Sunday 28 March 2010

দাকোপে পানির জন্য হাহাকার : ৬০ হাজার মানুষ পানি সঙ্কটে



এস এম রমজান আলী, দাকোপ (খুলনা)
দাকোপ উপজেলার আইলাদুর্গত এলাকার ৩২ পোল্ডারের কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষের ব্যবহার্য পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রায় সাত-আট কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে লোকজনকে, তাও পানের অযোগ্য পানি। এলাকাবাসীকে ১০ লিটার পুকুরের পানি কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, এসব পানি পান করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশাসহ নানা পেটের পীড়া। জরুরি ভিত্তিতে এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি উঠেছে।
কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা জেলেখালী, জয়নগর, ভিটাভাঙ্গা, চান্নিরচক, রাজনগর, ফকিরডাঙ্গা, পারজয়নগর, কামারখোলা, কালিনগর, সাতঘরিয়া, সাহারাবাদ, শ্রীনগর, সুতারখালী, গুনারী, কালাবগী, নলিয়ান, তেলির কোনা, কালিবাড়ী, গোলবুনিয়া, বাইনপাড়া, মধ্যগুনারী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ইউনিয়ন দুটির সব পুকুর, টিউবওয়েল বা স্যান ফিল্টার কোনটিই ভালো নেই। গত বছর ২৫ মে আইলার কারণে সবকটি মিষ্টি পানির উত্স্য নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি এনজিও পানির সঙ্কট মেটানোর জন্য ট্যাঙ্ক, ড্রাম, মটকি দিলেও তাতে নেই কোনো পানি। বর্তমানে ওইসব এলাকায় পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আইলার পর পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সেনাবাহিনী সুপেয় পানির ব্যবস্থা করলেও এখন আর সে ব্যবস্থা নেই।
কোনো এনজিও বা সংস্থা এলাকায় পানির ব্যবস্থা করছে না। সেজন্য পানি সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকার মহিলা-পুরুষ প্রায় সাত-আট কিমি পথ পায়ে হেঁটে নৌকায় বা ট্রলারযোগে পানি এনে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। অনেকেই শিবসা নদী পাড়ি দিয়ে পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী থেকে পানি আনছে। সেখানেও পুকুরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। বহিরাগতদের পানি নিতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যেসব পুকুর থেকে পানি আনা হচ্ছে তাও পানের অযোগ্য কাদা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দুর্গত এলাকার ফতেমা, লায়লা, সবিতা, হাজেরা, নিলিমা ও কবিতার সঙ্গে। তারা জানান, এ পানি পান করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশাসহ বিভিন্ন পেটের পীড়া। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর দাকোপ থেকে প্রতিদিন ৮ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গুনারী কালিবাড়ী এলাকার স্কুলশিক্ষক মনি মোহন সরদার ও সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কালিবাড়ী বাঁধের ওপর প্রায় সাত-আট হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে তীব্র পানি সঙ্কটের কারণে জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে মানুষ মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা দরকার।
দাকোপের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, আইলা-পরবর্তী সময় এলাকার মানুষের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য এই পর্যন্ত ১০১টি অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, যার মধ্যে সুকারখালীতে ৪৮টি, কামারখোলায় ৩৪টি, তিলডাঙ্গায় ৭টি, উপজেলা সদর চালনায় ৯টি ও পানখালীতে ৩টি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন ৮ হাজার লিটার পানি এলাকায় সরবরাহ করছি। সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত, এলাকায় পানি সঙ্কট দূর করার জন্য পর্যাপ্ত পরিক্ষামূলক গভীর নলকূপ বসানো দরকার। কারণ প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিবর্তন হয়। তাছাড়া এলাকার বিভিন্ন পুকুর সংস্কার করে পিএসএফ বসালে পানি সঙ্কট অনেকটা দূর করা সম্ভব হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে যে পানি দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে আরও বেশি পানি যাতে এলাকাবাসী পায় তার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/03/29/24792

No comments:

Post a Comment