Sunday 28 March 2010
ছুরিকাঘাতে বগুড়ায় যুবলীগ নেতা রংপুরে সেনা সদস্য খুন
কালের কণ্ঠ ডেস্কবগুড়ায় | ঢাকা, সোমবার, ১৫ চৈত্র ১৪১৬, ১২ রবিউস সানি ১৪৩১, ২৯ মার্চ ২০১০
গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ইউনিয়ন যুবলীগের এক সভাপতি খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক যুবলীগ কর্মী। অন্যদিকে রংপুুরে গতকাল রবিবার ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক সেনা সদস্য খুন হয়েছেন।
আমাদের বগুড়া অফিস জানায়, জেলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে যুবলীগ নেতা শফিক চৌধুরী (২৬) খুন হয়েছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে রাসেল নামে আরেক যুবলীগ কর্মীও ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতের বাবা বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো সাত-আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ মতি নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই রাতেই মেলাটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিক চৌধুরী (২৬) ও যুবলীগ কর্মী রাসেল মোটরসাইকেল নিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে গেলে গেটে কয়েকজন যুবক তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই যুবকরা শফিক ও রাসেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয় লোকজন তাঁদের দ্রুত বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সোয়া ১২টার দিকে শফিক মারা যান। পরে গতকাল দুপুরে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে দাফন করা হয়। নিহত শফিক বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক গ্রামের আব্দুর রহমান ওরফে জব্বার চৌধুরীর ছেলে।
মামলার বাদী জব্বার চৌধুরী জানান, তাঁর ছেলে মেলার একটি স্টল নিয়মিত দেখাশোনা করতেন। এ কারণে শনিবার রাতে সেখানে গেলে শহরের কিছু যুবক তাঁকে ও রাসেলকে ছুুরিকাঘাত করে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুরুল হক ভঁূইয়া জানান, ঘটনার পরপরই নিরাপত্তার কথা ভেবে মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ খুনের ঘটনায় গতকাল দুপুরে শহরতলির ভবেরবাজার এলাকা থেকে মামলার এজাহার নামীয় আসামি মতি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বগুড়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে মার্চ মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। পরে প্রশাসন আরো ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করেছিল। এ মেলায় জুয়া ও হাউজি খেলাও চলত।
রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রংপুরে গতকাল রবিবার ভোরে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহাদুল ইসলাম আহাদ (২৮) নামে এক সেনা সদস্য খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই কোরবান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
জানা যায়, নিহত আহাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউজানে। রংপুর শহরের সেনপাড়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি হওয়ায় কোতোয়ালি থানার পাশে মুলাটোলের এক বাসায় স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে নম্রকে নিয়ে সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকতেন। তিনি খাগড়াছড়ি সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক শাহজাহান আলী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ সরকার জানান, শনিবার রাতে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের একটি গাড়িতে চড়ে রবিবার ভোর আনুমানিক ৫টায় রংপুরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে আসেন সেনা সদস্য আহাদ। মুলাটোল থানার পাশের নিজ বাসায় যাওয়ার জন্য শাহজাহান আলীর রিকশায় উঠেন। পথিমধ্যে গণেশপুর বকুলতলা এলাকায় পেঁৗছার পর মুখোশধারী দুই ছিনতাইকারী রিকশার গতিরোধ করে এবং তাঁর কাছে টাকা ও মোবাইল ফোনসেটসহ যা যা আছে বের করে দিতে বলে। কিন্তু সেনা সদস্য আহাদ তা দিতে অস্বীকার করলে ছিনতাইকারীরা রিকশা থেকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে রিকশাচালকের কাছ থেকে একটু দূরে নিয়ে যায়। সেখানেই ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে চলে যায় ছিনতাইকারীরা। এরপর আহাদকে নিয়ে রিকশাচালক হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আহাদের পরিবার ও রংপুর সেনানিবাসের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর করা হলে সেনানিবাসে বাদ আসর জানাজা শেষে হিমঘরে লাশ রাখা হয়। আজ সোমবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউজান গ্রামে তাঁর লাশের দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
নিহতের বড় ভাই কোরবান আলী জানান, আহাদ সাত মাস আগে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে রংপুর শহরের সেনপাড়া মহল্লার মহিলা সমিতির পেছনের রিনা ইসলামকে বিয়ে করে ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী মুলাটোলায় ভাড়া বাসাতে থাকতেন।
নিহতের স্ত্রী রিনা জানান, খাগড়াছড়ি সেনানিবাস থেকে গত শনিবার ১০ দিনের ছুটি নিয়ে বাসায় আসার কথা ছিল তাঁর স্বামী আহাদের। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'স্বামী বাসায় এসেছে ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে।'
রিকশাচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম জানান, ছিনতাইকারীরা আহাদের সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পর আহাদ তাদের কাছে তাঁর আইডি কার্ড ফেরত চেয়েছিল। ওই সময়ই আহাদের পেটে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। এতে তাঁর পেটে ৫ ইঞ্চি ক্ষত হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ সরকার জানান, ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে থানায় আনা হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় গোপন রেখে এবং তারা এ ঘটনায় জড়িত নয় বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, ওই দুজনের মাধ্যমে কোনো ক্লু পাওয়া যেতে পারে এমন ধারণায়ই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment