Friday 30 July 2010

গার্মেন্ট শিল্পে ফের অস্থিরতা : পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে মহাখালী রণক্ষেত্র



স্টাফ রিপোর্টার |
নতুন মজুরি কাঠামোর প্রতিবাদে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মহাখালী, গুলশান ও বনানী এলাকা। শ্রমিকরা এই এলাকায় ৫ ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ দফায় দফায় বেধড়ক লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরাও পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা নাসা গার্মেন্টসহ বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি পোশাক রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া একটি গাড়িতে আগুন দেয়, অন্তত ১০টি বাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। শ্রমিকরা গুলশান, বনানী, মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকায় ব্যাংক, শপিংমল, সরকারি-বেসরকারি ভবন, দোকাটপাট ও বিভিন্ন গার্মেন্ট ভবনে ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় এসব এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ যানজট দেখা দেয় এবং মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও গুলশান থানায় ৪টি মামলা করা হয়েছে। এতে ২১ জন এজাহারভুক্ত আসামিসহ দেড় হাজার শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। এ খবরে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।



বিক্ষোভে অংশ নেয়া শ্রমিকদের দাবি ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা এবং আগস্ট মাস থেকেই সেটা কার্যকর করা। এই দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই হাজার হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিক্ষোভে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। মহাখালী, বনানী ও তেজগাঁও এলাকার গার্মেন্টগুলোতে তাত্ক্ষণিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। পুলিশ ও সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের একটি অংশ মাইকিং করে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শ্রমিকদের প্রতিনিধি দল বিজিএমইএ ভবনে আলোচনার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করে। শ্রমিকরা এসব অনুরোধ উপেক্ষা করে অবরোধ চালিয়ে যেতে থাকে এবং ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে স্লোগান দেয়। দুপুর ১২টার পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে মগবাজার-মহাখালী, মহাখালী-গুলশান, বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।
বিক্ষোভ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিএমইএ ভবন ও আশপাশের এলাকা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বনানী, মহাখালী, গুলশান, রামপুরা, মিরপুর, পল্লবী, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ গার্মেন্ট কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও যেসব এলাকায় গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক রয়েছে, ওইসব এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। অসন্তোষের আশঙ্কায় সাভারের আশুলিয়ায় অর্ধশতাধিক গার্মেন্ট দুপুরের পর ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন, নতুন ঘোষিত মজুরি একটি শুভংকরের ফাঁকি। এখানে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার নয়; বরং ২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। বিষয়টির ব্যাখা দিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা খান বলেন, মজুরি বোর্ড মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে এই মজুরি ঘোষণা করেছে। এখানে মূল মজুরি ২ হাজার টাকা, বাসা ভাড়া ৮শ’ টাকা ও চিকিত্সা ভাতা ২শ’ টাকা ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা কেন, বাংলাদেশের শিল্প কারখানা অধ্যুষিত কোনো এলাকাতেই এক রুমের একটি বাসাও ৮শ’ টাকায় ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির দাবি মজুরি বোর্ডের নতুন এই ঘোষণা বিশ্বাসঘাতকতা, শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। ৮০ শতাংশ গড় বেতন বৃদ্ধির প্রচারণাকেও ভাঁওতাবাজি বলে মনে করছেন শ্রমিকরা।
পুলিশের দাবি, এই বিক্ষোভের পেছনে একটি মহলের ইন্ধন রয়েছে। বিক্ষোভের পর ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে তাত্ক্ষণিকভাবে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হক খান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি কোনো ষড়যন্ত্রে না জড়ানোর জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
গুলশান জোন পুলিশের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম জানান, নতুন মজুরির বিষয়টি টেলিভিশন ও পত্রিকায় দেখেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে মহাখালী এবং গুলশান শুটিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই শ্রমিকরা ভাংচুর ও হামলা চালায়। তাদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দেয়া মাত্রই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে মহাখালী-গুলশান সড়কের সরকারি তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আশপাশের অফিস ও দোকানে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাংচুর চালায়। এ সময় রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনেও তারা ভাংচুর শুরু করে। শ্রমিকরা লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল দিয়ে বিভিন্ন ভবন ভাংচুর করে। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে এই রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ শ্রমিকদের তাড়া দিয়ে লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে এই সড়কে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গুলশান লিংক রোডে একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে কিছু পোশাক এনে আগুন দেয়। এছাড়াও তারা পুরনো টায়ার রাস্তায় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি এসে আগুন নেভায়। নাসা গার্মেন্টের এক কর্মকর্তা জানান, ডেলিভারি দেয়ার জন্য বেশকিছু পোশাক তৈরি করা ছিল। শ্রমিকরা দারোয়ানদের মারধর করে পোশাকগুলো রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, পুলিশ কাছাকাছি থাকলেও পোশাকগুলো রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। পুলিশ সময়মত উদ্যোগ নিলে পোশাকগুলো রক্ষা করা সম্ভব হতো।
সকাল ১১টার দিকে গুলশান-১ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে ভাংচুর করে। তারা সামনে যা পেয়েছে, তাই ভেঙেছে। এ সময় কয়েকটি দোকান লুট হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় গুলশান-১ নম্বরে নাভানা টাওয়ার, ওয়াশিংটন হোটেল, জব্বার টাওয়ার, উদয় টাওয়ার, বালিয়াড়ি ভবন, হাবিব মার্কেট, কামাল টাওয়ারসহ অর্ধশত মার্কেট ও ভবন ভাংচুর হয়। রড ও শাবল দিয়ে মার্কেটের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে শ্রমিকরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এ সময় সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলশান-১ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় কয়েকটি যানবাহনও ভাংচুর করে। নাভানা টাওয়ারের সামনে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাস্তায় শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করে। নাভানা টাওয়ারের নিচে একটি চশমার দোকানে ঢুকে ভাংচুর ও লুটপাটও করেছে তারা। এর কিছুক্ষণ পরই আগোরা চেইন শপিংমলে ঢুকে হামলা চালানো হয়।
আলী হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ন্যূনতম মজুরি যা নির্ধারণ করেছে তা আমরা নিরুপায় হয়ে মেনে নিয়েছি। কিন্তু তা আগামী মাস থেকে বাস্তবায়ন করলে শ্রমিকদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হতো না। তারা নভেম্বর থেকে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া মানে আমাদের ৩ মাস পিছিয়ে দেয়া। সামনে রমজান মাস, ঈদ ও কোরবানিতে আগের বেতনেই আমাদের কাজ করতে হবে। এরপর দেখা যাবে নভেম্বর মাসেও ওই মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি। সব মিলিয়ে এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে মালিক ও সরকার। শাহআলম নামে এক শ্রমিক বলেন, আমরা পত্রিকা ও টেলিভিশনে খবর দেখেই বুঝতে পেরেছি আন্দোলন থেকে আমাদের দূরে রাখার জন্য আপাতত দায়সারাভাবে একটি বেতন কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। ন্যূনতম বেতন ৩ হাজার টাকা হলেও আমরা মেনে নিতাম। কিন্তু তা না করে আমাদের মজুরি ধরা হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা আর বাকি ১ হাজার টাকা বাসা ভাড়া ও চিকিত্সা খরচ। তিনি বলেন, এখন ঢাকায় রিকশা চালালেও এক বেলায় ৩শ’ টাকা রোজগার করা যায়। তারপরও এই মুহূর্তেই ঘোষিত কাঠামো বাস্তবায়ন করা হলে আমরা তা মেনে নিতাম। কিন্তু এই সামান্য বেতনও দেয়া হবে তিন মাস পরে। তিনি আরও বলেন, মালিক পক্ষ ও সরকার তাদের অবস্থানেই অনড় থাকলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। অপর এক নারী শ্রমিক বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আমাদের জন্য যে বেতন কাঠামো দেয়া হয়েছে তা নিয়েও এক ধরনের প্রহসন চলছে। এখন এর সমাধান না হলে ৩ মাস পর আবার আন্দোলন করতে হবে। দুটি ঈদে আমাদের আগের মতোই সেই ন্যূনতম মজুরি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আন্দোলন না করলে আমাদের কথা কেউ শোনেন না।
তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় ঢাকা ডাইং নামে একটি কারখানার শ্রমিক জুয়েল জানান, নতুন বেতনের কথা তিনি শুনেছেন, তার বেতন কত বাড়বে, আদৌ বাড়বে কিনা সেটা তিনি নিশ্চিত নন। তবে তার কয়েক সহকর্মী বলেছেন, এতে তাদের কোনো বেতন বাড়বে না।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় জেশন ওষুধ কারখানার শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, সকালে মহাখালী থেকে যখন আন্দোলন করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা গুলশানের দিকে যাচ্ছিল, তখন আমরা কাজ বন্ধ করে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। তখন ভিতর থেকে আমাদের নিষেধ করা হয়। আমাদের বের হতে না দেয়ায় বাইরে থেকে এই ওষুধ কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। এ সময় পাশেই নাসা গ্রুপের গুদামে হামলা চালায় শত শত শ্রমিক। তারা ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ৮/১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। ভিতর থেকে তৈরি পোশাক রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দুপুর ১২টার পর থেকে পুলিশের ব্যাপক অ্যাকশনের মুখে মহাখালী, বনানী ও গুলশান এলাকার রাস্তা থেকে শ্রমিকরা সরে যায়। জুমার নামাজের সময় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে এবং রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পর সকাল ১১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তায় জড়ো হওয়া শ্রমিকদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। মাইক দিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের নিয়ে আমরা বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের কাছে যাব। তার আগে আপনারা রাস্তা ছেড়ে দিন।
শ্রমিকরা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মজুরি বোর্ডের কর্মকর্তা ও বিজিএমইএ নেতারা এসে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ করে আগস্ট মাস থেকে এর বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেই তারা অবরোধ তুলে নেবেন। পরে পুলিশের ব্যাপক অ্যাকশনের মুখে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকরা বিপুলসংখ্যক ইট জোগাড় করে পুলিশের দিকে ছুড়তে থাকে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। জাতীয় শ্রমিক জোট, গার্মেন্ট শ্রমিক জোট এবং গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনসহ শ্রমিক ও গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর বিশৃঙ্খলা হতে পারে। তাই তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
শ্রমিক সংগঠনের নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান : ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণাকে শুভংকরের ফাঁকি ও প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোটের নেতা সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের মূল মজুরি ৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বর্তমান বাজারদর বিবেচনা না করে মজুরি বোর্ড মূল মজুরি ২ হাজার টাকা ঘোষণার সুপারিশ করে এবং মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের জন্য মূল মজুরি ২ হাজার টাকা ঘোষণা করেছে। এই টাকায় কোনো অবস্থাতেই একটি শ্রমিক পরিবারের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ সব দেশেই ন্যূনতম মজুরি আমাদের নতুন ঘোষিত মজুরির চেয়ে দিগুণেরও অনেক বেশি। তাই তারা মূল মজুরি ৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
এই মজুরি কাঠামোকে মালিক তোষা হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, এটি শুভংকরের ফাঁকি। তারা কোনোভাবেই এই নতুন মজুরি মেনে নেবেন না। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম বলেন, নতুন ঘোষিত মজুরি শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। এখানে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা ৩ হাজার টাকার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে মূল মজুরি ২ হাজার টাকা মাত্র। বাকি ৮শ’ টাকা বাসা ভাড়া ও ২শ’ টাকা চিকিত্সা খরচ। দেশের শিল্প কারখানা অধ্যুষিত কোনো এলাকাতেই এই দামে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না এবং এই টাকা দিয়ে একটি পরিবার কোনোভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই মজুরি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) সভাপতি ফয়জুল হাকিম নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ১৩শ’ ক্যালরি খাবার প্রয়োজন, যার জন্য ব্যয় হয় ৬০ টাকা। সেই হিসাবে চারজনের সংসারে মাসে ন্যূনতম ব্যয় ৭ হাজার ২শ’ টাকা। তার ওপর ঘর ভাড়া, চিকিত্সা , শিক্ষা ও বিনোদন ব্যয়। এসব কিছু অস্বীকার করে ৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/31/36803
-----------------------------------------------------------------------

তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশানে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ
দোকান ব্যাংক গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর


নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ৩১-০৭-২০১০



বিক্ষুব্ধ তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার একপর্যায়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন গলিতে পুলিশের লাঠিপেটা

