Wednesday 31 March 2010

চট্টগ্রামে গৃহপরিচারিকাকে হত্যার পর লাশ দাহগৃহকর্ত্রী, দারোয়ানসহ আটক ৩



Kalerkantho নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ চৈত্র ১৪১৬, ১৫ রবিউস সানি ১৪৩১, ১ এপ্রিল ২০১০

চট্টগ্রামচট্টগ্রামের হাটহাজারীতে রুমা নাথ (১৬) নামে এক গৃহপরিচারিকাকে হত্যার পর গোপনে লাশ দাহ (পুড়িয়ে ফেলা) করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাটহাজারীর চৌধুরীহাট এলাকায় হত্যার পর নগরীর বলুয়ার দীঘিরপাড় অভয় মিত্র মহাশ্মশানে তাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
পুলিশ এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী শিপ্রা আচার্য, স্থানীয় একটি ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সচালক মোহাম্মদ হানিফ ও দারোয়ান শ্রীপদকে আটক করেছে। চৌধুরীহাট কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার বিষ্ণু চরণ আচার্যের বাসায় দেড় বছর ধরে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিল রুমা নাথ।
হাটহাজারী সার্কেল এএসপি বাবুল আক্তার জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ এই তিনজনকে আটকের পর ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছে। এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে গৃহকর্ত্রী শিপ্রা আচার্য এলোমেলো কথা বলছেন। এতে পুলিশের সন্দেহ আরো বাড়ছে।
তবে গৃহকর্ত্রী শিপ্রা আচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বেশ কয়েকবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর তাকে বকা দেওয়া হয়েছিল। আর এ কারণে সে রাতে বাথরুমে ঢুকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্দহত্যা করেছে।' রুমার পরিবার পুলিশকে না জানিয়ে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রুমার ফুফা গোপাল নাথ আমার সঙ্গে ৬০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন লাশ দাহ করার জন্য। তিনি আমাদের বলেছিলেন, পুলিশকে জানালে ঝামেলা হবে, অনেক টাকা দিতে হবে। তার চেয়ে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যাবে।'
রুমা নাথের বাবা রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইহাট মারিশ্যা এলাকার বাসিন্দা সুখেন্দু নাথ গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশ কয়েকবার মেয়েকে নিতে এলেও তারা দেয়নি। এখন হত্যা করে লাশ দাহ করে ফেলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
হাটহাজারী থানা পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে কয়েকজন লোক রুমা নাথকে স্থানীয় চিকিৎসক ডা. সিরাজুল ইসলামের কাছে নিয়ে আসে। এ সময় ডা. সিরাজুল হক তাকে মৃত বলে জানান। পরে ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে নেওয়ার কথা বলে মোহাম্মদ হানিফের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়। কিন্তু মেডিক্যালে নেওয়ার পরিবর্তে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে অভয় মিত্র মহাশ্মশানে এনে দাহ করা হয়।

বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সহস্রাধিক ছোট পোশাক কারখানা : ২০ গুণ বেশি খরচে পণ্য যাচ্ছে আকাশ পথে

সৈয়দ মিজানুর রহমান
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ৮টা। গতকাল রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, ফ্লোরে শ্রমিকরা বসে অলস আড্ডা দিচ্ছেন। মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন মালিকও। মেশিন আছে, শ্রমিকও আছে—নেই বিদ্যুত্। তাই উত্পাদন বন্ধ। অপেক্ষা আবার কখন বিদ্যুত্ আসবে, তো চলবে মেশিন। ‘কানন ফ্যাশন’ নামের এ পোশাক কারখানার মালিক আল আমিন জানালেন, ‘রোজই এভাবে বিদ্যুতের জন্য কাজ বন্ধ রেখে বসে থাকেন শ্রমিকরা। কারখানায় জেনারেটর নেই। ফলে বিকল্প ব্যবস্থাও নেই উত্পাদন ঠিক রাখার। উত্পাদন কমে গেলেও শ্রমিকদের বেতন, ভাড়া করা ভবনের মাসিক ভাড়া ও অন্যান্য রুটিন খরচ ঠিকই হচ্ছে। গত দুই মাস সময়মতো প্রডাকশন করতে না পারায় বড় দুটি কারখানার সাব-কন্ট্রাক্টের অর্ডারও বাতিল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বড়জোড় আর ৩ মাস কারখানা ধরে রাখা যাবে।’ গতকাল সারাদিনের বিদ্যুতের হিসাব দিয়ে কানন ফ্যাশনের মালিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় টেলিফোনে আরও জানান, গতকাল সকাল ৭টায় বিদ্যুত্ চলে যায়, আসে বেলা ১১টায়। আবার দুপুর ১টায় বিদ্যুত্ চলে যায়, আসে পৌনে ৩টায়। বিকাল ৪টায় আরেক দফা লোডশেডিং শুরু হয়, চলে টানা ৬টা পর্যন্ত।
জানা গেছে, রায়েরবাজার এলাকায় গত ২-৩ মাস আগেও কর্মদিবসের (সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা) ৩-৪ ঘণ্টা শ্রমিকরা বসে থাকতেন বিদ্যুতের অপেক্ষায়। আর এখন বসে থাকতে হচ্ছে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা। একটি কর্মদিবসে উত্পাদন চালু রাখা যাচ্ছে ২-৩ ঘণ্টা। এতে উত্পাদন কমেছে প্রায় ৭০ ভাগ।
শুধু কানন ফ্যাশনই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোর অবস্থা এখন খুবই শোচনীয়। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলো টিকে থাকার মরণপণ লড়াই করে যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, বছরে সাড়ে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে যেসব কারখানা রফতানি আয় করে, তাদের ছোট কারখানা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর এরকম ওভেন গার্মেন্ট কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ২৫৯টি।
অন্যদিকে নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) হিসাব মতে, ছোট নিট কারখানা আছে ৩১৭টি।
এসব ছোট পোশাক কারখানার ৮০ ভাগই জেনারেটর নেই। বাকি ২০ ভাগ কারখানার জেনারেটর আছে ব্যাকআপ হিসেবে (২-৩ ঘণ্টার বেশি চলে না)।
বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল আমার দেশকে বলেন, ‘বিদ্যুতের অভাবে ছোট ছোট পোশাক কারখানাগুলো মরে যাচ্ছে। কারণ বিদ্যুত্ না থাকলে এসব কারখানার উত্পাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকে। আর এসব ছোট কারখানার সাপোর্ট নিয়ে বেঁচে আছে বড় বড় কারখানাগুলো।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত ছোট কারখানাগুলো সাব-কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে বড় বড় কারখানার প্রায় অর্ধেক কাজ করে থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গত ২-৩ মাস ধরে বড় কারখানাগুলোও তাদের পণ্য ডেভিভারির ডেটলাইন ঠিক রাখতে পারছে না। এতে নিরুপায় হয়ে সমুদ্রপথে মাল না পাঠিয়ে, ক্রেতা ধরে রাখতে পাঠানো হচ্ছে আকাশপথে।
বিজিএমইএ’র হিসাব মতে, ভাড়া করা বিমানে প্রতিকেজি পণ্য পাঠাতে ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৪ মার্কিন ডলার, যা সমুদ্রপথে জাহাজে পাঠালে খরচ হয় মাত্র ২০ থেকে ২২ সেন্ট। আর এভাবে প্রায় ২০ গুণ বেশি খরচ করে রফতানি করতে গিয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে ক্রেতাদের আস্থাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ছোট কারখানাগুলোর সহায়তায় বিদেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের রফতানি বাজার ধরে রাখছে ক্লাসিক গ্রুপ। এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র পরিচালক শহিদুল্লাহ আজিম গতকাল আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা গত ২ মাস আগেও ৫টি ছোট কারখানায় সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করিয়ে পোশাক রফতানি করতাম। এখন ৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরা লোকসান দিয়ে কারখানা চালাতে পারছে না। এ কারণে বিদেশ থেকে যে পরিমাণ রফতানি অর্ডার নেয়া হয়েছিল, তার অর্ধেকও ঠিক সময়ে রফতানি করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হলে ক্রেতারা আস্থা হারিয়ে অন্যত্র চলে যাবেন।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, গত নভেম্বরে তারা ১ হাজার ৪৮৪ টন রফতানি পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছে। ডিসেম্বরে বিমানে পণ্য পরিবহন হয়েছে ৮৬৫ টন। গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৯০ টন এবং ফেব্রুয়ারিতে এ পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০১ টন। আবার ভাড়া করা কার্গো বিমানে গত নভেম্বরে রফতানির জন্য পণ্য পরিবহন করা হয়েছে ৭ হাজার ২০৭ টন, ডিসেম্বরে ৪ হাজার ৯৯৩ টন, জানুয়ারিতে ৭ হাজার ৮ টন এবং ফেব্রুয়ারিতে আকাশপথে রফতানির জন্য পণ্য পরিবহন হয়েছে ৭ হাজার ৩২১ টন। বিমানে পাঠানো পণ্যের ৯৮ ভাগই তৈরি ও নিট পোশাক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পোশাক খাতের এ জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, সাড়ে ৪ হাজার পোশাক কারখানার অর্ধেকই এখন বিপদে। এদের মধ্যে ছোট ছোট কারখানাগুলো ধার-দেনা করে কোনোরকম টিকে আছে। বড় বড় কারখানা থেকে শুরু হয়েছে শ্রমিক ছাঁটাই। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, অবিলম্বে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা দেয়ার। এছাড়া বড় বড় কারখানার জন্য বিনাশুল্কে ডিজেল আমদানির সুযোগ বা সরকারের তরফ থেকে শুল্কমুক্ত ডিজেল সরবরাহেরও দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/01/25332

Sunday 28 March 2010

পানির জন্য হাহাকার


বিদ্যুতের অভাবে ঢাকা ওয়াসার পাম্পগুলো ঠিকমতো পানি তুলতে পারছে না। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। পানির জন্য গতকাল দুপুরে মুগদাপাড়ায় ওয়াসার পাম্পের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি
ছবি: সাহাদাত পারভেজ


