Saturday 27 March 2010

জনশক্তি রপ্তানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে

উম্মুল ওয়ারা সুইটি | Kalerkantho ঢাকা, রবিবার, ১৪ চৈত্র ১৪১৬, ১১ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৮ মার্চ ২০১০

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। মহাজোট সরকারি ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অনেক আশ্বাস মিললেও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
জনশক্তি রপ্তানি কমতে কমতে গত মাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পেঁৗছেছে। চলতি মাসে এ সংখ্যা আরো কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, তিন বছরের মধ্যে গত মাসে জনশক্তি রপ্তানি ছিল সর্বনিম্ন। ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ২৭ হাজার ৪৯ জন কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। ২০০৭ সালে একই সময়ে ৩৭ হাজার ৪৩২ জন, ২০০৮ সালে ৭১ হাজার ৭১৬ জন এবং ২০০৯ সালে ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন চাকরি নিয়ে বিদেশে যান।
ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১০ সালের প্রথম দুই মাসে ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। অথচ বিশ্বব্যাপী মন্দার বছর ২০০৯ সালের প্রথম দুই মাসে বিদেশে চাকরি নিয়ে যান ৯৪ হাজার কর্মী।
ব্যুরোর সূত্র মতে, দেশের বড় শ্রম রপ্তানি বাজার সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর করছে না। আবার পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে রুমানিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ রেখেছে। লিবিয়া কর্মী নেওয়া বন্ধ না করলেও খুব কমসংখ্যক লোক সে দেশে যাচ্ছেন। ইরাকে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা কাজে আসছে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনশক্তি রপ্তানি বাজার পুনরুদ্ধারে করণীয় নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয় ও ব্যুরোকে নির্দেশ দিয়েছেন। কী কারণে রপ্তানি কমে গেল তা চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও জনশক্তি রপ্তানির এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে এর কারণ নিরূপণ এবং বাজার পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে জোর তাগিদ দিয়েছে কমিটি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে।' তিনি আরো বলেন, 'বিগত জোট সরকারের সময়ই মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। সে অবস্থা থেকে ফিরে আসতে তো কিছুটা সময়ও লাগবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করেছেন।'
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, 'জনশক্তি রপ্তানি কমে যাচ্ছে এটা ঠিক। এ নিয়ে গত সপ্তায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে বৈঠকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, এ মাস থেকেই যেন এ অচলাবস্থা কেটে যায়, সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি গোলাম মুস্তাফা বলেন, 'সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেই এ রকম ঘটনা ঘটছে। বায়রা এ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। বারবার আশ্বস্ত করা হলেও সৌদি আরব ও কুয়েতে এখনো লোক নেওয়া চালু হয়নি।' তিনি আরো বলেন, 'এক মাস আগে মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে একটি বৈঠক করার। কিন্তু তা নিয়ে বায়রাকে কিছু জানানো হয়নি। টেলিফোন করা হলে মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয় মন্ত্রী এখন ব্যস্ত আছেন।'
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের সর্বনিম্ন রেকর্ড পাওয়ার পর শ্রমবাজার কিভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, তা ঠিক করতে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত সপ্তায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জনশক্তি রপ্তানির পরিস্থিতি কেন এমন হয়েছে তার জবাব চেয়ে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলরদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মন্ত্রণালয় এবং ব্যুরো থেকে জনশক্তি রপ্তানি পরিস্থিতির মন্দা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মন্দা কেটে গেলে জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবে গিয়ে সে দেশের বাদশাহর সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে। এ ছাড়া সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশিরা আকামা পরিবর্তন করতে পারবেন; কিন্তু তা আজও সম্ভব হয়নি বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

No comments:

Post a Comment