মারুফ এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়। এক পর্যায়ে উভয়ে নিজ নিজ হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মলচত্বরে প্রাণ ফ্রুটোর আয়োজনে গানের অনুষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী আরিফকে মারধর করে মুহসীন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া আরও দু’ছাত্রলীগ কর্মী এসময় আহত হয়। গোয়েন্দা ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ফ্রুটো আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান থেকে প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি টিপু, সাধারণ সম্পাদক বাদশা, সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এদিকে বর্ষবরণ উপলক্ষে স্যার এএফ রহমান হলে খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরের দিকে হল কর্তৃপক্ষ খাবার বিতরণ করছিল। এ সময় খাবার সরিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগ কর্মী রেফায়েত, সুমনসহ ৫ জন আহত হয়।
বৈশাখী খাবার হরিলুট : বর্ষবরণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক’টি হলে বিনামূল্যে ছাত্রদের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্যার এএফ রহমান ও সূর্যসেন হল দু’টিসহ অধিকাংশ হলে খাবার হরিলুট হয়েছে। এফ রহমান হলে ২০০ প্যাকেট খাবার হরিলুট করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ১০০ প্যাকেট খাবার তারা বাইরে বিক্রি করে বলে অভিযোগ করেছে সাধারণ ছাত্ররা। সূর্যসেন হলেও কয়েকশ’ প্যাকেট খাবার হরিলুট হয়েছে বলে জানা গেছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/16/27599