Wednesday 24 March 2010

বিদ্যুতের দাবিতে জনতা বিক্ষুব্ধ

Kalerkantho ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ চৈত্র ১৪১৬, ৮ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৫ মার্চ ২০১০

বিদ্যুতের দাবিতে জনতা বিক্ষুব্ধবগুড়ায় ভাঙচুর আগুন, নড়াইলে সড়ক অবরোধ, গোমস্তাপুর ও মাদারীপুরে হামলা প্রিয় দেশ ডেস্কতীব্র লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালন ও সংরক্ষণ এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও মাদারীপুরে গ্রাহক-কৃষকের পৃথক হামলায় আহত হয়েছেন বিদ্যুৎ অফিসের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী। নড়াইলের লোহাগড়ায় কৃষক-জনতা বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেছে। এদিকে নেত্রকোনায় কয়েক হাজার কৃষক সেচকাজে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মিছিল করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া শেরপুরে বিদ্যুতের দাবিতে হয়েছে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
বগুড়া অফিস: বগুড়ায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা হামলা চালিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলে। ওই চত্বরেই অবস্থিত বিউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়। ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সংরক্ষিত ওই এলাকার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। এ সময় বগুড়া শহরের স্টেশন রোডও অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে লোডশেডিং শুরু হলে বগুড়া শহরের পুরান বগুড়া এলাকায় অবস্থিত বিউবোর পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলে কয়েক শ ছাত্র-জনতা গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় সংরক্ষিত ওই এলাকার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে তারা। এরপর সংরক্ষিত এলাকার নিরাপত্তা ছাউনির দরজা ভেঙে ভেতরের চেয়ার, টেবিলসহ কাঠের আসবাবপত্র বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এরপরই তারা সেখানে অবস্থিত বিউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে করে বেশ কয়েকটি ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় শহরের স্টেশন রোড এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধরা।
এ বিষয়ে বগুড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুনীল কান্তি পাল বলেন, হঠাৎ করেই তারা এসে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরো জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই তাদের কিছুই করার নেই।
মাদারীপুর : মাদারীপুরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে শতাধিক গ্রাহক মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালায়। গ্রাহকদের হামলায় তিন কর্মকর্তা আহত হন। এর মধ্যে সাইফুল আহম্মেদের (৩৭) অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম ইকবাল হোসেন এবং হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে প্রায় ১০০ গ্রাহক প্রথমে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালায়। পরে তারা রেস্ট হাউস ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (সাধারণ সেবা) সাইফুল আহম্মেদের বাসায় হামলা চালায়। গ্রাহকদের হাতে থাকা লাঠির আঘাতে ম্যানেজার সাইফুলের মাথায় আঘাত লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া শহরে বিদ্যুতের দাবিতে কয়েক শ উত্তেজিত কৃষক-জনতা বুধবার সড়ক অবরোধ, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুর করেছে। তাদের অভিযোগ, গত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবিতে তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক নড়াইল-লোহাগড়া সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান রুনু বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিলে উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক স্বদেশ কুমারর ঘোষ কালের কণ্ঠকে জানান, সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কৃষকের প্রায় ২৫০টি সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনা সদর ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক জেলা শহরে সেচকাজে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রসাশকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপি পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম। এতে উল্লেখ করা হয়, গত এক মাস ধরে ইরি-বোরো আবাদের জন্য সেচ পাম্পে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আসে তা ড্রেন ভিজাতেই চলে যায়। সেচকাজে এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায় না। স্মারকলিপিতে কৃষকরা প্রতি ফিডারে সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ, সেচ মৌসুমে সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা, সেচ সংযোগের যেকোনো অভিযোগ তাৎক্ষণিক সমাধানের দাবি করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে বুধবার হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোমস্তাপুর ও পার্শ্ববর্তী নাচোল উপজেলার পাঁচ শতাধিক কৃষক মিছিল নিয়ে এসে গোমস্তাপুর বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালায়। এ সময় বাধা দিতে গেলে ঢাকা থেকে অডিটে আসা দুই কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, রজত কুমার দাস, ইলেক্ট্রিশিয়ান জিয়াউল হক ও লাইনম্যান আক্তারুল হোসেন বিক্ষুব্ধ কৃষকদের হাতে লাঞ্ছিত হন।
এ ব্যাপারে ইউএনও সাজ্জাদুল হাসান জানান, কৃষকদের বিক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং দিয়ে যেভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তা কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না।
শেরপুর : ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে বুধবার বিকেলে নিয়মিত বিদ্যুতের দাবিতে কৃষক সমাজের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা প্রদক্ষিণ করে থানা মোড়ে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ শেষে স্থানীয় পাঁচ রাস্তার মোড়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য দেন শেরপুর জেলা গণফোরামের সভাপতি সাইফুর ইসলাম ও ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। সভায় আগামী তিন দিনের মধ্যে নিয়মিত ১১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না হলে হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচির আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment