Thursday 22 April 2010

জনশক্তি রফতানিতে ধস

আবদুল মজিদ | সমকাল 16 এপ্রিল ২০১০
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি ব্যাপক হারে কমেছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০০৯ সালে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। তবে গড়ে রফতানির হার কমে গেলেও কোনো কোনো দেশ থেকে রেমিটেন্সের পরিমাণ বেড়েছে। জনশক্তি রফতানি বাড়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালে একটি সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানির এখনও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে এগিয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যেই এর সুফল পাওয়া যাবে। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত এবং এর সমাধানে গাইডলাইনও তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ গাইডলাইনও অনুসরণ করা হয়নি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সমকালকে জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি ওই গাইডলাইন সংগ্রহ করে এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন
মন্ত্রণালয় ও এজেন্সিগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করলে জনশক্তি রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।
জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে বিভিন্ন দেশে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন বাংলাদেশি গেছেন। ২০০৯ সালে গেছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৬০ হাজার ৮৯৬ জন। জনশক্তি রফতানির এ রকম হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বছরের জনশক্তি রফতানি পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি ও জনশক্তি রফতানি বাড়াতে একটি গাইডলাইন তৈরি করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকার অনেক দেশ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, আলজেরিয়া, মালি, তাঞ্জানিয়া, বতসোয়ানায় দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে মরিশাসে ১২ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে মরিশাস আর শ্রমিক নেবে না এমন ঘোষণা দিলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সে দেশ সফরের পর সমস্যা কেটে গেছে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আলজেরিয়ায় কোরীয় কোম্পানি দাইয়ু তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ থেকে ২শ' বাংলাদেশি চিকিৎসক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না নিলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে সেদেশে জনশক্তি রফতানি আবার শুরু হয়েছে। বতসোয়ানা বাংলাদেশ থেকে ২৩৬ জন চিকিৎসক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এরই মধ্যে ৮১ জন চিকিৎসক সেদেশে গেছেন। এদিকে সুদানের সঙ্গে জনশক্তি রফতানি বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ খুবই সীমিত। তবে দেশগুলোতে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ১৪ ভাগ বেড়েছে এবং একই বছরে রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৫৭৫.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইউরোপে ৭ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই রয়েছেন কমপক্ষে ৫ লাখ। ইতালিতে কমপক্ষে ১ লাখ, স্পেনে ১২ হাজার, জার্মানিতে ১০ হাজার, সুইডেনে ৮ হাজার ও ফ্রান্সে ৭ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে অনেক অদক্ষ শ্রমিক ইতালি গেছেন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে শেফ ও রান্নাঘরের জন্য পেশাজীবী শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। রোমানিয়ায় দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সে বাংলাদেশের দূতাবাস। এরই মধ্যে সেখানে ৮শ' পোশাক শ্রমিক গেছেন। সুইডেন দূতাবাস জানিয়েছে, সুইডেন ও ডেনমার্কে আইটি এবং কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার জন্য পড়াশোনার ও চাকরির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, রাশিয়ায় বাংলাদেশি ছাত্রদের লেখাপড়া করা ও পরে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি অভিবাসন ব্যবস্থাপনা চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ে অবকাঠামো নির্মাণ ও কৃষি খাতে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বড় ধরনের আবাসিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সেদেশের সরকার। যেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক প্রয়োজন হবে। সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানিতে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের বেশিরভাগই জাহাজ নির্মাণ ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে কাজ করছেন। গত নভেম্বরে কমপক্ষে ৩৮ হাজার শ্রমিক সিঙ্গাপুরে গেছেন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৬৫ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৯২ ভাগ বেশি। মালদ্বীপে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে দু'দেশের মধ্যে সমঝোতা সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
জনশক্তি রফতানি সমস্যা ও সমাধানের ওপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন : ২০০৭ সালের অক্টোবরে 'বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি : সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও কৌশলসমূহ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে জনশক্তি রফতানির সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়। বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় উচ্চ অভিবাসন খরচ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনশক্তির সাধারণ বাজার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। দুর্বল নীতি ও সরকারি এজেন্সির উদাসীনতা, অসাধু এজেন্টদের নীতিবহির্ভূত প্রতিযোগিতার কারণে ওইসব দেশে জনশক্তি রফতানি কমে যাচ্ছে। শ্রমিকরা কম বেতনে চাকরি নিয়ে ওইসব দেশে গিয়ে অধিক অর্থের লোভে বৈধ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অবৈধ পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এভাবে ওই দেশে বাংলাদেশ শ্রমবাজার হারাচ্ছে।
এছাড়া নানা কারণে শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের সঙ্গে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। শ্রমিকরা যথেষ্ট দক্ষ না হওয়াও এর অন্যতম কারণ।
বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নানা কর্মকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড হতাশাজনক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশের বর্তমান যে জনশক্তি রয়েছে তা ধরে রাখতে জনশক্তি রফতানির নতুন বাজার তৈরি করতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি কৌশল : একটি কার্যকর নীতি তৈরি করা যাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো উচ্চ ফি নিয়ে বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে না পারে। অতীতের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসীদের কল্যাণে মিশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সরকারি পর্যায়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের আসা-যাওয়া করতে হবে। রেমিটেন্স পাঠানোর সহজ উপায় বের করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
মধ্যমেয়াদি কৌশল : জনশক্তি রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যেমন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও লবিস্ট, যারা বিদেশে কর্মসংস্থান করেন, এয়ারলাইনস কোম্পানি, মানবসম্পদ তৈরিকারক (প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো) এবং অন্য সব জনশক্তি রফতানির সমস্যা দূর করা ও প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপায় খুঁজে বের করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের একটি ডাটাবেস তৈরি করতে হবে। কোথায় জনশক্তির চাহিদা রয়েছে তা সময় সময় মূল্যায়ন করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মিশনগুলোর লেবার উইংকে শক্তিশালী করতে হবে ইত্যাদি।
দীর্ঘমেয়াদি কৌশল : প্রবাসে কর্মসংস্থানের বিষয় 'থ্রাস্ট সেক্টর' হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের কারিকুলাম নতুন করে তৈরি করতে হবে। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ভাষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশেষ পেশা যেমন নার্স ইত্যাদির চাহিদা বিবেচনায় বেশি করে সেই পেশার জনশক্তি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ইত্যাদি।
জনশক্তি রফতানিকারকদের বক্তব্য : জনশক্তি রফতানির সমস্যা ও রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে রফতানিকারকদের বক্তব্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে অনেক মিল রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সহ-সভাপতি শেখ এম আবদুল জলিল সমকালকে বলেন, জনশক্তি রফতানি গত বছর অনেক কমে গেছে। এর কারণ হলো, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রেখেছে। লিবিয়ায় শ্রমিক রফতানি স্বল্পমাত্রায় শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শেখ এম আবদুল জলিল বলেন, এ মুহূর্তে সারাবিশ্বে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়িয়ে অধিক রেমিটেন্স আয় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য : জনশক্তি রফতানির বর্তমান পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে গত রোববার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সমকালকে বলেন_ এটা সত্য, জনশক্তি রফতানি কমেছে। জনশক্তি গ্রহণকারী দেশগুলোতে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তা জনশক্তি রফতানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নয়নে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক প্রচেষ্টাসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়া প্রয়োজন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সেই কাজটিই করছে।
২০০৭ সালে তৈরি করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি বাস্তবায়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল কি-না জানতে চাইলে ড. জাফর খান এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করে বলেন, জনশক্তি রফতানির ওপর গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনটি তৈরি করে থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব ভালো কাজ করেছে বলতে হবে। এটি এ মন্ত্রণালয়ে এসেছে কি-না খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। না এসে থাকলে এটি সংগ্রহ করা হবে। প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারি।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=04&d=16&action=main&option=single&news_id=59508&pub_no=308

---------------------------------------------------------

প্রধান দুই বাজারে কমেছে রফতানি বেড়েছে ফেরত আসা

কিসমত খোন্দকার
দেশের জনশক্তি রফতানির প্রধান দুই দেশ সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। একই সঙ্গে দেশ দুটি থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী ফেরত পাঠানো হচ্ছে। জনশক্তি রফতানির শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে
সৌদি আরব এখন অষ্টম স্থানে রয়েছে। কর্মী ফেরত আসার দিক থেকেও এ দেশটি এখন শীর্ষে।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে গেছে মোট এক হাজার ৪৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৬০৭ জনে। মার্চে শ্রমিকের এ সংখ্যা আরও কমে ৬০২ জনে দাঁড়ায়। অন্যদিকে দেশটি থেকে জানুয়ারিতে ১ হাজার ৪২৫, ফেব্রুয়ারিতে ৯২৪ এবং মার্চে ১ হাজার ৬৬১ জন শ্রমিক দেশে ফিরে আসে। এর মধ্যে মাত্র আটজন পাসপোর্ট নিয়ে ফিরেছে।
গত তিন মাসে মালয়েশিয়া থেকে মোট ২ হাজার ৯৮০ জন শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সময়ে মাত্র ৯২ জন শ্রমিক সে দেশে গেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ৯৯ হাজার ১৪০ জন শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে এসেছে মোট ১১ হাজার ১২১ জন। এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আর সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ফিরে এসেছে।
সূত্র জানায়, গত তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২ হাজার ২৫৫ জন শ্রমিক সৌদি আরবে গেছে। এই সময়ে সেখান থেকে ফেরত এসেছে প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪ হাজার ১০ শ্রমিক। এই শ্রমিকদের ৮ জন ছাড়া বাকি সবাইকে আউট-পাস দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত তিন মাসে জনশক্তি রফতানির দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ সময় দেশটিতে মোট ৫৬ হাজার ২৭৫ শ্রমিক কাজ করতে গেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৯ হাজার ১৯৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৫ হাজার ৪২২ জন এবং মার্চে মোট ২১ হাজার ৬৫৬ জন শ্রমিক সেখানে গেছে। আর এ সময় দেশটি থেকে ফেরত এসেছে ১ হাজার ৭০৪ জন।
বছরের প্রথম তিন মাসে অন্যান্য দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরে ৮ হাজার ৫৬৮, ওমানে ৬ হাজার ৯১০, লিবিয়ায় ৬ হাজার ৮৫০, বাহরাইনে ৪ হাজার ৭৮৫, লেবাননে ৩ হাজার ২২৩, কাতারে ২ হাজার ৪৯৪, ইতালিতে ১ হাজার ৬১৯, ইরাকে ১ হাজার ১৪১, মরিশাসে ৮০৪, ব্রুনাইয়ে ৪৯২, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৩০, মিসরে ১৭৮, জর্ডানে ১৬৫, মালয়েশিয়ায় ৯২, যুক্তরাজ্যে ৬৪, কুয়েতে ১১, সুদানে ১২, জাপানে ৬ এবং অন্যান্য দেশে ৬৪৫ জন শ্রমিক গেছে। এছাড়াও জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে আরও ১ হাজার ৯০৪ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তিন মাসে ১ হাজার ৭০৪, কুয়েত থেকে ১৬৮, ওমান থেকে এক হাজার ৯, সিঙ্গাপুর থেকে ১৬৪ এবং অন্যান্য দেশ থেকে ১ হাজার ৮৬ জন শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

http://www.samakal.com.bd/details.php?news=13&view=archiev&y=2010&m=04&d=16&action=main&option=single&news_id=59515&pub_no=308

--------------------------------------------------------------------

মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক ৫৫ হাজার জনের ভিসা বাতিল চূড়ান্ত

আবু হেনা মুহিব
মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য যেতে ইচ্ছুক এমন কমবেশি ৫৫ হাজার ব্যক্তির ভিসা বাতিল চূড়ান্ত। বাতিলকৃত এসব ভিসার বিপরীতে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা। তারা বলছে, মালয়েশিয়ায় আপাতত কর্মী পাঠানোর আর কোনো সম্ভাবনা নেই জেনেই ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ফেরত দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কবে এই টাকা ফেরত দেয়া হবে সে বিষয়ে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি এখনও।
প্রসঙ্গত, কূটনৈতিক ব্যর্থতা, ক্ষমতাসীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য, সরকার সমর্থক এক শ্রেণীর মিডিয়ার অপ্রচারণার কারণেও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জনশক্তি রফতানিতে ধস নামে। এর অংশ হিসেবে ভিসা দেয়া সত্বেও মালয়েশিয়া সরকার ৫৫ হাজার বাংলাদেশীর বৈধ ভিসা বাতিল করে দেয়। তারপর তিন বছর থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া লোক নেয়া বন্ধ করলেও হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র নেপাল ও ভারত থেকে লোক নিচ্ছে।
বায়রা সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে কমবেশি ৫৫ হাজার কর্মীর তালিকা আছে, যারা আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে কলিং (ভিসা) পাওয়ার পরও নিষেধাজ্ঞার কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এদের সবার টাকা ফেরত দেয়া হবে। সার্ভিস-চার্জ হিসেবে নেয়া এই অর্থ মানবিক কারণে ফেরত দেয়া হবে বলে বায়রা সভাপতি গোলাম মুস্তাফা জানান। তিনি জানান, বায়রা সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, যেহেতু মালয়েশিয়ায় খুব শিগগির কর্মী রফতানির আর কোনো সুযোগ নেই, তাই আঙ্গুলের ছাপ দেয়া বাবদ নেয়া অর্থ যেন তাদের ফেরত দেয়া হয়। মূলত সেই দাবির ভিত্তিতে বায়রা নীতিগতভাবে এ টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বায়রা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে দুই দেশের সরকারের সমঝোতা স্মারকের আওতায় দেশের জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশী কর্মীদের প্রত্যেকের আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার জন্য দায়িত্ব পায়। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রথমবারের মতো চালু করা এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল কর্মী প্রেরণে জাল-জালিয়াতি ঠেকানো। এই প্রক্রিয়ায় পাসপোর্টে কোনো ধরনের ভিসা স্ট্যাম্পিং করার প্রয়োজন ছিল না। শুধু ঢাকায় কর্মীর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তা অনলাইনে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ভারে পাঠালেই তা যাচাই-বাছাই করে যোগ্য কর্মীদের একটি তালিকা ঢাকায় পাঠানো হতো। তালিকাভুক্ত কর্মী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে বিমানবন্দরে আবার আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে তারপর সেদেশে ঢোকার অনুমতি পেতেন।
সূত্র বলছে, বায়রা সেসময় আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার প্রক্রিয়ার জন্য কর্মীপ্রতি অফেরতযোগ্য ১ হাজার টাকা করে ফি নেয়। বায়রা সভাপতি গোলাম মুস্তাফা জানান, বায়রা অফিসে সর্বমোট কত কর্মীর আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয়েছে এ তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে কমবেশি ৫৫ হাজার কর্মী, যারা কলিং পেয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি, আপাতত তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কবে এই অর্থ ফেরত দেয়া শুরু হবে জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, এটা এই কমিটির একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা আগামীবার নির্বাচিত হলে ইনশাআল্লাহ এই টাকা ফেরত দেব। এদিকে, জনশক্তি রফতানিকারকদের অনেকেই বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বায়রার বর্তমান কমিটি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে।
আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার শর্তে মালয়েশিয়ার সরকার ২০০৬ সালে তাদের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত করে। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের মাথায় তা আবার বন্ধ করে দেয় তারা। কর্মী প্রেরণে বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনিয়ম, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা ইস্যুকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28297

No comments:

Post a Comment