ছবি: জিয়া ইসলাম

*

সরকারঘোষিত মজুরির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার পোশাকশ্রমিকেরা রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশানসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেছেন। সকাল সাড়ে আটটা থেকে তিন ঘণ্টা ধরে তাঁরা বিক্ষোভের নামে বিপণিবিতান, ব্যাংক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ২০০ স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দুই থানায় মোট চারটি মামলা হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা ঘোষণা করে সরকার। শ্রমিকেরা পাঁচ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরিসহ আগামী মাস থেকেই তা কার্যকর করার দাবিতে রাস্তায় নামেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও শ্রমিকেরা জানান, পাঁচ-ছয় হাজার পোশাকশ্রমিক গতকাল সকালে কাজে যোগ না দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় কারখানার সামনে জমায়েত হন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে কয়েকটি কারখানা ও কারখানার সামনে রাখা যানবাহন ভাঙচুর করে তাঁরা। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কয়েক দিনের চলমান শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এ এলাকায় গতকাল বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ ছিল। কারখানার সামনে থেকে শ্রমিকদের ছোট ছোট জটলা সকাল সোয়া আটটা থেকে রাস্তায় এসে জড়ো হয়। সাড়ে আটটার দিকে তেজগাঁও এলাকায় শ্রমিকদের সংখ্যা কয়েক হাজার হয়। শ্রমিকেরা কারওয়ান বাজারসংলগ্ন এফডিসি ক্রসিং থেকে শুরু করে সাতরাস্তা-মহাখালী থেকে বনানী ক্রসিং, তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোড পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। তখন তেজগাঁও, বিমানবন্দর ও গুলশান সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কগুলো ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে। এফডিসি সিগন্যাল থেকে শুরু করে সাতরাস্তা, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বনানী পর্যন্ত রাস্তা শ্রমিকেরা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
সকালে ফাঁকা রাস্তায় শ্রমিকেরা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। মহাখালী ক্রসিং পুরোপুরি দখলে নিয়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মহাখালী ও গুলশান এলাকায় শত শত শ্রমিক রাস্তায় নামেন। তাঁদের সঙ্গে তেজগাঁও এলাকারও কিছু শ্রমিকও যোগ দেন। হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। সকাল নয়টার দিকে তাঁরা মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ হয়ে গুলশান-২ পর্যন্ত মিছিল করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা দুই ঘণ্টা ধরে মহাখালী (আমতলী), ওয়্যারলেস গেট হয়ে গুলশান-১ ও ২-এর রাস্তার দুই ধারের দুই শতাধিক দোকান, ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, মার্কেট ও যানবাহনে ভাঙচুর চালান।
যেসব প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়: নাভানা শপিং কমপ্লেক্স, জারা মার্কেট, হাবিব সুপার মার্কেট, মলয় ক্যাপিটাল সেন্টার, ম্যাসিভ লাইটিং হাউস, সিমেন্স শোরুম, সেফরন, কাদেরিয়া টাওয়ার, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, স্যামসং শোরুম, ট্রাফেল রেস্টুরেন্ট, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, স্যোশাল ইসলামিক ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এ ছাড়া চেকোস্লোভাকিয়া কাউন্সিলরের কার্যালয়, মেয়র ভবন, গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার, কুমুদিনী ট্রাস্ট, শপার্স ওয়ার্ল্ড, সুপার শপ আগোরা, নাফি টাওয়ার, উদয় টাওয়ার, বেজ গ্যালারি, নাভানা ফার্নিচার, লোটাস কামাল টাওয়ার-২, সুবাস্তু ইমাম স্কয়ার, মলি টাওয়ার, আর এম সেন্টার, জব্বার টাওয়ার, হোটেল ওয়াশিংটন, রূপায়ণ সেন্টার, রয়্যাল থাই রেস্টুরেন্ট, আলমাস সুপার শপ, হোটেল ওয়াশিংটন, বাটারফ্লাই শোরুম, র‌্যাংগস মোটর, মিতসুবিশি মোটরস, জেসন ওষুধ কোম্পানি, অ্যারিস্টোক্র্যাট রেস্টুরেন্ট, বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে এ আর গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডসহ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং তেজগাঁও লিংক রোডে নাসা গ্রুপ, এর ভেতর থাকা পাঁচটি প্রাইভেট কার ও পিকআপ ভাঙচুর করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু গুলশান এলাকায় দেড় শ বিপণিবিতান, ব্যাংক, হোটেল ও রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকেরা গুলশান-১-এর গোল চত্বরে রাস্তার দুই ধারে অতর্কিতে বিপণিবিতানে ভাঙচুর শুরু করেন। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রায়হানসহ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হন। সেখানে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন শ্রমিকেরা।
গুলশান-১-এর কাছে জারা মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শিশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মার্কেট ভাঙচুরের সময় হামলাকারীরা চিৎকার করে বলেন, ‘এরা ধনী, এদের জিনিসপত্র ক্ষতি হলে সরকারের কাছে খবর যাবে।’ ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এই হামলার পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে।
গুলশান-১-এর গোল চত্বরে কর্তব্যরত টহল পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুজ্জামান জানান, সকাল ১০টার পর প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক অতর্কিতে ব্যাংক, বিপণিবিতানে ভাঙচুর শুরু করে। বাধা দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করেন। সকাল ১০টার দিকে তেজগাঁও এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা একত্র হয়ে মহাখালী আন্তজেলা বাসটার্মিনালের সামনে জড়ো হন। তাঁরা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। যাত্রীবাহী বাস রক্ষায় পরিবহনশ্রমিকেরাও টার্মিনালের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে নেমে পড়েন। পুলিশ কর্মকর্তারা শ্রমিকদের বিচ্ছিন্নভাবে ও হাতমাইকে বারবার রাস্তা ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে রিকশায় মাইক লাগিয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ভাই। আপনাদের দুঃখ আমি বুঝি। রাস্তা ছেড়ে দেন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করব।’ শ্রমিকেরা তাঁর কথা না শুনে উল্টো স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিপেটা করে। শ্রমিকেরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ঢিল ছোড়েন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে এ অবস্থা চলার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিকেরা রাস্তা ছেড়ে অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। দুপুর একটার দিকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যান চলাচল শুরু হয়।
গুলশানে ভাঙচুর হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ প্রভৃতি।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে দু-তিন হাজার শ্রমিক বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশ তাঁদের বারবার বুঝিয়েও রাস্তা থেকে সরাতে পারেনি। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গতকাল দুপুরে গিয়ে মহাখালী থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দু-একটি ছাড়া সব স্থাপনারই কাচ ভাঙা দেখা যায়। দুপুরে তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঢিল, ভাঙা কাচের গুঁড়া আর গাছের ভাঙা ডাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। আন্দোলনরত শ্রমিকেরা সড়ক বিভাজকের কাঁটাতারের বেড়ার খুঁটি ও গাছ উপড়ে ফেলেন।
জানা যায়, সকাল আটটা থেকে পাঁচ ঘণ্টা মহাখালী আন্তজেলা বাসটার্মিনাল থেকে কোনো বাস ঢাকার বাইরে ছেড়ে যায়নি। বাইরে থেকেও কোনো বাস আসেনি। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বাসগুলো না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। একপর্যায়ে বাসগুলোকে রক্ষায় পরিবহনকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।
ভৈরব থেকে সকালে ঢাকায় এসেছেন চলনবিল পরিবহনের চালক বেলাল। রাস্তার পাশে রাখা বাসটি নিয়ে প্রতি মুহূর্ত তাঁর কেটেছে চরম উদ্বেগের মধ্যে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ছিলেন এ অবস্থায়। বেলাল বলেন, ‘আমি চিন্তা করতাছিলাম, আমার ভাড়া মারনের কাম নাই। গাড়ি নিয়া বাড়ি যাইতে পারলেই হয়।’
মহাখালীর জেমিনি গার্মেন্টসের পারভীন আক্তারের দাবি, সরকারঘোষিত তিন হাজার টাকায় তাঁর সংসার চলবে না। আর নভেম্বর থেকে মজুরি বাস্তবায়নের কথা বলে মালিকেরা ঈদ বোনাস না দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এই মাস থেকেই মজুরি বাস্তবায়ন চান তাঁরা।
আরেক শ্রমিক লিয়াকত বলেন, ‘খাইতে লাগে এক হাজার টাকা, বাসা ভাড়া দেড় হাজার টাকা আর বাকি ৫০০ টাকা থিকা বাড়িতে পাডানো, কাপড়চোপড়, অন্যান্য খরচ ক্যামনে চলব।’
গতকাল ছিল ৩০তম বিসিএস পরীক্ষা। তেজগাঁও অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আসা-যাওয়ার সময় যানবাহন না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। মহাখালী থেকে শত শত মানুষ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ফার্মগেটের দিকে রওনা হয়।
মহাখালী ফ্লাইওভারের পাশের একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকাল নয়টার দিকে হাজার তিনেক শ্রমিক ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে এসে জড়ো হন। তাঁরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেয়।
কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জীবন কুমার রায় প্রথম আলোকে জানান, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে ৫০-৬০ জন করে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ফ্লাইওভারের নিচে জড়ো হন। এঁদের অধিকাংশই মহখালীর আমতলী হয়ে গুলশান-১-এর দিকে এবং বাকিরা বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার পোশাক কারখানা থেকে শ্রমিক নামিয়ে আনেন।
মামলা: গতকাল সন্ধ্যায় ভাঙচুরের ঘটনায় গুলশান-১-এর নাভানা শপিং কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাত-আট শ পোশাকশ্রমিককে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় নাভানা টাওয়ারে আইল্যান্ডার নামের একটি চশমার দোকানে লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এতে মোট আসামি দেড় থেকে দুই হাজার পোশাকশ্রমিক। চারটি মামলাতেই ১০ পোশাকশ্রমিক নেতাকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মোশরেফা মিশু, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মন্টু ঘোষ, সুলতান বাহার, নাসিমা নাসরিন, কল্পনা আখতার, রুহুল আমিন, বাবুল আকতার ও আবুল হোসেন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল থানায় দুজন ও গুলশান থানায় আটজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন বলেন, মামলায় বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামিরা অস্ত্রশস্ত্রে (দা, লাঠি, রড, ককটেল) সজ্জিত হয়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাংক, হোটেল, বিপণিবিতানে ভাঙচুর করেছেন। তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা করেছেন এবং সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন।
পল্টনে বিক্ষোভ-সমাবেশ: ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে পল্টন ও প্রেসক্লাব এলাকায় গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ ও সমাবেশে করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। এ সময় তেজগাঁওয়ে পোশাককর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানায় শ্রমিক সংগঠনগুলো।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ট্রেড ইউনিয়ন সংহতি ও গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যপরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শ্রমিকেরা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
নাসিমা আকতার নামের এক পোশাকশ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকার দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু মজুরি নির্ধারণ করা হলো তিন হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।’
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকলিমা আকতার বলেন, তিন হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হলেও এর মধ্যে অসংখ্য মারপ্যাঁচ আছে। কারণ শিক্ষানবিশ অবস্থায় একজন শ্রমিক আড়াই হাজার টাকা পাবেন। এখন তাঁকে টাকা কম দিতে হয়তো বছরের পর বছর শিক্ষানবিশ রাখা হবে।
তেজগাঁওয়ে আহত শ্রমিক বিবি আমেনা ও নাসরিন বেগম বলেন, ‘অপারেটর হিসেবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। কিন্তু এখনো বেতন দুই হাজার ৭০০ টাকা। ন্যূনতম মজুরি কবে হবে, কবে পাওয়া যাবে, সেটি কেউ বলতে পারছে না।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-31/news/82786

Saturday 24 July 2010

দু'হাঁটু ফুলে গেছে\ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছে অসুস্থ মাওলানা সাঈদী আবারো ২ দিনের রিমান্ডে

দু'হাঁটু ফুলে গেছে\ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছে
অসুস্থ মাওলানা সাঈদী আবারো ২ দিনের রিমান্ডে

গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আদালতে হাজির করা হয় -সংগ্রাম
মিয়া হোসেন : অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আবারো ২দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। বিশ্ব বরেণ্য কুরআনের তাফসীরকারক মাওলানা সাঈদী ডায়াবেটিসের রোগী। তার বুকে দু‘টি রিং বসানো। তার চলাফেরা ও বাথরুম সারানোর কাজসহ সকল কাজই করতে হতো সাহায্যকারীদের মাধ্যমে। পবিত্র কুরআনের তাফসীর শুনে মাওলানা সাঈদীর হাতে হাজারো অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রিয় এ ব্যক্তিটির দু‘টো হাঁটুই ফুলে গেছে। ভেঙ্গে গেছে শরীর। রিমান্ডের নামে অমানবিক নির্যাতন চলছে তার ওপর। নোংরা পরিবেশে অস্বাস্থ্যকর কক্ষে তাকে রাখা হয়েছে। দিন রাত সবই সমান তার কাছে। সকালে সূর্যের আলোতে পবিত্র কুরআনের তাফসীর দেখার সুযোগ নেই তার। ফ্লোরে ঘুমিয়েই কাটাতে হচ্ছে রাতের পর রাত। নিয়মিত ঘুম নেই, নেই ভাল খাবার, অযু গোছল বা বাথরুম সারানোর জন্য আগের মতো সাহায্যকারী নেই। ফ্লোরে শুয়ে ছাদের দিকে দেখেন সিলিং ফ্যান নেই তার কক্ষে। আর মশা ও পোকা মাকড় যেন তার নিত্য সঙ্গী।
রমনা থানায় দায়ের করা ৮২ (২) ২০০৪ মামলায় ৩দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। আবারো রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। তাও ৭ দিনের। বিচারক দিলারা আলো চন্দনা ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষের আইনজীবীরা তার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে জেল হাজতে পাঠানোর আবেদন করেন। কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়।
রাজধানীর কদমতলী থানায় সাজানো আরো এক মামলায় আসামী করা হয়েছে মাওলানা সাঈদীকে। এ মামলার শুনানীর জন্য ২৯ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেছেন বিচারক তানিয়া।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আদালতে শুনানীতে অংশ গ্রহণ করেন এডভোকেট মশিউল আলম, আব্দুর রাজ্জাক, এস এম সোহরাব আলী, আবু সাঈদ মোল্লা, লুৎফর রহমান, শামসুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, আব্দুল হান্নানসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন মামলায় ৩দিনের বেশী রিমান্ড না দেয়ার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। মাওলানা সাঈদীকে ৩দিনের রিমান্ড নেয়ার পর আবার রিমান্ড না নিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর আবেদন করেছি। রিমান্ডে থেকে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার হাঁটু ফুলে গেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাকে রাখা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=35232

“বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট” শিরোনামের আন্তর্জাতিক বিবৃতি

আমিনুল মনসুর
‘দ্য কোয়ালিশন ফর ফ্রিডম এন্ড ডেমক্রেসি ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি সংস্থার বিবৃতি গত কয়েকদিনে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোতে বহুল প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশ নামক দেশটাকে একসময় বেশিরভাগ পশ্চিমারা আলাদা করে চিনতেন না, বাংলাদেশীদেরকে মনে করতেন ‘ইনডিয়ান’, সে অবস্থা সম্ভবত আর থাকছে না। পত্রপত্রিকা আর সংবাদমাধ্যমগুলোর এমন অবদানের পর বাংলাদেশকে এখন থেকে অনেকে সহজেই চিনতে পারবেন। যেমনভাবে একজন সচেতন নাগরিকের জন্য সোমালিয়া, কঙ্গো কিংবা রোয়ান্ডা কে চেনা কঠিন না। ইদানিং অনেক রাজনীতি বিশ্লেষককে বলতে শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্র প্রতিপন্ন করার জন্য অনেকে ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে এ বিবৃতিটিতে যা বলা হয়েছে সে বাস্তবতাকেও সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এ ধারাবাহিকতায় বলতে হয়, ঐ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যদি সত্যি হয়ে থাকে তখন সেই ব্যার্থ রাষ্ট্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান থেকে যাচ্ছে ।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত এ বিবৃতিটি আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য এবং ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতি কোয়ালিশনটির আহবান। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং মানবাধিকার কর্মীদের এ সংগঠনটি কংগ্রেস এবং ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) কে বাংলাদেশে চলমান বিরোধীদলের উপর সরকারী নির্যাতন এবং যথেচ্ছ গ্রেফতারের প্রতিবাদ করতে আহবান জানিয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে, মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর ডিসেম্বরে ক্ষমতায় এসেছে। এর আগে দু’বছর সামরিক শাসনের কবলে ছিলো বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার দশ শতাংশ ধারণকারী এ দেশটি।

এখানে সংক্ষিপ্ত কিন্তু সারগর্ভ বিবৃতিটির বাংলা অনুবাদ করা যাক। “কোয়ালিশন মনে করছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বাকস্বাধীনতা এবং ভিন্নমত পোষণের অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করছে। বিগত আঠারো মাসে বর্তমান সরকার পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করার কুদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর সাথে সাথে সরকারী দল স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে এবং প্রচুর বিরোধী দলীয় নেতা ও ছাত্রদেরকে গ্রেফতার করেছে। ২৯ জুন, ২০১০ তারিখে দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল এবং ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যেই এ গ্রেফতারকে অন্যায় ও অযৌক্তিক হিসেবে মতপ্রকাশ করেছে।
কোয়ালিশনের একজন সদস্য রেভারেন্ড গ্যারিল্যান্ড হেগলার বলেন ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র এবং মুক্ত শাসনের অধিকার ও মুল্যবোধের প্রতি আমাদের সরকার দ্বিমত পোষণ করতে পারেনা। যদি এ স্বৈরশাসনকে সমর্থন করা হয়, তাহলে তা হবে আমেরিকান হিসেবে আমাদের গর্বিত ঐতিহ্য এবং বিশ্বনাগরিকের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। স্রষ্টায় বিশ্বাসী হিসেবে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখা আমাদের দায়িত্ব মনে করি।’

অন্যদিকে ‘আমেরিকান মুসলিম টাস্কফোর্স ফর সিভিল রাইটস এন্ড ইলেকশনস’ নামের জাতীয় সংগঠনটিও একই ইস্যুতে তাদের মত প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে যে, সরকারী এই নিপীড়ন বাংলাদেশে আইনের শাসনকে বাধাগ্রস্থ করবে। একই সাথে এর ফলে এ অঞ্চলে বিরাজমান অস্থিরতা মারাত্বক ভাবে বৃদ্ধি পাবে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী একজন বাংলাদেশী ভিন্নমতাবলম্বী, যিনি তাঁর পরিবারের উপর নির্যাতনের আশংকায় নাম প্রকাশ করতে চান নি, বলেন ‘এ সরকারের নিবর্তন নির্যাতনের নীতি কে যদি আমেরিকার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সমর্থন করে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশী জনগণের বিশাল একটা অংশের গণতান্ত্রিক অধিকারের অবমাননাই হবে। এতে করে ভিন্নমতসহিষ্ণুতা, মতবৈচিত্র এবং শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদলের ধারাই ব্যাহত হবে’।”

কোয়ালিশন নিজেদের কর্মকান্ডকে বাংলাদেশী জনগণের জন্য মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বিকাশের চলমান কর্মসূচী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে যে, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো আমেরিকান জনগণ এবং সরকারকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রসঙ্গে যথার্থ নীতি গ্রহণে সচেতন করা। বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল’ এর প্রতিও আহবান জানিয়েছে।

একজন সচেতন বাংলাদেশীকে যে বিষয়টি চিন্তিত করবে তা হলো, উপরের এ বিবৃতিটি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। সংবাদসংস্থা পিআরনিউজওয়ার এটি প্রচার করে। তাদের বরাত দিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সংবাদসংস্থা ফর্বস, ফক্স বিজনেস এবং ইয়াহু নিউজ এটি হুবহু প্রচার করেছে। এ কয়েকদিনে দ্য ষ্ট্রিট, ইউএস পলিটিক্স, বষ্টন বিজ জার্ণাল, নিউজ ব্লেজ, সান হেরাল্ড, সেন্টার ডেইলী সহ বিভিন্ন আমেরিকান সংবাদ সংস্থার ওয়েব সাইটে বিবৃতিটি দেখা যাচ্ছে। শ্রমিক সমস্যা, দুর্নীতি, প্রাকৃতিক দুযোর্গ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব মিলিয়ে বারবার আমাদের প্রিয় দেশটির নেতিবাচক পরিচয় পাচ্ছে বিশ্ববাসী। এ পরিস্থিতিতে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারের উচিত, ভাবমুর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে ব্যাস্ত থাকার পরিবর্তে দেশে ন্যায় বিচার, আইনের শাসন এবং সহনশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। সরকারী দলে থাকার কারণে আওয়ামী লীগের দায়ভারই সবচেয়ে বেশি, তারা এগিয়ে আসলে বিরোধী দলগুলোও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে বাধ্য হবে। তখন আর বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোতে দেশ নিয়ে এ ধরণের নেতিবাচক সংবাদ দেখে আমাদেরকে লজ্জিত হতে হবে না।

লেখকঃ গবেষক, ইমেইল, aminulmansur@yahoo.com

http://www.sonarbangladesh.com/articles/AminulMansur

শৌচাগার নির্মাণে টিআরের গম, তাও আত্মসাৎ

সালেহ আহমেদ, ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ) | তারিখ: ২৪-০৭-২০১০

০ মন্তব্যপ্রিন্টShare « আগের সংবাদ পরের সংবাদ» সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর পছন্দের নেতা-কর্মীদের নামে গম বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ না করে এই গম আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় ধরমপাশার ১০ ইউনিয়নে ৭৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৩২ টন বিশেষ গম বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী জনকল্যাণমূলক কাজে এ বরাদ্দ ব্যবহারের কথা। কিন্তু গত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ৩২ টন গম বরাদ্দ দেওয়াসহ ৭৬টি প্রকল্পের তালিকা পিআইও কার্যালয়ে পাঠান। মসজিদ, মন্দির ও গোরস্তানের উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, মেরামত ও সাঁকো নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে গ্রামভিত্তিক পাড়ায়-পাড়ায় শৌচাগার নির্মাণের প্রকল্প করা হয়। বরাদ্দের অধিকাংশ গম ইতিমধ্যে তুলে নেন নেতা-কর্মীরা। গত ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ থাকলেও নেতা-কর্মীদের দেওয়া প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
ধরমপাশা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস ছাত্তারের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দুই টন গম। মো. আবদুস ছাত্তারকে করা হয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি। কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত থাকায় এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি, তবে খুব তাড়াতাড়ি তা করে নেব।’ সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়ার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক টন গম। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান। কাজ করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী আর কাজ করব? ডানে-বাঁয়ে দিতে গিয়ে বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই ভাবছি, আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ করব।’
একইভাবে শৌচাগার নির্মাণের কোনো প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান তথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা করেননি। এমনকি অনেকের নামে বরাদ্দ হলেও তিনি নন, গম তুলে নিয়েছেন অন্য কেউ। চামরদানী ইউনিয়নের আমজুড়া গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা মান্নার বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য দুই টন গম বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি দাবি করেন, ‘প্রকল্প তালিকায় আমার নামে গম বরাদ্দ দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি সাংসদের কাছে এ বাবদ বরাদ্দ চাইনি। আমি এ বরাদ্দের মাল উত্তোলন করিনি। কে বা কারা তা নিয়েছে, তা আমি জানি না।’
পাইকুরাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জামালপুর গ্রামের রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন পাঁচ টন গম। কিন্তু ওই সড়কে কোনো কাজই হয়নি। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গত শুষ্ক মৌসুমে সড়কে সামান্য মাটি ভরাট করিয়েছিলাম। দলীয় কার্যালয়েও কিছু মাটির কাজ করিয়েছি। এ ছাড়া সংগঠন চালাতে আপ্যায়ন খরচও আমাকেই মেটাতে হয়। আমার ব্যয়ের আসল টাকাই এখনো উঠে আসেনি।’
উপজেলার পিআইও নূর আহমেদ বলেন, ‘আমাকে এ উপজেলার পাশাপাশি তাহিরপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই সব প্রকল্পের কাজ দেখভাল করা সম্ভব হয়নি।’ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বাবুল মিঞা বলেন, টিআর প্রকল্পের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ এলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন নিয়ম মোতাবেক হয়েছে দাবি করে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। কাজ শুরু না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীরা অর্ধেক কাজ করে, অর্ধেক করে না—এটাই স্বাভাবিক।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-24/news/81173

