Thursday 1 April 2010

লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত ”: বিপাকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা



আমার দেশ ডেস্ক
বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেচ সঙ্কটে পড়েছে আবাদি বোরো জমি। অনেক স্থানে বোরো ধানের গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কৃষকের পড়েছে মাথায় হাত। অন্যদিকে বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ ও কৃষিতে বিপর্যয় নেমে আসার খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং কোনোভাবেই কমছে না। একটি বিদ্যুত্ কেন্দ্র চালু হলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অন্যটি। সার কারখানা বন্ধ রেখে বিদ্যুত্ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পরও চট্টগ্রামে লোডশেডিং কমেনি। দীর্ঘদিন পর গত মঙ্গলবার থেকে রাউজান তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চালু করা হয়েছে। এখানে উত্পাদন বাড়লেও কাপ্তাই পানি বিদ্যুত্ কেন্দ্রের উত্পাদন কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। কেন্দ্রটিতে নিরবচ্ছিন্ন উত্পাদন হচ্ছে না। পানির লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায় এটি দিনে বন্ধ রেখে রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য চালানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম পিডিবি সূত্র জানায়, দিনের বেলা ৮০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট আর রাতে ২৫০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বাস্তবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। নগরীর কোনো এলাকাতেই একটানা এক-আধ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত্ থাকছে না। এক ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকলে দুই-তিন ঘণ্টা থাকতে হচ্ছে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায়।
কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) : কামারখন্দে চলছে পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং। এতে সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। জনজীবন হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত।
জানা গেছে, দিন-রাত মিলে ৩/৪ ঘণ্টা বিদ্যুত্ মিলছে। এতে কৃষি ক্ষেতে সেচকাজ ব্যাহত, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত এবং ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজে অনেকেরই সেচ পাম্প পুড়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বাসাবাড়ির ইলেকট্রিকাল সামগ্রী, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ বিভিন্ন সামগ্রী। এদিকে কামারখন্দের ১০ হাজার ৩শ’ মিনিমাম চার্জের গ্রাহক অভিযোগ তুলেছেন, বিদ্যুত্ না পেয়েও তাদের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিয়ালকোল পল্লী বিদ্যুত্ অফিসের ডিজিএম মাহবুবুর রশিদ জানান, অফ পিক আওয়ারে ২৮ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাচ্ছি ১০ মেগাওয়াট। সান্ধ্যকালীন চাহিদা ৩৫ মেগাওয়াট, পাচ্ছি ১৫ মেগাওয়াট। এতে করে সেচ গ্রাহক ও বাণিজ্যিক-আবাসিক গ্রাহকদের চাহিদামত বিদ্যুত্ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চান্দিনা : কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় দীর্ঘ কয়েক মাস থেকে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। তার ওপর রয়েছে সারাদিন ঘন ঘন লো-ভোল্টেজ। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও সাধারণ গ্রাহকরা। একদিকে প্রচণ্ড গরমের তাপদাহ, অপরদিকে লোডশেডিংয়ের অত্যাচারে দিশেহারা এলাকাবাসী। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় লোডশেডিং। এ লোডশেডিংয়ের স্থায়িত্ব ৩-৪ ঘণ্টা। ফলে ছাত্রছাত্রীসহ অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। গত দেড় মাস থেকে চান্দিনায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) : স্মরণকালের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার মানুষ দীর্ঘদিন যাবত্ কষ্ট করছে। শহর অঞ্চলে রাতে লোডশেডিং দিয়ে গ্রামাঞ্চলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হবে বলা হলেও তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাত-দিন মিলিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত্ থাকে না। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা আশা করেছিলেন, তারা সময়মত সেচকাজে বিদ্যুত্ সুবিধা পাবেন কিন্তু তারা বিদ্যুত্ পাচ্ছেন না। সময়মত বিদ্যুত্ সুবিধা না পাওয়ায় সেচকাজ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বিদ্যুতের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়ন কৃষক সমিতির কৃষকরা ওই দিন সকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক কেএম আলী আজম কৃষকদের কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা শুনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হন। এ সময় ইরি-বোরো ধান বাঁচাতে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুত্ সরবরাহের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে পেশ করা হয়।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : উলিপুরে ভায়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে ইরি-বোরো আবাদি জমিগুলোতে চরম সেচ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানি নিয়ে পাম্প মালিকদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে। বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠা-নামার কারণে ৩০টিরও বেশি মোটর পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন উপজেলার কৃষকরা।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা দিশেহারা এবং অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ সময় বিদ্যুত্ না থাকায় অসহনীয় গরমে লেখাপড়ায় নিদারুুণ ব্যাঘাত ঘটছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, শিল্প কারখানায় উত্পাদন হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত্ থাকে না।
নোয়াখালীর বিদ্যুত্ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দুঃখী রাম বোস জানান, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর জেলায় পল্লী বিদ্যুত্সহ দিনে ৫৫ মেগাওয়াট ও রাতে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাচ্ছে মাত্র দিনে সর্বোচ্চ ২৪ মেগাওয়াট এবং রাতে ২৫ মেগাওয়াট, যা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। নোয়াখালী বিদ্যুত্ বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী গত ২ দিনের সর্বোচ্চ গড় প্রাপ্তি ২৪.৫০ মেগাওয়াট, যা দিয়ে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড কোনোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।
বাঘা (রাজশাহী) : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রামে ১৭ হাজার গ্রাহক আছে। এ গ্রামগুলোতে প্রতিদিন ঘন ঘন লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারণে টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটারসহ মূল্যবান ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/02/25386

No comments:

Post a Comment