অরূপ দত্ত | তারিখ: ২৯-০৩-২০১০ Prothomalo

বিদ্যুতের অভাবে ঢাকা ওয়াসার পাম্পগুলো দিনে গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা চালু থাকছে। এই মৌসুমে ৫৩৯টি পাম্প প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা করে চালু রাখার কথা। ফলে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে বেশি। গরম পড়তে না-পড়তেই রাজধানীতে পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। এত দিন অনেক এলাকায় দুর্গন্ধময় পানি এলেও এখন সেটাও নেই। সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা।
ওয়াসার কাছে গাড়ির পানি চেয়ে যে পরিমাণ আবেদন জমা পড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় তার এক-তৃতীয়াংশও পৌঁছানো যাচ্ছে না। পানির চাহিদার কথা জানানোর জন্য অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতের তুলনায় অনেক বেশি পানির কষ্ট দেখা দেওয়ায় নগরবাসী ঢাকা ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে ভিড় করছে এবং প্রতিদিন প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ছে। বর্তমানে পানির চাহিদা প্রায় ২৫০ কোটি লিটার। ওয়াসা কাগজে-কলমে দাবি করছে, ১৯৫ কোটি লিটার পর্যন্ত উৎপাদিত হচ্ছে। তবে দায়িত্বশীল সূত্রমতে, ১৭০ কোটি লিটারের বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
পানির সমস্যা সম্পর্কে জানতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব গতকাল রোববার ওয়াসার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। আগামী বুধবার ঢাকার সাংসদ ও কাউন্সিলরদের নিয়ে ওয়াসা বৈঠক করবে বলেও জানা গেছে। এদিকে পানির সংকট মোকাবিলায় আগামী ১ এপ্রিল থেকে ওয়াসার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, আঞ্চলিক কার্যালয়, বিভিন্ন পাম্পহাউসে সেনা মোতায়েন করা হবে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান পানি সমস্যার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সাহায্য করতে সম্মত হয়েছে।
দুই হাজার ঘণ্টা পাম্প বন্ধ: চলতি মৌসুমে ওয়াসার ৮০টি পাম্পে দুটি বিদ্যুৎ লাইন বা ফিডার থেকে সংযোগ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী বিদ্যুৎ না থাকায় গত কয়েক দিনে ওয়াসার গভীর নলকূপের সব পাম্প গড়ে দুই হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ ছিল। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রধানত বিদ্যুতের কারণে পানির উত্তোলন অনেক কমে গেছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ বিদ্যুতের কারণে দিনে সবগুলো পাম্প মিলে গড়ে ৪৯৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। গত বছর বন্ধ ছিল এক হাজার ৪৬৩ ঘণ্টা। আর গত ২৩ মার্চ বন্ধ ছিল দুই হাজার ২০৪ ঘণ্টা।
জানা যায়, ওয়াসার ৫৩৯টি পাম্পের মধ্যে ২৩৪টিতে জেনারেটর রয়েছে এবং ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর আছে ৬০টি। এগুলোর উত্তোলন ক্ষমতা স্বাভাবিক বিদ্যুতের ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম। ওয়াসার সূত্রমতে, গভীর নলকূপের একটি পাম্প চালাতে ৪২০ ভোল্ট বিদ্যুতের দরকার হলেও অনেক স্থানেই বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৩৮০ ভোল্টের নিচে। কিছু পাম্পের অপারেটর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দিনে দুই ঘণ্টার বেশি জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে পানির সমস্যার অন্য কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রতিবছরই এই মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় লাইনে চাপ কম থাকে। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ নিয়ে অনেক গ্রাহক পানির অপচয় করছে বলে বৈধ গ্রাহকেরা পানি পাচ্ছেন না।
পানির গাড়ির আবেদন: ওয়াসার পানির গাড়ি রয়েছে ৩১টি। গতকাল পানির গাড়ির জন্য আবেদন আসে ৬২৭টি। উত্তরা অঞ্চলের ১৫১টি চাহিদার মধ্যে ১৯, গুলশানে ৯৯টির বিপরীতে ৩৩, ধানমন্ডি-লালমাটিয়ায় ৮৪টির ক্ষেত্রে ৩৭টি গাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়।
অসন্তোষ: রাজধানীর অপেক্ষাকৃত সাধারণ এলাকা তো বটেই, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায়ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওয়াসার ভ্রাম্যমাণ জেনারেটরগুলো প্রধানত এসব এলাকায় ঘুরে বেরিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারছে না। ধানমন্ডি ৩ নম্বর সড়কের বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, ঢাকা যে ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, তা পানি সরবরাহের অবস্থা দেখে বোঝা যায়। তাঁদের বাড়িতে টানা পাঁচ দিন এক ফোঁটা পানিও সরবরাহ নেই বলে জানান তিনি।
উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে পানির অভাবে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। মাসকাট প্লাজার পেছনে বহুতল বিপণিবিতান নর্থ প্লাজায় গত শনিবার পানির দাবিতে দোকানপাট বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ওয়াসা গাড়িভর্তি পানি সরবরাহ করায় দোকানপাট বন্ধ হয়নি। এ বিষয়ে ওয়াসার একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা দাবি করেন, বিরোধীদলীয় সাবেক এক সাংসদ ওই ভবনের মালিক। এত বড় ভবনে নিজস্ব গভীর নলকূপ বসাতে হয়। কিন্তু ওয়াসার কাছে এ ব্যাপারে কোনো আবেদন জানানো হয়নি।
এদিকে নাখালপাড়া এলাকাবাসীও গত শুক্রবার দুপুরে পানির দাবিতে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে পানির কষ্ট। পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসিন্দারা কলসি মিছিল করার জন্য তৈরি হয়েছেন, এ খবর পেয়ে ওয়াসা দ্রুত পানিবাহী গাড়ি নিয়ে হাজির হয়। গতকাল বিকেলে মিছিল করার কথা ছিল বলে পশ্চিম নাখালপাড়ার বড় মসজিদের গলির কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোর কার্যালয়ে ফোন করে জানান। কিন্তু সেখানে পুলিশ মোতায়েন করায় মিছিল হয়নি। বাসিন্দারা বলেন, পুলিশ কত দিন এভাবে আটকে রাখবে?
রাজধানীর আরও অনেক এলাকায় বর্তমানে পানির প্রকট সমস্যার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১, ২, ১০ নম্বরসহ বৃহত্তর মিরপুর এলাকা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, জনতা হাউজিং, শাহ আলীবাগ, মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট, পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার আহম্মেদ নগর, বাসাবো, কদমতলা, খিলগাঁও, রামপুরা, হাজীপাড়া, মানিকনগর, মুগদা, পুরান ঢাকার গোপীবাগ, ওয়ারী, নারিন্দা, তাঁতীবাজার, রাজার দেউড়ি, গোয়ালনগর, পানি টোলাসহ প্রায় সব এলাকা, মধ্য ঢাকার বাংলামোটরসংলগ্ন ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, ইন্দিরা রোড, পশ্চিম রাজাবাজার, ধানক্ষেত মোড়সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোড প্রভৃতি এলাকা। ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কের ব্যবসায়ী নাসরাত আলী জানান, ১০ দিন ধরে পানির কষ্ট। পানির অভাবে বাড়িতে সব ধরনের কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-29/news/52397

দিনাজপুরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা



দিনাজপুর ও নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে গত শনিবার রাতে সন্ত্রাসীরা বিনোদনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম (৪২) ও তার সঙ্গী ওবায়দুর রহমান জুয়েলকে (৩৬) হত্যা করেছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেলে করে গ্রামের বাড়ি রামভদ্রপুর যাওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে কপাল দাঁড়ার কাছে সন্ত্রাসীরা তাদের পথরোধ করে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপালে চেয়ারম্যানের সঙ্গী ওবায়দুর রহমান মারা যান এবং চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাতেই দিনাজপুর হাসপাতালে নেয়ার সময় পথে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।
পুলিশ লাশ দুটি হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে পুলিশ আটক করেছে। এরা হচ্ছে—রামভদ্রপুর গ্রামের হাকিম মণ্ডলের ছেলে রতিবর (৪৫), বদির ছেলে জায়েদ আলী (৬০), জায়েদ আলীর স্ত্রী রিমা বেগম (৪৫), মেয়ে জোবাইয়া (২০), জমশেদ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মিরাজ উদ্দিনের ছেলে রমজান আলী (৬৫)।
হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, আটককৃতদের সঙ্গে নিহত ইউপি চেয়ারম্যানের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন নবাবগঞ্জ উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম, বিরামপুর উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ডা. আবদুল আহাদ ও সেক্রেটারি সোহরাব হোসেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24901

হাতে বই নেই পরীক্ষার বাকি ১৯ দিন

খুলনা অফিস
শিক্ষাবর্ষের তিন মাস শেষ হতে চললেও বোর্ডের বিনামূল্যের সব বই খুলনার শিক্ষার্থীরা এখনও হাতে পায়নি। ফলে শিক্ষকরা ক্লাসের রুটিন বা সিলেবাস তৈরি করতে পারেননি। অনেক স্কুল বইয়ের অভাবে এবার মাসিক পরীক্ষা নিতে পারছে না। আর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ক্লাসে যাওয়া-আসার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ঠিক এ অবস্থার মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথম সাময়িক পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে। এতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। যেসব শিক্ষার্থী বই পায়নি, তাদের অভিভাবকদের বাইরে থেকে পুরনো বই সংগ্রহ অথবা বই ফটোকপি করে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অভিভাবকরা বাড়তি টাকা গুনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ২২ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের সূত্র মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ২০১০ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি অনুমোদন করে। জানুয়ারি মাসে এ নির্দেশনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়। সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১৭ থেকে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে স্কুলগুলোতে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু করতে হবে। এর মধ্যেই ক্লাসের সিলেবাস শেষ করতে হবে। এ অবস্থায় শিক্ষকরা সব বিষয়ের বই হাতে না পেয়ে ক্লাসের সিলেবাস তৈরি করতে পারছেন না।
এইচ.আর.এইচ প্রিন্স আগাখান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কালিপদ মণ্ডল জানান, বইয়ের অভাবে এবার মাসিক পরীক্ষা নেয়া হয়নি। হাতে বই না থাকায় ব্লাক বোর্ডে লিখে কোনো রকমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বিকে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা আকতারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বই পাওয়া যাচ্ছে না। ডিইও অফিসে চাহিদা অনুযায়ী আমরা লিস্ট দিয়েছি। তারা বলছেন, বই এলে খবর দেয়া হবে। কবে বই আসবে, এ ধরনের কোনো নির্দিষ্ট সময় দিতে পারেননি তারা।
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিএম আইয়ুব হোসাইন বলেন, ৮ম শ্রেণীর গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বই এখনও কেউ পায়নি। আর জানুয়ারি মাসের পর ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণীর যে ছাত্রীরা নতুন ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু ছাত্রী এখনও বই পায়নি।
সালমা খাতুন নামের একজন অভিভাবক বলেন, প্রতিদিন বাজারে বই কিনতে গিয়ে ঘুরপাক খেতে হচ্ছে, কিন্তু বই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ছেলে-মেয়েরা ক্লাসের পড়াও সম্পন্ন করতে পারছে না। এর মধ্যে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। একাধিক অভিভাবক একইভাবে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24806

দাকোপে পানির জন্য হাহাকার : ৬০ হাজার মানুষ পানি সঙ্কটে



এস এম রমজান আলী, দাকোপ (খুলনা)
দাকোপ উপজেলার আইলাদুর্গত এলাকার ৩২ পোল্ডারের কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষের ব্যবহার্য পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রায় সাত-আট কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে লোকজনকে, তাও পানের অযোগ্য পানি। এলাকাবাসীকে ১০ লিটার পুকুরের পানি কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, এসব পানি পান করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশাসহ নানা পেটের পীড়া। জরুরি ভিত্তিতে এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি উঠেছে।
কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা জেলেখালী, জয়নগর, ভিটাভাঙ্গা, চান্নিরচক, রাজনগর, ফকিরডাঙ্গা, পারজয়নগর, কামারখোলা, কালিনগর, সাতঘরিয়া, সাহারাবাদ, শ্রীনগর, সুতারখালী, গুনারী, কালাবগী, নলিয়ান, তেলির কোনা, কালিবাড়ী, গোলবুনিয়া, বাইনপাড়া, মধ্যগুনারী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ইউনিয়ন দুটির সব পুকুর, টিউবওয়েল বা স্যান ফিল্টার কোনটিই ভালো নেই। গত বছর ২৫ মে আইলার কারণে সবকটি মিষ্টি পানির উত্স্য নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি এনজিও পানির সঙ্কট মেটানোর জন্য ট্যাঙ্ক, ড্রাম, মটকি দিলেও তাতে নেই কোনো পানি। বর্তমানে ওইসব এলাকায় পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আইলার পর পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সেনাবাহিনী সুপেয় পানির ব্যবস্থা করলেও এখন আর সে ব্যবস্থা নেই।
কোনো এনজিও বা সংস্থা এলাকায় পানির ব্যবস্থা করছে না। সেজন্য পানি সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকার মহিলা-পুরুষ প্রায় সাত-আট কিমি পথ পায়ে হেঁটে নৌকায় বা ট্রলারযোগে পানি এনে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেকেই শিবসা নদী পাড়ি দিয়ে পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী থেকে পানি আনছে। সেখানেও পুকুরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। বহিরাগতদের পানি নিতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যেসব পুকুর থেকে পানি আনা হচ্ছে তাও পানের অযোগ্য কাদা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দুর্গত এলাকার ফতেমা, লায়লা, সবিতা, হাজেরা, নিলিমা ও কবিতার সঙ্গে। তারা জানান, এ পানি পান করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশাসহ বিভিন্ন পেটের পীড়া। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর দাকোপ থেকে প্রতিদিন ৮ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গুনারী কালিবাড়ী এলাকার স্কুলশিক্ষক মনি মোহন সরদার ও সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কালিবাড়ী বাঁধের ওপর প্রায় সাত-আট হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে তীব্র পানি সঙ্কটের কারণে জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে মানুষ মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা দরকার।
দাকোপের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, আইলা-পরবর্তী সময় এলাকার মানুষের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য এই পর্যন্ত ১০১টি অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, যার মধ্যে সুকারখালীতে ৪৮টি, কামারখোলায় ৩৪টি, তিলডাঙ্গায় ৭টি, উপজেলা সদর চালনায় ৯টি ও পানখালীতে ৩টি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন ৮ হাজার লিটার পানি এলাকায় সরবরাহ করছি। সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত, এলাকায় পানি সঙ্কট দূর করার জন্য পর্যাপ্ত পরিক্ষামূলক গভীর নলকূপ বসানো দরকার। কারণ প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিবর্তন হয়। তাছাড়া এলাকার বিভিন্ন পুকুর সংস্কার করে পিএসএফ বসালে পানি সঙ্কট অনেকটা দূর করা সম্ভব হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে যে পানি দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে আরও বেশি পানি যাতে এলাকাবাসী পায় তার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24792

