Saturday 29 January 2011

১০ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার : বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৫ শতাধিক রি-রোলিং মিল

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৫ শতাধিক রিরোলিং মিল ও স্টিল মিল। দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকার কারণে গত কয়েক মাস ধরে লৌহজাত শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রড তৈরির কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায় রিরোলিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং বেকার হয়ে পড়েছে ১০ লাখ শ্রমিক।
স্ক্র্যাপ জাহাজের অভাবে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত অর্ধশত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ৪০টি ইয়ার্ড এরই মধ্যে কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৮-১০টি ইয়ার্ডে কাঁচামাল থাকলেও আদালতের নির্দেশনার কারণে কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে নির্মাণ সামগ্রীর প্রধান উপাদান রডের মূল্য হু-হু করে বাড়ছে।
বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, দেশের রিরোলিং মিলগুলোতে রড তৈরিতে প্রায় ৮০ ভাগ কাঁচামাল আসে শিপইয়ার্ড থেকে। পুরনো জাহাজ আনতে না পারায় এরই মধ্যে অধিকাংশ ইয়ার্ড বন্ধ রয়েছে। যে কয়টি ইয়ার্ডে জাহাজ কাটা হচ্ছে তারা লোহার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোলিং মিল চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা ঘোষণা দিয়ে মিলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। এরই মধ্যে অনেক রোলিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে রডের দাম দিন দিন বাড়ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি টন লোহার দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৪০ গ্রেডের এমএস (ম্যানুফেকচারিং স্টিল) রডের দাম প্রতি মেট্রিক টন ৪৯ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আর প্রতি মেট্রিক টন ৬০ গ্রেড রডের দাম ৫৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে দাম বাড়ছে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার চেয়ে উচ্চ আদালতে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে জাহাজ কাটা নিয়ে অচলাবস্থার শুরু হয়। পরে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে একসঙ্গে আমদানি করা ১৬টি জাহাজ নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। শিপইয়ার্ডে বিচিংয়ের অনুমতি না পাওয়ায় এসব জাহাজ বহুদিন বন্দরের বহির্নোঙরে ভেসে ছিল। পরে পরিবেশ অধিদফতর থেকে জাহাজগুলোর বিচিংয়ের অনুমতি দেয়া হলেও কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে আমদানি করা আরও ৪টি স্ক্র্যাপ জাহাজ বন্দর বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। মোট ২০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা অনিশ্চিত রয়েছে। হাইকোর্টের সর্বশেষ রায়ে বিধিমালা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজগুলো কোনো কাজে আসছে না। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠন সূত্র জানায়, শিপইয়ার্ডগুলোতে অন্তত ১৫ লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখন কাটার কাজ চলছে এমন স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে রিরোলিং মিলে সরবরাহ করার মতো এক লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপও নেই। এজন্য বাজারে রডের দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং স্টিল স্ক্র্যাপ বায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ সভায় অচলাবস্থা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত গতকাল থেকে রিরোলিং ও স্টিল মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেলা এবং শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে ১০ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হতে চলেছে। সেইসঙ্গে ভেস্তে যাবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। রিরোলিং শিল্পের মালিকরা দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ অচলাবস্থার নিরসন না হওয়া পর্যস্ত সব রিরোলিং ও স্টিল মিল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

