Monday 31 October 2011

নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষের হাপিত্যেশ

স্টাফ রিপোর্টার
ভালো মানের কাটারিভোগ ৬২-৬৫ টাকা ও নাজিরশাল ৫৬-৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ১২০ টাকা। ৫০ টাকার কমে কাঁচাতরকারি কেনা যায় না। একইভাবে তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দাসহ সব পণ্যই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে আটা, ময়দা ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। ক্রেতারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে কাঁচাতরকারিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে অগ্নিমূল্য। তিন বেলা খাবার কিনতেই রোজগারের বেশিরভাগ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবন ওষ্ঠাগত। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় মানুষের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, একই পণ্য বাজারভেদে ১০-২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে নেই কোনো তদারকি। সেই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন সাপ্তাহিক বাজার করতে গতকাল কারওয়ান বাজারে আসেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৪ টাকা, সিম ৭০ টাকা ও ছোট আকারের প্রতি পিস কপি ৩০ টাকা দরে কিনেছেন। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বসুন্ধরা কাঁচাবাজার থেকে গতকাল সিম ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০-৬০ টাকা দরে কিনেছেন। এ দুই বাজারের কাঁচাতরকারির দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একই শহরের দুই বাজারে প্রতিটি পণ্যের দামের পার্থক্য ১০-২০ টাকা বেশি। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৫৬-৫৮ টাকা, মাধ্যম মানের ৫২-৫৪ টাকা, মিনিকেট ৪৬-৪৮ টাকা, কাটারিভোগ ৬২-৬৫ টাকা, পোলাও চাল ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা চিনি ৬৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৭০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১২১-১২৪ টাকা, পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্রান্ডের সয়াবিন তেল ৬০০-৬১০ টাকা, মসুর ডাল ৯০-১০০ টাকা, মধ্যম মানের মসুর ডাল ৮০ টাকা, মুগ ডাল ১২৫-১৩০ টাকা, খোলা আটা ২৮-৩০ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৩৩ টাকা, খোলা ময়দা ৩৮-৪০ টাকা, প্যাকেটজাত ময়দা ৪২ টাকা, পেঁয়াজ ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। আগে তা ১২৫-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া গরুর মাংস ২৭০ টাকা ও খাসির মাংস ৪২০-৪৪০ টাকা। প্রতি হালি ডিমের দাম ২৮ টাকা।

নির্বাচন সামনে রেখে কমিশনে গণবদলি : আ’লীগ ঘেঁষা কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে নেয়া হচ্ছে

