Thursday 22 April 2010

হিমাগারের ৫৩ হাজার বস্তা আলু পচে গেল | অব্যাহত লোডশেডিং

Prothom-alo দিনাজপুর অফিস | তারিখ: ২০-০৪-২০১০

দিনাজপুর সদর উপজেলার মেসার্স উত্তরা হিমঘর লিমিটেড নামের একটি হিমাগারে রাখা প্রায় ১০ কোটি টাকা দামের ৫৩ হাজার বস্তা আলু পচে গেছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে ১৬ হাজার বস্তা আলু বেশি রাখা এবং অব্যাহত লোডশেডিং ও জেনারেটর নষ্ট থাকায় এ অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে। হিমাগারের বর্তমান মালিক ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মির্জা আশফাক হোসেন। কৃষকদের অভিযোগ, সভা করে তাঁদের আলু রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মির্জা আশফাক। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হবে না। এমনকি বস্তাপ্রতি ভাড়া ১৮০ টাকার জায়গায় তাঁদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়া হয়।
পচে যাওয়া আলুর মালিক প্রায় ১৫ হাজার কৃষককে বাঁচাতে গত রোববার কৃষক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের দাবিতে কৃষকেরা প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের মুজাহিদপুর এলাকায় মেসার্স উত্তরা হিমঘর লিমিটেড নামের এ হিমাগারটি নির্মাণ করেন নূর নেওয়াজ নামের এক আমেরিকা প্রবাসী। হিমাগারের অফিস সহকারী মোফার উদ্দিন জানান, পরবর্তী সময় হিমাগারের বেশির ভাগ শেয়ার মির্জা আশফাক কিনে নেন। ২০০৮ সাল থেকে তাঁর তত্ত্বাবধানেই এটি পরিচালিত হচ্ছে।
হিমাগারের কর্মকর্তারা জানান, হিমাগারের ধারণক্ষমতা চার হাজার টন অর্থাৎ ৩৭ হাজার বস্তা। কিন্তু গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত এখানে ৫৩ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়েছে, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে ১৬ হাজার বস্তা বেশি। গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে ভিড় করেছেন। হিমাগারের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে শত শত পচা আলুর বস্তা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পচা আলুর দুর্গন্ধ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিরল উপজেলার পার ফরাক্কাবাদ গ্রামের কৃষক বীরেন্দ্রনাথ রায় (৬৮) জানান, তিনি এখানে বীজ ও খাওয়ার জন্য ৩০০ বস্তা আলু রেখেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দাম উঠিলে আলু বেচি বাড়িত টিন দিবার আশা করি কলেস্টরত আলু থুইছি। কিন্তুক হারা মরি গেইনো বা।’ সদর উপজেলার বাঙ্গীবেচা ঘাট এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘খাই না খাই মুই ২০০ বস্তা আলু থুইছিনু। আলুর বস্তাপ্রতি ভাড়া আছিল ১৮০ টাকা। কিন্তু কারেন্ট না থাকিলে জেনারেটর দিয়া কলেস্টর চালাবি, এইতনে মালিক মন্ত্রীর কিবাটা (এপিএস) হামাক ধরি মিটিং করি ১৮০ টাকার ভাড়া আড়াই শ টাকা করিছে। হারা মানি নিছি। কিন্তুক এখন জানা পাছি, জেনারেটার খারাপ। আলু পচি গেইছে। এখন গলাত দড়ি দেওয়া ছাড়া হামার গতি নাই।’
বিরল উপজেলার মালঝাড় গ্রামের আলু ব্যবসায়ী এ হিমাগারে দুই হাজার ১৯ বস্তা আলু রেখেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আলু থুবার সমে মির্জা আশফাক কহিচলো আলু রাখেন, বিদ্যুতের কুনো সমস্যা হবে নায়। কুনো কলেস্টরত কারেন্ট না থাকিলেও হামারটাত থাকিবি। এখন আলু পচি গেইছে শুনি ওয় পালাইছে।’
হিমাগারের কর্মকর্তা ফুলেশ্বর রায় জানান, হিমাগারের জেনারেটর ১০ বছর ধরে নষ্ট। চারতলা পাটাতনবিশিষ্ট হিমাগারে পচা আলুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পচা রস গড়িয়ে পড়ছে পুরো হিমাগারে। শ্রমিকেরাও কাজ করতে চায় না।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ফোন করলে মির্জা আশফাকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হিমাগারের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তিনি এখন চীন সফরে রয়েছেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-20/news/57621

No comments:

Post a Comment