ছুরিকাঘাতে বগুড়ায় যুবলীগ নেতা রংপুরে সেনা সদস্য খুন


কালের কণ্ঠ ডেস্কবগুড়ায় | ঢাকা, সোমবার, ১৫ চৈত্র ১৪১৬, ১২ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৯ মার্চ ২০১০
গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ইউনিয়ন যুবলীগের এক সভাপতি খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক যুবলীগ কর্মী। অন্যদিকে রংপুুরে গতকাল রবিবার ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক সেনা সদস্য খুন হয়েছেন।
আমাদের বগুড়া অফিস জানায়, জেলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে যুবলীগ নেতা শফিক চৌধুরী (২৬) খুন হয়েছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে রাসেল নামে আরেক যুবলীগ কর্মীও ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতের বাবা বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো সাত-আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ মতি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই রাতেই মেলাটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিক চৌধুরী (২৬) ও যুবলীগ কর্মী রাসেল মোটরসাইকেল নিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে গেলে গেটে কয়েকজন যুবক তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই যুবকরা শফিক ও রাসেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয় লোকজন তাঁদের দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সোয়া ১২টার দিকে শফিক মারা যান। পরে গতকাল দুপুরে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে দাফন করা হয়। নিহত শফিক বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক গ্রামের আব্দুর রহমান ওরফে জব্বার চৌধুরীর ছেলে।
মামলার বাদী জব্বার চৌধুরী জানান, তাঁর ছেলে মেলার একটি স্টল নিয়মিত দেখাশোনা করতেন। এ কারণে শনিবার রাতে সেখানে গেলে শহরের কিছু যুবক তাঁকে ও রাসেলকে ছুুরিকাঘাত করে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুরুল হক ভঁূইয়া জানান, ঘটনার পরপরই নিরাপত্তার কথা ভেবে মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ খুনের ঘটনায় গতকাল দুপুরে শহরতলির ভবেরবাজার এলাকা থেকে মামলার এজাহার নামীয় আসামি মতি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বগুড়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে মার্চ মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। পরে প্রশাসন আরো ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করেছিল। এ মেলায় জুয়া ও হাউজি খেলাও চলত।
রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রংপুরে গতকাল রবিবার ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহাদুল ইসলাম আহাদ (২৮) নামে এক সেনা সদস্য খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই কোরবান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
জানা যায়, নিহত আহাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউজানে। রংপুর শহরের সেনপাড়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি হওয়ায় কোতোয়ালি থানার পাশে মুলাটোলের এক বাসায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে নম্রকে নিয়ে সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকতেন। তিনি খাগড়াছড়ি সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক শাহজাহান আলী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ সরকার জানান, শনিবার রাতে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের একটি গাড়িতে চড়ে রবিবার ভোর আনুমানিক ৫টায় রংপুরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে আসেন সেনা সদস্য আহাদ। মুলাটোল থানার পাশের নিজ বাসায় যাওয়ার জন্য শাহজাহান আলীর রিকশায় উঠেন। পথিমধ্যে গণেশপুর বকুলতলা এলাকায় পেঁৗছার পর মুখোশধারী দুই ছিনতাইকারী রিকশার গতিরোধ করে এবং তাঁর কাছে টাকা ও মোবাইল ফোনসেটসহ যা যা আছে বের করে দিতে বলে। কিন্তু সেনা সদস্য আহাদ তা দিতে অস্বীকার করলে ছিনতাইকারীরা রিকশা থেকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে রিকশাচালকের কাছ থেকে একটু দূরে নিয়ে যায়। সেখানেই ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। এরপর আহাদকে নিয়ে রিকশাচালক হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আহাদের পরিবার ও রংপুর সেনানিবাসের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর করা হলে সেনানিবাসে বাদ আসর জানাজা শেষে হিমঘরে লাশ রাখা হয়। আজ সোমবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউজান গ্রামে তাঁর লাশের দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
নিহতের বড় ভাই কোরবান আলী জানান, আহাদ সাত মাস আগে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে রংপুর শহরের সেনপাড়া মহল্লার মহিলা সমিতির পেছনের রিনা ইসলামকে বিয়ে করে ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী মুলাটোলায় ভাড়া বাসাতে থাকতেন।
নিহতের স্ত্রী রিনা জানান, খাগড়াছড়ি সেনানিবাস থেকে গত শনিবার ১০ দিনের ছুটি নিয়ে বাসায় আসার কথা ছিল তাঁর স্বামী আহাদের। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'স্বামী বাসায় এসেছে ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে।'
রিকশাচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম জানান, ছিনতাইকারীরা আহাদের সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পর আহাদ তাদের কাছে তাঁর আইডি কার্ড ফেরত চেয়েছিল। ওই সময়ই আহাদের পেটে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। এতে তাঁর পেটে ৫ ইঞ্চি ক্ষত হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ সরকার জানান, ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে থানায় আনা হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় গোপন রেখে এবং তারা এ ঘটনায় জড়িত নয় বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, ওই দুজনের মাধ্যমে কোনো ক্লু পাওয়া যেতে পারে এমন ধারণায়ই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Saturday 27 March 2010

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭০ ভাগ



সৈয়দ মিজানুর রহমান
দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদন (মার্চ মাস) থেকে জানা গেছে, গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যেখানে এফডিআই ছিল ৬০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে চলতি (২০০৯-১০) অর্থবছরের একই সময়ে বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ১৯৭ মিলিয়ন ডলার।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কট, দুর্বল অবকাঠামো ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই এজন্য দায়ী।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতামত হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল নয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাও কাটেনি। ফলে আগামী দেড়/দু’বছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা আশা করা যায় না।
উদ্যোক্তারা জানান, বিনিয়োগের প্রধান শর্তই হচ্ছে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও সুষ্ঠু পরিবেশ। কিন্তু গত প্রায় চৌদ্দ মাসে সরকার সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি। অবকাঠামোগত সমস্যা, বিদ্যুত্, গ্যাস সঙ্কটের পাশাপাশি শিল্প-কলকারখানায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের কারণে ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি জিম্মি হয়ে আছেন। তারা বলেন, পুঁজির নিরাপত্তা না থাকলে কোনো উদ্যোক্তাই বিনিয়োগ করবেন না। গত এক বছরে দেশে নতুন করে বিনিয়োগ করার চেয়ে বিদ্যমান কারখানাগুলোর উত্পাদন ব্যবস্থা ধরে রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস রেশনিং করেও সমস্যার সমাধান মিলছে না। অদূর ভবিষ্যতে এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন না উদ্যোক্তারা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার সভাপতি আফতাবুল ইসলাম মনে করেন, দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগের বাধা এখন তিনটি। এগুলো হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সঙ্কট, দুর্বল অবকাঠামো ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি। তিনি জানান, ‘গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবারের বাস্তবতা হলো, বর্তমান সরকার প্রায় ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করলেও জ্বালানি খাত বা অবকাঠামোর তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।
জ্বালানি সমস্যা সমাধানে তিনি দ্রুত কয়লা নীতি প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে বলেন, এখন দেশি বিনিয়োগকারীরাই ঠিকমতো গ্যাস-বিদ্যুত্ পাচ্ছেন না। ফলে বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ কি করে হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘খারাপ।’ কারণ মানুষের হাতে কাজ নেই। এখন কোনো একটা টেন্ডার হলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা অন্য দলের শ’খানেক নেতাকর্মী সেটির পেছনে ছোটেন। কর্মসংস্থান হলে সেটি আর হবে না। আর এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য বেশি দায়ী।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান আমার দেশকে জানান, আগামী দেড়-দু’বছরের মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা আশা করা যাবে না। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এটা হয়েছে। আর মন্দা আগামী ২০১১ সালজুড়েই থাকবে। কোনো কোনো দেশ নিজেরাই ঘোষণা দিচ্ছে মন্দা থেকে তারা বেরিয়ে গেছে। বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ, এখনও লাখ লাখ লোক বেকার। এছাড়া স্থানীয়ভাবে বিদ্যুত্ ও গ্যাস পরিস্থিতির যে নাজুক অবস্থা চলছে, তাও সহসায় উন্নতির লক্ষণ নেই। তিনি বলেন, সিপিডি সরকারকে এরই মধ্যে ৭টি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুটি ছিল গ্যাস-বিদ্যুত্ ও অবকাঠামো সমস্যা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টি দেশি বিনিয়োগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে কোথাও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে না। আমরা স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে, আশা করছি তা কেটে যাবে।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থাই পুরোপুরি ফেরেনি, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে কী করে। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে সবার আগে গ্যাস ও বিদ্যুত্সহ অবকাঠামো খাতের সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুত্ সমস্যার কারণে দেশি বিনিয়োগকারীরাই যেখানে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবেন কোন সাহসে?’
বিনিয়োগে বাধা : অবকাঠামোগত অসুবিধা, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত দিকেও রয়েছে নানা বাধা। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এসএ সামাদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সেগুলো বিনিয়োগবান্ধব নয়। এছাড়া বারবার ঘোষণা দিয়েও এখন পর্যন্ত সরকার শিল্পনীতি ঘোষণা করতে পারেনি। শিল্পনীতি ঘোষণা না হওয়ায় উদ্যোক্তারাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। এদিকে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, খুন-খারাবি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি যেভাবে হচ্ছে তাতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকার বেরিয়ে আসতে না পারার কারণে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য সামনে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, গত এক বছরে বিদ্যুত্ খাতের কোনো উন্নতি হয়নি বরং গ্যাসখাতের ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে দেশের সড়ক যোগাযোগ। ফলে নতুন কোনো শিল্প হয়নি। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের ন্যূনতম সুযোগও পাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আশাই করা যায় না। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবমিলে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশই এখন নেই।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ২০০৯ সালে শিল্পখাতে দেশে নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। এটি সরকারও স্বীকার করছে। বিদ্যুত্ না থাকায় কোনো উদ্যোক্তাই শিল্প বিনিয়োগে এগিয়ে আসেনি। এ বছর ছিল বিনিয়োগের স্থবির সময়। শিল্পখাতে বিনিয়োগ করতে না পারায় জমিজমা, নির্মাণ শিল্পে এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন উদ্যোক্তারা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ তুলে নিয়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এই সময়ে শেয়ারবাজার থেকে নিট বিনিয়োগ তুলে নেয়ার পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১০ লাখ ডলার (প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা)। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারবজার থেকে ৪ দশমিক ৭ কোটি ডলার (সোয়া তিনশ’ কোটি টাকা) বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ৪৫ কোটি ডলার (৩ হাজার কোটি টাকার বেশি)। অন্যদিকে আগের বছর এ খাতে বিপুল অর্থ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর পরিমাণ ৪৭ কোটি ডলার (প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা)।
জানা গেছে, বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রস্তাবও খুব একটা জমা পড়ছে না বিনিয়োগ বোর্ডে। গত দুই-তিন বছরের তিক্ত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং জ্বালানি সঙ্কটের আশঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বললেই চলে।
এদিকে গ্যাস ও বিদ্যুত্ বেশি ব্যবহার হয়, এমন শিল্প ইউনিটের পরিবর্তে সেবাখাতে বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী বিনিয়োগ বোর্ড। বিনিয়োগ বোর্ড মনে করছে, এদেশে বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহে সীমবদ্ধতা রয়েছে। তাই বিদ্যুত্ ও গ্যাস অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার হয় এমন শিল্পখাতে এফডিআই কাম্য। এক্ষেত্রে আইটি, এলিভেটেভ এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবাখাতে এফডিআই আশা করে বিনিয়োগ বোর্ড।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/28/24776

জনশক্তি রপ্তানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে

উম্মুল ওয়ারা সুইটি | Kalerkantho ঢাকা, রবিবার, ১৪ চৈত্র ১৪১৬, ১১ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৮ মার্চ ২০১০

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। মহাজোট সরকারি ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অনেক আশ্বাস মিললেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
জনশক্তি রপ্তানি কমতে কমতে গত মাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পেঁৗছেছে। চলতি মাসে এ সংখ্যা আরো কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, তিন বছরের মধ্যে গত মাসে জনশক্তি রপ্তানি ছিল সর্বনিম্ন। ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ২৭ হাজার ৪৯ জন কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। ২০০৭ সালে একই সময়ে ৩৭ হাজার ৪৩২ জন, ২০০৮ সালে ৭১ হাজার ৭১৬ জন এবং ২০০৯ সালে ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন চাকরি নিয়ে বিদেশে যান।
ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১০ সালের প্রথম দুই মাসে ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। অথচ বিশ্বব্যাপী মন্দার বছর ২০০৯ সালের প্রথম দুই মাসে বিদেশে চাকরি নিয়ে যান ৯৪ হাজার কর্মী।
ব্যুরোর সূত্র মতে, দেশের বড় শ্রম রপ্তানি বাজার সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর করছে না। আবার পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে রুমানিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ রেখেছে। লিবিয়া কর্মী নেওয়া বন্ধ না করলেও খুব কমসংখ্যক লোক সে দেশে যাচ্ছেন। ইরাকে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা কাজে আসছে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনশক্তি রপ্তানি বাজার পুনরুদ্ধারে করণীয় নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয় ও ব্যুরোকে নির্দেশ দিয়েছেন। কী কারণে রপ্তানি কমে গেল তা চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও জনশক্তি রপ্তানির এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে এর কারণ নিরূপণ এবং বাজার পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে জোর তাগিদ দিয়েছে কমিটি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে।' তিনি আরো বলেন, 'বিগত জোট সরকারের সময়ই মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। সে অবস্থা থেকে ফিরে আসতে তো কিছুটা সময়ও লাগবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করেছেন।'
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, 'জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে এটা ঠিক। এ নিয়ে গত সপ্তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে বৈঠকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, এ মাস থেকেই যেন এ অচলাবস্থা কেটে যায়, সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি গোলাম মুস্তাফা বলেন, 'সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেই এ রকম ঘটনা ঘটছে। বায়রা এ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। বারবার আশ্বস্ত করা হলেও সৌদি আরব ও কুয়েতে এখনো লোক নেওয়া চালু হয়নি।' তিনি আরো বলেন, 'এক মাস আগে মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে একটি বৈঠক করার। কিন্তু তা নিয়ে বায়রাকে কিছু জানানো হয়নি। টেলিফোন করা হলে মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয় মন্ত্রী এখন ব্যস্ত আছেন।'
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের সর্বনিম্ন রেকর্ড পাওয়ার পর শ্রমবাজার কিভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, তা ঠিক করতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত সপ্তায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জনশক্তি রপ্তানির পরিস্থিতি কেন এমন হয়েছে তার জবাব চেয়ে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলরদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মন্ত্রণালয় এবং ব্যুরো থেকে জনশক্তি রপ্তানি পরিস্থিতির মন্দা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মন্দা কেটে গেলে জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়ে সে দেশের বাদশাহর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে। এ ছাড়া সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশিরা আকামা পরিবর্তন করতে পারবেন; কিন্তু তা আজও সম্ভব হয়নি বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

