Tuesday 31 May 2011

ক্ষমতা তোষণে ‘স্বাধীন’ দুদক










অলিউল্লাহ নোমান

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন সরকারের ভিন্নমত হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। কাগজে-কলমে স্বাধীন হলেও ক্ষমতাসীনদের তোষণ করাই যেন দুদকের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিনাটেন্ডারে কোটি কোটি টাকার কাজ বরাদ্দ দেয়া, সরকারি দলের লোকদের টেন্ডারবাজি, শেয়ারবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া—কোনো কিছুই দুদকের নজরে নেই। এসব কিছু দুদক পর্যবেক্ষণও করছে না। দুদকের নজরে নেই সরকারি দলের সদস্যদের সন্দেহজনক সম্পদ। অপরদিকে সরকারের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারীদের সন্দেহজনক সম্পদের খোঁজে দুদক ব্যস্ত রয়েছে। দুর্নীতির ছিটেফোঁটা অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদেরও সম্পদের হিসাব চেয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বেনামি চিঠি আমলে নিয়ে, কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠির সূত্র ধরে সম্পদের হিসাব বিবরণী চাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। শুধু সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি নয়, হয়রানি করা হচ্ছে মামলা দিয়েও। ক্ষমতার তোষণ করতেই বা সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে এসব কাজ করছে ‘স্বাধীন’ দুদক।
খোদ দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দৈনিক আমার দেশকে বলেন, বিনাটেন্ডারে কোনো কাজ দেয়া হচ্ছে বা টেন্ডারে দুর্নীতি হচ্ছে এমন কোনো বিষয় দুদকের নজরে বা পর্যবেক্ষণে নেই। এ ধরনের কোনো অভিযোগও তাদের কাছে কেউ দায়ের করেনি। সরকারের কেউ কোনো দুর্নীতি করছে বলে দুদকের জানা নেই। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে দুদক বিবেচনা করে দেখবে বলে উল্লেখ করেন দুদক চেয়ারম্যান।
শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে দুদক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আমার দেশকে জানান, শেয়ারবাজারের বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। এছাড়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টও আনুষ্ঠানিকভাবে দুদকের কাছে সরকার পাঠায়নি। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শুনেছি অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্যে জানিয়েছেন দুদকের কাছে দুটি মামলা পাঠাবেন। এখনও পাঠাননি। দুদকের কাছে কোনো মামলা পাঠালে, তফসিলভুক্ত অপরাধ হলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে। তবে এখনও এ ধরনের কোনো কিছু তাদের কাছে নেই বলে উল্লেখ করেন দুদক চেয়ারম্যান। এজন্য শেয়ারবাজার থেকে টাকা ওঠানোর বিষয়ে দুদকের আপাতত কিছু করণীয় নেই। সন্দেহজনক সম্পদের ধারণা থেকে সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমতের লোকদের সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি বা মামলা দায়ের প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কিছুটা ইতস্তত করে বলেন, সন্দেহজনক সম্পদের বিষয়ে দুদক কোনো চিঠি দেয় না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। সরকারি দলের অনেকের এবং এমনকি খোদ দুদকের অনেক কর্মকর্তা, যাদের সন্দেহজনক সম্পদ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি কিছুটা থমকে যান। একপর্যায়ে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সে যে-ই হোক দেখা যাবে।
গত সোমবার রাতে দুদক চেয়ারম্যানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশ-এর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এর আগে সোমবার বিকালে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলে একান্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, স্যার অনেক ব্যস্ত। তখন অবশ্য এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই বিভিন্ন পেশার সাধারণ দর্শনার্থীকে দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে দেখা গেছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক বসেও সাক্ষাতের অনুমতি না পেয়ে রাতে প্রথমে বাসার ল্যান্ডফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখন বলা হয়, স্যার বাসায় নেই। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখন তিনি কথা বলেন।
এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৭টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের জন্য বিনাটেন্ডারে দলীয় লোকদের বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব কুইক রেন্টাল বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে উচ্চমূল্যে বিদ্যুত্ কেনার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি কুইক রেন্টালও বিদ্যুত্ সরবরাহ করতে পারেনি। বিনাটেন্ডার ও সরকারের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবে উচ্চমূল্যে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুত্ কেনার চুক্তির কারণে বছরে রাষ্ট্রের ৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে।