আদমজী ইপিজেডে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

আদমজী ইপিজেডে বন্ধকৃত হাইল্যান সোয়েটার কারখানার সাড়ে ৭ শতাধিক শ্রমিক গতকাল তাদের বকেয়া বেতন চাইতে গেলে র্যাব ও পুলিশ শ্রমিকদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রকিরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মী লিটন সরদার, অহিদুল ইসলাম, গোলাম হায়দার, শ্রমিক আকবর, শারমিন, সাইফুল, জাহাঙ্গীর, সুরভী, শিপন, শামীম, ইমাম আলীসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে র্যাব ও পুুলিশ তাদের আবারও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় শ্রমিকরা সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে ৩ শতাধিক শ্রমিকসহ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুদ রানা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকরা জানায়, গত ৪ জানুয়ারি শ্রমিকদের না জানিয়ে ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে রাতের আঁধারে গেটে নোটিশ টানিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। ৫ জানুয়ারি শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে বন্ধের নোটিশ দেখতে পায়। এরপর শ্রমিকরা আদমজী ইপিজেডের জিএমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ব্যাপারে আলোচনা করে। আলোচনা শেষে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০ জানুয়ারি (গতকাল) তাদের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকরা গতকাল কারখানার প্রধান নিয়ন্ত্রণ (পরিচালনা) জাকিরুল রাব্বী মিকির কাছে তাদের বকেয়া পাওনাদি দিতে বলে। এ সময় এ কর্মকর্তা পাওনাদি পরিশোধের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে ইপিজেডের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, র্যাব ও পুলিশ ডাকেন।
র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন। এরপর শ্রমিকদের কোনো কথা না শুনেই তাদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। র্যাব ও পুলিশের লাঠিচার্জে শ্রকিরা দিগ্বিদিক ছুটে চলে যায়। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শারমিন, সাইফুল ও জাহাঙ্গীরকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করে, বেপজার জিএম মেহবুব আলী কারখানার মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের বিপক্ষে কথা বলছেন। বেপজার জিএমের সামনে র্যাব ও পুলিশ বিনা কারণে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এছাড়াও বলে, বেতন না পাওয়ার কারণে আমরা না খেয়ে আছি। বাড়িওয়ালারা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। নির্যাতিত শ্রমিকরা বিনা কারণে তাদের ওপর নির্যাতন ও বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এ ব্যাপারে বেপজার জিএম মেহবুব আলীর সঙ্গে বারবার মোবাইলে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ইপিজেডের নিরাপত্তা পরামর্শক কর্মকর্তা মেজর (অব.) আসাদুজ্জামান বলেন, শ্রমিকরা নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। নিরাপত্তা কর্মীদের কেউ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়নি।
এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বেপজার জিএম, র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতে মালিক পক্ষ শ্রমিকের পাওনাদি ১৬ জানুয়ারি পরিশোধের কথা বললে শ্রকিরা তা না মেনে পুলিশ ও র্যাবের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ও র্যাব শ্রকিদের ওপর অ্যাকশনে যায়।
উল্লেখ্য, বেপজার পাওনা আড়াই লাখ ডলার হাইল্যান কর্তৃপক্ষ পরিশোধ না করতে পারায় বেপজা কারখানাটি টার্মিনেট করে গত ৮ ডিসেম্বর। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জানুয়ারি হাইল্যান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করে রাতের আঁধারে কারখানা গেটে বন্ধের নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়। এরপর থেকে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে।

দেশ যেভাবে চলছে তাতে মনে হয় কোনো সরকার নেই : কর্নেল অলি

চট্টগ্রাম ব্যুরো

মহাজোটের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম এমপি বলেছেন, ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে কিন্তু দেশের মানুষের দিনবদল হয়নি। গত দুই বছরে সরকার দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মতো ক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। দেশ যেভাবে চলছে তাতে মনে হয় দেশে কোনো সরকার নেই। জনগণের অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। এই অসন্তোষ গণবিদ্রোহে রূপ নিতে পারে। মনে রাখতে হবে ‘প্রয়োজন’ আইন মানে না। গতকাল দুপুরে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনতে দেশকে ১১টি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান। এছাড়া ২০১১ সাল সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কর্নেল অলি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। যারা ক্ষমতায় আছেন আইন তাদের জন্য একরকম আর বিরোধী দলের জন্য অন্যরকম। রাগ, ক্ষোভ, প্রতিহিংসা, কথায় কথায় টিপ্পনি, অসম্মানজনক বক্তব্য প্রদান, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনের সর্বস্তরে দলীয়করণ দেশকে ধ্বংস ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে সরকার ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার চরম অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছে। অপরদিকে সরকারি দলের নেতাকর্মী এবং মন্ত্রী এমপিদের অনেকে টেন্ডারবাজি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকার যেন অন্ধ ও বধির।
কর্নেল অলি বলেন, প্রতিদিন দেশে দুর্নীতি বেড়ে চলেছে। এত বেশি দুর্নীতি আগে কখনও হয়নি। দুর্নীতিতে মন্ত্রী-এমপিদের নামও আসছে। গত দুই বছরে কোনো দুর্নীতিবাজকে গ্রেফতার করতে পারেনি সরকার। টিআইবি দুর্নীতির কথা বলছে বলে সরকার তাদের প্রতি ভালো আচরণ করছে না। গত দুই বছরে দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে উল্লেখ করে কর্নেল অলি বলেন, গরু ছাগলের হাট থেকে শুরু করে নাপিতের দোকান পর্যন্ত চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ৪০ বছরের মধ্যে দ্রব্যমূল্য এখন সর্বোচ্চ। সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বিদ্যুত্ ও গ্যাস খাতের অবস্থাও ভয়াবহ। কেউ দেশে বিনিয়োগ করার সাহস পাচ্ছেন না। জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে। কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের একটি করে কম্পিউটার দিয়েই সরকার মনে করছে তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে ফেলেছে। অথচ ইউরোপ আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলো কখনও নিজেদের ডিজিটাল বলে দাবি করে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টিই এখনও পরিষ্কার নয়।

