Saturday 24 September 2011

আলোচনা সভায় বক্তারা : প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা আইন পরিপন্থী












স্টাফ রিপোর্টার
প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা গণতন্ত্র ও তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থী বলে মনে করেন বিএনপি নেতা লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তার শঙ্কা, এ নীতিমালা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করবে।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুব বলেন, প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। এটি সংবিধানে দেয়া মানুষের বাক-স্বাধীনতার অধিকারকে খর্ব করবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এই নীতিমালা গৃহীত হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিনষ্ট হবে। একটি কালো আইন, ফ্যাসিস্ট আইনে পরিণত হবে।
গণমাধ্যমের জন্য একটি সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিতে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা’র প্রাথমিক খসড়া অনলাইনে প্রকাশের সুপারিশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
‘মানবাধিকার, গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে সামাজিক পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা।
এতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মাহবুব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। গণতন্ত্র আজ বুটের নিচে পিষ্ট হচ্ছে। কথা বলা যাবে না, প্রতিবাদ করা যাবে না—তাহলে এটি কিসের গণতন্ত্র।
বর্তমান সরকার সংসদকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদকে ‘অকার্যকর’ করে রাখা হয়েছে। সেখানে জাতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় না। বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি সংসদে আলোচনা কিংবা উপস্থাপন কোনোটাই হয় না।
তিনি দেশের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বলেন, পানির অধিকার জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি অধিকার। ভারত আমাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। গোটা বঙ্গোপসাগরে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেবল দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই তারা এটি করার সুযোগ পাচ্ছে।
ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে।
সংস্থাটির সভাপতি এইচ এম ইবরাহীম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ, ওশান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আলী আজম, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আবদুল মতিন সরকার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোস্তাক হোসেন প্রমুখ

তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে












স্টাফ রিপোর্টার
চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম অনেক আগে থেকেই চড়া। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিটি পণ্যের দামই তুঙ্গে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই আবার পণ্যের চড়া দাম নিয়ে দোকানদারদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্যয়। ফলে ক্রেতা কোনো পণ্যের দাম বেশি দেখলেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। ক্রেতারা বাজারে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও বাজারে তুলনামূলকভাবে ক্রেতা কম ছিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়েছে। ট্রাকপ্রতি তিনশ’ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৬-১৭ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ১৮-২০ হাজার টাকা হয়েছে। যশোর থেকে ঢাকা ট্রাকের ভাড়া ১০ হাজার থেকে বেড়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং রংপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এর ফলে প্রতিটি পণ্যের আগের দামের সঙ্গে বাড়তি পরিবহন ব্যয় যোগ হয়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ সব পণ্যের দাম তুঙ্গে। দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় না বাড়ায় বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে গেছে। এতে বেকায়দায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ানবাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, ভালো মানের সরু চাল ৫৬-৫৮ টাকায় বিক্রি করছেন। ৩৬ টাকার কমে মোটা চালও পাওয়া যায় না। গতকাল ভালো মানের কাটারিভোগ ৬২-৬৫ টাকা,নাজিরশাইল ৫৫-৫৭, মধ্যম মানের নাজিরশাইল ৫২-৫৪, ভালো মানের মিনিকেট ৪৬-৫০, মধ্যম মানের মিনিকেট ৪২-৪৫, মোটা চাল পাইজাম ৩৮-৪২, হাসকি ৪০, লতা ৪০ ও স্বর্ণা ৩৬-৩৭ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এসব চাল আরও বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিকে চিনির পাইকারি ও খুচরা দাম বেড়েছে। কারওয়ানবাজারের মায়ের দোয়া ও আল আরাবিয়া গ্রোসারি স্টোরের বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি চিনির পাইকারি দাম ৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহন ও দোকান খরচ যোগ করে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি চিনি ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর প্যাকেটজাত চিনিকে ভালো মানের আখ্যায়িত করে দাম রাখা হচ্ছে ৭৫ টাকা। সরকার-নির্ধারিত দামে কোথাও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। সরকার পাম তেল ১০৫ টাকা ও সয়াবিন তেল ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও রাজধানীর বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১১৫-১২০ টাকা, পাম তেল ১০৮-১১০ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন ১২০-১২৪ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তীর ব্র্যান্ডের দুই লিটার বোতল ২৪০ টাকা, রূপচাঁদা ২৪৪ টাকা, ৫ লিটার তীর ৫৯৫ টাকা ও রূপচাঁদা ৬০৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ভালো মানের মসুর ডাল ৯৫ টাকা, মধ্যম মানের মসুর ডাল ৮০-৯০, ২ কেজি ওজনের বিভিন্ন ব্র্র্যান্ডের প্যাকেট আটা ৬৮-৭০, ময়দা ৮০, দেশি পেঁয়াজ ৪২, আমদানি বড় পেঁয়াজ ৩৮-৪০, দেশি আদা ৮০, আমদানি আদা ৬০-৭০, দেশি রসুন ১০০ ও আমদানি রসুন ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। রাজধানীর সবজির বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, টমেটো ৭০, পটোল ৪০-৫০, করলা ৫০-৬০, লম্বা বেগুন ৪০, গোল বেগুন ৩৮-৪০, চিচিঙ্গা ৪০ ও ঝিঙ্গা ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. কুদ্দুস সবজির চড়া দামের কথা জানিয়ে বলেন, সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। তিনি প্রতি কেজি শসা ৩০, লম্বা বেগুন ৪৫, কাঁচামরিচ ১২০ ও পেঁপে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান।এছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস ২৭০, খাসির মাংস ৪০০-৪৫০, ব্রয়লার মুরগি ১২০-১২৫, বড় ইলিশ ৬০০, মধ্যম আকারের ইলিশ ৫০০, রুই ১৮০-২০০ টাকা এবং প্রতি হালি ডিম ২৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।