Tuesday 31 May 2011

দেশে জংলি শাসন চলছে : ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার

‘দেশে বর্তমানে জংলি শাসন চলছে। সম্পূর্ণ জংলি কায়দায় বিচার বিভাগকে চালানো হচ্ছে। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, এরশাদের সেনা শাসনেও আদালতে আবেদন-নিবেদন করার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমানে তাও পাচ্ছি না’। প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দেশের বিচার ব্যবস্থায় বর্তমানে সোনালী যুগ চলছে। বর্তমান আদালত বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা মামলা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী মামলা, খালেদা জিয়ার বাড়ি মামলাসহ পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কাজেই ড. কামাল হোসেন যে মন্তব্য করেছেন তা আদৌ সঠিক নয়। ড. কামাল হোসেন একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি। হতাশা থেকেই তিনি এসব মন্তব্য করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ড. ইউনূসের আবেদনের শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদনের ওপর শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমার দীর্ঘ ওকালতি জীবনে উচ্চ আদালতের এ চরম দুরবস্থা আর দেখিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সেনাশাসিত সরকারের সময়ও আমরা আদালতে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আমরা কথা বলতে চাইলে আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। ব্রিটিশ কলোনিয়াল শাসনের সময় বিচার বিভাগের অবস্থা সম্পর্কে পড়েছি। পাকিস্তান আমলে জেনারেল আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার সময়েও আমরা আদালতে কথা বলেছি। বাংলাদেশে স্বৈরাচারের শাসনামলেও আইনজীবীরা আদালতে সুবিচারের প্রার্থনা নিয়ে এসেছেন। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। কিন্তু বর্তমানে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে উচ্চ আদালতের অবস্থা বহুগুণ খারাপ। ড. কামাল হোসেনের এ বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আদালত যে সময়ে বহু দিকনির্দেশনামূলক রায় দিচ্ছেন, ঠিক তখনই ড. কামাল হোসেন আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটা বড়ই দুঃখজনক।
শুনানি অব্যাহত : ড. ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজাদেশ প্রত্যাহার করে আরও শুনানির প্রার্থনা জানিয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সভাপতিত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ৯ সদস্যের পক্ষে করা লিভ টু আপিলেরও শুনানি চলছে। গতকাল ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। শুনানিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ড. ইউনূসকে অপসারণের কোনো ক্ষমতা রাখে না। গ্রামীণ ব্যাংক আর সরকারের অন্যান্য ব্যাংক এক নয়। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত হয় এর নিজস্ব আইন দ্বারা। ওই আইনের ক্ষমতাবলে ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ ড. ইউনূসকে এমডি পদে নিয়োগ দিয়েছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। গ্রামীণ ব্যাংকের নয়জন পরিচালকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। এ সময় ড. ইউনূসের অপর আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সরকারপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তৌফিক নেওয়াজ। ড. কামাল হোসেনের আগের দিনের বক্তব্যের সূত্র ধরে ব্যারিস্টর রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক তাদের পরিচালনা পরিষদের সভায় এমডির ক্ষেত্রে নিয়োগের সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। যতদিন পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত না নেবে, ততদিন পর্যন্ত তিনি এ পদে থাকতে পারবেন। তাছাড়া তার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক অবহিত ছিল। প্রতি বছরই তারা গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম নিরীক্ষা করেছে। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন তা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরনের সুযোগ একবার দেয়া হলে বিচার ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তিনি বলেন, পদবির ভিন্নতা থাকলেও আইন সবার জন্য সমান। এমডির জন্য পৃথক আইন হতে পারে না।

No comments:

Post a Comment