বিনাটেন্ডারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র ছাড়াও সরকারের অন্যান্য কাজের টেন্ডারেও রয়েছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি। দলীয় লোকদের বিনাটেন্ডারে কাজ দিতে সরকার ক্রয়নীতিরও সংশোধন করেছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সংবাদ ছাপা হচ্ছে। অথচ দুদক চেয়ারম্যান বলছেন বিনাটেন্ডার বা টেন্ডারে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তাদের নজরে কিছু নেই। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল টেন্ডার নিয়ে শৈলকূপায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। গত মার্চ মাসে বরিশাল সিটি করপোরেশনে টেন্ডারের আগেই ১১২ কোটি টাকার কাজ বরাদ্দ দেয়া হয় ঠিকাদারকে। ২০১০ সালের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার নির্মাণকাজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিনাটেন্ডারে। গত বছরের ৮ এপ্রিল টেন্ডার দখল নিয়ে পঞ্চগড়ে যুবলীগের হাতে ছাত্রলীগকর্মী খুন হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শৈলকূপায় দরপত্র আহ্বানের আগেই রাস্তা পাকা করার কাজ শুরু হয়। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির খবর সরকার সমর্থক বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকেও ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে।
দেশে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত টাকা পাচারের ঘটনা হচ্ছে শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে পাচার করেছে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহল। ইতোমধ্যে সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও সরকারি দলের অনেকের নাম উঠে এসেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, তারা বিরোধী দলের সদস্য বা সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যস্ত রয়েছেন। সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখার সময় এখন তাদের নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন সরকার তোষণে ব্যস্ত আছি। কী করলে সরকার খুশি হবে, সেদিকেই কর্তাদের নজর। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি দলের নেতাদের দুর্নীতির মামলা হাইকোর্ট বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে দুদক আপিল করে না। বিরোধী দলের কারও মামলা হাইকোর্ট বিভাগে খারিজ হলে সঙ্গে সঙ্গে আপিল করা হয়। এমনকি কারও জামিন হলে সেটা বাতিল করার জন্যও আপিল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়ে দুর্নীতি মামলা, ফ্রিগেট ক্রয়ে দুর্নীতি মামলা, নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতি মামলাসহ ৯টি মামলা হাইকোর্ট বাতিল করার পর দুদক কোনোটির বিরুদ্ধে আপিল করেনি। একইভাবে সরকারি দলের নেতা গডফাদার হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, হাজী সেলিমসহ অনেকের দুর্নীতি মামলা সম্প্রতি হাইকোর্ট বিভাগ থেকে খারিজ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও দুদক কোনো আপিল করেনি। অপরদিকে বিরোধীদলীয় নেতার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানসহ বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সেনানিয়ন্ত্রিত জরুরি সরকারের দায়ের করা মামলা নিম্ন আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগও রয়েছে দুদকের।
ক্ষমতা তোষণে ব্যস্ত থাকার পরও সরকার আইন সংশোধন করে দুদকের হাত-পা বেঁধে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদন ছাড়া দুদক সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারের কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না—এই আইন পাসের অপেক্ষায় রয়েছে জাতীয় সংসদে। দুদকের বিদ্যমান আইনে সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে এই প্রস্তাব করেছে সরকার

বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে বারের গায়েবানা সংবর্ধনা : বিচার বিভাগকে যেন আল্লাহ রক্ষা করেন








স্টাফ রিপোর্টার
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই অংশ বলে উল্লেখ করেছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অনুপস্থিতিতে আইনজীবী সমিতির দেয়া এক গায়েবানা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন তাকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর গত ৭ মাসে আপনি আওয়ামী লীগেরই প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন। সেই সঙ্গে সংবিধানকে লণ্ডভণ্ড করে দেশকে গভীর সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়ে এখন বিদায় নিচ্ছেন। আমরা দোয়া করি, মহান আল্লাহ যেন আপনার করে যাওয়া সর্বনাশা কাজ থেকে বিচার বিভাগকে হেফাজত করেন। প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে ঠাণ্ডামাথার চালাক ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বার সভাপতি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি অতিমাত্রার একজন ভদ্র ও বিনয়ী ব্যক্তি। একই সঙ্গে তিনি চালাক-চতুরও। অত্যন্ত ঠাণ্ডামাথায় তিনি মানুষ খুনের মতো বিচার বিভাগকে খুন করে ফেলেছেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের একটি প্রতিষ্ঠানও দলীয়করণের বাইরে নেই। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগকেও আওয়ামী লীগের অংশে পরিণত করা হয়েছে। বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক পুরোটা সময় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হাইকোর্টের কোনো একটি ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের বিপক্ষে রায় দেয়ার পরপরই তিনি ওই বেঞ্চের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে দলীয়করণের ন্যক্কারজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তই আপিল বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ সুযোগে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার দেশ চালায়। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে গতকাল দুপুরে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সৌজন্যে এই গায়েবানা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গায়েবানা সংবর্ধনা : বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে ৭ মাস দায়িত্ব পালন শেষে গতকাল তিনি শেষ অফিস করেন। আজ তিনি অবসরে যাচ্ছেন। সুপ্রিমকোর্টের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বারের পক্ষ থেকে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় বিকল্প হিসেবে গায়েবানা সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। গায়েবানা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পর্কে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয়ার সব আয়োজন শেষ করা হয়েছে। হঠাত্ রোববার প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে আমাদের টেলিফোনে জানানো হয়েছে, অনিবার্য কারণে প্রধান বিচারপতি আইনজীবী সমিতির দেয়া সংবর্ধনা গ্রহণ করবেন না। তিনি সংবর্ধনা গ্রহণ করতে অপারগতা জানিয়েছেন। এ কারণেই আমরা তার গায়েবানা সংবর্ধনার আয়োজন করেছি। গায়েবানা সংবর্ধনার আয়োজন সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুসলমানদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মৃত্যুর পর কারও লাশ পাওয়া না গেলে তার গায়েবানা জানাজা পড়া হয়। আমরা যেহেতু সংবর্ধনা দেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির সামনে উপস্থিত হতে পারিনি, তাই তার অনুপস্থিতিতেই গায়েবানা সংবর্ধনার আয়োজন করলাম। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তারা ছাড়াও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদসহ কয়েকশ’ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনায় দেয়া বক্তব্য : প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে বিদায়ী সংবর্ধনা জানিয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দেয়া লিখিত বাণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনি দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর সুপ্রিমকোর্টের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন। আইনজীবী সমিতি আপনার মধ্যে বিনয় ও সৌজন্যতাবোধ দেখে এসেছে। হাইকোর্টের প্রতিটি বেঞ্চে আপনি ল’ রিপোর্ট ও দুটি করে কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়েছেন। কিন্তু আইনজীবী সমিতি হলরুমের এসিগুলোতে বিদ্যুত্ সংযোগ ও এটিএম বুথ স্থাপনে আপনার দফতর থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি স্বাক্ষরিত ওই বাণীতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। অতীতের সব ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন করে আপনার সময়েই আমরা আদালতে রায়ট পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমাগম ঘটতে দেখেছি। অতীতে যা কখনোই দেখা যায়নি। বাদপড়া বিতর্কিত দু’জন বিচারপতিকে আপনার আগের প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিমও শপথ দেননি। অথচ আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তাদের শপথ দিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।
মুন সিনেমা হল সংক্রান্ত মামলার রায় সম্পর্কে গায়েবানা সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে লিখিত বাণীতে বলা হয়েছে, মুন সিনেমা হলের মামলায় আপনি সংবিধানের গোটা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে বিতর্কিত রায় দিয়েছেন। আপনি মূল সংবিধানের বিলুপ্ত কিছু অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছেন। আবার কিছু বিষয়ে সংসদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যার সমাধান এখনও হয়নি। আপনার রায়ে সংবিধান লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অথচ যে ব্যক্তি সিনেমা হলের মালিকানা দাবি করে মামলা করলেন, তিনি এখনও কিছুই পেলেন না। আপনার এ বিতর্কিত রায়ের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আপনার এ রায় দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। আপনার রায়ের ওপর ভিত্তি করেই ক্ষমতাসীন সরকার মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ আবার বহাল করতে যাচ্ছে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে হুমকির মধ্যে পড়বে।
