Wednesday 10 March 2010

বিএসএফ আতঙ্ক, সিলেটের ৫০ গ্রামের মানুষের ঘুম নেই

Thursday, 11 March 2010
ওয়েছ খছরু/ মিনহাজ উদ্দিন, সিলেট থেকে: সিলেট সীমান্তে হাজার হাজার একর জায়গা দখল করে আছে বিএসএফ। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে তারা এসব জমি দখলে নেয়। এরপরও শান্ত নয় বিএসএফ। তাদের চোখ এখন সিলেট সীমান্তের আরও প্রায় এক হাজার একর জমির ওপর। এসব জমি বাংলাদেশী কৃষকদের। তারা এসব জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
গত দুই মাস ধরে বিএসএফ সিলেটের পাদুয়া এলাকার প্রতাবপুরে, তামাবিলের আমসত্ত্বপুরে এবং জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে পর্যায়ক্রমে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সিলেটের ওই সব সীমান্তের প্রায় ৫০টি গ্রামের কয়েক হাজার নারী-পুরম্নষের চোখে ঘুম নেই। এদিকে গতকালও সিলেটের ডিবির হাওর এলাকায় মাছ ধরতে নেমেছিল ভারতীয় খাসিয়ারা।

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গত দুই মাস বিএসএফ সীমান্ত এলাকায় যা করেছে তাতে নির্বিঘ্নে থাকার কোন উপায় নেই। বিএসএফ করছে অনুপ্রবেশ। তাদের সঙ্গে খাসিয়ারা এসে ঢুকছে সশস্ত্র অবস্থায়। বলছে, জমি ছেড়ে দিতে। প্রতাবপুর, আমসত্ত্বপুর ও ডিবির হাওর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিএসএফ গত কয়েকদিন ধরে কৃষিকাজে বাধা, নৌ চলাচলে বাধা, পাথর উত্তোলনে বাধা এবং পাথর শ্রমিকদের নৌকা চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এছাড়া প্রতাবপুরের বাবুর কোনা গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছে। সিলেট সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর এলাকা থেকে। ডিবির হাওরে ১২৮৩নং পিলার থেকে ১২৮৬নং পিলার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জমি রয়েছে হাওর এলাকায়। ডিবির হাওর ও কেন্দ্রীয় হাওরের ঢালু জমির জমে থাকা পানিতে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ৪ঠা ফেব্রম্নয়ারি মাছ ধরতে নামে ভারতীয় খাসিয়ারা। বিডিআর এতে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু সে বাধা না মানায় ৪ঠা ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা হয় বিডিআর ও বিএসএফ-এর বন্দুকযুদ্ধ। এ ঘটনার পর ১৪ই ফেব্রম্নয়ারি হয় আবারও বন্দুকযুদ্ধ। দুই দফা বন্দুকযুদ্ধের পর বিডিআর ও বিএসএফ-এর উচ্চ পর্যায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৭ থেকে ৮ বার পতাকা বৈঠক হলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।

গতকাল ডিবির হাওর এলাকার জয়নাল মিয়া মানবজমিনকে জানান, প্রতিদিনই ডিবির হাওরে বিএসএফ-এর সহায়তায় মাছ ধরতে নামে ভারতীয় খাসিয়ারা। বিডিআর মৌখিক প্রতিবাদ জানালে তারা পাত্তা দেয় না। কিন্তু বিডিআর যখন অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয় তখন তারা চলে যায়। তিনি বলেন, বিএসএফ ডিবির ও কেন্দ্রীয় হাওরের প্রায় ৩০০ একর ভূমি তাদের বলে দাবি করে এখন দখলে নিতে চাইছে। ডিবির হাওর এলাকার লোকজন জানান, বিএসএফ তাদের প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দিচ্ছে। এ জন্য তারা কৃষিকাজ এবং মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন। শুধু ডিবি ও কেন্দ্রীয় হাওর নয়- শ্রীপুর পাথর কোয়ারির শ্রমিক, মোকামবাড়ি, আলুবাগান, গুচ্ছগ্রাম, আসামপাড়া, যশপুর, ফলবাড়ি, গিলারতল, কমলাবাড়ি, গোয়াবাড়ি ও মুক্তারপুর এলাকার মানুষজন আতঙ্কে আছেন। পাথর শ্রমিকরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ভারতীয় বিএসএফ সীমান্ত এলাকা থেকে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে।

২০০১ সালে তীব্র লড়াইয়ের পর সিলেটের পাদুয়া সীমান্ত ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ লড়াইয়ের পর থেকে পাদুয়া ও তার পার্শ্ববর্তী প্রতাবপুর সীমান্তের আরও প্রায় ২০০ বিঘা দখলে নিতে বারবার প্রচেষ্টা চালায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। সর্বশেষ গত রোববার প্রতাবপুর সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে বিএসএফ তাদের হাতে জমি তুলে দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে ওই দুই সীমান্তে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এ ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিএসএফ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ কারণে প্রতাবপুর সীমান্ত এলাকার প্রতাবপুর গ্রাম, বাবুর কোনা, ঢালারপাড়, দক্ষিণ প্রতাবপুর, পান্দুমাই, সোনারহাট সীমান্তে সোনারহাট ইসলামাবাদ, হাজীপুর, আগলসপুর, নোয়াগাঁও, বাদেশ্বর, কলুমছড়া ও লক্ষণছড়া এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&task=view&id=7787&Itemid=1

No comments:

Post a Comment