Thursday 25 March 2010

বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুত্ অফিস ঘেরাও মিছিল, সড়ক অবরোধ

ডেস্ক রিপোর্ট
তীব্র লোডশেডিংয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জামালপুর, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও নাটোরে কৃষক এবং সাধারণ জনতা বিদ্যুত্ অফিস ঘেরাও, সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের খবর—
জামালপুর : লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ ও বিদ্যুতের দাবিতে জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা সড়কের নান্দিনাবাজার এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে কৃষক ও জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষকরা স্থানীয় পল্লীবিদ্যুত্ অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকাপড়ে দু’শতাধিক যান। পুলিশ ও পল্লীবিদ্যুত্ কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে বিদ্যুত্ সরবরাহের আশ্বাস দিলে ৩ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেয় তারা।
নালিতাবাড়ী : বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও বিদ্যুত্ অফিস ঘেরাও হয়েছে নালিতাবাড়ীতে। বিদ্যুত্ পাম্প সেচমালিক সমিতির পক্ষ থেকে কৃষকের সমন্বয়ে স্থানীয় লোকজন গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার নন্নীবাজারে এ সমাবেশ, মিছিল ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
বিদ্যুত্ পাম্প সেচ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহমুদুল হক খোকনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রহুল আমীন, বাদল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান আবদুল্লাহ, নূরুল আমীন, মোখলেছুর রহমান রিপন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় নালিতাবাড়ীতে বর্তমানে বিদ্যুত্ থাকছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। যতক্ষণ বিদ্যুত্ পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণও লো-ভোল্টেজের কারণে প্রতিদিন মোটরসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি জ্বলে যাচ্ছে। বাসাবাড়িতে অকেজো হয়ে পড়ছে ফ্রিজ। বোরো ক্ষেতে সেচ দেয়া যাচ্ছে না। উঠতি ফসল সেচের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। বিগত সময়ের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে লোডশেডিংয়ে এখন এলাকাবাসী বিপর্যস্ত। বিপাকে পড়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও।
নাটোর : নাটোর সদর উপজেলার কৃষিভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত হালতিবিল এলাকার সেচযন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের দাবিতে নাটোর পল্লীবিদ্যুত্ সমিতি-১-এর অফিস ঘেরাও করা হয়। গতকাল হালতিবিল এলাকার শতাধিক কৃষক বিদ্যুতের দাবিতে নাটোর পল্লীবিদ্যুত্ অফিস ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় গেটে ঢুকতে পুলিশ এবং পলম্লীবিদ্যুত্ সমিতির নিরাপত্তাকর্মীরা মিছিলকারীদের বাধা দেয়। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় মিছিলকারীদের পল্লীবিদ্যুত্ সমিতির অফিস চত্বরে ঢুকতে দেয়া হয়। হালতিবিল এলাকার কৃষকদের পক্ষ থেকে কৃষক জিয়াউল হক, মোঃ জায়েদ আলী মণ্ডল এবং আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে নাটোর পল্লীবিদ্যুত্ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক মোঃ রেজাউল করিমের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, হালতিবিল এলাকার ১৭টি গ্রামে ২২ হাজার হেক্টর চাষ করা বোরো ধানের জমিতে ব্যবহৃত সেচযন্ত্রে দিন-রাতে ২ ঘণ্টারও কম সময় বিদ্যুত্ পাওয়া যায়। আগামী ৩৫ দিনের জন্য সেচযন্ত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের জোর দাবি জানান তারা। স্মারকলিপিটি নিয়ে নাটোর পল্লীবিদ্যুত্ সমিতির মহাব্যবস্থাপক রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত হালতিবিল এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহের আশ্বাস দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সকালে শহরের পাওয়ার হাউস মোড় থেকে বিদ্যুতের দাবিতে একটি মিছিল প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুসফিকুর রহমান টিটো, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মারাফুল ইসলাম আজিজী, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম প্রমুখ। তারা বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার বিঘা জমির ধান রক্ষায় কমপক্ষে ১৮-২০ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের দাবি জানান। তা না হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তারা। সমাবেশ শেষে তারা জেলা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপি দেন।
জয়পুরহাট : কালাই উপজেলার আলুচাষীরা বালাইট নামক স্থানে জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের পাশে এক ঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন আলুচাষী আবদুস সবুর, বাবলা চৌধুরী ও স্থানীয় একটি কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল মালেক।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/26/24480

Wednesday 24 March 2010

একদিনে তিন জোড়া খুন : গুলশানে স্বামী-স্ত্রী সূত্রাপুরে দোকান কর্মচারী আড়াইহাজারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ



স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তিন জোড়া খুন অর্থাত্ ৬টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গুলশানে ঘরে ঢুকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মেয়ের সামনে বাবা সাদিকুর রহমান (৫৫) ও মা রোমানা নার্গিসকে (৪৫) এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করেছে। মা-বাবাকে অস্ত্রধারীরা ফিল্মি কায়দায় যখন হত্যা করছিল তখন ঘাতকদের ভয়ে মেয়ে ইতি (১৪) বাথরুমে গিয়ে আত্মগোপন করে। স্কুলছাত্রী মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। হত্যার পর দুর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে ফিল্মি কায়দায় গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যার ঘটনা ঘটলেও আশপাশের লোকজন কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। বরং গুলির শব্দে আতঙ্কে মানুষজন যে যেদিক পারে আত্মগোপন করে। খোদ রাজধানীতে ঘরে ঢুকে প্রকাশ্য দিবালোকে এ লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নগরীর সূত্রাপুরে একটি সাইবার ক্যাফেতে হেলাল (২৯) ও রতন (২৭) নামে দুই কর্মচারীকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ গতকাল সকালে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা আবদুস সালামকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে গ্রামবাসী আওয়ামী লীগ কর্মী লাল মিয়াকে (৩০) পিটিয়ে হত্যা করে। এ দুই হত্যার ঘটনায় আড়াইহাজার এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছে।
গুলশানে জোড়া খুন : এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গুলশানের জিপি-ক-৫৪/৪ কালাচাঁদপুরে চারতলা ভবনের দ্বিতীয়তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন ব্যবসায়ী সাদিকুর রহমান। তার ছোট মেয়ে ইতির সঙ্গে (১৪) স্থানীয় বখাটে যুবক রুবেলের প্রেমর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাবা-মা বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়েকে শাসন করেন। তাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বখাটে যুবকের কাছ থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে আনের। বিষয়টি বুঝতে পেরে রুবেল তার বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই ইতিকে উত্ত্যক্ত করত। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার পাশাপাশি অপহরণ করারও হুমকি দেয়। রুবেলের এ আচরণে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পিতা সাদিক থানায় একটি জিডিও করেন। কিন্তু থানা পুলিশ এ ব্যাপারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। অবশেষে সাদিক বখাটে যুবকের ভয়ে জিডি প্রত্যাহার করে নেন। জিডি প্রত্যাহার করলেও রুবেল ও তার বন্ধুদের বখাটেপনা থেমে থাকেনি। একপর্যায়ে রুবেল ইতিকে তার কাছে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু পিতা সাদেক ও তার মা এ বখাটের কাছে মেয়ে বিয়ে না দেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় রুবেল। সে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। তাতেও যখন কাজ না হয় তখন রুবেল তার কয়েক বন্ধুকে নিয়ে খুনের পরিকল্পনা করে।
মঙ্গলবার রাত ২টায় রুবেল ও তার বন্ধু মিথুন সাদিকুরের বাসায় গিয়ে দরজার কলিংবেল টেপে। কিন্তু বাসার লোকজন ভয়ে কেউ দরজা খোলেনি। ভেতর থেকে বাবা সাদিকুর বলেন, তোমরা যা বলার আগামীকাল সকালে এসে বলো। রুবেল সকালে আসার কথা বলে চলে যায়। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রুবেল ও মিথুন ওই বাসায় যায়। ঘরে ঢুকে রুবেল সাদিকুরকে বলে, আমার কাছেই আপনার মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। আমিই আপনার মেয়েকে বিয়ে করব। এ কথা শুনে সাদিকুর ও তার স্ত্রী হতভম্ব হয়ে যান। তারা বলেন, তোমার সঙ্গে আমরা মেয়ে বিয়ে দেব না। এতে ক্ষুব্ধ হয় রুবেল ও মিথুন। তারা বাসার ভেতরে উচ্চস্বরে চিত্কার-চেঁচামেচি শুরু করে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে সাদেকুর দম্পতি কৌশল নেয়। তারা রুবেলকে বলে, এভাবে তো বিয়েশাদি হয় না। বিয়ে একটি শুভ কাজ, শুভ কাজ এভাবে জোড়াজুড়ি করে করা উচিত নয়। কিন্তু এ কথা মানতে রাজি হয়নি রুবেল। সে বাসা থেকে মেয়েকে জোর করে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। বাবা-মা এর প্রতিবাদ করলে একপর্যায়ে অস্ত্র বের করে রুবেল। পিস্তল দিয়ে সাদিকুর ও তার স্ত্রীর মাথায় ঠেকিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তারা মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তারা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ভয়ে কিশোরী ইতি বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারা হুমকি দিয়ে বলে আমাদের পথ পরিষ্কার, এখন বিয়েতে বাধা দেবে কে?
ফ্ল্যাটের মধ্যে গোলাগুলির শব্দে পাশের বাসার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্যান্য বাসার লোকজন ভয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তারা বুঝতেই পারেননি ফ্ল্যাটের ভেতরে এভাবে খুনের ঘটনা ঘটেছে। পাশের বাসার লোকজন মনে করেছিলেন বাসায় ডাকাত পড়েছে। সাহস করে তাই কেউ বাইরে বের হননি। অস্ত্রধারীরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসার সময় ইতির বড় বোন বীথি চিত্কার করে দারোয়ানকে গেট বন্ধ করতে বলেন। দারোয়ান কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দিলে অস্ত্রধারীরা ভেতরে আটকা পড়ে। তারা তখন দারোয়ানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গেট খুলতে বাধ্য করে। দারোয়ান অস্ত্রের মুখে গেট খুলে দিলে সন্ত্রাসীরা বাইরে বেরিয়ে আসে। অস্ত্রধারীরা ঘরের বাইরে এসে ফিল্মি কায়দায় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে বীরদর্পে চলে যায়।
এদিকে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত সাদিকুর ও নার্গিসকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক শোয়েব আহমেদ বলেন, প্রথমে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নার্গিসকে হাসপাতালে আনা হয়। তার মাথার মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল। এর পাঁচ মিনিট পরেই আনা হয় সাদিকুরকে। তিনি বলেন, নার্গিস ঘটনাস্থলেই মারা যান। সাদিকুর হাসপাতালে মারা যান। দুজনেরই মাথায় গুলি লেগেছে। নিহতের বড় মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিন বিথী জানান, রুবেল নিজেই প্রথমে তার বাবাকে গুলি করে। তার মা এগিয়ে এলে পরে মায়ের মাথায় গুলি করে। এ সময় তার ছোট বোন ইতি বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। বিথী জানান, গুলি করার দৃশ্য দেখে তিনি বাসা থেকে দৌড়ে গিয়ে পার্কিং এলাকার একটি গাড়ির ভেতর আশ্রয় নেন। এরই মধ্যে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে শুরু করলে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি। বিথী অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীরা তার ছোট বোন ইতিকে অপহরণ করতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, এ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি জিডি করেছিলেন বাবা। পরে হুমকি দিয়ে সেই জিডি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করে তারা।
নিহত সাদেকুর রহমান ঢাকা মহানগর নার্সারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। এছাড়াও তার মাছের ব্যবসা রয়েছে। মহাখালী এলাকায় একটি মাছের ঘের পরিচালনা করতেন তিনি। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কালাচাঁদপুরের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরে। তার বড় মেয়ে সাথী জাপান প্রবাসী। দ্বিতীয় কন্যা বীথি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্রী। ছোট মেয়ে ইতি কালাচাঁদপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিথুনের মাকে আটক করেছে পুলিশ। রুবেলের বাড়িতে তালা লাগিয়ে পরিবারের সবাই পালিয়ে গেছে। গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঘাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পরই পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছে। ঘাতকদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে তারা।
সাইবার ক্যাফে থেকে জোড়া লাশ উদ্ধার : সূত্রাপুরের টিকাটুলী এলাকার একটি সাইবার ক্যাফে থেকে গতকাল সকালে দু’যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, এ দু’যুবকের মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। নিহতরা এ সাইবার ক্যাফের কর্মচারী বলে জানা যায়। তাদের একজনের নাম হেলাল ও অপরজনের নাম রতন।
স্থানীয়রা জানান, সাইবার ক্যাফের মালিকের নাম রিয়াজ উদ্দীন। হেলাল ও রতন রাতে সাইবার ক্যাফেতেই ঘুমাত। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, টিকাটুলীর ২৯/৪ নম্বর কেএম দাস লেনের জিনিয়াস নেট বংলাদেশ সাইবার ক্যাফেটি গতকাল সকাল থেকে বন্ধ থাকায় সন্দেহ হয়। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও না খোলায় স্থানীয় অন্য দোকানদাররা বাইরে থেকে ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে তারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে দোকান খুলে ভেতরে গেলে হেলাল ও রতনকে মৃত অবস্থায় পায়।
সূত্রাপুর থানার ওসি হানিফ আলী জানান, মৃত দু’যুবকের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দুজনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আশপাশের লোকজন জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ দুজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হতে পারে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আড়াইহাজারে জোড়া খুন : এদিকে স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ ও আড়াইহাজার প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ছাত্রদল এক নেতা খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত গ্রামবাসী বাড়ি থেকে ধরে এনে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহতরা হলেন ইউনিয়ন ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুস সালাম (২৮) ও আওয়ামী লীগ কর্মী লালমিয়া (৩০)। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, বুধবার রাতে থানার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা প্রফেসর নূরুজ্জামান ওরফে চান মিয়ার সহযোগীরা ছাত্রদল নেতা সালামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের জের ধরে উত্তেজিত গ্রামবাসী ও স্বজনরা আওয়ামী লীগ কর্মী লাল মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় ইজাকান্দি ও বুধবার ভোর ৬টায় কদমীচর গ্রামে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। আড়াইহাজার থানা পুলিশ আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ছাত্রদল নেতা সালাম মঙ্গলবার রাত ৯টায় নিজ বাড়ি কদমীচর থেকে তার শ্বশুরবাড়ি ইজারকান্দি যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় সালাম ইজারকান্দি স্কুলের কাছে পৌঁছলে আওয়ামী লীগ নেতা নূরুজ্জামানের সহযোগীরা হামলা চালিয়ে কুপিয়ে সালামকে হত্যা করে। রাতেই কদমীচর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতা নূরুজ্জামানের ভাই রশিদ ও লাল মিয়ার নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি দল সালামকে খুন করে। ফলে কদমীচর গ্রামবাসী ও নিহত সালামের স্বজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার একপর্যায়ে গতকাল ভোর ৬টায় প্রায় দুইশ গ্রামবাসী ও সালামের স্বজনরা টেঁটা-বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা প্রফেসর নূরুজ্জামানের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা প্রফেসর নূরুজ্জামানের ভাই আবদুর রশিদ, লাল মিয়া ও বোন মরিয়মকে অপহরণ করে সালামের বাড়িতে এনে বেদম প্রহার শুরু করে। খবর পেয়ে আড়াইহাজার থানা পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় লাল মিয়া, আবদুর রশিদ ও বোন মরিয়মকে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে সোনারগাঁও থানা এলাকার আয়েশা আজাদ কমপ্লেক্স ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কতব্যরত ডাক্তার লাল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ছাত্রদল নেতা সালাম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করেছে। হত্যা-পাল্টা হত্যার ঘটনায় এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। চরম উত্তেজনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ লাশ ২টি ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসাপাতল মর্গে পাঠিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিল। এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, উভয়পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, নিহত সালামের বড় ভাই বিএনপি নেতা কালামের সঙ্গে চরের আধিপত্য ও বালুমহালের ইজারা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা প্রফেসর নূরুজ্জামানের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ১৫/১৬টি মামলা বিচারাধীন। আড়াইহাজার থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা, থানা ছাত্রদল সভাপতি জুয়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শফিউদ্দিন সফু ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জে তরুণী খুন : এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে অজ্ঞাত এক তরুণী (১৮) খুন হয়েছেন। গতকাল বিকালে পুলিশ আদমজীর নাভানা ভূঁইয়া সিটির পাশের একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। নিহতের মুখে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরনে ছিল লাল সালোয়ার ও হলুদ রংয়ের কামিজ। পুলিশের ধারণা মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ওই ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশ তরুণীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/25/24320

বিদ্যুতের দাবিতে জনতা বিক্ষুব্ধ

Kalerkantho ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ চৈত্র ১৪১৬, ৮ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৫ মার্চ ২০১০

বিদ্যুতের দাবিতে জনতা বিক্ষুব্ধবগুড়ায় ভাঙচুর আগুন, নড়াইলে সড়ক অবরোধ, গোমস্তাপুর ও মাদারীপুরে হামলা প্রিয় দেশ ডেস্কতীব্র লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালন ও সংরক্ষণ এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও মাদারীপুরে গ্রাহক-কৃষকের পৃথক হামলায় আহত হয়েছেন বিদ্যুৎ অফিসের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী। নড়াইলের লোহাগড়ায় কৃষক-জনতা বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেছে। এদিকে নেত্রকোনায় কয়েক হাজার কৃষক সেচকাজে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মিছিল করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া শেরপুরে বিদ্যুতের দাবিতে হয়েছে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
বগুড়া অফিস: বগুড়ায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা হামলা চালিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলে। ওই চত্বরেই অবস্থিত বিউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়। ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সংরক্ষিত ওই এলাকার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। এ সময় বগুড়া শহরের স্টেশন রোডও অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে লোডশেডিং শুরু হলে বগুড়া শহরের পুরান বগুড়া এলাকায় অবস্থিত বিউবোর পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলে কয়েক শ ছাত্র-জনতা গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় সংরক্ষিত ওই এলাকার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে তারা। এরপর সংরক্ষিত এলাকার নিরাপত্তা ছাউনির দরজা ভেঙে ভেতরের চেয়ার, টেবিলসহ কাঠের আসবাবপত্র বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এরপরই তারা সেখানে অবস্থিত বিউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে করে বেশ কয়েকটি ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় শহরের স্টেশন রোড এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধরা।
এ বিষয়ে বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুনীল কান্তি পাল বলেন, হঠাৎ করেই তারা এসে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরো জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই তাদের কিছুই করার নেই।
মাদারীপুর : মাদারীপুরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে শতাধিক গ্রাহক মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালায়। গ্রাহকদের হামলায় তিন কর্মকর্তা আহত হন। এর মধ্যে সাইফুল আহম্মেদের (৩৭) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম ইকবাল হোসেন এবং হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে প্রায় ১০০ গ্রাহক প্রথমে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালায়। পরে তারা রেস্ট হাউস ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (সাধারণ সেবা) সাইফুল আহম্মেদের বাসায় হামলা চালায়। গ্রাহকদের হাতে থাকা লাঠির আঘাতে ম্যানেজার সাইফুলের মাথায় আঘাত লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া শহরে বিদ্যুতের দাবিতে কয়েক শ উত্তেজিত কৃষক-জনতা বুধবার সড়ক অবরোধ, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর করেছে। তাদের অভিযোগ, গত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবিতে তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক নড়াইল-লোহাগড়া সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান রুনু বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক স্বদেশ কুমারর ঘোষ কালের কণ্ঠকে জানান, সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কৃষকের প্রায় ২৫০টি সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনা সদর ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক জেলা শহরে সেচকাজে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপি পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম। এতে উল্লেখ করা হয়, গত এক মাস ধরে ইরি-বোরো আবাদের জন্য সেচ পাম্পে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আসে তা ড্রেন ভিজাতেই চলে যায়। সেচকাজে এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায় না। স্মারকলিপিতে কৃষকরা প্রতি ফিডারে সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ, সেচ মৌসুমে সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা, সেচ সংযোগের যেকোনো অভিযোগ তাৎক্ষণিক সমাধানের দাবি করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে বুধবার হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোমস্তাপুর ও পার্শ্ববর্তী নাচোল উপজেলার পাঁচ শতাধিক কৃষক মিছিল নিয়ে এসে গোমস্তাপুর বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালায়। এ সময় বাধা দিতে গেলে ঢাকা থেকে অডিটে আসা দুই কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, রজত কুমার দাস, ইলেক্ট্রিশিয়ান জিয়াউল হক ও লাইনম্যান আক্তারুল হোসেন বিক্ষুব্ধ কৃষকদের হাতে লাঞ্ছিত হন।
এ ব্যাপারে ইউএনও সাজ্জাদুল হাসান জানান, কৃষকদের বিক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং দিয়ে যেভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তা কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না।
শেরপুর : ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে বুধবার বিকেলে নিয়মিত বিদ্যুতের দাবিতে কৃষক সমাজের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ শেষে স্থানীয় পাঁচ রাস্তার মোড়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য দেন শেরপুর জেলা গণফোরামের সভাপতি সাইফুর ইসলাম ও ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। সভায় আগামী তিন দিনের মধ্যে নিয়মিত ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না হলে হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচির আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

Sunday 21 March 2010

নদীর দেশে এখন পানির অভাব!



অমিতোষ পাল
Kalerkantho | ঢাকা, সোমবার, ৮ চৈত্র ১৪১৬, ৫ রবিউস সানি ১৪৩১, ২২ মার্চ ২০১০
বাংলাদেশে একসময় নদী ছিল এক হাজার ৩০০টি। বিভিন্ন বই-পুস্তকে ৭৫৯টির নাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডবি্লউটিসি) হিসাব অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও প্রায় ৩৫০টি নদীর অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু গত ৩৮ বছরে ১১৩টি নদী পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। এর পাশাপাশি ভরাট করা হয়েছে বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়। নষ্ট হয়ে গেছে মিঠা পানির উৎস। ফলে দিন দিন সুপেয় ও নিরাপদ পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। দেশের অনেক স্থানে নলকূপেও পানি ওঠে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। আবার যেগুলোতে উঠছে, আর্সেনিকের কারণে তার অনেকটাই পানের উপযোগী নয়। শহরের পাশাপাশি এখন গ্রামাঞ্চলেও শুরু হয়েছে পানির জন্য হাহাকার। লাখ লাখ মানুষের জন্য খাবার পানি জোগানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে।
বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত কালের কণ্ঠকে বলেন, নিরাপদ পানির সংকট দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এটি এখন মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে। পানির অভাব প্রভাব ফেলেছে জীববৈচিত্র্যের ওপরও। এর সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সমস্যা। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিলম্বের কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, 'সুপেয় ও ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, এ সমস্যা সমাধানের শর্টকাট কোনো রাস্তা এখন আর খোলা নেই। আমরা প্রকৃতির সঙ্গে অনেক ধরনের বৈরী আচরণ চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছি না। এ রকম চলতে থাকলে সমস্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। একদিকে পানির পর্যাপ্ততা কমছে, অন্যদিকে মানও নিম্নমুখী হচ্ছে।'
উন্নয়নকর্মী জোশেফ হালদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ মুহূর্তে আমাদের নদীগুলো বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই। নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে মানুষের বেঁচে থাকা নির্ভর করছে। কিন্তু পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ_এ ধরনের পাঁচ-সাতটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে নদী বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে।'
সুপেয় পানি নিশ্চিতকরণ ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন এনজিও ফোরামের গবেষণামতে, প্রতি বছরই দেশে আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকার বিস্তৃতি ঘটছে। ২০০৮ সালের হিসাবে দেশের ৪৮২ উপজেলার মধ্যে ২১৫ উপজেলায় পানিতে বিষাক্ত আর্সেনিকের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। ২০০৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬৩।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, আর্সেনিকের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দেশের ৪০ লাখ নলকূপের ১১ লাখ দুই হাজার নলকূপ লাল রঙের বিপজ্জনক চিহ্ন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওইসব এলাকার মানুষকে এখন দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীর অংশবিশেষসহ দেশের এক লাখ ২৬ হাজার ১৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা আর্সেনিককবলিত। পানীয় জলের সমস্যা ছাড়াও এসব এলাকার সাড়ে সাত কোটি মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিআইডবি্লউটিসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ছিল। ২০০৯ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সেটা কমে বর্ষা মৌসুমে ছয় হাজার কিলোমিটার এবং শুষ্ক মৌসুমে তিন হাজার কিলোমিটারে দাঁড়ায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও সারা দেশে প্রায় ৩৫০টি নদীর অস্তিত্ব ছিল।
বিআইডবি্লউটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, 'দখল, ভরাট ও পানি স্বল্পতার কারণে দেশের নদীগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। অথচ একসময় নদীর পানিই ছিল পানির প্রধান উৎস। গ্রামের মানুষের গৃহস্থালিসহ খাবার কাজও চলত।
সরেজমিনে ধলেশ্বরী-১ ও ২ সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নিচে পানি নেই বললেই চলে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচ দিয়ে ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়। কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী সড়কের হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মা নদীতে, ফরিদপুর-যশোর মহাসড়কের কামারখালী নামক স্থানের গড়াই সেতুর নিচে গড়াই নদীতেও একই অবস্থা। যমুনা সেতুর নিচে চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ বালুচর। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীর রাজশাহী পয়েন্টে হেঁটে পার হওয়া যায়।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. মজিবুর রহমান জানান, গত ১০ বছরে নদীগুলোতে কোনো খননকাজ হয়নি। এ কারণে নদীর মূল চ্যানেল ও তলদেশ ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য পানিতেই দুই কূল ছাপিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে পানির চাহিদা পূরণের অন্যতম আশ্রয়স্থল ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে রাজধানীর মিরপুরের বেশ কয়েকটি গভীর নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তাকসেম এ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে তুরাগ নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিরপুর এলাকার গভীর নলকূপেও পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানির মান এ সময়ে খুবই নিম্নমানের হয়ে যায়। শোধন করেও তা ব্যবহার উপযোগী করা যায় না।
অন্যদিকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আছে লবণাক্ত পানির সমস্যা। বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি। এর প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। পানীয় জলের জন্য বৃষ্টিই এখন ওই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, পানির সমস্যা এখন শুধু রাজধানী বা কোনো বিশেষ এলাকাভিত্তিক নয়। এ সমস্যা সমধানে জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ছোট ছোট প্লান্ট করা প্রয়োজন। এগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। তিনি পানি সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের যেকোনো একটি উপজেলায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালুর পরামর্শ দেন।