নয় পৃষ্ঠার এ সংবর্ধনা বাণীতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিলের রায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে আপনি সংক্ষিপ্ত আদেশ দিয়েছেন। এর পূর্ণাঙ্গ আদেশের অপেক্ষায় আমরা থাকলাম। কিন্তু আপনার সংক্ষিপ্ত আদেশেই স্ববিরোধিতা ও সংশয় রয়েছে। আপনি একদিকে বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত ওই সংশোধনী বাতিল। একই সঙ্গে আবার বলেছেন পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন এই সরকারের অধীনে হতে পারে। যদি এটাই হয়, তাহলে আপনিই হবেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এ কারণেই আমরা আপনাকে আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে রাখছি। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার রায় সম্পর্কে বারের এ গায়েবানা সংবর্ধনায় বলা হয়েছে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনা নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূসের মামলার বিষয়ে হাইকোর্ট ন্যায়বিচার করেননি। সামান্যতম ন্যায়বিচারের দরজা খোলা থাকলেও হাইকোর্টের উচিত ছিল ওই মামলায় রুল জারি করা। কিন্তু হাইকোর্ট মামলার বাদীকে ওই ধরনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। ড. ইউনূসের আইনজীবীরা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। ড. কামাল হোসেন এ বিষয়টি জংলি শাসনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেও তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ড. ইউনূসের মামলায় আমাদের বিচার বিভাগের দ্বৈন্যদশার চিত্র ফুটে উঠেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি সংক্রান্ত মামলার রায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। আপিল বিভাগ এ আপিল গ্রহণও করেছেন। কিন্তু এ আপিল নিষ্পত্তির আগেই খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে সরকার। উচ্ছেদের দিন আমরা সিনিয়র আইনজীবীরা ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করেছি। আপনি আমাদের আশ্বস্ত করলেন, মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে বাদীকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু আপনার এ আশ্বাসের পরও তাকে তার চল্লিশ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলো কীভাবে? আজ এটাই আমাদের প্রশ্ন। মামলা নিষ্পত্তির আগে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের বিচারের ইতিহাসে একটিই ঘটেছে। আর সেটা ঘটল আপনার সময়েই। হাইকোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, হাইকোর্টকে সরকারের পক্ষে রায় দিতে বাধ্য করা হয়েছে আপনার সময়ে। যে দু’একটি ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের বিপক্ষে সত্যের পক্ষে রায় দিয়েছেন, তাত্ক্ষণিকভাবে আপনি তাদের বিচারিক এখতিয়ার কেড়ে নিয়েছেন। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা বিচার-ইতিহাসে আর হয়নি। আপনি সিনিয়র ও দক্ষ বিচারপতিদের বসিয়ে রেখে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এবং স্থায়ীভাবে নিয়োগ পাননি—এমন বিচারপতিদের দিয়ে আপনি ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। আপনি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টির কথা বলছেন। অথচ আপনি পুরনো মামলাগুলো রেখে দিয়ে ২০০৯ ও ২০১০ সালে বর্তমান সরকারের সময়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছেন। অথচ ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো আপনি নিষ্পত্তির তালিকায় আনেননি। এতেই আপনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতি অবশ্য শেষদিকে এসে তার হাত-পা বাঁধার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি শেষ মুহূর্তে এসে বলেছেন, তাদের হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে দেয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগকে দলীয়করণের নজির উপস্থাপন করে বার সভাপতি আরও বলেন, ৫০ জন বিচারপতিকে ডিঙিয়ে হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি নিয়ে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা নজিরবিহীন। এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার সময়েই আপিল বিভাগকে আওয়ামী লীগ সরকারের অংশে পরিণত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান লণ্ডভণ্ড করলে বিচারপতি খায়রুল হক কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হত্যাকারী সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তার মতলবটা এখানেই পরিষ্কার।