বিনিয়োগকারীদের কুলখানির মিষ্টি খেতে চান অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

শেয়ারবাজারে দরপতনের ঘটনায় অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্যের কারণে শেয়ারবাজারে আজও (গতকাল) দরপতন হয়েছে। শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন হলেও তিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার পরিবর্তে তাদের সঙ্গে উপহাস করেছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে উপহাস করেছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের ‘মিষ্টি না খাওয়ানোর’ কথা বলছেন। ফারুক আহমেদ নামে এক বিক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি (অর্থমন্ত্রী) মিষ্টি খেতে চেয়েছিলেন। আমরা অর্থমন্ত্রীকে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর কুলখানির মিষ্টি খাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, রোববার একদিনেই ডিএসই সাধারণ সূচকে ৬০০ পয়েন্টের পতন হলে ওইদিন সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, শেয়ারের দাম ৫ টাকা কমে গেলে রাস্তায় নেমে এসে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করে; কিন্তু শেয়ারের দাম ৫০০ টাকা বাড়লে তো মিষ্টি খাওয়ান না।’
অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যকে বিনিয়োগকারীরা দায়িত্বজ্ঞানহীন উল্লেখ করে বলেন, পুঁজিবাজারের এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর উচিত ছিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া। বাজারে ভয়াবহ দরপতন হওয়ার পেছনে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার ঘোষণা দেয়া; কিন্তু তিনি এসব কিছুই বলেননি। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। তার বক্তব্যের কারণেই শেয়ারবাজারে আরও দরপতন হয়েছে। শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে তাদের পরিবারের ভাগ্য জড়িত। তিনি এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অযোগ্য বলে মন্তব্য করেন।
আমরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসেছি। কর্মসংস্থান না থাকার কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আসতে বাধ্য হয়েছি উল্লেখ করে সারোয়ার আহমেদ নামে এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, আমার লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পেয়ে শেয়ারবাজারে এসেছি। কিন্তু এখন আমরা পুঁজি হারিয়েছি। এর দায় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।
বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কড়া সমালোচনা করে বলেন, সরকারি শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বারবার ঘোষণা দিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারি শেয়ার ছাড়া হলে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক দর সংশোধন হতো। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না। তিনি গত বছরের জুনের মধ্যে সরকারের ২৬টি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন; কিন্তু একটি কোম্পানিরও শেয়ার ছাড়া হয়নি। এরপর অর্থমন্ত্রী ৩১ অক্টোবর আবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তালিকাভুক্ত ৮টি কোম্পানির আরও শেয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ছাড়া হবে এবং ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে আরও ২৪টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হবে। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর তালিকাভুক্ত সরকারি ৮টি কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যায়। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি ওইসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া হয়নি। এ জন্য বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাই এর দায় অর্থমন্ত্রীকে নিতে হবে। বিনিয়োগকারীরা আরও বলেন, অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির কারণে বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অভিহিত মূল্য পরিবর্তন হলে কোম্পানির আয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন না হলেও কারসাজি করে কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ানো হয়েছে। শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ বলে অভিযোগ করে বিনিয়োগকারীরা বলেন, এসব দায় অর্থমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তাই অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সারাদিনই বিনিয়োগকারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে। এসব মিছিলে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসইসির চেয়ারম্যান ও ডিএসইর প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