Thursday 22 July 2010

আঙ্কটাডের বার্ষিক বিনিয়োগ রিপোর্ট প্রকাশ : বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩৬ ভাগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই পরিস্থিতি খুবই নাজুক। আগের বছরের তুলনায় ২০০৯ সালে দেশে এফডিআই কমে গেছে ৩৬ শতাংশ। গ্যাস-বিদ্যুত্সহ বিভিন্ন বাধার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড।
তবে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এসএ সামাদ বলেন, বিনিয়োগের জন্য গ্যাস, বিদ্যুত্ কোনো সমস্যা নয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উদার পরিবেশ রয়েছে। গতকাল বিনিয়োগ বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে বিনিয়োগ নিয়ে আঙ্কটাডের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। বিনিয়োগ বোর্ড এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ বছরের রিপোর্টটির বিস্তারিত তুলে ধরে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন। আঙ্কটাডের বিনিয়োগ রিপোর্ট এবং দেশের সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এসএ সামাদ। আরও বক্তব্য রাখেন বোর্ডের সদস্য আবু রেজা খান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মীর্জা আবদুল জলিল, বিনিয়োগ বোর্ডের সচিব সুলতান মাহমুদ। উপস্থিত ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সাল থেকে আঙ্কটাডের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিনিয়োগ বিষয়ে রিপোর্টটি সারাবিশ্বে একযোগে প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট ইস্যুকে রিপোর্টের মূল প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়। চলতি বছর রিপোর্টের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ইনভেস্টিং ইন এ লো কার্বন ইকোনমি’। এটি আঙ্কটাডের ২০তম বিনিয়োগ রিপোর্ট।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ২০০৯ সালে এফডিআই এসেছে ৭০ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর আগের বছরে ছিল ১০৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। ২০০৭ সালে ছিল ৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। মোট এফডিআইয়ের মধ্যে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল হিসেবে ২১ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার, পুনঃবিনিয়োগ ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণ ১১ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর মধ্যে গত ২০০৮ সালের তুলনায় ইক্যুইটি ক্যাপিটাল ৭৩ শতাংশ কমেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, আগের বছর বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিনিয়োগ বড় ভূমিকা পালন করলেও এ বছর এই খাতে বিনিয়োগ ৬০ শতাংশের বেশি কমেছে। ২০০৮ সালে টেলিকম খাতে ৬৪ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার হলেও ২০০৯ সালে এসেছে মাত্র ২৫ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। রিপোর্ট অনুযায়ী টেক্সটাইল ও ওয়্যারিং খাতে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার, ব্যাংকিং খাতে ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিদ্যুত্, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামে ৫ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, খাদ্যপণ্যে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, কৃষি ও মত্স্য খাতে ১ কোটি ১৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার, অন্যান্য খাতে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার এফডিআই এসেছে।
গতকাল প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালে সারাবিশ্বে বিনিয়োগের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলেও ২০১০ সালের প্রথমদিকে এসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। ২০০৯ সালে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ কমেছে ৪৩ শতাংশ। আর ২০১০ সালের প্রথম তিন মাসে সেটা ২০ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই কমে ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৯ সালে এসে এফডিআই কমে যাওয়ার হার ৩৭ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এফডিআই কমেছে ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে উন্নয়নশীল ও দুর্যোগপ্রবণ অর্থনীতিতে কমেছে ২৭ শতাংশ।
এবারের রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগে শীর্ষে আছে ব্রিটেন। সেখানে এফডিআই’র পরিমাণ ৮ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হংকং, তৃতীয় স্থানে মিসর ৭ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তঃমহাদেশীয় কোম্পানিগুলো (টিএনসি) একদিকে যেমন সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে তেমনি তারা কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিনিয়োগও করছে। এটা একদিকে সমস্যা অন্যদিকে সমাধানের মতো। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় উত্পাদন প্রত্রিক্রয়া, সরবরাহ ও অন্যান্য সেবাকে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত করতে পারে।
আঙ্কটাড বলছে, গত বছরে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ৮২টি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ১০৯টি নতুন দ্বৈতকর চুক্তি স্বাক্ষরসহ আরও ২০টি অন্যান্য চুক্তি হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ৪টি। কর ও বাণিজ্য বাধা সংত্রক্রান্ত ৩২টি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটসে (আইসিএসআইডি)।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এসএ সামাদ বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হতে পারে। আমলাতান্ত্রিক ও অনির্বাচিত সরকারের কারণে প্রায় দুই বছর দেশে বিনিয়োগ আসেনি। এ ধরনের সরকারের সময় কেউ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ধারা যদি ৫ বা ১০ বছর অব্যাহত থাকে তাহলে অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও এফডিআই প্রবৃদ্ধি দুটোই বাড়বে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশি বিনিয়োগও বাড়বে। অনির্বাচিত সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেটার বিজনেস ফোরামসহ নানা কিছু করেছে। কিন্তু কোনোটাই সফল হয়নি।
বিদ্যুত্ ও জ্বালানি বিদেশি বিনিয়োগে বড় বাধা কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুত্, গ্যাস নিয়ে কোনো বিনিয়োগকারী আমার কাছে সমস্যার কথা উল্লেখ করেননি। তারা কেউই আমাকে বলেননি যে এটা সমস্যা। দেশের ভালো ভাবমর্যাদা, ভালো পরিবেশ, আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতা কোনো সমস্যা নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি ১০০ বিলিয়ন হওয়া সম্ভব। বর্তমানে জিডিপিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। এটাকে কম ও ধীর বলে অভিহিত করা যায়। আমরা এটাকে ১ থেকে ৪ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। আমি বলছি ভালো, ভালো। কিন্তু যে বিনিয়োগ করবে সে যদি বিশ্বাস না করতে পারে তাহলে তো বিনিয়োগ আসবে না।
দেশে বিনিয়োগের জন্য অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ভালো ও উদার পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হয়নি। কারও বিনিয়োগ বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। সব দেশ মন্দার কারণে বিপর্যস্ত। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি সুরক্ষিত রয়েছে। রফতানির কয়েকটি খাত ছাড়া আর কোনো খাতে মন্দার প্রভাব পড়েনি। তাই ২০১০ সালে বিদেশি বিনিয়োগসহ সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়বে।
এসএ সামাদ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা গ্যাস-বিদ্যুতের কোনো সমস্যার কথা এ পর্যন্ত আমাকে বলেননি। তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতার কথা তারা বেশি বলেছেন। এটা আমাদের বড় দুর্বলতা। পদ্ধতিগত জটিলতা আরও সহজ করতে হবে। অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজও করা লাগে, যা দরকার নেই। তবে এখানে বিনিয়োগ বোর্ডের একা কিছু করার নেই। আমলাতন্ত্রের জটিলতার কারণেও বিনিয়োগকারীরা নিরুত্সাহিত হচ্ছে। আমরা ইচ্ছে করলে একটা ওয়ার্ক পারমিটও দিতে পারি না।
বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য আবু রেজা খান বলেন, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের কারণেই বিদেশি বিনিয়োগ থমকে যাচ্ছে তা ঠিক নয়। আমরা অনেক প্রস্তাব পাচ্ছি। যেখানে জমি একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মজুরিসহ নানা কারণে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ভালো স্থান হিসেবে গণ্য হচ্ছে। সবাইকে তো ইপিজেডে জায়গা দেয়া যাবে না। এজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এদিকে বিনিয়োগ বোর্ডের সচিব সুলতান মাহমুদ জানান, সর্বশেষ হিসাবে চলতি বছরে অর্থাত্ ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত ৬ মাসে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রকল্পের সংখ্যা ৭৮৪টি। টাকায় বিনিয়োগের পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৭৮ কোটি ১০ লাখ ৮২ হাজার টাকা বা ২৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার ডলার। ২০০৯ সালে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৯৫টি, ২০০৮ সালে ছিল ১ হাজার ৬১৩টি। যৌথ ও বিদেশি বিনিয়োগে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সংখ্যা ৯৩টি। ২০০৯ সালে ছিল ১২৯ এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৪৫টি। ২০১০ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ডলার, ২০০৯ সালে ছিল ৬৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার ডলার, ২০০৮ সালে ছিল ২৫৬ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার ডলার। মোট বিনিয়োগের দিক দিয়ে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২৮৭ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ডলার। ২০০৯ সালে তা ছিল ৩২৫ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার ডলার, ২০০৮ সালে ছিল ৫৬৮ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে ২০১০ সালে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬২১ জন, ২০০৯ সালে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮২ জন এবং ২০০৮ সালে ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/23/35831