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বার সভাপতি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক নিজের নাম জাহির করতে সাধারণ মানুষের মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য লিস্টে না দিয়ে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইস্যুতে দায়ের করা মামলাগুলো নিষ্পত্তি করেছেন। প্রতিদিনই সংবাদপত্রে তার নাম বড় করে ছাপা হয়েছে। আপনি এটা করবেন না। বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলে শেষ পর্যন্ত তারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন। এটা দেশের জন্য কোনো অবস্থায়ই কল্যাণকর হবে না। দেশকে অনিশ্চিত অবস্থার দিকে ঠেলে দেবেন না

দেশে জংলি শাসন চলছে : ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার

‘দেশে বর্তমানে জংলি শাসন চলছে। সম্পূর্ণ জংলি কায়দায় বিচার বিভাগকে চালানো হচ্ছে। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, এরশাদের সেনা শাসনেও আদালতে আবেদন-নিবেদন করার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমানে তাও পাচ্ছি না’। প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দেশের বিচার ব্যবস্থায় বর্তমানে সোনালী যুগ চলছে। বর্তমান আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা মামলা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী মামলা, খালেদা জিয়ার বাড়ি মামলাসহ পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কাজেই ড. কামাল হোসেন যে মন্তব্য করেছেন তা আদৌ সঠিক নয়। ড. কামাল হোসেন একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি। হতাশা থেকেই তিনি এসব মন্তব্য করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ড. ইউনূসের আবেদনের শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদনের ওপর শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমার দীর্ঘ ওকালতি জীবনে উচ্চ আদালতের এ চরম দুরবস্থা আর দেখিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সেনাশাসিত সরকারের সময়ও আমরা আদালতে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আমরা কথা বলতে চাইলে আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। ব্রিটিশ কলোনিয়াল শাসনের সময় বিচার বিভাগের অবস্থা সম্পর্কে পড়েছি। পাকিস্তান আমলে জেনারেল আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার সময়েও আমরা আদালতে কথা বলেছি। বাংলাদেশে স্বৈরাচারের শাসনামলেও আইনজীবীরা আদালতে সুবিচারের প্রার্থনা নিয়ে এসেছেন। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। কিন্তু বর্তমানে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে উচ্চ আদালতের অবস্থা বহুগুণ খারাপ। ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আদালত যে সময়ে বহু দিকনির্দেশনামূলক রায় দিচ্ছেন, ঠিক তখনই ড. কামাল হোসেন আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটা বড়ই দুঃখজনক।
শুনানি অব্যাহত : ড. ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজাদেশ প্রত্যাহার করে আরও শুনানির প্রার্থনা জানিয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সভাপতিত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ৯ সদস্যের পক্ষে করা লিভ টু আপিলেরও শুনানি চলছে। গতকাল ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। শুনানিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ড. ইউনূসকে অপসারণের কোনো ক্ষমতা রাখে না। গ্রামীণ ব্যাংক আর সরকারের অন্যান্য ব্যাংক এক নয়। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত হয় এর নিজস্ব আইন দ্বারা। ওই আইনের ক্ষমতাবলে ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ ড. ইউনূসকে এমডি পদে নিয়োগ দিয়েছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। গ্রামীণ ব্যাংকের নয়জন পরিচালকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। এ সময় ড. ইউনূসের অপর আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সরকারপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তৌফিক নেওয়াজ। ড. কামাল হোসেনের আগের দিনের বক্তব্যের সূত্র ধরে ব্যারিস্টর রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক তাদের পরিচালনা পরিষদের সভায় এমডির ক্ষেত্রে নিয়োগের সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। যতদিন পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত না নেবে, ততদিন পর্যন্ত তিনি এ পদে থাকতে পারবেন। তাছাড়া তার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক অবহিত ছিল। প্রতি বছরই তারা গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম নিরীক্ষা করেছে। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন তা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের সুযোগ একবার দেয়া হলে বিচার ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তিনি বলেন, পদবির ভিন্নতা থাকলেও আইন সবার জন্য সমান। এমডির জন্য পৃথক আইন হতে পারে না।