Saturday 22 January 2011

শ্রমিকদের বিক্ষোভ : সাভারে দুটি গার্মেন্ট অনির্দিষ্টকাল বন্ধ

সাভার প্রতিনিধি

সাভারের জামগড়া এলাকায় দুটি গার্মেন্ট কারখানায় গতকাল তৃতীয় দিনের মতো শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য পরিস্থিতি সামাল দেয়। দুটি কারখানাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, জামগড়ার ইউনিভার্স নিটিং কারখানায় ৩২ শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা। এ কারখানায় ১ হাজার ৭শ’ শ্রমিক কর্মরত। বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি ৩২ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। অব্যাহত বিক্ষোভের ফলে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানাটি গতকাল অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করে।
অপর দিকে একই এলাকার মদিনা অ্যাপারেলস ফ্যাশন ক্যাপস লিঃ কারখানাটি শনিবার রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ জানুয়ারি এ কারখানার শ্রমিকরা দুই কর্মকর্তাকে মারধর করায় কর্তৃপক্ষ ২২ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে। শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে এ কারখানার প্রায় ৭শ’ শ্রমিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। শনিবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে তারা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করে। এ দিন রাতে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষিত কারখানার শ্রমিকরা গতকাল বিক্ষোভ করেছে। কারখানা দুটির সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সাভারে অস্ত্র ও গুলিসহ ৩ ছিনতাইকারী আটক : সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে জাবি এলাকায় ফয়সল নার্সারির সামনে থেকে শনিবার রাতে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে র্যাব-৪-এর সদস্যরা বিদেশি রিভলবার, গুলি, পাইপগান ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রসহ মানিক মিয়া, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বেলাল হোসেন ওরফে জালাল নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
তাদের শরীর তল্লাশি করে একটি বিদেশি রিভলবার, দুইটি কার্তুজ, একটি দেশি তৈরি পাইপগান, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি খেলনা পিস্তল ও দুটি ধারালো রামদা উদ্ধার করা হয়। রিভলবারের গায়ে মেইড ইন ইংল্যান্ড লেখা রয়েছে।
র্যাব-৪ এর ক্যাপ্টেন মেহেদী ইমাম জানান, আটককৃতদের র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই করার কথা স্বীকার করে। তারা বলে, ঢাকা-আরিচা মহসড়কে স্পিড ব্রেকারের কাছে গাড়ি, রিকশা বা মোটরসাইকেলের গতি ধীর হলে ওই সব বাহনের যাত্রীদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা বা মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে থাকে। এ ব্যাপারে র্যাব বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
আশুলিয়া থানার ওসি কাজী সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত মানিক মিয়া সম্প্রতি আশুলিয়া এলাকায় রাঙামাটির জেলা জজ ছিনতাইয়ের শিকার ওই মামলার পলাতক আসামি। পুলিশ তাকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিল।

জনশক্তি রফতানিতে ব্যবসায়ী ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী মুখোমুখি : পরস্পরের বিরুদ্ধে এই খাত ধ্বংসের অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) নেতারা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। জনশক্তি রফতানি খাত ধ্বংসের অভিযোগ করছেন তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে। এই দ্বন্দ্ব এখন আরও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়। জনশক্তি রফতানি ব্যবসা কে করবে—সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল নাকি বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলছেন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমাতে সরকার বোয়েসেলের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানির উদ্যোগ নিচ্ছে। অপরদিকে বায়রার নেতারা বলছেন, এ ব্যবসা আরও ধ্বংস করতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, বেসরকারি রফতানিকারকদের বাদ দিয়ে সরকারিভাবে জনশক্তি রফতানি-প্রক্রিয়া শুরু করা হলে শ্রমবাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বায়রার নেতারা যে কোনো মূল্যে এই প্রক্রিয়া প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
বায়রার সদস্যদের নিয়ে সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা জনশক্তি রফতানি বাজারে মন্দার জন্য সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা ও যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেয়াকে দায়ী করেছেন। তারা শ্রম ও কর্মস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পদত্যাগও দাবি করেন। তারা বলেন, মন্ত্রীর ব্যর্থতার কারণেই জনশক্তি রফতানি কমছে। বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত ও মালয়েশিয়ার বাজার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলেও সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে তারা স্পষ্টভাবে জানান। তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী এ খাতে নানা সমস্যার জন্য জনশক্তি রফতানিকারকদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা নেয়ার কারণে মূল সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বলার পরও অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ কমাচ্ছে না রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলেই নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় চার লাখ লোক অবৈধ হয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত অভিবাসন খরচই দায়ী। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে এই লোকগুলো সেখানে গেছেন। সেই টাকা তোলার জন্য তাদের নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সেখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। আর এটি করতে গিয়ে তারা এখন সেখানে অবৈধ হয়ে আছেন।
গতকাল মালয়েশিয়া সরকারের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছে। আজ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে সরকারিভাবে লোক পাঠানোর বিষয়ে কথা হবে। সরকার আশা করছে, সবকিছু চূড়ান্ত হলে আগামী জুনের আগেই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের বাজার চালু করা যাবে।
তবে সরকারিভাবে লোক পাঠানোর এই খবরে উদ্বিগ্ন বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা। বায়রার সভাপতি আবুল বাসার বলেন, সরকারই যদি ব্যবসা করতে নামে, তাহলে এই খাতে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা ১১শ’ রফতানিকারক কোথায় যাবেন?
তিনি বলেন, গত ২৬ বছরে বোয়েসেল মাত্র ১৭ হাজার কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। আর বেসরকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে গেছে ৭০ লাখ। এই তথ্যই প্রমাণ করে বোয়েসেলের প্রতিবছর কয়েক লাখ লোক বিদেশে পাঠানোর মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে ব্যবসায় নামানো সরকারসহ কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। কারণ সরকার ব্যবসায় জড়িত হলে আমলাতান্ত্রিক বা অবকাঠামোগত নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘসূত্রতায় কর্মী রফতানি-প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে।
তবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য—এসব কারণেই মালয়েশিয়ার বাজার দেড় বছর ধরে বন্ধ। আগে বাজার চালু করা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই বাজার চালুর একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন সরকারিভাবে লোক পাঠিয়ে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা গেলে বাজার ধরে রাখা যাবে। আর যারা লোক নেবে, সেই মালয়েশিয়াই সরকারিভাবে লোক চাইছে। এখন বাজার খোলার আগেই যদি বায়রা বিরোধিতা করে তাহলে সেটি বড় সমস্যা। তবে সরকার কারও অনৈতিক দাবির মুখে মাথা নত করবে না। তাই সরকারিভাবেই লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলবে। এর ফলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বাংলাদেশের একজন কর্মী বিদেশে যেতে পারবেন। সেখানে অন্তত পাঁচ বছর থাকতে পারবেন। এতে খুব সহজেই তারা খরচের টাকা তুলতে পারবেন।
মালয়েশীয় প্রতিনিধি দলের সফর প্রসঙ্গে বায়রার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজ-উল-ইসলাম বলেন, এটাকে আমরা খুবই পজিটিভলি দেখছি। আমরা আশা করছি, এ বিষয়ে সরকার ভালো পদক্ষেপই গ্রহণ করবে। সরকার ব্যবসা না করে নীতি নির্ধারণীমূলক কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তথ্য বিবরণী : গতকাল তথ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক বিবরণীতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তারা সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া ও লেবানন সফর করেছেন। সফরকালে সেসব দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় দেখা যায়, কর্মী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশীদের অভিবাসন ব্যয় সর্বোচ্চ। কর্মীরা যে ব্যয় করে প্রবাসে যান চুক্তিকালীন মেয়াদে সে ব্যয় কোনোভাবেই তুলে আনতে পারেন না। ফলে অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফিরে না আসায় অবৈধ হয়ে পড়েন। শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য বিষয়টি উদ্বেগের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে তারা নিরুত্সাহিত বোধ করে। উদাহরণস্বরূপ মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে একপথ বিমান ভাড়াসহ অভিবাসন ব্যয় ৮৪ হাজার টাকা সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করলেও তার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি ব্যয়ে একজনকে মালয়েশিয়া প্রেরণ করা হয়।
অব্যাহত প্রচেষ্টায় যখন বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তখন নিজেদের মধ্যে এজাতীয় বিতর্ক এবং ভুল বোঝাবুঝি শ্রমিক গ্রহণকারী দেশে ভুল বার্তা প্রেরণ করতে পারে, ফলে এ প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। সরেজমিন নিরীক্ষণের জন্য মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল গতকাল বাংলাদেশ সফরে এসেছে বলেও জানানো হয়। তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, কোন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করবে।
মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে অতীতের মতো প্রকৃত চাহিদার বাইরে কোনো লোক যাতে না যায়, অভিবাসন ব্যয় যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে—এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিশ্চয়তা চাওয়া হয়। দেশটিতে এ পর্যায়ে অভিবাসন প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে চালু করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়া পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অবশ্যই বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক প্রেরণ করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬০৯ এবং ২০০৮ সালে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা কমে হয় চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন। সেসময় জনশক্তি রফতানিকারকরা ভেবেছিলেন, বিশ্বমন্দা কেটে গেলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু ২০১০ সালে জনশক্তি রফতানি আরও কমে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০২ জনে দাঁড়ায়।