সিলেটে সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক খুন

হারুনুর রশীদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ২২-০৩-২০১০



সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হারুনুর রশীদ দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে নগরের গৌড়গোবিন্দ টিলা এলাকায় তাঁকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হারুনুর রশীদ বেলা তিনটায় কলেজ থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বের হন। বাসার কাছাকাছি যাওয়ার পর মোটরসাইকেলযোগে তিন যুবক প্রথমে হারুনুর রশীদের মাথায় একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তারা পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় হারুনুর রশীদকে স্থানীয় কয়েকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ হারুনুর রশীদের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ওসি জানান, নিহত ব্যক্তির ঊরুর দিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথায়ও জখম দেখা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কী কারণে তিনি খুন হয়েছেন, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা কারা—এ ব্যাপারে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে।
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, হারুনুর রশীদের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়। সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তিনি প্রায় আড়াই বছর ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি মহিলা কলেজ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে নগরের গৌড়গোবিন্দ টিলাসংলগ্ন আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া-বাসায় (নিলয় ৫৪/৩) থাকতেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
সন্ধ্যায় কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে বিসিএসএস শিক্ষক সমিতি সিলেট অঞ্চলের উদ্যোগে তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ সভা হয়। শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে আজ সিলেট বিভাগের সব সরকারি কলেজে শিক্ষকেরা কালো ব্যজ ধারণ করে পূর্ণ দিবস কর্মরিবতি পালন করবেন বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সরকারি মহিলা কলেজের সামনে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি শিক্ষকের খুনিদের গ্রেপ্তার করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষোভ ও নিন্দা: সিলেট সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ দুষ্কৃতিকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে। সমিতি অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। গতকাল সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-22/news/50789

Thursday 18 March 2010

সাভারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ১০

সাভার প্রতিনিধি
সাভারে গতকাল বিকালে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণে ৪ ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও ৬ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কামরুল ইসলাম ও নাহিদকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং রাব্বী ও সোনা মিয়াকে আশুলিয়ার এমসিবি চিকিত্সা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীবাড়ী গ্রামের নাহিদ ও কামরুল ইসলাম মোটরসাইকেলযোগে দোসাইদ যাচ্ছিলেন। পথে চারাবাগ এলাকায় জামান হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি আতাউরের ছোট ভাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী শফিক গাড়ি সাইড দেয়াকে কেন্দ্র করে তর্ক বাধিয়ে নাহিদ ও কামরুলকে গুলি করে আহত করে। তাদের আত্মীয়স্বজন এগিয়ে এলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আরও ৮ জন আহত হন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/19/23460

জনসভায় মেয়র লিটন : বাঁশের লাঠি দিয়ে জামায়াত-শিবির উত্খাত করা হবে

রাজশাহী অফিস
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, জামায়াত-শিবির আমাদের এক লাখ নেতাকর্মীর প্রাণ কেড়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এতে চুড়ি পরে আমরা বসে থাকতে পারি না। বাঁশের লাঠি দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভালো করে জানে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে লাভ নেই। তারা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আন্দোলন কাকে বলে তা আওয়ামী লীগ জানে। আওয়ামী লীগের কাছেই আন্দোলন শিখতে হবে।
রাজশাহী সিটি মেয়রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকতার জাহান। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপিকা জিনাতুন্নেছা তালুকদার এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, যুগ্ম সম্পাদক নওশের আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাইমুল হুদা রানা প্রমুখ।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আজকের জনসভার মধ্য দিয়েই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন শুরু হলো। সারাদেশে এ আন্দোলনের ব্যাপ্তি ঘটবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, মাওলানা নিজামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। তা না হলে এবার যা ভোট পেয়েছেন, আগামীতে তাও পাবেন না। তিনি জামায়াত-শিবিরকে উত্খাতে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/19/23447

ফারুকের বিরুদ্ধে আরও ৫ মামলা সমন জারি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের নামে অপপ্রচারের অভিযোগ এনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে গতকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরও পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বাদী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
গতকাল বগুড়া, মাগুরা, নড়াইল, রংপুর ও পাবনায় পৃথকভাবে দায়ের করা পাঁচ মামলা নিয়ে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১১ মামলা হলো।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফারুক গত ১১ মার্চ সংসদে বলেন, সজীব ওয়াজেদ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত। পরদিন এক সংবাদ ব্রিফিংয়েও একই অভিযোগ করেন তিনি।
আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি জানান, দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে আলোচিত ১০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি পূরণ মামলার বাদী নড়াইল ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাবু ওরফে ঢাকাইলে বাবু এবার মামলা করলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নাল আবদিন ফারুক এমপির বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে তিনি তারেক জিয়ার বিরুদ্ধেও মামলা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত—বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের এই বক্তব্যে জয়ের ১শ’ কোটি টাকার সমান-সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে অভিযোগ এনে গতকাল বাদী হয়ে নড়াইল ক অঞ্চলের আমলি আদালতে মামলা করেন। বিচারক মুশরাত জেরিন আগামী ৯ জুন আসামিকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে সাইফুল ইসলাম বাবু জয়নাল আবদিন ফারুকের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এ মামলা করেন বলে জানান।
আমাদের মাগুরা প্রতিনিধি জানান, জেলা হাকিম শেখ জালাল উদ্দিনের আদালতে ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা করেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এনামুল হক হীরক। আদালত এ মামলায় আগামী ১০ মে ফারুককে হাজির হতে বলেছেন। বাদী এনামুল বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ আওয়ামী লীগের সদস্যপদ গ্রহণ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় ভীত হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন ফারুক।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, ফারুকের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জাসেম বিন জুম্মন। এ মামলায় হাকিম নিত্যানন্দ বর্মন আগামী ১৯ এপ্রিল ফারুককে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এদিকে বগুড়ায় দায়ের করা মানহানির মামলায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে বলে বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
বগুড়া বিচার বিভাগীয় হাকিমের আদালতে মামলাটি করেছেন বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন। হাকিম মোঃ আনোয়ার হোসেন আগামী ৪ মে এ মামলায় ফারুককে আদালতে হাজির হতে বলেছেন। মামলায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর কুমার রায়সহ ৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার বাদী শুভাশীষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারেক রহমানের দুর্নীতি আড়াল করতেই সজীবের বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প বানানো হয়েছে।’
পাবনা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ আজাদ। গতকাল সকালে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম ফারুকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ২১ জুন জয়নাল আবদিন ফারুককে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছেন।
এদিকে এ মামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে পাবনা জেলা বিএনপি। এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল।
মামলার বিবরণে বলা হয়, বিরোধী দলের চিফ হুইপ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জড়িত থাকার প্রমাণ আছে। এ সংবাদ দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় সজীব ওয়াজেদের মানহানি এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করায় বাদীসহ দেশের জনসাধারণের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ১ কোটি টাকার মানহানির মামলা করা হয়েছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/19/23443

Tuesday 16 March 2010

টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়ক : সমানতালে চলছে ডাকাতি ও হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি

মুহাম্মদ তাহের নঈম, টেকনাফ
টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়ক ডাকাত ও হাইওয়ে পুলিশের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সমানতালে চলছে ব্যারিকেড দিয়ে গণডাকাতি ও হাইওয়ে পুলিশের পাইকারি চাঁদাবাজি। ফলে ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ডাকাতি ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ তথা হাইওয়েতে চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আলাদা হাইওয়ে পুলিশ গঠন করে। হাইওয়ে পুলিশ গঠনে সরকারের সদিচ্ছার উল্টো ফল হয়েছে টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কে।
সড়কের তুলাবাগান, থাইংখালী ও হোয়াইক্যংয়ে পৃথক পৃথক পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এরমধ্যে তুলনামূলকভাবে জনবল ও গাড়ি-বাড়ি নিয়ে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশই ভালো অবস্থানে রয়েছে। থাইংখালী পুলিশের কোনো সরকারি গাড়ি নেই। মাঝে মধ্যে নছিমন করিমন বা বেবিট্যাক্সি দিয়ে টহল দিতে দেখা যায়। বিভিন্ন যাত্রী ও গাড়ি মালিকরা জানান, হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সড়কে ডাকাতি সমানতালেই চলছে। প্রতিদিন সড়কের কোনো না কোনো পয়েন্টে ডাকাতি হয়। বেশির ভাগ ডাকাতি হয় থাইংখালী, হোয়াইক্যং এলাকায়। অপরদিকে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ এসআই জিল্লুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিজেকে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, গাড়ির কাগজপত্র চেক করার নামে হয়রানি করে টাকা আদায়, আটক গাড়ি ছেড়ে দেয়া ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন সখ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। সাইফুল ইসলাম চৌধুরী স্বাক্ষরিত ডিআইজি হাইওয়ে রেঞ্জ টেলিকম ভবন, রাজারবাগ, ঢাকা বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এসআই জিল্লুর রহমান চৌধুরী হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশে যোগদানের পর কুকর্মের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তার কুকর্মে বাধা দেয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাবিলদার আবুল কালাম (৯১), নায়েক মোশাররফসহ (১৩০) অনেক কনস্টেবলকে বদলি করে চাঁদাবাজি নির্বিঘ্ন রাখে। টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী হাসান ও সোহেল জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাতে ডাকাতির সম্ভাব্য পয়েন্টে টহল না দিয়ে বাণিজ্য ও লবণের গাড়ি থেকে টাকা তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। অপরদিকে দিনের বেলায় মাসিক চুক্তির টাকা নিতে হালখাতা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। প্রতিদিন মামলার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে মাসোহারা আদায়সহ লবণ বোঝাই ট্রাক, পণ্যবোঝাই ট্রাক, তেলের ট্যাংক-লরি, চান্দের গাড়ি, বাস-মিনিবাস, জিপ, স্পেশাল সার্ভিস, সিএনজি, ট্রাক, দূরপাল্লার বাস, ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসায়ী, কাঠ পাচারকারীসহ প্রভৃতি জায়গায় ভাগ বসিয়ে প্রতি মাসে ৫/৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জিল্লুর। অবৈধ উেকাচের টাকায় জিল্লুর ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করছে বলেও সূত্রে জানা যায়। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে হোয়াইক্যং হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ এসআই জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এদিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের এসপি আনোয়ার কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ধরনের ঘটনার কথা শুনেছেন বলে জানান। শিগগিরই ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
কোরআন ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিকারীর শাস্তি দাবি
স্টাফ রিপোর্টার
মানিকগঞ্জের ঘিওরের তরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.) ও মহাগ্রন্থ আল কোরআন সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতারা।
তারা বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের এ দেশে রাসুল ও কোরআন সম্পর্কে কটূক্তি করে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত দেয়া হয়েছে। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে গ্রেফতার ও যথাযথ শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।
ইসলামী আন্দোলন : ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও আমাদের প্রাণের স্পন্দন রাসুল (সা.) এবং পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বাজে মন্তব্য কোনোক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। এর মাধ্যমে শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও ব্যথিত করেছে। অবিলম্বে বিশ্বজিত মজুমদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হলে জনতা ময়দানে নামতে বাধ্য হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি সরকারের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৯ মার্চ খুলনা, ১৬ এপ্রিল ঢাকা, ৩০ এপ্রিল বরিশাল এবং ২৮ মে রাজশাহীতে বিভাগীয় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
খেলাফত আন্দোলন : খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক নামের কলঙ্ক বিশ্বজিত মজুমদারকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় দেশজুড়ে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে এবং তসলিমা নাসরিনের মতো দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হবে।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন : ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, একজন মহামানব ও ঐশীগ্রন্থ সম্পর্কে কটূক্তিকারী কোনো কুলাঙ্গারের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাকে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/17/23172

