Saturday 29 January 2011

আদমজী ইপিজেডে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

আদমজী ইপিজেডে বন্ধকৃত হাইল্যান সোয়েটার কারখানার সাড়ে ৭ শতাধিক শ্রমিক গতকাল তাদের বকেয়া বেতন চাইতে গেলে র্যাব ও পুলিশ শ্রমিকদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রকিরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মী লিটন সরদার, অহিদুল ইসলাম, গোলাম হায়দার, শ্রমিক আকবর, শারমিন, সাইফুল, জাহাঙ্গীর, সুরভী, শিপন, শামীম, ইমাম আলীসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে র্যাব ও পুুলিশ তাদের আবারও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় শ্রমিকরা সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে ৩ শতাধিক শ্রমিকসহ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুদ রানা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকরা জানায়, গত ৪ জানুয়ারি শ্রমিকদের না জানিয়ে ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে রাতের আঁধারে গেটে নোটিশ টানিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। ৫ জানুয়ারি শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে বন্ধের নোটিশ দেখতে পায়। এরপর শ্রমিকরা আদমজী ইপিজেডের জিএমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ব্যাপারে আলোচনা করে। আলোচনা শেষে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০ জানুয়ারি (গতকাল) তাদের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকরা গতকাল কারখানার প্রধান নিয়ন্ত্রণ (পরিচালনা) জাকিরুল রাব্বী মিকির কাছে তাদের বকেয়া পাওনাদি দিতে বলে। এ সময় এ কর্মকর্তা পাওনাদি পরিশোধের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে ইপিজেডের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, র্যাব ও পুলিশ ডাকেন।
র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন। এরপর শ্রমিকদের কোনো কথা না শুনেই তাদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। র্যাব ও পুলিশের লাঠিচার্জে শ্রকিরা দিগ্বিদিক ছুটে চলে যায়। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শারমিন, সাইফুল ও জাহাঙ্গীরকে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করে, বেপজার জিএম মেহবুব আলী কারখানার মালিকের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের বিপক্ষে কথা বলছেন। বেপজার জিএমের সামনে র্যাব ও পুলিশ বিনা কারণে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এছাড়াও বলে, বেতন না পাওয়ার কারণে আমরা না খেয়ে আছি। বাড়িওয়ালারা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। নির্যাতিত শ্রমিকরা বিনা কারণে তাদের ওপর নির্যাতন ও বকেয়া পাওনা আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এ ব্যাপারে বেপজার জিএম মেহবুব আলীর সঙ্গে বারবার মোবাইলে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ইপিজেডের নিরাপত্তা পরামর্শক কর্মকর্তা মেজর (অব.) আসাদুজ্জামান বলেন, শ্রমিকরা নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। নিরাপত্তা কর্মীদের কেউ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়নি।
এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বেপজার জিএম, র্যাব ও পুলিশের উপস্থিতিতে মালিক পক্ষ শ্রমিকের পাওনাদি ১৬ জানুয়ারি পরিশোধের কথা বললে শ্রকিরা তা না মেনে পুলিশ ও র্যাবের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ও র্যাব শ্রকিদের ওপর অ্যাকশনে যায়।
উল্লেখ্য, বেপজার পাওনা আড়াই লাখ ডলার হাইল্যান কর্তৃপক্ষ পরিশোধ না করতে পারায় বেপজা কারখানাটি টার্মিনেট করে গত ৮ ডিসেম্বর। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জানুয়ারি হাইল্যান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করে রাতের আঁধারে কারখানা গেটে বন্ধের নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়। এরপর থেকে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে।

No comments:

Post a Comment