Monday 3 September 2012

দুর্নীতির পঞ্চপাণ্ডব

কাদের গনি চৌধুরী সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে মহাজোট জমানার দুর্নীতি। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন সর্বত্রই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও এটি এখন আলোচিত বিষয়। সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের নাম জড়িয়ে পড়েছে ভয়ানক এসব দুর্নীতিতে। তবে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে সরকারের পাঁচ প্রভাবশালী মন্ত্রী-উপদেষ্টার নাম। দুর্নীতির এ পঞ্চপাণ্ডব হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক রেলযোগাযোগমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও ড. মসিউর রহমান। পদ্মা ডুবাল আবুল মসিউর : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান; চাঞ্চল্যকর রেলওয়ের ঘুষবাণিজ্যের সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ংকর দুর্নীতি সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং বিমানবন্দরের ৪৩৪ বিঘা জমি ছাড়াও বিদ্যুত্ খাতের কেলেঙ্কারির জন্য ফারুক খানের নাম এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। দুর্নীতির টপ অব দ্য টপ হিসেবে তাদের নাম সবার মুখে মুখে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণসহায়তা চুক্তি বাতিল করেছে। একই অভিযোগে ওই প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকা। এই দুই দাতা সংস্থা দ্বিতীয় দফায় এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দাবি মেনে না নিলে তারাও ঋণচুক্তি বাতিল করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ দাবির কেলেঙ্কারির ঘটনায় এখন দেশে-বিদেশে মশহুর তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সাবেক সেতু সচিব মোশারেফ হোসেন ভূঁইয়া। এ তিনজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সংক্রান্ত কানাডা পুলিশের দেয়া তথ্য-প্রমাণ দুদককে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তারা কোনো কিছু না করায় তথ্য দেয়া হয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকেও। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। উপরন্তু বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে নানা কুত্সা রটাতে থাকে সরকারের লোকজন। একপর্যায়ে দুর্নীতির দায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিল করে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় একই অভিযোগে এডিবিও এ প্রকল্পে তাদের ঋণচুক্তি স্থগিত করে। প্রথম দিকে সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঘুষ কেলেঙ্কারির কথা অস্বীকার করলেও দুনিয়াজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেলে একপর্যায়ে দুর্নীতির বরপুত্র সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সাবেক সেতু বিভাগের সচিব মোশারেফকে ছুটিতে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত ঘুষ কেলেঙ্কারির আরেক নায়ক মসিউর রহমানকে স্বপদে বহাল রাখা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সরকারের এ ড্রামা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। দাতা সংস্থাটি সাফ জানিয়ে দেয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে তারা এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। একপর্যায়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শে সৈয়দ আবুল হোসেন আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকেও পদত্যাগ করেছেন। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে উপদেষ্টা হিসেবে কোনোভাবে টিকে থাকার আশায় বিকল্প হিসেবে একটি ছুটির আবেদনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে রেখেছেন তিনি। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পেতে মরিয়া সরকার অবশেষে বিশ্বব্যাংকের শেষ শর্তটিও মেনে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে সরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দিতে প্রতিশ্রুত হয় বিশ্বব্যাংক। কাজ শুরুর আগেই কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সরকারের প্রভাবশালীরা ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে জুনে এসে বিশ্বব্যাংকের এ ঋণসহায়তা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। ২৯ জুন চুক্তি বাতিলসংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার পরও দুর্নীতি তদন্তে তেমন কোনো সাড়া না পাওয়ায় এ অর্থচুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমেরিকাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে আরও জানায়, দুই দফা তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দেয়ার পর কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। যার কারণে প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করতে হয়েছে এবং এ সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ থাকার পর বিশ্বব্যাংক চোখ বুজে থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয় এবং থাকবেও না। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও আইডিএ দাতা দেশগুলোর প্রতি আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত দায়িত্ব রয়েছে। বিবৃতিতে দিন-তারিখ উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ও ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এসব তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুর্নীতির এ অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা এটা প্রত্যাশা করেছিলাম বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির এ বিষয়টিতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেবে। এতে আরও বলা হয়, কানাডায় এসএনসি লাভালিনের সদর দফতর অবস্থিত। বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে কানাডার ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসেস নামের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসএনসি লাভালিনের দুই সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু ইস্যুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত ও বিচারকাজ এগিয়ে চলেছে। চাঞ্চল্যকর ঘুষ কেলেঙ্কারির পর মন্ত্রণালয় হারালেও মন্ত্রিত্ব হারাননি সুরঞ্জিত : পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির আগে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারি। এ ঘুষ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম। এ অভিযোগের কারণে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের পর আবার তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গত ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। গত ৯ এপ্রিল রাতে সুরঞ্জিতের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থসহ রেলের দুই কর্মকর্তা ধরা পড়েন। প্রথমে বলা হয় বস্তায় ছিল ২০ লাখ টাকা। এরপর বলা হয় ৭০ লাখ। কোনো কোনো সূত্র জানায়, ওই বস্তায় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল। জানা যায়, ঘুষের এ টাকা নিয়ে তারা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, সুরঞ্জিত ওই রাতে তদবির করে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা যাতে নেয়া না হয়, সেজন্য তিনি তদবিরও করেন। রেলওয়ের চাঞ্চল্যকর ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেলে ৬ দিনের মাথায় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন সাড়ে চার মাস আগে মন্ত্রিত্ব পাওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অবশ্য একদিন পর নাটকীয়ভাবে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের জিএম (পূর্বাঞ্চল) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তাকর্মী এনামুল হক ৯ এপ্রিল গভীর রাতে ৭০ লাখ টাকাসহ ঢাকায় বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে ধরা পড়েন। প্রায় ১২ ঘণ্টা বিজিবির হাতে আটক থাকার পর রেলমন্ত্রীর চাপে ১০ এপ্রিল দুপুরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তারা জানান, ওই টাকাসহ রেলমন্ত্রীর জিগাতলার বাসায় যাচ্ছিলেন এবং তাদের অপহরণ করার লক্ষ্যেই চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির গেটে ঢুকিয়ে দেন। এরপর বিজিবি সদস্যরা তাদের টাকাসহ আটক করেন। পরে এপিএস ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা ছাড়া পেলেও চালক আলী আজম এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। জানা যায়, রেলওয়েতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পদে নিয়োগবাণিজ্যের মন্ত্রীর ভাগের একটি অংশ প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা (প্রকাশ যার একটি অংশ নগদ ৭০ লাখ টাকা) তার জিগাতলার বাসায় পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তারা আটক হন। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সরকারি দলের একাধিক এমপি, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন মহল থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। সংসদীয় কমিটির বিরোধীদলীয় সদস্যরা সুরঞ্জিত সেনের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। একইদিন রাতে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তাকে জরুরি তলব করেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাকে দুটি অপশন দেন। এক. নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা; দুই. পদত্যাগ করা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করেই পদত্যাগ করেন। শুধু তাই নয়, একসময়ের এ বাম রাজনৈতিক নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছেলে এখন সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের মালিক। সুরঞ্জিতের ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তের মালিকানাধীন ‘সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডকে’ সম্প্রতি ‘ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ’ বা আইসিএক্স লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। নতুন এ লাইসেন্স নেয়ার জন্য তাকে বিটিআরসিতে ফি বাবদ জমা দিতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। রেলওয়ের ঘুষ কেলেঙ্কারির দু’দিন পর সেনগুপ্ত টেলিকমিউনিকেশনের নামে অত্যন্ত লোভনীয় এ লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এর ফি বাবদ পরিশোধিত টাকার উত্স নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ চাকরিজীবী সৌমেন এত টাকা কোথায় পেলেন? কীভাবে পরিশোধ করলেন আইসিএক্স লাইসেন্স ফি’র ৫ কোটি টাকা? তাছাড়া আইসিএক্স অবকাঠামো তৈরিতে আরও অন্তত ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। জানা গেছে, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে মন্ত্রীর নামে ‘সেন মার্কেট’ নামে একটি মার্কেট রয়েছে। এটি মন্ত্রিত্বকালে তিনি উদ্বোধনও করেন। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারির ঘটনায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা : ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে উদঘাটিত এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী জড়িয়ে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাব খাটিয়ে হলমার্ককে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি ও অন্যান্য নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে আরও তিনটি শাখা থেকে ৮০০ কোটি টাকা বেআইনি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। হলমার্ককে ঋণ দিতে তিনি অন্তত ২৭ বার এমডিকে ফোন করেন বলে ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। এমনকি গত ১৭ মার্চ সাভারে হলমার্ক গ্রুপের কারখানা পরিদর্শনও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ প্রভাবশালী মহলের চাপে ব্যাংকিং খাতের প্রচলিত আইন ও নিয়ম ভেঙে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল শাখা হলমার্ককে ব্যাংকটির আমানতের পাঁচগুণ বেশি ঋণ দিয়ে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চে এ ঘটনা ঘটলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের আগ পর্যন্ত বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এবং অনুমোদনে এ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। কারণ, গত মার্চে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল শাখায় আমানতের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০৯ কোটি টাকা। আর এপ্রিলে ছিল ৬৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু হলমার্ককেই দেয়া হয় এর প্রায় পাঁচগুণ বেশি টাকা। অর্থাত্ প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনে অন্য শাখা থেকে এনে এ টাকার জোগান দিতে হয়েছে। ঋণসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাংকার জানান, এরকম ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব অডিট রিপোর্টে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে হলমার্কের নামে এই নজিরবিহীন ঋণ দেয়া হয়। এ সময় ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত থেকেছেন। অডিট রিপোর্টে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হলমার্ক থেকে সুবিধা নেয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতে বেছে নেয়া হয় অভিনব কৌশল। আর তাতে সরাসরি সহায়তা করে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের ক’জন কর্মকর্তা। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে—এটি ব্যাংকিং ইতিহাসের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ব্যাংক থেকে হলমার্কের নামে নেয়া প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও চলতি মূলধনজাতীয় ঋণও আছে। তবে এ অর্থের ৯০ ভাগই অপর কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ঋণপত্র (এলসি) খুলে বের করে নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২৮ মার্চ হলমার্ক গ্রুপ রূপসী বাংলা শাখায় সুতা কিনতে আনোয়ারা স্পিনিং মিলস ও স্টার স্পিনিং মিলসসহ তিনটি স্পিনিং মিলের অনুকূলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এলসি খোলে। দুদক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাক টু ব্যাক এলসি, ইফেক্টেড বিল পার্সেস (এবিপি), পিসিসহ ছয়টি খাতের নামে হলমার্কসহ অপরাপর গ্রুপ ওই টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটি কথিত রফতানিকারক। সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখার সঙ্গে আগে থেকেই তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। নিয়ম অনুযায়ী কোনো কোম্পানি বিদেশ থেকে অর্ডার পেলে এর বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলা হয়। হলমার্কও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সেজে এলসি খুলেছিল। দুদক কর্মকর্তারা জানান, তারা বিদেশে গার্মেন্টসামগ্রী রফতানির নামে যে অর্ডারটি জামানত হিসেবে রেখেছিল, সেটি ছিল জাল ও ভুয়া। হলমার্কসহ কয়েকটি জালিয়াত গ্রুপ নিজেরাই বিদেশের পার্টি এবং ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা করে ব্যাংক থেকে পেমেন্ট নিয়ে যায়। অথচ এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পণ্য আমদানি-রফতানি হয়নি। তারা বলেন, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তিনটিও ছিল ব্যাংকের ওই শাখার গ্রাহক। দুদকের কাছে রক্ষিত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, হলমার্ক যে টাকা হাতিয়ে নেয় ওই টাকা তাদের কোম্পানির একটি ব্যাংক হিসাবে রাখা হয়। পরে ওই হিসাব থেকে সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের নামে খোলা একটি চলতি হিসাবে টাকা স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে টাকাগুলো বের করে নেয় হলমার্ক গোষ্ঠী। দুদক জানায়, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস ও স্টার স্পিনিং মিলসসহ তিনটি স্পিনিং মিলস ও সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের নামে খোলা চলতি হিসাবগুলোও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে করা। এগুলো হলমার্কের বেনামি প্রতিষ্ঠান। এদিকে এতবড় দুর্নীতি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসারদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রাঘব-বোয়ালদের বাদ দিয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে জুনিয়রদের। অথচ ঋণ দেয়ার কোনো ক্ষমতাই তাদের নেই। এ বিষয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন জুনিয়র অফিসার, কেরানি হিসেবে এখানে কাজ করি। কোনো বিল-ভাউচার বা কাগজে স্বাক্ষর করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি কীভাবে জড়িত থাকব। হলমার্ক ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে ওপরের দিকের লোকেরা জড়িত। সাইদুরের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় কাজ করা অবস্থায় হলমার্কের ব্যাপারে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যেতেন কি না। অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে কোনো প্রভাবশালী জড়িত কি না, জবাবে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী মাঝে মাঝে শাখায় আসতেন। ডিজিএমের কক্ষে যেতেন। ওই শাখার এক নারী কর্মী তার আত্মীয়। উপদেষ্টা তার কাছে আসতেন। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর এলাকার মানুষ হিসেবে পরিচিত সোনালী ব্যাংকের ওই নারী কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এ ছাড়া দুদক মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গেও কথা বলবে বলে জানা গেছে। সিভিল এভিয়েশনের ৪৩৪ বিঘা জমি দখলের উদ্যোগ ফারুক খানের পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের : বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ ও তাদের পুরনো ব্যবসায়িক অংশীদার ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন ইপকো বিমানবন্দর এলাকায় ৪৩৪ বিঘা জমি দখল করতে যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে এ জমির মূল্য ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এ জমি সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেলে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। সূত্র জানায়, প্রথমদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বর্তমানে তারা আর সে অবস্থানে নেই। এদিকে বিদ্যুত্ সেক্টরে একচেটিয়া ব্যবসা হাতিয়ে নিচ্ছে এ মন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সামিট। বর্তমান সরকার আমলের তিনটি বৃহত্ বিদ্যুত্ কেন্দ্রসহ মোট ৮টি বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পেয়েছে সামিট। বিবিয়ানা-১, বিবিয়ানা-২ এবং মেঘনাঘাট-২। ৩টি বিদ্যুত্ কেন্দ্রের প্রতিটির উত্পাদন ক্ষমতা ৩৩০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট। তিনটির কাজই পেয়েছে সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশন লিমিটেড। সঙ্গে নামকাওয়াস্তে রাখা হয়েছে মার্কিন কোম্পানি জিই এনার্জিকে। আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার) নীতিমালা অনুযায়ী স্থাপিতব্য এই তিনটি কেন্দ্রের ক্ষেত্রেই সামিটের অংশীদারিত্ব ৮০ শতাংশ। আর আমেরিকান কোম্পানি জিই এনার্জি এলএলসির ২০ শতাংশ। সরকার ২২ বছর ধরে এই কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুত্ কিনবে। এই তিনটি বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য কাজ নিলেও বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনে প্রতিষ্ঠানটির গড়িমসি গোটা খাতকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পর বিনা দরপত্রে কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের হিড়িক পড়লে সামিট গ্রুপ নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে বিদু্যুেকন্দ্র স্থাপনের কাজে অযোগ্য ঘোষিত হয়। তারপরও পিডিবিকে দিয়ে তাদের প্রস্তাবের বৈধতা দিতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হয়। পরে সামিট মদনগঞ্জে ১০২ মেগাওয়াট ‘কুইক রেন্টাল’-এর কাজ পেয়েছে। খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ১১৫ মেগাওয়াট ও নোয়াপাড়ায় খানজাহান আলী পাওয়ারের ৪০ মেগাওয়াট ‘কুইক রেন্টাল’ও সামিটের। এছাড়াও সামিট ফার্নেস অয়েলে চালিত সৈয়দপুর ১০৪ ও শান্তাহার ৫২ মেগাওয়াট আইপিপির কাজ পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বৃহত্ বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিবিয়ানা বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সামিট-জিই এনার্জি ক্ষমতার জোরে প্রাকযোগ্যতা অর্জন করে। পরে দাতা সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। নতুন করে বিবিয়ানা ৩৩০-৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদু্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রাকযোগ্যতার প্রস্তাব আহ্বান করা হলে ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল ৭টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের যোগ্যতার দলিলপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাকযোগ্য বিবেচনা করা হলেও ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল (আরএফপি-রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) কেনে। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। মূল্যায়নে পরিকল্পিতভাবে মালয়েশিয়ার ওয়াইটিএল পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বারহাডকে নন-রেসপনসিভ ঘোষণা করা হয়। সামিট-জিই জেভিকে বিবিয়ানা বিদ্যুত্ কেন্দ্রের একমাত্র বৈধ প্রস্তাবদাতা করার পরিকল্পনা থেকেই এটা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ, প্রধান উদ্যোক্তা (লিড স্পন্সর) হিসেবে সামিটের এ ধরনের বৃহত্ কেন্দ্র স্থাপনের পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই। বিবিয়ানা ৩৩০-৪৫০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের (দ্বিতীয় পর্যায়) জন্য গত বছরের ২ মে ১২টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান প্রাকযোগ্যতার দলিলপত্র দাখিল করে। ৮টি প্রতিষ্ঠান প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠানের ৫টি দরপত্র দলিল (আরএফপি) কিনলেও ১৪ অক্টোবর মাত্র ৩টি দরপত্র জমা হয়। নানা কারসাজি ও ছলচাতুরির মাধ্যমে এ কেন্দ্রের কাজও সামিটকে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিমান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ফারুক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর বিমানের একচেটিয়া ব্যবসা ও নিয়োগ কার্যক্রম চলে গেছে মন্ত্রীর পকেটে। শুধু তাই নয়, একই সরকারের আমলে পর পর দু’জন মন্ত্রীর অধীনে দুই রকম নীতিতে চলছে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম। আগের মন্ত্রীর আমলে বাতিল হওয়া সিদ্ধান্তগুলো বর্তমান মন্ত্রী পাস করেই চলেছেন। এতে দেশের স্বার্থও বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। সূত্র জানায়, বিমানে নতুন করে লোক নিয়োগের বিষয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল জিএম কাদেরের। বিমানের অর্গানোগ্রাম হওয়ার আগে কোনো পদে লোক নিয়োগ করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া যেসব পদ থেকে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হয়েছে, সেসব পদে নতুন করে লোক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়েরও। এর পরও সেসব পদে এখন লোক নিয়োগ হচ্ছে। এবং এসব নিয়োগ হচ্ছে পছন্দের লোকদের। জিএম কাদেরের বক্তব্য ছিল, যেখানে অর্গানোগ্রামই নেই, সেখানে লোক নিয়োগ হতে পারে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আইনবহির্ভূতভাবে কেপিসিএল এবং ওসিএলের সরাসরি তালিকাভুক্তি : ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) বেসরকারি খাতের কোম্পানির জন্য পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তি (ডিরেক্ট লিস্টিং) সুযোগ বাতিল করে। কিন্তু বাতিল করা সত্ত্বেও শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তত্কালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক কোম্পানি হিসেবে খ্যাত সামিট গ্রুপের খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল) এবং ওশান কন্টেইনার লিমিটেডকে (ওসিএল) তালিকাভুক্তির বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। ২০১০ সালে কোম্পানি দুটি শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির সুযোগ পেয়ে ‘বুক বিল্ডিং’ পদ্ধতিতে কারসাজির মাধ্যমে কোম্পানি দুটি শেয়ারের দর বাড়িয়ে নেয়। কেপিসিএলের ১০ টাকা মূল্যের শেয়ারের প্রারম্ভিক বিক্রি মূল্য ১৯৪ টাকা ২৫ পয়সায় এবং ওসিএলের ১০ টাকা শেয়ারের বিক্রি মূল্য নির্ধারিত হয় ১৪৫ টাকা। অস্বাভাবিক দরে মূল্য নির্ধারণের পর কোম্পানি দুটি তার পরিশোধিত মূলধনের মাত্র ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ তুলে নেয়। সরাসরি তালিকাভুক্তির কারণে পুরো টাকাই গেছে পরিচালকদের পকেটে। ডিএসই’র সর্বশেষ (০২-০৯-১২) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কেপিসিএলের শেয়ারের দর নেমে এসেছে ৬০ টাকা ৫০ পয়সায়। প্রারম্ভিক মূল্য হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে প্রায় ৬৯ শতাংশ। অপর দিকে ওসিএলের শেয়ার ৪৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। সে হিসাবে কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে ৭০ শতাংশ।

পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ : দেবিদ্বারে প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করল আ.লীগ ক্যাডাররা

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালে প্রকাশ্যে পিটিয়ে প্রধান শিক্ষককে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। গতকাল বিকালে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ছোটনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত প্রধান শিক্ষকের নাম মো. আকতার হোসেন। আওয়ামী ক্যাডার খোরশেদ কিবরিয়ার নেতৃত্বে কামরুল, মুজিব, সাত্তার খান ও শামীমসহ ১৫-২০ সন্ত্রাসী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহত শিক্ষক আকতার হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে। হত্যার আগে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়। পরে পিটিয়ে হত্যা করে এবং আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে মুখে বিষ ঢেলে দেয় বলে জানা গেছে। এ সময় প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে স্কুল কমিটির সভাপতি মো. আজিজ খান এগিয়ে এলে তিনিসহ ৪-৫ জন গুরুতর আহত হন। এ ব্যাপারে নিহত শিক্ষকের ভাই মো. আবেদ হোসেন কুমিল্লা কোর্টে ছোটনা গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে খোরশেদ কিবরিয়াকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। নিহত প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন বুড়িচং উপজেলার ময়নামতির জুমুর গ্রামের মৃত খালেকের ছেলে। তিনি ৩ সন্তানের বাবা। ২০১১ সালের নভেম্বরের ১৯ তারিখে দেবিদ্বার উপজেলার ছোটনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর থেকে ওই এলাকার আওয়ামীপন্থী একটি মহল তাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেনকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। এরই জেরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল বিকালে ছোটনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভা চলাকালে স্কুলের সভাপতি, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিজ খান জানান, সভা চলাকালে খোরশেদ কিবরিয়ার নেতৃত্বে কামরুল, মুজিব, সাত্তার খান ও শামীমসহ ১৫-২০ জন হামলা চালায়। এদিকে প্রধান শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Monday 20 August 2012