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ : ঢাকায় ৪ জনসহ ১০ খুন



স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে নৃশংস খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে আশংকাজনকভাবে। গতকালও রাজধানীতে জোড়া খুনসহ চারজন নিহত হয়। ডেমরার সারুলিয়ায় র্যাবের ক্রসফায়ারে আসাদুজ্জামান রুবেল (৩০) নামের একজন নিহত হয়। আরামবাগে বাস কাউন্টারে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের একজন ইলিয়াস কাঞ্চনকে গলা কেটে ও আবু সুফিয়ানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। অপর ঘটনায় হাইকোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল ফারুককে ছুরিকাঘাতে খুন করে ফেলে রাখা হয় রেললাইনের পাশে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এক প্রবাসীকে কুপিয়ে এবং পাবনায় বিএনপি নেতা আবদুল কাদের মণ্ডলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় আরও অন্তত ২৫ জন আহত হন। রাজশাহীতে কলেজছাত্রকে খুন করা হয়েছে। ঝালকাঠিতে উদ্ধার করা হয়েছে এক যুবকের মাথা কাটা লাশ। খুলনায় আফিল জুট মিলের শ্রমিক জালাল আহমেদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেফটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে হোটেল কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শহিদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির লাশ। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করছে। বরং অনেক ক্ষেত্রে এসব খুনের ঘটনায় তাদের কিছু করার নেই বলে দায় এড়াতে চাইছে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক জোড়া খুন সম্পর্কে বলেছেন, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এ খুন হয়েছে। তিনি বলেন, এসব হত্যাকাণ্ড রোধে পুলিশের কিছু করার নেই। ঘরে ঘরে পুলিশ দেয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
নগরীর মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টোদিকে আরামবাগে সৌদিয়া-এস আলম বাস কাউন্টারে গতকাল সকালে দুই যুবকের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তাদের একজন ইলিয়াস কাঞ্চন (২২) এস আলম কাউন্টারের পিয়ন। তাকে কাউন্টারের ভেতরে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। অপরজন আবু সুফিয়ানকে হত্যা করা হয় শ্বাসরোধ করে। সকালে পুলিশ, র্যাব ও সিআইডি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দুটি ছুরি এবং কিছু আলামত উদ্ধার করে। নোয়াখালীর সেনবাগের বাসিন্দা সুফিয়ান এক সময় গুলিস্তানে সুন্দরবন মার্কেটে ব্যবসা করতেন। ইলিয়াস রাতে কাউন্টারেই ঘুমাতেন। সুফিয়ান ওই রাতে ইলিয়াসের কাছে কেন গিয়েছিলেন, তার সঙ্গে কী সম্পর্ক এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। পুলিশ সুফিয়ান সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। ইলিয়াস কয়েক মাস আগেই বাস কাউন্টারে চাকরি নেন। তার বাসা আরামবাগের ইনার সার্কুলার রোডে। নিহত ইলিয়াস কাঞ্চনের বড় ভাই সুরুজ্জামান জানান, তার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল বলে তার জানা নেই।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার আতিকুল ইসলাম জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের পর এ হত্যার মোটিভ বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর দয়াগঞ্জ রেললাইনের পাশে হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল ফারুক অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন। ফারুক পেশাগত কাজে মুন্সীগঞ্জে গিয়েছিলেন। রাতে ঢাকায় ফেরার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কারা কী কারণে তাকে হত্যা করল এ ব্যাপারে পুলিশ কিছুই জানাতে পারেনি। তবে পুলিশের ধারণা, ছিনতাইকারী অথবা পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে। নিহতের মামা আবদুল হাকিম জানান, মামলা সংক্রান্ত কোনো ঘটনায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। শ্যামপুরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট ফারুক হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভূঁইয়ার জুনিয়র ছিলেন।
পাবনায় বিএনপি নেতা খুন
পাবনা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, গতকাল সকালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভবানীপুরে আওয়ামী লীগের হামলায় পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল কাদের মণ্ডল নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কাদের মণ্ডলের খামারের ব্যাপক ভাংচুর করা হয় এবং সন্ত্রাসীরা খামারের ২৪টি গরু নিয়ে যায়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে পুলিশ বলছে, এলাকায় মাদক নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও বিএনপি জানায়, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে উদয়ন নামে একটি ক্লাবের মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি নেতা কাদের মণ্ডল ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনের গোলমাল চলছিল। এরই জের ধরে সোমবার রাতে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাদের মণ্ডলের ভাই বাজারে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের শাহিন গ্রুপ তাকে ধাওয়া করে। এ খবর পেয়ে পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল কাদের মণ্ডল ক্লাবের পাশ দিয়ে তার ভাইকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী শাহিনের নেতৃত্বে ৩০/৪০ সন্ত্রাসী কাদেরের ওপর হামলা চালায় এবং পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে লাশ নিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে কাদের মণ্ডলের ছেলে ও গ্রামবাসী এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। এ সময় দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে উভয় গ্রুপের প্রায় ২৫ জন আহত হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা কাদের মণ্ডলের ডেইরি ফার্ম ভাংচুর করে এবং ২৪টি গরু নিয়ে যায়। আহতদের পাবনা ও ঈশ্বরদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান মণ্ডল, তাজিম মণ্ডল, তিজার মণ্ডল, রফিক মণ্ডল ও আমিরুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পাবনার পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ আমার দেশকে জানান, এটা কোনো রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়। মাদকসেবনকারী ও প্রতিরোধকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে কাদের মণ্ডল মারা গেছেন। কাদের মণ্ডল মাদকসেবন ও বিক্রি করতেন। এলাকার মাদকবিরোধী যুবকরা নিষেধ করলেও কাদের মণ্ডল না শোনায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরই জের ধরে গতকাল উভয়পক্ষের সংঘর্ষে কাদের মণ্ডল মারা যান। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় ব্যাপক অভিযান চলছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন পাবনা জেলা বিএনপি সভাপতি মেজর (অব.) কেএস মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা, পাবনা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম মুসা ও সাধারণ সম্পাদক রেহানুল ইসলাম বুলাল।
এ ঘটনায় বিএনপি নেতা কাদের মণ্ডলের ছোট ভাই বাদী হয়ে সন্ত্রাসী শাহিন ও বিটুসহ ১৫ জনকে আসামি করে ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেছে।
রাজশাহীতে ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র খুন
আমাদের রাজশাহী অফিস জানায়, জমিজমা বিরোধের জের ধরে সোমবার রাতে রাজশাহী মহানগরীতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে রাজু আহমেদ নামের এক কলেজছাত্র খুন হয়েছে। নিহত রাজু আহমেদ বাগমারা উপজেলার হাসানপুর গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে এবং দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলে জানা যায়। সোমবার রাতে নগরীর নিউমার্কেট গেটের সামনে সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সোয়া ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহত রাজু প্রতিপক্ষের ভয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাগমারা থেকে পালিয়ে রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থান করছিল। এ ঘটনায় নিহতের বাবা এরশাদ আলী বাদী হয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ রাতেই একই এলাকার আলতাব ও সাত্তার নামের দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায়, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী মাহাবুব রশিদ রিন্টু ও তার লোকজন রাজু এবং তার বাবা এরশাদ আলীকে মারধর করে। এ ঘটনায় রাজু বাগমারা থানায় মামলা করলে এর জের ধরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রিন্টু আবারও রাজুকে মারধর করে। এরপর রাজু বাগমারা থেকে পালিয়ে রাজশাহীতে আশ্রয় নেয়। সে নগরীর মোনাফের মোড়ের এক ছাত্রাবাসে তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে থাকত। সন্ধ্যায় সে নিউমার্কেটে কম্পিউটার মেরামত করতে গেলে তিন সন্ত্রাসী রাজুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাজুর পরিবারের দাবি, ছেলে বাবাকে মারধর করার পর বাগমারা থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সে কারণে প্রতিপক্ষ দ্বিতীয় দফায় আবার তাদের মারধর করে। এরপরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই রাজুকে খুন হতে হলো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোয়ালিয়া থানার এসআই হাফিজ বলেন, ঘটনার পর আলতাফ ও সাত্তার নামের দু’জনকে বাগমারা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আখাউড়ার এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা
আমাদের আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, আখাউড়া পৌর শহরের খড়মপুর গ্রামের পৈলন খান খাদেমের ছেলে আকতার খান খাদেমকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
পুলিশ ও পরিবারের লোকজন জানায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে সৌদি আরব থেকে সদ্য আসা আক্তার খান খাদেমকে তার বাড়ি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ পৈরতলায় নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন। এখানে একটি বাড়িতে তাকে আটকে রেখে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে মৃত ভেবে আকতারকে সদর উপজেলার সুলতানপুর সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। রক্তাক্ত ও আহত অবস্থায় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা নেয়ার পথে সে গভীর রাতে মারা যায়।
নিহতের ভাই মোঃ তাকদীর খান খাদেম বলেন, আকতার ২০ দিন আগে সৌদি আরব থেকে এসেছে। সোমবার তার চাচাতো ভাই সুজন খান খাদেম আকতারকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে আসে। সোমবার সন্ধ্যায় আকতার মোবাইলে তাকে জানায়, সুজন, বক্করসহ কয়েকজন তাকে শহরের পৈরতলায় ফরিদ মিয়ার বাড়িতে একটি ঘরে আটক রেখে মারছে। কথার মধ্যেই মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ ফোনের পর তারা রাত সোয়া ১০টায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর আকতারকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পান। পূর্বশত্রুতায় পরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ পৈরতলা থেকে ফরিদ মিয়া নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে। সদর থানার ওসি হামিদুল ইসলাম জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে।
ঝালকাঠিতে যুবকের মাথা কাটা লাশ উদ্ধার
আমাদের ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, জেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের শ্রীমন্তকাঠি বাজারের খালে গতকাল সকাল ৮টায় এক যুবকের মাথা কাটা লাশ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করে। নিহত যুবকের নাম জাকারিয়া (২৩)। সে একই ইউনিয়নের গুয়াটন গ্রামের মৃত আ. আজিজের ছেলে।
ঝালকাঠি থানা পুলিশ জানায়, আত্মীয়দের মধ্যে পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিল। ঝালকাঠি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) উত্তম কুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
খুলনায় শ্রমিকের লাশ উদ্ধার
বিডিনিউজ জানায়, খুলনা নগরীর আফিল জুট মিলের একটি সেফটিক ট্যাংক থেকে জালাল আহমেদ (৫৫) নামের এক অস্থায়ী শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
খানজাহান আলী থানার উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার বিকালে বাসা থেকে কাজে যান আফিল জুট মিলের অস্থায়ী শ্রমিক জালাল। রাতে বাড়িতে না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেন। সকালে অন্য শ্রমিকরা কারখানার ক্যান্টিনের পেছনে একটি সেফটিক ট্যাংকের মধ্যে জালালের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে বলে এসআই মোশাররফ জানান।
শাহজাদপুরে হোটেল কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার
সিরাজগঞ্জ থেকে বিডিনিউজ জানায়, জেলার শাহজাদপুর পৌর এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শহিদুল্লাহ (৫৬) নামের এক ব্যক্তির লাশ। বেলকুচি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আবু নাসের, শাহজাদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ সামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার রাতে হোটেলে ওঠে শহিদুল্লাহ ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন দুপুুর পর্যন্ত তার কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে হোটেলের মালিক পুলিশে খবর দেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/17/23137

কথা রাখেনি বিএসএফ, জৈন্তাপুরে গুলি, ১৯ বাংলাদেশি আহত


Photo:http://www.amardeshonline.com/pages/home/2010/03/15


বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশি গ্রামবাসীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকা থেকে গতকাল ছবিটি তুলেছেন আনিস মাহমুদ|


নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি | তারিখ: ১৫-০৩-২০১০

নয়াদিল্লিতে বিডিআর-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ সময় ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পাথর ছোড়াছুড়ি ও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে বিএসএফের গুলিতে ১৯ বাংলাদেশি আহত হয়।
তবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে অন্তত আট বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সিলেট সেক্টরের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. কোহিনূর আলম জানান।
আহত ব্যক্তিদের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ব্যাপক গুলিবিনিময়ের ঘটনায় ডিবির হাওর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী ঘিলারতইল, নিজপাট ও ফুলবাড়ী গ্রামের মানুষজন আতঙ্কে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। এরপর বিএসএফ সীমান্তের ওপারে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পরিখা খনন করে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিডিআরও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিডিআর-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের পাঁচ দিনের বৈঠক ১১ মার্চ দিল্লিতে শেষ হয়। ওই বৈঠকে বিএসএফ সীমান্তে আর গুলি করবে না বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু কথা রাখেনি তারা। তারা বিরোধপূর্ণ জমিতে অনুপ্রবেশ না করারও প্রতিশ্রুতি দেয়। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই দেশ যৌথ জরিপ চালাতে মতৈক্যে পৌঁছায়।
যোগাযোগ করা হলে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিনিময়ের পর তিনি বিএসএফের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে পাননি। তিনি জানান, মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকের পর সীমান্ত চিহ্নিতকরণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। সেটা শুরু হলে সহিংস ঘটনা আর ঘটবে না।
এ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য জানতে প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনা নিয়ে বিএসএফের কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। কী করে এ ঘটনা ঘটল, বিএসএফ সদর দপ্তর থেকে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত শনিবার গোয়াইনঘাট সীমান্তের পাদুয়ায় পরিখা খননকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বিডিআর-বিএসএফ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পরদিনই জৈন্তাপুর সীমান্তের ডিবির হাওর এলাকায় ভারতীয় খাসিয়াদের অনুপ্রবেশ ঘটে। ডিবির হাওরে ১২৮৩ থেকে ১২৮৫ সীমান্ত পিলারের ভেতরে দুপুর প্রায় ১২টায় ১০-১২ জন ভারতীয় খাসিয়া মাছ ধরতে বিএসএফের সহায়তায় অনুপ্রবেশ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
ভারতীয় খাসিয়াদের ছোড়া পাথরে সোলেমান মিয়া নামের এক ব্যক্তি চোখে আঘাত পান। বিডিআর তখন স্থানীয় মানুষের সহায়তায় অনুপ্রবেশকারীদের তাড়া করলে বিএসএফ গুলি ছোড়ে। বিএসএফের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বিডিআরও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে দুপুর একটায় বিএসএফ ভারতীয় খাসিয়াদের নিয়ে পিছু হটে।
এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর বিএসএফ শতাধিক ভারতীয় খাসিয়াকে নিয়ে আবার ডিবির হাওরে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে মাছ ধরার চেষ্টা চালায়। এ সময় ডিবির হাওর ও ঘিলাতইল গ্রামবাসী খাসিয়াদের বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বেধে গেলে বিএসএফ বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তখন হাওরপারে মন্দিরটিলা এলাকায় অবস্থান নেয় অনেক বাংলাদেশি। আর ঘটনাস্থলে থাকা খাসিয়ারা ভারতে ফিরে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএসএফের অতর্কিত গুলিবর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে বিডিআরও পাল্টা গুলি ছোড়ে। বিএসএফের গুলিতে ১৮ বাংলাদেশি আহত হয়। এর মধ্যে ঘিলারতইল গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম (৪৫) নামের একজনকে সন্ধ্যায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ১৫ জনকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান (৬০), মোহাম্মদ রশিদ (২০), মনির হোসেন (২০), মনির মিয়া (২৫), রাম বিশ্বাস (২৫), মো. মতিন (২০), আবদুর রহমান (২২), আখতার হোসেন (১৭), লালা মিয়া (২৫), রাসেল আহমদ (২৫), আবদুর রহিম (২৬), সুমন মিয়া (২৭), গোলাম রহমান (৫০), আজগর মিয়া (৩০), আকদ্দস আলী (২৮), কবির আহমদ (২৫), মো. লোকমান (২৩) ও মাসুক মিয়া (৩০)। এদের সবার বাড়ি ডিবির হাওর, ঘিলারতইল, নিজপাট ও ফুলবাড়ি গ্রামে।
জৈন্তাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে জানান, আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি খরচে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় চিকিত্সা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে বিডিআর সদর দপ্তর সিলেটের জিএসও-২ (জেনারেল স্টাফ অফিসার) মেজর কোহিনূর আলম জানান, বিএসএফের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বিডিআরও পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দেয়। তিনি জানান, ভারতীয় খাসিয়াদের নিয়ে বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। পরিস্থিতির কারণে বিডিআর সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই বিএসএফ বেশ কয়েকটি পরিখা খনন করে ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অবস্থান নেয়। নিজপাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মখলিছুর রহমান জানান, ডিবির হাওরসহ চারটি গ্রামের মানুষ নিরাপদে সরে গেছে।
৪ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওর ও কেন্দ্রীয় হাওরে ভারতীয় খাসিয়াদের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে বিডিআর-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ২ মার্চ বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম বিরোধপূর্ণ ডিবির হাওর সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেছিলেন, ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত দিল্লিতে বিডিআর-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হবে। দিল্লিতে বৈঠক চলাকালেও ৭ ও ৮ মার্চ ডিবির হাওরে বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয় খাসিয়ারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরার চেষ্টা করেছিল।
ডিবির হাওরে এ বিরোধের পাশাপাশি গত শুক্রবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলা পার্শ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রতাপপুর সীমান্তের পাদুয়ায় পরিখা খনন নিয়ে বিডিআর-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শনিবার দুপুরে বিডিআর-বিএসএফের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-03-15/news/49013

Friday 12 March 2010

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে টেলিফোনে হত্যার হুমকি

Sat 13 Mar 2010 12:08 AM BdST

rtnnঢাকা, ১২ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে ফোনে হত্যার হুমকি দিয়েছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে বাসার টেলিফোন ও তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে এ হুমকি দেয়া হয়।

হুমকির পরপরই বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হত্যার হুমকির বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়ে বলেন, অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা ফোনে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। তবে তার মোবাইল ও টেলিফোন কোনটিতেই হুমকি দাতাদের নাম্বার ওঠেনি বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান এ ঘটনায় গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানা গেছে।
http://rtnn.net/details.php?id=22563&p=1&s=1

Thursday 11 March 2010

No Elecricity in villages



http://jugantor.info/enews/issue/2010/03/12/news0043.php

আটঘরিয়ায় দাখিল পরীক্ষার্থীকে গণধর্ষণ

আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার আটঘরিয়ায় গতকাল ভোর রাতে এক দাখিল পরীক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষিতাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আটঘরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ খোরশেদ আলম (১৭) ও রানা ইসলাম (১৭) নামের দুই নরপশুকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, আটঘরিয়া উপজেলার চৌবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী (১৬) ওই মেয়ে তার খালু অভিরামপুর গ্রামের শাজাহান আলীর বাড়ি থেকে চাঁদভা সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছিল। গতকাল ভোররাতে সহপাঠি খোরশেদ আলম, রানা ইসলামসহ এলাকার ৪/৫ বখাটে তার ঘরে ঢুকে মুখ, হাত-পা বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে আটঘরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
আটঘরিয়া থানার অফিসার ইনচার্য একেএম এনামুল হক জানান, সহপাঠি কয়েক বখাটে তাকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়। এর সঙ্গে জড়িত থাকায় খোরশেদ ও রানাকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শেষে গ্রেফতার করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/12/22404

কেরানীগঞ্জে নৃত্যশিল্পীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
কেরানীগঞ্জে সাগর হোসেন (২২) নামের এক নৃত্যশিল্পীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল সন্ধ্যায় বাদামতলী এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার জাকির হোসেনের ছেলে। নিহতের চাচা নিপু মিয়া জানান, সন্ত্রাসীরা মঙ্গলবার রাতে সাগরকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আমবাগিচায় মনির হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/12/22403

মোহনপুরে শত শত কৃষকের বিক্ষোভ বিদ্যুত্ অফিস ভাংচুর : ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম



রাজশাহী অফিস ও মোহনপুর প্রতিনিধি
রাজশাহীর মোহনপুরে গতকাল বিদ্যুতের দাবিতে কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পল্লী বিদ্যুতের অফিস ঘেরাও করেন। প্রকৌশলীসহ পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুযোগ বুঝে অফিসে তালা ঝুলিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার প্যালেন মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ আহম্মেদ রানার নেতৃত্বে উপজেলার প্রায় ২ হাজার কৃষক প্রথমে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে বিদ্যুতের দাবিতে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে অফিসের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম অফিসের সামনে এলে কৃষকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রকৌশলী পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষকদের নিয়ে ইউএনও অফিসে যান। ইউএনওকে না পেয়ে কৃষকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পল্লী বিদ্যুত্ অফিসের সামনে যান। বিদ্যুত্ অফিসে তালাবদ্ধ দেখে কৃষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে সাইবোর্ডে লাঠিসোটা ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান করার পর বিদ্যুত্ অফিসে কোনো লোক না পেয়ে কৃষকরা বাইরে রাখা চেয়ার, বেঞ্চ ভাংচুর করেন। কৃষকরা উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত্ সরবরাহের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে তারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
কৃষকরা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুতের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ থাকার কথা। অথচ ওই সময়ও বিদ্যুত্ থাকছে না। এতে বোরো ধান লাগানো যাচ্ছে না। যেসব জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে তা পানির অভাবে পুড়ে মরছে। সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেচের অভাবে রোপণকৃত জমির অধিকাংশ বোরো ধান পুড়ে গেছে।
এ ব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যেখানে বিদ্যুতে চাহিদা ৭ মেগাওয়াট, সেখানে কৃষকরা পাচ্ছেন মাত্র ১ মেগাওয়াট। যেখানে ৩টি তারে বিদ্যুত্ থাকলে পানি পাওয়া যায়, সেখানে একটি তারে বিদ্যুত্ থাকায় গভীর নলকূপ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুত্ প্রয়োজন। সেখানে বিদ্যুত্ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। আমাদের চাহিদা ও সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে। মোহনপুর পল্লী বিদ্যুতের জুনিয়র প্রকৌশলী জামাত খান জানান, মোহনপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ৪ মেগাওয়াট, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ মেগাওয়াট।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/12/22380

Wednesday 10 March 2010

বিএসএফ আতঙ্ক, সিলেটের ৫০ গ্রামের মানুষের ঘুম নেই

Thursday, 11 March 2010
ওয়েছ খছরু/ মিনহাজ উদ্দিন, সিলেট থেকে: সিলেট সীমান্তে হাজার হাজার একর জায়গা দখল করে আছে বিএসএফ। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে তারা এসব জমি দখলে নেয়। এরপরও শান্ত নয় বিএসএফ। তাদের চোখ এখন সিলেট সীমান্তের আরও প্রায় এক হাজার একর জমির ওপর। এসব জমি বাংলাদেশী কৃষকদের। তারা এসব জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
গত দুই মাস ধরে বিএসএফ সিলেটের পাদুয়া এলাকার প্রতাবপুরে, তামাবিলের আমসত্ত্বপুরে এবং জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে পর্যায়ক্রমে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সিলেটের ওই সব সীমান্তের প্রায় ৫০টি গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরম্নষের চোখে ঘুম নেই। এদিকে গতকালও সিলেটের ডিবির হাওর এলাকায় মাছ ধরতে নেমেছিল ভারতীয় খাসিয়ারা।

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গত দুই মাস বিএসএফ সীমান্ত এলাকায় যা করেছে তাতে নির্বিঘ্নে থাকার কোন উপায় নেই। বিএসএফ করছে অনুপ্রবেশ। তাদের সঙ্গে খাসিয়ারা এসে ঢুকছে সশস্ত্র অবস্থায়। বলছে, জমি ছেড়ে দিতে। প্রতাবপুর, আমসত্ত্বপুর ও ডিবির হাওর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিএসএফ গত কয়েকদিন ধরে কৃষিকাজে বাধা, নৌ চলাচলে বাধা, পাথর উত্তোলনে বাধা এবং পাথর শ্রমিকদের নৌকা চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এছাড়া প্রতাবপুরের বাবুর কোনা গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছে। সিলেট সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর এলাকা থেকে। ডিবির হাওরে ১২৮৩নং পিলার থেকে ১২৮৬নং পিলার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জমি রয়েছে হাওর এলাকায়। ডিবির হাওর ও কেন্দ্রীয় হাওরের ঢালু জমির জমে থাকা পানিতে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ৪ঠা ফেব্রম্নয়ারি মাছ ধরতে নামে ভারতীয় খাসিয়ারা। বিডিআর এতে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু সে বাধা না মানায় ৪ঠা ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা হয় বিডিআর ও বিএসএফ-এর বন্দুকযুদ্ধ। এ ঘটনার পর ১৪ই ফেব্রম্নয়ারি হয় আবারও বন্দুকযুদ্ধ। দুই দফা বন্দুকযুদ্ধের পর বিডিআর ও বিএসএফ-এর উচ্চ পর্যায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৭ থেকে ৮ বার পতাকা বৈঠক হলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।

গতকাল ডিবির হাওর এলাকার জয়নাল মিয়া মানবজমিনকে জানান, প্রতিদিনই ডিবির হাওরে বিএসএফ-এর সহায়তায় মাছ ধরতে নামে ভারতীয় খাসিয়ারা। বিডিআর মৌখিক প্রতিবাদ জানালে তারা পাত্তা দেয় না। কিন্তু বিডিআর যখন অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয় তখন তারা চলে যায়। তিনি বলেন, বিএসএফ ডিবির ও কেন্দ্রীয় হাওরের প্রায় ৩০০ একর ভূমি তাদের বলে দাবি করে এখন দখলে নিতে চাইছে। ডিবির হাওর এলাকার লোকজন জানান, বিএসএফ তাদের প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দিচ্ছে। এ জন্য তারা কৃষিকাজ এবং মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন। শুধু ডিবি ও কেন্দ্রীয় হাওর নয়- শ্রীপুর পাথর কোয়ারির শ্রমিক, মোকামবাড়ি, আলুবাগান, গুচ্ছগ্রাম, আসামপাড়া, যশপুর, ফলবাড়ি, গিলারতল, কমলাবাড়ি, গোয়াবাড়ি ও মুক্তারপুর এলাকার মানুষজন আতঙ্কে আছেন। পাথর শ্রমিকরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ভারতীয় বিএসএফ সীমান্ত এলাকা থেকে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে।

২০০১ সালে তীব্র লড়াইয়ের পর সিলেটের পাদুয়া সীমান্ত ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ লড়াইয়ের পর থেকে পাদুয়া ও তার পার্শ্ববর্তী প্রতাবপুর সীমান্তের আরও প্রায় ২০০ বিঘা দখলে নিতে বারবার প্রচেষ্টা চালায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। সর্বশেষ গত রোববার প্রতাবপুর সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে বিএসএফ তাদের হাতে জমি তুলে দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে ওই দুই সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এ ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ কারণে প্রতাবপুর সীমান্ত এলাকার প্রতাবপুর গ্রাম, বাবুর কোনা, ঢালারপাড়, দক্ষিণ প্রতাবপুর, পান্দুমাই, সোনারহাট সীমান্তে সোনারহাট ইসলামাবাদ, হাজীপুর, আগলসপুর, নোয়াগাঁও, বাদেশ্বর, কলুমছড়া ও লক্ষণছড়া এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=7787&Itemid=1