কাজী জেবেল
নির্বাচন কমিশনে গণবদলি শুরু হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কমিশন সচিবালয় পর্যন্ত সর্বত্র বদলির প্রক্রিয়া চলছে। সচিবালয়ে কর্মরত উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কর্মকর্তাদের তৃণমূল থেকে ঢাকায় পদায়ন করা হচ্ছে। একই অবস্থা উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও। এবারই প্রথম এত বড় রদবদল করল নির্বাচন কমিশন।
গণবদলির প্রতিবাদে কর্মকর্তারা যাতে আন্দোলনে না যান তার কৌশল হিসেবে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৫৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন যুগ্ম সচিব ছাড়া বাকিদের মাঠপর্যায়ে বদলি করা হচ্ছে। বাকিদের বিষয়ে শিগগিরই আদেশ জারি করবে কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গণবদলির কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, একই পদে কর্মকর্তারা বছরের পর বছর থাকায় তাদের মধ্যে একগুঁয়েমি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা এসে গেছে। বদলির ফলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা সচিবালয়ে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। এতে কমিশনের কাজে গতি আসবে। তবে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানান, আমরা অসত্ হলে বিগত জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে বলে কমিশন কোন যুক্তিতে দাবি
করে? বরং জাতীয় সংসদ ও ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে সুবিধা করে দিতেই কমিশন গণবদলি শুরু করেছে। এতে কমিশন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বে দলীয় তকমা লেগে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দাফতরিক অভিজ্ঞতা কম থাকায় কমিশনের কাজে স্থবিরতা দেখা দেবে। এ নিয়ে সচিবালয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদাসহ তিন নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে। কমিশন পুনর্গঠন করা হবে। জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচন নতুন কমিশনারদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। ওই কমিশন তাদের সুবিধা অনুযায়ী প্রশাসনে রদবদল করবেন। কিন্তু মাত্র চার মাস মেয়াদ থাকতে বর্তমান কমিশন সংশোধিত চাকরিবিধির দোহাই দিয়ে বড় ধরনের রদবদল করছে। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উপ-সচিব পদের কর্মকর্তাদের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র সহকারী সচিব পদের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী সচিবদের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, গতকাল ৫৬ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত উপ-সচিব জেসমিন টুলী এবং ঢাকার বিভাগীয় উপনির্বাচন কমিশনার ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুত্ফর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। কমিশনে কর্মরত আরেক উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদকে ঢাকা বিভাগীয় উপনির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। তবে আপাতত তাকে পদায়ন করা হচ্ছে না। দু’মাস পর বিশ্বাস লুত্ফর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে ওই দায়িত্বে দেয়া হবে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদার পিএস মোস্তাফা ফারুককে বরিশালে, সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল বাতেনকে সিলেটে, ফরহাদ আহম্মেদ খানকে চট্টগ্রামে, ইসরাইল হোসেনকে রংপুরে, আবুল কাশেমকে কুমিল্লায়, সুভাষ চন্দ্রকে রাজশাহীতে, সৈয়দ খুরশীদ আনোয়ারকে ময়মনসিংহে, সৈয়দ মুসাকে ফরিদপুরে ও মিজানুর রহমানকে খুলনা আঞ্চলিক উপনির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা এতদিন কমিশন সচিবালয়ে ছিলেন। তাদের স্থলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হবে।
জানা গেছে, ঈদের আগে ও পরে সিইসি দু’জন উপ-সচিবের সঙ্গে বসে কমিশন কর্মকর্তাদের কাকে কোথায় বদলি করা হবে, তার তালিকা চূড়ান্ত করেন। এ নিয়ে কমিশন বৈঠকে দু’দফা আলোচনাও হয়েছে। কয়েক মাস আগে কমিশনের সব কর্মকর্তার কাছে একটি ফরম দেয়া হয়। এ ফরমে কর্মকর্তার নাম, পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মাঠপর্যায়ে তিনটি পছন্দের জায়গা উল্লেখ করতে বলা হয়। কিন্তু বদলির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পছন্দের জায়গাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।
পদোন্নতি পাওয়া ৫৬ কর্মকর্তা : গতকাল পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৬ কর্মকর্তার মধ্যে ২ জন যুগ্ম সচিব, ৯ জন উপ-সচিব ও ৪৪ জন সিনিয়র সহকারী সচিব / অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা / জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা / উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে বেগম জেসমিন টুলী ও বিশ্বাস লুত্ফর রহমান, উপ-সচিব / পরিচালক পদে খোন্দকার মিজানুর রহমান, মো. আনোয়ার হোসেন, এস এম এজহারুল হক, মোস্তফা ফারুক, ফরহাদ হোসেন খান, মো. আবদুল বাতেন, বেগম সুফিয়া জাহান, মো. মহসীন আলী ও মোহাম্মদ ইসরাইল হোসেন পদোন্নতি পেয়েছেন। সিনিয়র সহকারী সচিব / অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা / জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা / উপ-পরিচালক পদে মো. আবদুল হালিম খান, মো. সাবেদ-উর-রহমান, তারাচাঁদ রাজভর, বেগম রাশিদা খানম, মো. আবদুল মোতালেব, মো. নওয়াবুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মাহবুব আলম শাহ, ফয়সল কাদের, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আবদুল হাফেজ, মো. সরওয়ার জাহান, মো. আতিয়ার রহমান, আবদুল মমিন সরকার, মোহাম্মদ মনির হোসেন, মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, মোহাম্মদ নূরুল আলম, মো. শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক, এম মাজহারুল ইসলাম, মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, খানাবি শাহানুর খান, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ এনামুল হক, মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম, মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মো. হেলাল উদ্দিন খান, মো. রোকুনুজ্জামান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, তারেক আহম্মেদ, ওহিদুজ্জামান মুন্সী, মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন মল্লিক, মো. সোহেল সামাদ, মো. মুনীর হোসাইন খান, মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মোতাহসিম, মো. হাবিবুর রহমান, মো. শাহ আলম, মোহাম্মদ আতাউর রহমান, এএইচএম কামরুল হাসান, সুধাংশু কুমার সাহা, মো. আবদুর রহিম, বেগম জাকিয়া সুলতানা ও মো. তারিকুজ্জামান।