নিজেদের অসহায় বললেন সাঈদীর পরিবার, সাক্ষী ও ভক্তরা : সাঈদীর সাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ ও সরকারি দলের যৌথ অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের বাড়িতে শবেকদরের রাতে যৌথ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। আওয়ামী নেতাকর্মীদের হুমকি ও পুলিশি গ্রেফতার অভিযানের মুখে আল্লামা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী ও তার ভক্তরা এখন এলাকা ছাড়া। তাদের নিজ বাড়িতে না ফিরতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চলছে বলে জানান স্থানীয়রা। সাঈদীর পরিবার এ ঘটনায় নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সরকার গায়ের জোরে কথিত বিচারের মাধ্যমে একজন নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চায় বলে অভিযোগ করেন। বলেন, সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার পর জীবন নিয়ে কেউ ফিরে আসতে পারবে না বলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মহড়া দিচ্ছে। তবে পুলিশের দাবি সাক্ষীদের গ্রেফতার করতে নয়, তাদের খোঁজখবর নিতে বাড়ি বাড়ি গিয়েছে। প্রসঙ্গত, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ একাধারে সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হলে পুলিশের তৈরি করা জবানবন্দিই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে আসামি পক্ষে ৪৮ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ ২০ জন সাক্ষ্য দিতে পারবেন জানিয়ে ২৮ আগস্ট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করার আদেশ দেন। সেদিন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালের এ সিদ্ধান্তকে ভুল আখ্যা দিয়ে এটি ন্যায়বিচারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন। এভাবে সাক্ষী লিমিট করে দেয়াটা আসামিকে হাত পা বেঁধে জবাই করে দেয়ার শামিল বলেও মন্তব্য করেন তারা। এসবের পর সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে এমন হয়রানির অভিযোগ উঠল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার নলবুনিয়া, টেংরাখালী, হোগলাবুনিয়া ও গদরহাওলা গ্রামে পবিত্র শবেকদরের রাতে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আবদুর রশীদ, খায়রুল আলম, মোশররফ হোসেন, হেমায়েত শরীফ, ছাবেল ফকির, ইসমাইল, আবদুর রবসহ প্রায় একাধিক বাড়িতে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হানা দেয়। রাত ১১টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত এ অভিযান চলে। আওয়ামী লীগ নেতারা জীবনের প্রতি মায়া থাকলে সাঈদীর পক্ষ ছাড়তে সাক্ষীদের হুশিয়ার করে দেয়। পুলিশের অভিযান ও আওয়ামী কর্মীদের জীবন নাশের হুমকির মুখে গত তিন দিন ধরে উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার রাতে পুলিশ প্রথমে ২টি গাড়ি নিয়ে অভিযানে নামে। পরে নসিমন টাইপের গাড়ি নিয়ে ছোট রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢুকে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা সাঈদীর পক্ষে মুখ খুললে জেলে যাওয়া লাগবে বলেও হুমকি দেয়। তাদের এমন আকস্মিক অভিযানের কারণে গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে মুসল্লিরা মসজিদে ইবাদতে থাকায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার এসব গ্রামে সরেজমিন সাঈদীর পক্ষের কোনো সাক্ষী বা ভক্তদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মহিলারা জানান, অভিযানের পর পুরুষরা গ্রেফতার ও হামলার আশঙ্কায় গা ঢাকা দিয়েছে। মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী বলেন, আমাদের আইনজীবীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সরকারের বানানো সাক্ষীদের জেরার মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ করেছেন যে ১৯৭১ সালে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোনো ভূমিকা আল্লামা সাঈদীর ছিল না। কথিত যুদ্ধাপরাধরে সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। এ সত্য প্রমাণ হওয়ার পর এবং ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ডিফেন্স সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণের পরপরই আমাদের সাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ বেপরোয়া অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা গায়ের জোরে একজন নিরপরাধ মজলুমকে কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শাস্তির মুখোমুখি করতে চায়। ‘যুদ্ধাপরাধ নয় জনপ্রিয়তায় আমার বাবার বড় অপরাধ।’ যোগ করেন মাসুদ।’ ডিফেন্স টিমের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, এ গ্রেফতার অভিযান প্রমাণ করে মাওলানা সাঈদীকে বিচারের নামে জোর করে সাজা দিতে মরিয়া সরকার। তিনি বলেন, আমরা আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগকে শতাব্দীর নিকৃষ্ট মিথ্যাচার হিসেবে প্রমাণ করতে সচেষ্ট। কিন্তু বিচারচলাকালে সরকারের এমন আচরণ একজন নাগরিকের প্রতি জঘন্য অবিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জিয়ানগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কাউকে হুমকি দেয়ার কথা না। এ ধরনের কোনো খবর আমি জানি না। পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, এ খবরের সত্যতা আমার কাছে নেই। সাঈদীর মামলার সাক্ষী সব জিয়ানগর থানায়। ওখানে যোগাযোগ করতে পারেন। জিয়ানগর থানার সেকেন্ড অফিসার আবদুল মালেক বলেন, সাক্ষীরা কোথায় থাকে কি করে জানতে গিয়েছি। তাদের গ্রেফতার করতে যাইনি। তিন দিন ধরে তারা গ্রামছাড়া কেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তা জানি না। এমন কথা আমরা শুনিনি। উল্লেখ্য, গত ১৪ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জমা দেয়া ৪৮ জন সাক্ষীর তালিকা থেকে মাত্র ২০ জনকে স্বাক্ষ্য দিতে দেয়া হবে বলে নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আদেশে বলা হয়, ২৩ তারিখের মধ্যে নতুন করে ২০ জনের তালিকা এবং ২৮ তারিখ থেকে স্বাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা হবে। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/08/18/159877

ওসমানীনগরে আ.লীগ নেতার বাড়িতে মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ : কামরাঙ্গীরচরে ইজ্জত হারাল আরেক শিশু

ডেস্ক রিপোর্ট সিলেটে ওসমানীনগরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সারজান খাঁর বাড়িতে এক মাদরাসা ছাত্রীকে রাতভর আটক রেখে গণধর্ষণ করেছে একদল বখাটে। কামরাঙ্গীরচরে ৭ বছরের শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ধর্ষণকালে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এক বখাটেকে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জেরে এক গৃহবধূকে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে : কামরাঙ্গীরচরে শিশুকে গণধর্ষণ : ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে ৭ বছরের এক শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষক এলাকার প্রভাবশালী ও একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার ছেলে হওয়ায় বিষয়টি প্রথমে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। ধর্ষকের বাবা কামরাঙ্গীরচর থানার একজন এসআইকে বিপুল উেকাচ দিয়ে নিজ সন্তানকে ধর্ষণ মামলার এজাহার থেকে নাম বাদে সক্ষমও হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার কোম্পানীরঘাট বাছেত মোল্লার বাড়ির নিচতলায় এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানান, গত ১৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার ইফতারের পর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে কোম্পানীঘাট এলাকার ভাড়াটিয়া মো. কামাল হোসেনের মেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার কোম্পানীঘাট সংলগ্ন বাছেত মোল্লার মার্কেটে বাসার জন্য তেল আনতে যায়। এ সময় বাছেত মোল্লার বখাটে ছেলে মো. রনি ও প্রতিবেশী আবদুর রাজ্জাকের বখাটে ছেলে আবু বকর তাকে বাসেত মোল্লার বাড়ির নিচতলায় খালি জায়গায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটির চিত্কার শুনে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করে। এর পর অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সিসি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেয়েটি এখন হাসপালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। এ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এলাকার একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা বাছেত মোল্লা ধর্ষিতার বাবা কামাল হোসেন ও মা শিরিন আকতারকে চাপ প্রয়োগ করে। তারা মীমাংসা করতে রাজি না হলে তাদের এলাকা ছাড়তে হবে বলে ভয়-ভীতি দেখায়। কিন্তু এলাকাবাসীর চাপের মুখে বাছেত মোল্লা বিষয়টি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তিনি কামরাঙ্গীরচর থানার একজন এসআই মফিজুল ইসলামকে বিপুল পরিমাণ উেকাচ দিয়ে নিজের সন্তান রনিকে ধর্ষণ মামলার এজাহার থেকে নাম বাদ দিতে সক্ষম হয়েছেন। এ ব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর থানার এসআই মফিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়েটিকে জুস খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাছেত মোল্লার বাড়ির নিচে নিয়ে আবু বকর একাই ধর্ষণ করে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে—যার নন্বর ১৬। তিনি উেকাচ নিয়ে রনির নাম বাদ দেয়ার কথা অস্বীকার করেন। ওসমানীনগরে আ.লীগ নেতার বাড়িতে মাদরাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণ : সিলেটের ওসমানীনগরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে মহিলা মাদরাসার এক ছাত্রীকে দুই দিন আটকে রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৪ আগস্ট ওসমানীনগরের ঘোঁষগাও গ্রামে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও স্থানীয় কিছুসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষিতার পরিবার থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জনা যায়, গত ১৪ আগস্ট রাতে থানার ঘোষগাঁও গ্রামের এক দিনমজুরের মাদরাসাপড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বাথরুমে যাওয়ার পথে আগে থেকে ওত পেতে থাকা একই গ্রামের নেপুর মিয়া, শানুর মিয়া, আইয়ব আলীসহ চার-পাঁচজনের একটি দল তাকে জোর করে অপহরণ করে আওয়ামী লীগ নেতা সারজান খাঁর বাড়িতে তুলে নেয়। সেখানে প্রায় ২ দিন আটকে রেখে তারা গণধর্ষণ করে। ধর্ষিতার বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ওসমানীনগর থানা পুলিশ আওয়ামলী লীগ নেতা সারজান খাঁর বাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। বীরগঞ্জে ধর্ষক আটক : দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনাহার আশ্রয়ণের বাসিন্দা চন্দন রায়ের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের সময় এলাকাবাসী ধর্ষককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। ধর্ষক একই এলাকার খড়িকাদাম গ্রামের দর্শন রায়ের ছেলে ও বীরগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক নগেন্দ্র নাথ রায়। নবীগঞ্জে গৃহবধূর চুল কর্তন : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে শেখ সুহেনা বেগম নামের এক গৃহবধূকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে প্রতিবেশী দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে নির্যাতিতার স্বামী আহমদ আলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই এলাকার আলী আহমদের বসতঘরে প্রতিবেশী নুরুজ্জামানের একটি মোরগ প্রবেশ করে জিনিসপত্র নষ্ট করে। এ নিয়ে দু’পরিবারে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নুরুজ্জামানের ভাই রহমত আলী ও ভাগ্নে জাকির হোসেন মিলে সুহেনাকে মারধর করে এবং জোরপূর্বক তার মাথার চুল কেটে ফেলে। পরে আহত অবস্থায় সুহেনাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/08/18/159903