Saturday 8 January 2011

বায়রার মতবিনিময় সভা : শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

জনশক্তি রফতানি নিয়ে যে ষড়যন্ত্র ও তামাশা চলছে তার জন্য দায়ী সরকারের নীতি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। এ খাতে অচলাবস্থার জন্য একদিকে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে জনশক্তি রফতানিকারক ১১শ’ আন্তর্জাতিক রিক্রুট এজেন্সি বেকার হয়ে পড়ছে। এজন্য শ্রম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে অযোগ্য অভিহিত করে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। গত রাতে রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির সদস্যরা এ দাবি জানান।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ, বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার, মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী এবং কয়েকশ’ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শ্রম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আসেননি। সদস্যদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন আলহাজ আবুল হোসেন, মিজানুর রহমান মজুমদার, মো. আবুল বাশার, সিফাত উল্লাহ, সিরাজ মিয়া, নুমান শামীম প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। তাহলে সরকার নির্ধারিত খরচেই জনশক্তি রফতানি করা সম্ভব। সভায় দাবি ওঠে রিক্রুট এজেন্সিকে রাখতে হবে অথবা বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডকে (বোয়েলস) রাখতে হবে। একসঙ্গে দুই নীতি চলতে পারে না। এ দাবি বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনে বায়রা সদস্যরা মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লাইসেন্স জমা দেবেন। শ্রম, কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী দেশে গণ্ডগোল বাধাচ্ছে। এ মন্ত্রীকে অপসারণ ও দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ও মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার কথা বলা হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বায়রা সদস্যরা বলেন, বর্তমানে এ খাতের দুরবস্থা তা সত্ত্বেও ক্ষমতা গ্রহণ করে কেন নতুন করে ৮০ জনকে রিক্রুটিং লাইসেন্স দেয়া হলো? মন্ত্রণালয় থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিকে কেন হেনস্তা করা হচ্ছে? মন্ত্রী বখরা চান কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়।
সভায় বলা হয়, সরকার জনশক্তি রফতানি বিষয়ে যে নীতি গ্রহণ করছে তাতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তো ডুববেই সঙ্গে সরকার নিজেও ডুবে যাবে। বায়রা সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, সরকারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আছে কিন্তু সদস্যরা যে সিদ্ধান্ত নেবে তা বাস্তবায়ন করার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে।
জনশক্তি রফতানি বিষয়ে সরকার যে নীতিমালা গ্রহণ করতে চাচ্ছে তার মাধ্যমে সরকারের কিছু আমলাই লাভবান হবে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, সবচেয়ে বড় রফতানি খাত নিয়ে যারা তামাশা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিস্বার্থের দিকে নজর দেয়া যাবে না। এ খাতে ষড়যন্ত্র করে কিছু আমলা টাকা বানানোর চেষ্টা করছে। যারা এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেবার কথা বলেন তিনি। তবে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করি সরকার ও বায়রাকে মুখোমুখি করতে চাই না। অচিরেই এ খাতের সমস্যা নিয়ে মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলে আপাতত সবাইকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
সরকারের নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে কোনো সরকারই ব্যবসা করার নীতি গ্রহণ করলে তা বাস্তবায়িত হয় না। সরকার যেভাবে কাজ করছে তাতে তাদের সুবিধা না হয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Friday 7 January 2011

বিগত বছরে সরকারের দলকেন্দ্রিক চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে : নেজামে ইসলাম পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, বর্তমান সরকারের গত এক বছর নৈতিক ও ইতিহাস চেতনা এবং আদর্শবোধ নিতান্ত দুর্বল ও অনুশীলনহীন থাকায় গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভের ক্ষেত্রে সর্বমুখী অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশের মানুষ ও মানবকল্যাণ বর্তমান সরকারের গত এক বছরের চিন্তা-ভাবনায় ছিল না বরং রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিষয়ে সরকারের দলকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে।
গতকাল সকালে পার্টির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বর্তমান সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবদুল করিম খান ও মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, প্রচার সম্পাদক মাওলানা শওকত আমিন, অর্থ সম্পাদক অধ্যাপক এহতেশাম সারোয়ার, মাওলানা আবদুল বাতেন, মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী, মাওলানা ইসমাইল বুখারী, ইলিয়াছ আতহারী প্রমুখ।
মাওলানা নেজামী গত এক বছরে বিদ্যুত্, পানি ও গ্যাস সঙ্কট নিরসনে সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে পুলিশ প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য ও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের মনোরঞ্জনের জন্য পুলিশ এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

Monday 3 January 2011

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২০১০, সকল অপরাধের রেকর্ড

আখতার বিন মুস্তফা

আজ ৩১ ডিসেম্বর। ২০১০ সালের শেষ দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নানা রকম অপকর্ম বিশেষ করে প্রতিপক্ষের উপর হামলা, শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত, সাংবাদিকদেরকে লাঞ্ছিত করা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ সহ নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনাটি হল আবু বকরের মৃত্যু। ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের বলি মেধাবী ছাত্র আবু বকর। আবু বকরের জন্য এখনো কাঁদছে তার বাবা মা সহপাঠিরা। অন্যন্য সকল হত্যাকান্ডের মতো আবু বকরের হত্যাকান্ডের বিষয়টি ও আস্তে আস্তে ফাইলের নিছে পড়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনাও ঘটেছে এবছর। শিক্ষক লাঞ্ছনার রেকর্ড করেছে ছাত্রলীগ। যার প্রত্যেকটি ঘটনায় নামেমাত্র তদন্ত কমিটি ঘটন করে গুরুদন্ডে লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছে। এবছর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল পহেলা বৈশাখের কনসার্টে মেয়েদেরকে লাঞ্ছিত করা। নিজেরা তো মেয়েদেরকে লাঞ্ছিত করেছেই। এমনকি যারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়েছে তাদেরকে ও মেরেছে তারা। ছাত্রদলকে কোন ক্রমেই তারা ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে প্রবেশ করতে দেয়নি। এমনকি শিবির নাম করে প্রায় ৩০ জন সাধারণ শিক্ষার্থীর মোবাইল ও মানিব্যাগ ও ছিনতাই করেছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাকে তারা বানিয়েছে নেশার আসর। ইদানিং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বাথরুমে ফেনসিডিলের বোতলের কারণে তা পরিস্কার করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিনা বাধায় তারা চাঁদাবাজি চালিয়েছে। ক্যাম্পাসে সড়ক দুর্ঘটনা আর এর জের ধরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। ছাত্রলীগের
২০১০ সালের আলোচিত ঘটনাগুলো ক্রমান্বয়ে তুলে ধরা হল-

শিক্ষক লাঞ্ছনার রেকর্ডঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার রেকর্ড করেছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। গতবছরেই তার প্রায় ১২ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে। প্রত্যেক লাঞ্ছনার ঘটনা পেছনে একটিই কারণ তাদের মনমত কাজ না হওয়া। সর্বশেষ গত ১০ আগষ্ট খেলার মাঠে ছাত্রলীগ লাঞ্ছিত করেছে ৫ শিক্ষককে। এছাড়া এফ রহমান হলে পহেলা বৈশাখের খাবার ছাত্রলীগ ক্যাডারের মন মত না হওয়ার তারা কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে।

ছাত্রদলের ৮১ জন আহতঃ জানুয়ারী থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের প্রায় ৮১ জন কর্মীকে আহত করে। বিশেষ করে ১৮ জানুয়ারী ছাত্রদল সভাপতি টুকু ও তার সমর্থকদের উপর হামলা অন্যতম। এসময় টুকু মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান ও শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে আহত হন। এ হামলায় ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রকাশ্যে পিস্তল, কিরিচ, রামদা, হকিস্টিক, বোমা, ককটেল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে। ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা ভিসির সঙ্গে দেখা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা টুকুর ওপর এ হামলা চালায়। হামলা তীব্রতর হলে টুকুসহ ছাত্রদল নেতাদের বাঁচাতে লাঠিচার্জ ও কমপক্ষে ৩০টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

বাংলা বর্ষবরণে অর্ধশত তরুণী লাঞ্ছিতঃ বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীকে লাঞ্ছিত করেছে। এসময় তারা অনেক তরুণীর পায়জামা পর্যন্ত খুলে ফেলেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেদিন সন্ধায় টিএসসির কনসার্টের আশপাশ এলাকায় সম্ভ্রম রক্ষায় তরুণীদের চিৎকার ও ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এক তরুণীকে বিবস্ত্রও করে ফেলা হয়।। দুষ্কৃতিকারীরা চার যুবতীর কামিজ ছিঁড়ে ফেলে, ওড়না টেনে নিয়ে যায় এবং ঝাপটে ধরে। টিএসসির সামনের গেটে নির্যাতনের শিকার হন পাঁচ ছাত্রী। ছাত্রী নির্যাতনকারীরা অধিকাংশই জিয়াউর রহমান হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী।

ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৬৯ঃ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অথবা তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতি মাসই সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। এত করে প্রায় ৬৯ জন আহত হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের মধ্যে চেইন অব কমান্ড না থাকায় তারা এ সংঘর্ষ গুলো ঘটিয়েছে বলে অনেক ছাত্রলীগ কর্মী জানায়।