Saturday 1 October 2011

অভিজাত উত্তরার বেশকিছু সড়ক পাড়াগাঁয়ের রাস্তার মতোই বেহাল



আলাউদ্দিন আরিফ
অভিজাত আবাসিক এলাকা উত্তরার অধিকাংশ রাস্তা এখন অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তার মতোই বেহাল। রাস্তায় জমে আছে কাদা, নোংরা আবর্জনা, নেই কার্পেটিং। এভিনিউ সড়কগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও মহল্লার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা দীর্ঘদিন থেকে। উত্তরার পার্শ্ববর্তী নিকুঞ্জ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কাওলার এলাকার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা দেখা গেছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ দুর্বিষহ নাগরিক যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করছে। উত্তরাজুড়েই বিভিন্ন বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রাখা। ফলে রাস্তা খারাপ হচ্ছে, ড্রেন বন্ধ হচ্ছে, এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরার ১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টরের মধ্যে ১, ৩, ৫ নম্বর সেক্টর ও এভিনিউ সড়কগুলো মোটামুটি ভালো। বেহাল অবস্থা ২, ৪, ৯, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের রাস্তাগুলোর। ৯ নম্বর সেক্টরের একটি সড়কও ভালো নেই। সবক’টিতে নোংরা কাদা আর খানাখন্দে ভরা।
আবদুল্লাহপুর বাসটার্মিনালের পশ্চিম পাশে ৯ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর ও ১০/এ নম্বর সড়ক যেন অজপাড়াগাঁয়ের কাদামাটির বেহাল কোনো সড়ক। এ রাস্তার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সেখানে রাজউকের কিছু জমি রয়েছে। ওইগুলো স্থানীয় সরকারি দল আশ্রিত কিছু সন্ত্রাসী মাস্তান দখল করে দোকানঘর ও বস্তি বানিয়েছে। এসব দোকানে চলে গাঁজা ফেনসিডিলের ব্যবসা। এসব নিয়ে ৯ নম্বর সেক্টরের বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা চরম উদ্বেগ ও অসহনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তারা কয়েক দফা র্যাবকে জানানোর পর র্যাব অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও কয়েক জনকে আটক করে। কিন্তু অবৈধ দখল বা মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি। ১২ ও ১০/এ নম্বর সড়কে অবৈধ দখলদাররা রাস্তার ওপর নোংরা আবর্জনা ফেলে রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ করে রেখেছে। বস্তি ও দোকানের বর্জ্য পানি রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না সারাবছরই সড়কগুলো কর্দমাক্ত থাকছে।
উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড ব্রাক মার্কেটের সামনে থেকে ৪ ও ৬ নম্বর সেক্টরের মাঝখান দিয়ে উত্তরখানের শাহকবির মাজার পর্যন্ত সড়কটিকে এখন আর সড়ক বলা যায় না। পুরোটাই বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী হাবিবুর রহমান বলেন, জীবন হাতে নিয়ে রিকশা বা ম্যাক্সিতে উঠতে হয়। খারাপ রাস্তার কারণে ১৫ টাকার রিকশাভাড়া দিতে হয় ৪০ টাকা। তাও রিকশা চালকরা যেতে চায় না। রিকশায় গেলে কোমর ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয়। আর বৃষ্টি হলে এলাকায় যেন আতঙ্ক নামে। স্কুল -কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিদারুণ কষ্ট স্বীকার করে এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। বৃষ্টির সময় হেঁটে গেলেও পোশাক বদলাতে হয়।
উত্তরখান এলাকার আবদুল্লাহপুর-আঁটিপাড়া সড়কটি বহুদিন থেকেই বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। মাস্টারবাড়ি, রাজবাড়ি, ময়নারটেক, সরকারপাড়া, মাদারবাড়ি, মধ্যপাড়া, মোল্লারটেক, উত্তরখান ও কাচকুড়া এলাকার সড়কগুলোরও বেহাল দশা। দক্ষিণখান থানা এলাকায় হাজীক্যাম্প থেকে দক্ষিণখান, নগরিয়াবাড়ি, বেতুলি, ভাটুরিয়া, দিলনা, তালনা, কাওলা এলাকার সবক’টি সড়ক ও গলির অবস্থা বেহাল। আশকোনা এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন জানান, জরুরি সরকারের দুই বছর ও এ সরকারের আড়াই বছরে এসব রাস্তার সংস্কার হয়নি।
মাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আলমাস হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নির্বাচনী এলাকা এটি। তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সড়ক মেরামতের কিন্তু গত আড়াই বছরে একটি সড়কও ভালোভাবে মেরামত করা হয়নি। ৬ মাস আগে উত্তরা ময়নারটেক সড়কটি কার্পেটিং করা হলেও বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই সেটি ফিরে গেছে আগের অবস্থানে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দলীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ করানোর কারণে এ অবস্থা হয়েছে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৯টি সড়ক, ৯ নম্বর সেক্টরের সবকটি সড়ক, ৭ নম্বর সেক্টরের বেশ কয়েকটি সড়ক, উত্তরা হাইস্কুলের আশপাশের সড়ক, ১৪ নম্বর সেক্টরের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে।
২ নম্বর সেক্টরের র্যাব-১ কার্যালয়ের উত্তর পাশের সড়ক, ৪ নম্বর সেক্টরের মূলসড়ক ও আশপাশের সড়ক, ৪ নম্বর সেক্টরের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সামনের সড়ক, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের আশপাশের সড়ক, ৬ নম্বর সেক্টরের বেশ কয়েকটি সড়ক, ৮ নম্বর সেক্টরের সড়কগুলো অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। উত্তরা-৮ নম্বর সেক্টরের আলাউল এভিনিউর শেষ প্রান্তের সড়কগুলোর দু’পাশ এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে।
১২ নম্বর সেক্টরের ১২, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর সড়কের অবস্থাও বেহাল অনেক দিন থেকে। ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কটি ভেঙে কার্পেটিং ধুয়ে-মুছে ছোট জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। ১২ নম্বর সেক্টরের ১৮ থেকে ২০ নম্বর সড়ক দিয়ে বর্ষা মৌসুমে হাঁটার উপায় থাকে না। রাস্তার মাঝে মাঝে দেড় থেকে দুই ফুট গভীর গর্ত। প্রাইভেট কার এসব গর্তে একবার পড়লে আর তোলার উপায় থাকে না।
উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, গুলশানের পরই দেশের সবচেয়ে অভিজাত বনেদি আবাসিক এলাকা উত্তরা। ৯ নম্বর সেক্টরসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে সড়কের অবস্থা এমন হয়েছে যে মনে হয় অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তা। কোনো কোনো সড়কে বর্ষার দিনে গাড়ি নিয়ে বেরুলে আটকা পড়তে হয়, হেঁটে চলতে গেলে জামা-কাপড় নষ্ট হয়।
এদিকে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাটগুলোও বহু বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে সবগুলো সড়কই খারাপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬-৭ বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। একবার বৃষ্টি হলে ৭-৮ ঘণ্টা সময়েও সড়কের জলাবদ্ধতা দূর হয় না। সড়কগুলোর অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে এ আবাসিক এলাকায় ভাড়াটিয়ার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যাদের বাড়িভাড়া একমাত্র আয় তাদের অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে। যেসব বাড়ির মালিক ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি করেছেন তাদেরও ত্রাহি অবস্থা। বাসিন্দারা জানান, রাস্তাগুলো এতই খারাপ যে রিকশা পর্যন্ত যেতে চায় না। নিকুঞ্জ-২ এর ৫ নম্বর সড়ক থেকে ১৬ নম্বর সড়ক পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ম্যানহোলের বর্জ্য সড়কের ওপর পড়ছে। নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশাসহ এলাকার সমস্যা সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি তারা স্থানীয় এমপি সাহারা খাতুনকে দিয়েছেন। কিন্তু বার বার তিনি আশ্বাস দেয়ার পরও বর্তমান সরকারের আমলে ওই এলাকার এক চুল পরিমাণও উন্নয়ন হয়নি। হয়নি বেহাল রাস্তাগুলোর সংস্কার।
উত্তরা, নিকুঞ্জ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই এলাকার সড়কগুলোর উন্নয়ন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেটা করছেন না। বেহাল রাস্তা সম্পর্কে স্থানীয় এমপি সাহারা খাতুনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।