Saturday 18 August 2012

হবিগঞ্জে স্কুলছাত্রের ১০টুকরা লাশ উদ্ধার

Sat 18 Aug 2012 9:17 PM BdST হবিগঞ্জ, ১৮ আগস্ট (রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম)-- হবিগঞ্জের মাধবপুর এক স্কুল শিক্ষার্থীর ১০ টুকরা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাধবপুরের রাজাপুর থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ওই স্কুল শিক্ষার্থী উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়া (১৫)। সে স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার মনতলা রেলস্টেশনের কাছে রাজাপুর নামকস্থানে স্থানীয় লোকজন শাহজাহানের টুকরো টুকরো লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে জিআরপি পুলিশ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে। শাহজাহানের পরিবার ও এলাকার লোকজন জানান, নিহতের গায়ে কাদা ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাদের ধারণা, শাহজাহানকে হত্যা করে ট্রেনের নিচে ফেলা রাখা হয়েছে। রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম/প্রতিনিধি/একেএ/মাম_২১১৬ ঘ. http://www.real-timenews.com/details.php?id=50854&p=1&s=4

নতুন জামা না দিতে পেরে দুই সন্তানকে পদ্মায় ফেলে দিলেন বাবা

Sat 18 Aug 2012 5:51 PM BdST
কুষ্টিয়া, ১৮ আগস্ট (রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম)-- ঈদের নতুন পোষাক কিনে দিতে না পেরে কুষ্টিয়ার লালন শাহ সেতুর উপর থেকে দুই সন্তানকে পদ্মায় ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে এক পাষণ্ড বাবা। শনিবার দুপুরে নির্মম এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বারদাগ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক। এলাকাবাসী জানিয়েছে, আব্দুল মালেকের দুই সন্তান মুন্নি (১০) ও মানসুর (৫) ঈদের জন্য বাবার কাছে নতুন জামা কাপড় চায়। নতুন জামার জন্য সন্তানেরা জেদ করলে বাবা তার দুই সন্তানকে ঈদের জামা কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য সকালে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু আব্দুল মালেক দুই সন্তানকে বাজারের দিকে না দিয়ে লালন শাহ ব্রিজের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বাজারে না গিয়ে ব্রিজের ওপর কেন যাচ্ছো সন্তানদের এমন প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে মালেক প্রথমে মুন্নীকে সেতুর ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। এ ঘটনা দেখে শিশুপুত্র মানসুর জীবন বাঁচানোর তাগিদে চিৎকার করতে করতে দৌঁড়াতে থাকে। কিন্তু বাঁচতে পারেনি পাষণ্ড পিতার হাত থেকে। কিছুদূর যাওয়ার পরই মানসুরকে ধরে ফেলে মালেক। পরে তাকেও হাত পা ধরে বোনের মতই পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়ে নিজেও লাফ দেয়। এলাকাবাসী মালেককে উদ্ধার করতে পারলেও তার দুই সন্তানকে নদী থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। মালেককে অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মালেক জানান ‘অভাবের সংসার, পেটে ভাত নাই, সন্তান বাঁচি রাখি কী করব? তাই ব্রিজের ওপর নিয়ে ওদেরকে ফেলি দিছি।’ নিহত সন্তানদের মা মমতাজ খাতুন বলেন, শনিবার সকাল ৯টার দিকে দুই ছেলেমেয়েকে জামা কাপড় কেনা ও চুল কাটানোর কথা বলে নিয়ে যায় মালেক। এরপর তাদের কেউ আর ফিরে আসেনি। পরে তিনি শুনতে পান, ছেলে-মেয়েকে তার স্বামী নদীতে ফেলে দিয়েছেন। ভেড়ামারা থানার সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল মতিন বলেন, মালেককে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুই সন্তানকে পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা সুস্থ অবস্থায় তিনি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে দুই সন্তানকে উদ্ধারে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নদীতে নেমেছেন। উদ্ধার তৎপরতা চলছে। রিয়েল-টাইম নিউজ ডটকম/প্রতিনিধি/একেএ/মাম_১৭৪৯ ঘ. http://www.real-timenews.com/details.php?id=50850&p=1&s=4

Thursday 9 August 2012

নিজগ্রামে সোহেলের দাফনসম্পন্ন : বিক্ষোভে উত্তাল রাবি ক্যাম্পাস : ভিসির অপসারণ দাবি, ছাত্রলীগের ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা, আটক ১

রাবি ও কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হাসান সোহেলের দাফনসম্পন্ন হয়েছে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় নিজগ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে সোহেল হত্যার ঘটনায় গতকাল শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ ও মৌন মিছিল, মানববন্ধন, মুখে কালো কাপড় ও কালোব্যাজ ধারণ, সংবাদ সম্মেলন, নিন্দা ও বিবৃতিসহ এসব কর্মসূচি থেকে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিসহ সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এ সময় বর্তমান ভিসির আমলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৪ ছাত্রের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তার অপসারণ দাবি করেন তারা। এদিকে এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ১৪ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিদের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোহেলের দাফনসম্পন্ন : রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় নিজ গ্রামে সাবদী মাদরাসা মাঠে গতকাল সোহেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার বাবা মৌলভী আবদুস সালাম জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলাম। আশা ছিল সোহেল মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাড়ি ফিরবে, কিন্তু আজ আমার ছেলে লাশ হয়ে ফিরল। তিনি সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, আমিই যেন এই দেশের শেষ বাবা হই যার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকালে ঢাকা থেকে সোহেলের লাশ রাত সাড়ে ১১টায় তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। তখন আশপাশের গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোরের ঢল নামে তাদের প্রিয় সোহেলকে এক নজর দেখতে। ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা, আটক ১ : এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সভাপতি গ্রুপের সমর্থক তৌহিদ আল তুহিনকে প্রধান আসামি করে ১৪ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় একটি হত্যামামলা হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অপর সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নোমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার অন্যতম আসামি ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশরাফুজ্জামান সোহেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন চলার সময় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান আমার দেশ-কে বলেন, সোহেল হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের তুহিনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান। শিক্ষকদের মৌন মিছিল : সোহেল হত্যার বিচার, হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ও দুর্নীতিবাজ ভিসির অপসারণ দাবিতে ক্যাম্পাসে মৌনমিছিল করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। বেলা ১১টায় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে শেষ হয়। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফজলুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. মো. শামসুল আলম সরকার। তিনি বলেন, বর্তমান ভিসি প্রতিনিয়ত ৭৩’র আইনের পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সিন্ডিকেটে বেশ কয়েকজন ভিন্নমতালম্বী সদস্য থাকার পরও সোহেল হত্যা তদন্তের জন্য সিন্ডিকেটে দলীয় লোকদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এর আগেও এরকম অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে কিন্তু কোনো প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। এ কমিটি থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায় না উল্লেখ করে প্রফেসর শামসুল বলেন, এ তদন্ত কমিটি ভেঙে দিয়ে সব মতের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি চাই। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসনের সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন ছাত্র নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। কিন্তু কোনোটির বিচার হয়নি। ভিসির মদতেই সোহেলকে হত্যা করা হয়েছে, কারণ তিনিই পদ্মা সেতুর চাঁদা তোলার দায়িত্ব ছাত্রলীগকে দিয়েছেন এবং কার্যক্রমের উদ্বোধনও করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। প্রফেসর শামসুল বর্তমান ভিসির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, আমরা এ ভিসিকে আর চাই না। অবিলম্বে তার অপসারণ চাই। সমাবেশে শিক্ষকরা নিহত সোহেলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই দাবিতে আজ শিক্ষকরা সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি পূরণ না হলে পরে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানান শিক্ষকরা। এসময় ইবির সাবেক ভিসি প্রফেসর মু. রফিকুল ইসলাম, সাদা দলের আহ্বায়ক মু. আজাহার আলী, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ড. মো. আমজাদ হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ৩০১ শিক্ষকের বিবৃতি : একইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০১ জন শিক্ষক এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, বর্তমান প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির অর্বাচীন ও দলবাজির নির্মম পরিণতি এ হত্যাকাণ্ড। পদ্মা সেতুর অর্থায়নের জন্য উঠানো চাঁদার ভাগিভাগি নিয়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ভিসির ওপর বর্তায়। কারণ, তিনি নিজ উদ্যোগে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে বিতর্কিত চাঁদা তোলা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। নিহত ছাত্রের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষায় অবিলম্বে এই দলবাজ ভিসির অপসারণ ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বিবৃতিদাতা শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন : প্রফেসর মু. আজহার আলী, এম রফিকুল ইসলাম, এম আমিনুল ইসলাম, ড. মামনুনুল কেরামত, ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী, সিএম মোস্তফা, ড. বেলাল হোসেন, এম আবুল হাশেম, এম নজরুল ইসলাম, এবিএম শাহজাহান, ড. শামসুল আলম সরকার, ড. আমজাদ হোসেন, ড. এম ফজলুল হক, এফ নজরুল ইসলাম প্রমুখ। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের শোভাযাত্রা ও মানববন্ধন : সোহেলের সহপাঠী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা গতকাল মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বিভাগের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে ৫ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে মানববন্ধন ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বক্তব্য রাখেন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন, অভিজিত রায়, ৪র্থ বর্ষের ইতি, ৩য় বর্ষের শীলা, বিপ্লব, আরিফ প্রমুখ। বক্তব্যের সময় অনেকেই সহপাঠীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ : একই ঘটনার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইফতেখারুল আলম শিপলুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি শিপন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন নিরাপত্তার নামে ক্যাম্পাসকে ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছে। এখানে একের পর এক ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটছে। যেখানে সোহেল নিহত হয়েছে, সেখানে পুলিশের দুটি ক্যাম্প থাকার পরও পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তিনি অবিলম্বে ছাত্রলীগের নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার, লোক দেখানো তদন্ত কমিটি বাতিল ও অবহেলার কারণে প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন। ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা সেতুর টাকা ভাগের বিষয় অস্বীকার : এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে আদায় করা চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল নিহতের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারের পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তা অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি আহম্মেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই রোববার রাতের ঘটনায় সোহেল নিহত হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই পদ্মা সেতুর চাঁদার টাকা ভাগবাটোয়ারার কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগে বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী পদ্মা সেতুর টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান বারী অন্যতম। তবে তিনি গতকাল তার দেয়া আগের বক্তব্য অস্বীকার করেন। ছাত্রলীগের দুজনকে বহিষ্কার : এ ঘটনায় রাবি শাখা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের দুই নেতাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়—ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনকে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। তদন্ত কমিটির কাজ শুরু : এদিকে সিন্ডিকেট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. গোলাম কবির। তিনি আমার দেশকে বলেন, আজ (গতকাল) কমিটির সব সদস্যের কাছে চিঠি পৌঁছানোর পর আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি একপক্ষীয় এবং আগের কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন গঠন করে দিয়েছে; এতে আমাদের করার কিছু নেই। এর আগে প্রতিবেদন জমা ও শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এরই মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একপক্ষীয় ও দলীয় উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হাসান সোহেল। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সোহেলকে হত্যা করা হয়। এদিকে সোহেল হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত এজাহারভুক্ত আসামি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশরাফুজ্জামান সোহেলকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মতিহার থানার ওসি আনিছুর রহমান বলেন, গ্রেফতারের পর তাকে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে ৩ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেন। আশরাফুজ্জামান সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র।

Friday 1 June 2012

Friday, 25 May, 2012 2:38:52 PM মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাক্ষী নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিতর্ক ফজলুল হক নিজস্ব প্রতিবেদক বার্তা২৪ ডটনেট http://www.barta24.net/?view=details&data=Cook&web=0&menu_id=64&news_id=47280#.T8DF6m1R5Ls.facebook
ঢাকা, ২৫মে: মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের জন্য যে সব সাক্ষী আনার কথা ছিল, তাদেরকে আনতে না পারায় প্রসিকিউটদের নিয়ে নানা যুক্তি-তর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিশেজ্ঞদের মাঝে। বিশেষ করে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন। তবে নিজেদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা ঢাকতে তারা বিভিন্ন সময়ে নিচ্ছেন নানা কৌশল। আইন বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন, স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলক আ স ম রব, মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, ওয়ার ক্রাইমস্ ফ্যাক্টস্ ফাইন্ডিং কমিটির আহবায়ক ডা. এম এ হাসান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম প্রধান শাহরিয়ার কবির প্রসিকিউশনের দক্ষতা ও সামর্থ্য নিয়ে যেসব প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেগুলো বাস্তব হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। সাঈদীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৬৮জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৮ জনের পর আর বাকি সাক্ষীদের হাজির করতে না পেরে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে আদালতে আবেদন এবং তা মঞ্জুর হওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে তারা মনে করছেন। প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেন, এই বিচারকে বিতর্কিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মতে, প্রসিকিউশন ও ট্রাইব্যুনালের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে জনগণের বহুল প্রত্যাশিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেমন বিতর্কিত হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আইনজীবীরাও বলেছেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী না আনতে পারলে প্রসিকিউশনের উচিত ছিল আদালতকে তা সাফ জানিয়ে দেয়া। কিন্তু সাক্ষী না এনে তদমত্ম কর্মকর্তার কাছে দেয়া বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে দেখানোর কারণে আসামীদের পক্ষেথেকে ও বিচার হোক যারা না চায় তাদের মতো বিরোধী শক্তি বিতর্কের সুযোগ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ‘সাঈদীর সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আমরা ন্যায়বিচার করবো না’ বলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দেয়া বক্তব্য নিয়েও ট্রাইব্যুনালে বাইরে এসে ডিফেন্সের পক্ষে থেকে ধূম্রজাল তৈরি করা হয়েছে। এই সব নিয়েও বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে নানা মন্তব্য ও সমালোচনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। এছাড়া, প্রসিকিউশন প্রখ্যাত কলাম লেখক ও বিশিষ্ট জাদুশিল্পীর সাক্ষ্যর বিষয়ে বেঠিক পন্থার আশ্রয় নিয়েছেন বলে তারা বলেন। বিশিষ্ট কলাম লেখক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির সাঈদীর মামলার সাক্ষী না হলেও প্রসিকিউশন তাকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করলে তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন না বলেও তাদের আবেদনে ট্রাইব্যুনালকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, “আমি কখনোই সাঈদীর মামলার সাক্ষী ছিলাম না, কিন্তু এ বিষয়ে প্রসিকিউটররা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। একই ঘটনা ঘটেছে প্রখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ ও অধ্যাপক জাফর ইকবালের ক্ষেত্রেও। কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়াই প্রসিকিউশন তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর তালিকায় উপস্থাপন করে অনুপস্থিত দেখিয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রসিকিউশন সাঈদীর মামলায় অধ্যাপক জাফর ইকবালকে সাক্ষী করার জন্য বেশ কয়েক ধর্না দিলেও তিনি সাফ ‘না’ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে জাফর ইকবাল বলেছেন, “আমি চাই আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক, কিন্তু এ ঘটনায় সাঈদী জড়িত কিনা, তা না জেনে আমি কিভাবে সাক্ষ্য দেবো।” মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সহায়ক মঞ্চের অন্যতম উপদেষ্টা বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, “সাক্ষী আনতে অবশ্যই তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরদের আন্তরিক থাকা উচিত, পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যকে সাক্ষ হিসেবে গ্রহণ করা আইনীভাবে যথার্থ নয়।” ‘আমরা বিচার করবো না’ - ট্রাইব্যুনালের এমন মন্তব্যকেও সৈয়দ আমিরুল ইসলাম অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মনে করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেছেন, “পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে নেয়া পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন, মধ্যযুগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।” আর, ‘আমরা সুবিচার করবো না’ বলে মন্তব্য করে ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই সিনিয়র আইনজীবী। জয়নাল আবেদীন বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে সাক্ষীর নামে সরকারের মনগড়া কথাই লিখে দিয়েছেন। এখন সাক্ষী না পেয়ে এগুলোকেই সাক্ষ্য হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে একটি প্রহসনের বিচারের আয়োজন চলছে।” এ ধরনের তৎপরতা আইনের শাসনের জন্য শুভ নয় বলে মন্তব্য জয়ানাল আবেদীনের। কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমরা বিচার করবো না- এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।” তিনি বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে বলে এই বিচারের কর্তাব্যক্তিরাই এ ধরনের মন্তব্য করছেন।” তিনি আরো বলেন, “ভোটের রাজনীতিতে সুফল পেতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে।” এ বিচারে সরকারের আন্তরিকতা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন কাদের সিদ্দিকী। তার মতে, “সাক্ষীকে আদালতে না এনে পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্য জবানবন্দি হিসেবে নেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম ঘটলো। এর ফলে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বিতর্কের অস্ত্র তুলে দেয়া হলো।” ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির পক্ষ থেকেও কঠোর ভাষায় ১৫ জনের বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এমকে আনোয়ার সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালের এসব আচরণকে জংলী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “পুলিশ কার কাছ থেকে কি বক্তব্য নিলো, সেটি যাচাই বাছাই বা জেরার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করার নজির পৃথিবীর ইতিহাসের কোথাও নেই।” এ ধরনের বিচার মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা বিচার করবো না, ট্রাইব্যুনালের এ ধরনের উক্তি হলো বর্বর উক্তি।” তিনি বলেন, “এর ফলে স্পষ্ট হয়ে গেছে, তারা ন্যায়বিচার করবেন না।” জানা গেছে, মাওলানা সাঈদীর সাক্ষ্য আনা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রসিকিউটররা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সাক্ষী না আনতে পারার পেছনে পাঁচটি কারণ তারা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে বড় একটি কারণ হলো, তদন্ত কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা। কারণ ৪১ বছর আগের ঘটনাগুলোর সাথে তারা গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিক নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা যথার্থভাবে দেখাতে পারছেন না। এজন্য, সংশ্লিষ্ট সাক্ষীও তারা আনতে পারছেন না। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, সাঈদীর সাক্ষী আনতে না পারার অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে বেশ কিছু কৌশল তারা হাতে নিয়েছেন। তবে ডিফেন্স টিমের দাবি হচ্ছে, সাঈদীর মামলার মতো অন্য অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যকেই তারা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন। আর সাঈদীর মাধ্যমেই তা জায়েজ করে পরবর্তীদের জন্যও একই আবেদন করার মাধ্যমে প্রসিকিউটররা আরো বেশি সমালোচনায় পড়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি ও জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম, বর্তমান আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রস্তুতি চলছে বলে আসামিপক্ষের দাবি। এক্ষেত্রে বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মতিউর রহমান নিজামীর নিজামীর নির্বাচনী এলাকায় সাক্ষীদেরকে হুমকি দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা। তবে যাদেরকে প্রাথমিকভাবে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করার চিন্তা করেছিল প্রসিকিউশন, তারাও কোনো ধরনের সহযোগিতা করছে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের দাবি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম নেতা শাহরিয়ার কবির বার্তা২৪ ডটনেটের সঙ্গে আলাপ কালে প্রসিকিউশনের এসব তৎপরতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, “আমি পরিষ্কার করে প্রসিকিউশন ও তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি যে একজনের বিষয়ে সাক্ষী দেব ট্রাইব্যুনালে এবং সেটি আপনাকেও বলেছি।” এ সময় তিনি বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক প্রত্যেকের এলাকাতেই অনেক সাক্ষী পাওয়া যাবে। তারা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে সাক্ষী হিসেবে অনেককেই আনবেন বলে আমার ধারণা। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রকৃত ভিকটিম রয়েছেন।” এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে আটক জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৫ সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আদেশর পর ডিফেন্সের রিভিয়ু আবেদন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ও আসামি পক্ষ পাল্টা-পাল্টি যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেছেন। বার্তা২৪ ডটনেট/এফএইচ/জিসা