ফরিদপুরে আ.লীগে দ্বন্দ্ব সাজেদার ছেলেকে প্রতিরোধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান

ফরিদপুর অফিস | তারিখ: ২২-০৭-২০১০
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবরের ফরিদপুর আগমন ঠেকাতে শ্রমমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা ফরিদপুর-সালথা সড়কের কৈজুরি ইউনিয়নের চুঙ্গির মোড় এলাকায় সড়কি, দা, ঢালসহ অবস্থান নেয়।
এদিকে উভয় পক্ষ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের একই স্থানে একই সময় একই দাবিতে পৃথক সমাবেশ ডাকলেও তা হয়নি। আগের রাতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বৈঠক এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে দুটি সমাবেশই স্থগিত করা হয়। দুই পক্ষই সমাবেশ ডেকেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। তবু বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আজ জনতা ব্যাংকের মোড়, আলীপুরের মোড়, গোল পুকুর ড্রিম শপিং কমপ্লেক্স, প্রেসক্লাবের সামনেসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এর আগে গতকাল বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানান, সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবর ফরিদপুর, সালথা ও নগরকান্দায় বিভিন্ন আনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ সকালে আসার কথা ছিল। তাঁর প্রথম অনুষ্ঠান ছিল সকাল ১০টায় সালথায়। সেখানে উপজেলা পরিষদ আয়োজিত এসএসসির জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ফরিদপুর-সালথা আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে সালথা উপজেলা বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর কথা ছিল আয়মন আকবরের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আয়মন আকবরকে প্রতিহত করতে ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ও কানাইপুর ইউনিয়নে শ্রমমন্ত্রী-সমর্থিত প্রায় দুই হাজার লোক চুঙ্গির মোড় এলাকায় সমবেত হয়। সকাল আটটা থেকে তারা কজুরি ও কানাইপুর এলাকার ওয়াহিদ মোল্লা, লতিফ মাস্টার ও সিরাজ ব্যাপারীর নেতৃত্বে প্রকাশ্যে ঢাল, সড়কি, লাঠি, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া চালায়। দুপুর ১২টার দিকে আয়মন আকবরের আসার কর্মসূচি বাতিল হওয়ার খবর আসার পর লোকজন প্রতিরোধ তুলে নেয়।
প্রতিরোধ কর্মসূচিতে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম নেতা জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আয়মন আকবরকে প্রতিহত করতেই আমরা সবাই সমবেত হয়েছিলাম।’
সালথা উপজেলার চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আয়মন আকবর প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি না এলেও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছে এবং সালথার ইউএনও এস এম তুহিনুর আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আয়মন আকবরকে প্রতিহত করার জন্য কৈজুরির চুঙ্গির মোড়ে প্রতিরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে বলে শুনেছি।’
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আওলাদ আলী ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুঙ্গির মোড়ে পুলিশ যায়নি। তবে ওখানে কয়েক হাজার লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সমবেত হয়েছে, এ খবর পেয়ে আমি তা শ্রমমন্ত্রী-সমর্থিত নেতাদের জানাই। এরপর শ্রমমন্ত্রীর ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোকাররম মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সমবেতদের সরিয়ে দেন।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-22/news/80874

Saturday 10 July 2010

কিশোরীকে ধর্ষণের পর ভিডিও করেছে ছাত্রলীগ নেতারা

টাঙ্গাইল, ১০ জুলাই (শীর্ষ নিউজ ডটকম): টাঙ্গাইলের সখীপুরে কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগের এক নেতা। তার পৈশাচিকতা শুধু ধর্ষণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেছে তার সহযোগীরা। ধর্ষকের নাম হাবিবুল্লাহ ইতিহাস ওরফে হাবিব। সে সখীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক। এ ঘটনায় মামলা হলেও ধর্ষিতার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আসামিরা প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করেছে। গত ৫ জুলাই
এ ঘটনা ঘটলেও ছাত্রলীগ নেতা ও পুলিশ যোগসাজশ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছিল। আজ শনিবার শীর্ষ নিউজ ডটকমের এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে পারেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সখীপুর থানার এসআই মিজানুর রহমান মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ধর্ষিতা কিশোরী সখীপুর পৌর এলাকার কাহারতা গ্রামের। সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। কিশোরী গত ৫ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সখীপুর বাজারে আসে খাতা কেনার জন্য। বাড়ি ফেরার সময় হাবিবুল্লাহ ইতিহাস ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল, নাতি আকাশ মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে করে হাজিপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে হাবিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এসময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে। পরে আরেকজন ধর্ষণ করতে গেলে মেয়েটি সুযোগ বুঝে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতারা। এসময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ধর্ষিতা বাদি হয়ে ৬ জুলাই হাবিব, আরিফ, বাবুল ও আকাশকে আসামি করে মামলা করে। পুলিশ আকাশকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে মামলা তুলে নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত সিকদার মামলা প্রত্যাহার ও আসামি ছেড়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন। তবে এ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, আসামিদের ধরতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ রাজিব বলেন, এ ধরনের ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঘটনা সত্য হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ধর্ষিতার ভাই ফারুক আহমেদ জানান, মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা পুরো পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
(শীর্ষ নিউজ ডটকম/ প্রতিনিধি/ এআই/এসসি/ ১৮.৩০ঘ

Thursday 8 July 2010

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২



কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাল্টাপাল্টি ধাওয়াসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে সুমন ও মেরাজ নামের দুজন আহত হন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে প্রায় আধঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। ক্যাম্পাসে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সম্প্রতি গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটিতে আকাঙ্ক্ষিত পদ বা কোনো পদই না পাওয়া মাহবুব-খসরু গ্রুপের নেতা-কর্মীরা আজ সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের কলাভবনের পূর্বপাশে অবস্থিত নির্ধারিত টেন্টে অবস্থান করছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক তুহিনের সমর্থক নেতা-কর্মীরা সেখানে গেলে এ সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে একে অপরকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পাঁচ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হলেও কোনো বিভাগেই ক্লাস হতে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে অনেক দিন ধরে চলমান বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের এই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে, যা তাঁদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বৈঠক করার চিন্তা করছে। এখন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ বঙ্গবন্ধু হলের সামনে এবং অন্য গ্রুপটি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দুটি গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-08/news/77048