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এ বছরের প্রথম মাসে। ২১ জানুয়ারি গভীর রাতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষার তিনটি সেটের সবগুলোই ফাঁস করে। ওই রাতেই কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গোপন তথ্যে মাধ্যমে জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার নেপথ্যে ছিল ছাত্রলীগ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পুলিশ মূল হোতাদের আটক করতে না পারলেও তাদের সহযোগী ছাত্রলীগ কর্মী টিটু (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ) ও সুমন ওরফে নলা সুমন (ম্যানেজমেন্ট ৪র্থ বষ)-কে আটক করে।

ছাত্রলীগের কোন্দলের বলি মেধাবী প্রাণঃ ২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় মারা যান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হতে হয় এই নিরীহ মেধাবী ছাত্রকে। সংঘর্ষের সময় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে দু'দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে মারা যান। আবু বকরের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে। মিষ্টভাষী ও বিনয়ী আবু বকর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি সাধারণ ছাত্র হিসেবে হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। খরচ মেটাতে করতেন টিউশনি। আবু বকর মারা যাওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন গণমাধ্যমে 'এটা কোনো ব্যাপার না, এমনটি ঘটতেই পারে। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে আবারো বিক্ষোভের ঝড় উঠে। সিন্ডিকেট এই খুনের শাস্তি হিসেবে সাময়িক বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেয় মাত্র। গুরু দণ্ডে লঘু শাস্তিতে প্রকারান্তরে পুরস্কৃত হয় ছাত্রলীগ।

ছাত্রীনেত্রীদের চুলাচুলি
ঢাবি ক্যাম্পাসে কেবলমাত্র ছেলারাই নয়। মেয়েরাও একাধিক বার সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৪তম জন্মদিন পালন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের মহিলা কর্মীরা প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। নেতাকর্মীদের সামনে হামলা, ব্যাপক ধস্তাধস্তি, চুলাচুলিতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইডেন কলেজ শাখার মেয়েরা। এ হামলা ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ব্যাপক নির্যাতন
পূর্বশত্রু তার জের ধরে প্রায় ৩০ জন সাধারণ শিক্ষার্থীর সর্বস্ব লুটে নিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের দাবি করে এরা সবাই শিবির। এমনকি মুখে দাড়ি রাখার কারণে শিবির বলে তারা একাধিক নিরিহ ছাত্রকে ব্যাপক মারধর করে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে তাদেরকে ব্যাপক হয়রানি করে। এমনকি ছাত্রলীর ক্যাডারদের কথা না শুনায় এফ এইচ হল, একুশে হল, এসএম হল থেকে তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় শতাধিত শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে হল থেকে বের করে দেয়।

অনিয়ন্ত্রিত চাঁদাবাজি
ছাত্রলীগ ক্যাডারদের অনিয়ন্ত্রিত চাঁদাবাজির কারণে ঢাবির বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন মালিকদের পালানোর অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে মহসিন হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল অন্যতম। ব্যাপক ফাও খাওয়া ক্যান্টিন মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চাঁদা নেয়ায় তারা হল থেকে পালিয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্য অবৈধ ভর্তি টেন্ডার বাজি অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হলের শিক্ষার্থীর এখনো ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। ক্ষমতাশীল দলের অংগসংগঠন হওয়াতে প্রশাসন ইচ্ছা বা অনিচ্ছা সত্ত্বে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নিতে এখনো ব্যর্থ হচ্ছে।

সাংবাদিক নির্যাতনে অতিতের সকল রেকর্ড ভঙ্গঃ
২০১০ সালে সাংবাদিকদেরকে নির্যাতনের এক মহাউৎসব চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদেকে লাঞ্ছিত নির্যাতন করে অতীতের সকল রেকর্ড তারা ভঙ্গ করেছে। যে কোন অপরাধ করলে যেহেতু তাদের শাস্তি হচ্ছে না। তাই তারা বীর দর্পে কারণে অকারণে এমনকি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। প্রায় পনের জন সাংবাদিককে তারা বিভিন্ন সময়ে লাঞ্ছিত এমনকি শারীরিক নির্যাতন করেছে। সাংবাদিকদের শারীরিক নির্যাতন করার কারণে যদিও তাদের কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যলয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তারা সবাই এখনো ক্লাস করছে এমনকি হলেও থাকছে। কে থামাবে এদের? কার এত বুকের পাটা?