Sunday 1 January 2012

ইশতেহারের সিকিভাগও বাস্তবায়ন হয়নি










এমরান হোসাইন
ক্ষমতাসীন সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও তা বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারের ৩ বছরে নির্বাচনী ইশতেহারের সিকিভাগও বাস্তবায়ন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো, পদ্মা সেতু নির্মাণ, রাজধানীর যানজট নিরসন, দুর্নীতি রোধ, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত, প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত, পুঁজিবাজারের বিকাশ, প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ শত প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিলেও তিন বছরের মধ্যে এগুলো পূরণ হয়নি। রংপুরকে বিভাগ করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, জাতীয় শিক্ষানীতি ও নারীনীতি প্রণয়নসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলেও এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের তীব্র আপত্তি রয়েছে। সরকারের বাকি দু’বছরে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে খোদ সরকারের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণসহ কিছু কিছু প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা শুরু করতে পারলেও সরকারের চলতি মেয়াদে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন না। এদিকে নির্বাচনের আগে জনগণকে দেয়া এসব ওয়াদা পূরণে সরকারের নজর না থাকলেও সরকারদলীয়দের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও বিরোধী দলের প্রতি নিপীড়নমূলক অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয়েছে অনেকটা তড়িঘড়ি করে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতার মেয়াদ হলেও এই সরকার তার ইশতেহারের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকার শেরাটন হোটেলে (বর্তমানে রূপসী বাংলা) এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে ২৪ পৃষ্ঠার একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ইশতেহারের লিখিত প্রতিশ্রুতির বাইরেও নির্বাচনী বক্তৃতায় জনগণকে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানো, কৃষকদের বিনামূল্যে সার প্রদানসহ বেশকিছু বিষয়ে ওয়াদা দেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ক্ষমতার আসার পর সরকার এসব মৌখিক ওয়াদা অস্বীকার করার পাশাপাশি ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই।
আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে। ইশতেহারের অগ্রাধিকারের ৫টি বিষয়ের প্রথমটিতে বলা হয়—চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। প্রধান এই প্রতিশ্রুতি পূরণেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কমানো তো দূরের কথা, এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ব্যর্থ হয়েছে। গত তিন বছরে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে। জিনিসপত্রের দামের জন্য জনগণের দুর্ভোগের কথা সম্প্রতি স্বীকার করেছেন সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। দফতর বদলে বেসরকারি বিমান চলাচলমন্ত্রী হওয়ার পর আগের দায়িত্ব পালনে নিজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি অকপটে স্বীকার করেন, তার অনেক ক্ষেত্রে সফলতা থাকলেও দ্রব্যমূল্যের জন্য দেশের মানুষ কষ্ট পেয়েছেন।
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় মোটা চালের কেজিপ্রতি মূল্য ২৫ থেকে ২৭ টাকার মধ্যে থাকলেও বর্তমানে এর দাম ৩৫ থেকে ৩৭ টাকার মধ্যে। ওই সময়ে নাজিরশাইল চালের দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা থাকলেও বর্তমানে এর বাজারদর ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা। ২৩ টাকা কেজির আটা এখন ৩০ টাকা। ৩০ টাকা কেজির চিনি হয়েছে ৬৫ টাকা। ৯০ টাকা দরের সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে ১৩৫ টাকা। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও সমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে ইশতেহারে জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে ‘জড়িত’ সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরকার এক্ষেত্রে কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি। বরং তথাকথিত ওই সিন্ডিকেট এখন খোলস পাল্টে সরকারের ছত্রছায়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
ক্ষমতাসীন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে সড়ক, রেল, নৌ, বিমান পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী সেতু, টানেল নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রেলপথ সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত এর কিছুই হয়নি। ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতুকে সরকার তার প্রধান অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প উল্লেখ করে কার্যক্রম শুরু করে। গত তিন বছরে এর পেছনে সরকারের খরচও হয় প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু সেতুর দরপত্র প্রক্রিয়াকালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ সেতু নির্মাণে ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ঋণ স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংকের দেখাদেখি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাইকাও ঋণ সহায়তা বন্ধ রেখেছে। দুর্নীতির কারণে যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে এ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়েও দেয়া হয়। বর্তমানে এ সরকারের মেয়াদে পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো সম্ভাবনাই নেই।
সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নিলেও ৩ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ১৯ মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। বাকি ১৭ মাসে এ কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে খোদ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এ প্রকল্পের বিষয়ে নতুন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে তারা মাত্র ৪২ কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান করতে পারবেন। উল্লেখ্য, সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ডজনখানেক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। ইশতেহারে ঢাকায় পাতাল রেল/মনোরেল, সার্কুলার রেলপথ এবং এলিভেটেড (উড়াল সড়ক) রাস্তা নির্মাণ করে গণপরিবহন সমস্যার সমাধান, ঢাকার চতুর্দিকে বৃত্তাকার (অরবিটাল) জলপথ, বেড়িবাঁধ, সড়ক, রেলপথ নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বছরের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও এখন পর্যন্ত এ কাজের অগ্রগতি কেবল ওই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনই! এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টেন্ডারের দেন-দরবারের ক্ষেত্রে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। মেট্রোরেল স্থাপন প্রকল্পটি আটকে গেছে এর রুট ঠিক করার মধ্যে। এর রুট নিয়ে বিমানবাহিনী, সংসদ ভবন কর্তৃপক্ষ ও সরকারের মধ্যে রশি টানাটানি চলছে।
মহাজোট সরকার তার বিদ্যুত্ খাতে সবচেয়ে সফল বলে দাবি করলেও তিন বছরে তার প্রতিশ্রুতির অর্ধেক বিদ্যুত্ও উত্পাদন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১১ সাল নাগাদ ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের প্রতিশ্রুতি দিলেও এ সময়ে তারা আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পেরেছে বলে দাবি করছে। তবে এ সময় অনেক পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রে উত্পাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
এদিকে সফলতার (সরকারের দাবি মতে) এ বিদ্যুত্ খাত এখন সরকারের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধছে। বিনা টেন্ডারের সঙ্গে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল উচ্চমূল্যে বিদ্যুত্ ক্রয় করতে গিয়ে সরকারকে বড় অংকের ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে। সরকারি তথ্যমতে, জ্বালানিভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র হতে বিদ্যুত্ ক্রয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে (জুলাই-আগস্ট) ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু বিদ্যুত্ খাতেই সরকারকে বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। তেল ও গ্যাস খাত মিলিয়ে এ ভর্তুকি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে। সরকারের এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে মাশুল দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। বিদ্যুত্ খাতের দুর্নীতি থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের রেহাই দিতে সরকার এ সংক্রান্ত একটি ইনডেমনিটি বিলও সংসদে পাস করেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক দফায় প্রতিটি জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩ দফায়। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় দু’দফায় আর সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও মহাজোট সরকার গত ৬ মাসে তিন দফায় তেলের দাম বাড়িয়েছে। ইশতেহারে আওয়ামী লীগ জাতীয় কয়লানীতি প্রণয়ন করার কথা বললেও এখনও পর্যন্ত তা হয়নি।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই ঘোষিত ১৪ দলের ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি এবং ২২ নভেম্বর গৃহীত ২৩ দফা অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির আলোকে এবং বিগত ৭ বছরের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে এই কর্মসূচি (ইশতেহার) প্রণীত হয়েছে। ১৪ দলের ৩১ দফা ও ২৩ দফার প্রধান দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়টি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রণীত এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। উচ্চ আদালতের একটি রায়ের ওপর ভর করে দেশের জনমত উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে এই সরকার। এমনকি সরকারের শরিকদের অনেকেই এ ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে ছিলেন। হাইকোর্ট আগামী দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল রাখার প্রতি মত দিলেও সরকার তা গ্রহণ করেনি। এ ক্ষেত্রে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের সময়টাও দেয়নি সরকার।
আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে অগ্রাধিকারের ২নং ধারায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করার কথা বললেও এ সরকারের হাতেই এর স্বাধীনতা খর্ব হতে চলেছে। সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন সংশোধনের লক্ষ্যে সংসদে যে বিল উত্থাপন করেছে তাতে কমিশনের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, দুদক নখরবিহীন বাঘে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলেও বিরোধী মতের হয়রানিতে সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘স্বাধীন’ এ কমিশন। আসল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিতে পারলেও বিরোধীদলীয় মতের কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির নামগন্ধ পেলেই তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইশতেহারের অগ্রাধিকারের ৫নং ধারায় বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন, ন্যায়পাল নিয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘন কঠোরভাবে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে নামকাওয়াস্তে মানবাধিকার কমিশন গঠন ছাড়া আর কোনো কিছুই করতে পারেনি সরকার। মানবাধিকার কমিশন গঠন হলেও এ প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে এর কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা তো দূরের কথা, বিচার বিভাগ দলীয়করণে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে পদে পদে। বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের পরিবর্তে এটা আরও বেড়ে চলেছে। এর সঙ্গে নতুন সংস্করণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে গুপ্তহত্যা। ন্যায়পাল নিয়োগ তো হয়ইনি, বরং বিগত চারদলীয় জোট সরকার যে কর ন্যায়পাল নিয়োগ দিয়েছিল এ সরকার তা বাতিল করেছে।
ইশতেহারে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারের কার্যক্রমে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে একটি সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে প্রস্তাবাকারে জমা দিলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বললেও মহাজোট সরকার এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। সংসদ কার্যকর হওয়ার পরিবর্তে এটা পরিণত হয়েছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও সরকারি দলের স্তুতিবন্ধনের কেন্দ্রস্থলে। বিরোধী দলকে সংসদে আনার ব্যাপারে সরকারের কোনো কার্যকর তত্পরতা নেই। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যদের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দেয়ার কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে বিশেষ কমিটিতে এ ধরনের প্রস্তাব এলেও অজ্ঞাত কারণে তা গৃহীত হয়নি। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত তথা সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর জন্য ১০০ আসন সংরক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বিগত জোট সরকার সংরক্ষিত যে ৪৫টি আসন করেছিল তার থেকে মাত্র ৫টি বাড়িয়ে ৫০টি করেছে এই সরকার। আর এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভোটের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এ সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।
আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উত্স প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও গত ৩ বছরে একবারও সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নানামুখী চাপে সম্প্রতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ইশতেহারে ২০১৩ সালের মধ্যে দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হলেও তিন বছরে এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো কোনো অর্জন সরকারের নেই। বেকারত্ব বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ কোটি লোক বেকার বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
ইশতেহারে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও ঘটেছে উল্টোটা। বিরোধী দল থেকে কোনো কর্মসূচি দেয়া হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে হরহামেশাই। বিরোধী দল দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার দলীয় ক্যাডারদেরও মাঠে দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে সরকারি দলের কর্মসূচি চলছে পুলিশি প্রটেকশনে।
ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা এবং যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সরকারে গিয়ে তা বেমালুম ভুলে গেছে। গত তিন বছর প্রশাসনে চলেছে নগ্ন দলীয়করণ। মেধা যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে হয়েছে পদোন্নতি ও বদলি। অপরদিকে সরকার দলের আনুগত্যে বিশ্বাসী নয়, এমন অজুহাতে অনেক মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাকে দিনের পর দিন ওএসডি করে রেখেছে। কাউকে কাউকে দেয়া হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর। ইশতেহারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করার কথা বলা হলেও তিন বছরে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ইশতেহারে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলা হলেও দেশের খাদ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। গত তিন বছরে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে সরকারকে।
নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ ও পানিসম্পদ রক্ষায় কার্যকর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও সরকার নিজের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়েছে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও করতে পারেনি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। বাংলাদেশের প্রাপ্যতা, হিস্যা ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান পানি সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ একটি সমন্বিত পানিনীতি প্রণয়ন এবং আঞ্চলিক পানি নিরাপত্তা গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিলেও, এ বিষয়ে ৩ বছরে সরকারের কোনোই উদ্যোগের খবর পাওয়া যায়নি।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেও এটা নিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর তীব্র আপত্তি। ইশতেহারে এক বছরের মধ্যে (২০১০ সালের মধ্যে) প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তি ১শ’ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হলেও ৩ বছরে তা করতে পারেনি এ সরকার। শিক্ষাঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলেছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের দখলের মহোত্সব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগে হয়েছে চরম দলীয়করণ। শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন কাঠামো ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন এবং স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠনের কথা বলা হলেও ৩ বছর ধরে সরকার এটা নিয়ে কেবল ঘোষণার মধ্যে রয়েছে। স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করার প্রতিশ্রুতিও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। রাজধানী ঢাকার প্রতি থানায় সরকারি মাধ্যমিক হাইস্কুল ও প্রতি উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুুতিও পূরণ করতে পারেনি সরকার।
ইশতেহারে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নবায়ন, ওষুধনীতি যুগোপযোগী ও প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়নের কথা থাকলেও তা হয়নি। প্রতিশ্রুতি অনুসারে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত নারীনীতি পুনর্বহাল করা হলেও এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের তীব্র আপত্তি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বড় ধরনের ফাঁক রয়েছে। ইশতেহারের পরিশিষ্ট অংশে রূপকল্প (ভিশন) অনুযায়ী বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে যে ২৩টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অনেকটাই প্রতারণার শামিল। আওয়ামী লীগ যে ২৩টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তার মধ্যে মাত্র ৭টি সরকারের মেয়াদে অর্থাত্ ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা হলেও ইশতেহারে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই এই সরকারের মেয়াদের পরে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত, যা বাস্তবায়নে আরও দুটি সরকারের প্রয়োজন হবে। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদান, রংপুরকে বিভাগে উন্নীতকরণ ও বিগত আওয়ামী লীগ আমলের কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করেছে।