Monday 31 October 2011

নির্বাচন সামনে রেখে কমিশনে গণবদলি : আ’লীগ ঘেঁষা কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে নেয়া হচ্ছে

কাজী জেবেল
নির্বাচন কমিশনে গণবদলি শুরু হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কমিশন সচিবালয় পর্যন্ত সর্বত্র বদলির প্রক্রিয়া চলছে। সচিবালয়ে কর্মরত উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কর্মকর্তাদের তৃণমূল থেকে ঢাকায় পদায়ন করা হচ্ছে। একই অবস্থা উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও। এবারই প্রথম এত বড় রদবদল করল নির্বাচন কমিশন।
গণবদলির প্রতিবাদে কর্মকর্তারা যাতে আন্দোলনে না যান তার কৌশল হিসেবে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৫৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন যুগ্ম সচিব ছাড়া বাকিদের মাঠপর্যায়ে বদলি করা হচ্ছে। বাকিদের বিষয়ে শিগগিরই আদেশ জারি করবে কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গণবদলির কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, একই পদে কর্মকর্তারা বছরের পর বছর থাকায় তাদের মধ্যে একগুঁয়েমি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা এসে গেছে। বদলির ফলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা সচিবালয়ে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। এতে কমিশনের কাজে গতি আসবে। তবে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানান, আমরা অসত্ হলে বিগত জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে বলে কমিশন কোন যুক্তিতে দাবি
করে? বরং জাতীয় সংসদ ও ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে সুবিধা করে দিতেই কমিশন গণবদলি শুরু করেছে। এতে কমিশন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বে দলীয় তকমা লেগে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দাফতরিক অভিজ্ঞতা কম থাকায় কমিশনের কাজে স্থবিরতা দেখা দেবে। এ নিয়ে সচিবালয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদাসহ তিন নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে। কমিশন পুনর্গঠন করা হবে। জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচন নতুন কমিশনারদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। ওই কমিশন তাদের সুবিধা অনুযায়ী প্রশাসনে রদবদল করবেন। কিন্তু মাত্র চার মাস মেয়াদ থাকতে বর্তমান কমিশন সংশোধিত চাকরিবিধির দোহাই দিয়ে বড় ধরনের রদবদল করছে। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উপ-সচিব পদের কর্মকর্তাদের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র সহকারী সচিব পদের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী সচিবদের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, গতকাল ৫৬ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত উপ-সচিব জেসমিন টুলী এবং ঢাকার বিভাগীয় উপনির্বাচন কমিশনার ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুত্ফর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। কমিশনে কর্মরত আরেক উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদকে ঢাকা বিভাগীয় উপনির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। তবে আপাতত তাকে পদায়ন করা হচ্ছে না। দু’মাস পর বিশ্বাস লুত্ফর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে ওই দায়িত্বে দেয়া হবে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদার পিএস মোস্তাফা ফারুককে বরিশালে, সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল বাতেনকে সিলেটে, ফরহাদ আহম্মেদ খানকে চট্টগ্রামে, ইসরাইল হোসেনকে রংপুরে, আবুল কাশেমকে কুমিল্লায়, সুভাষ চন্দ্রকে রাজশাহীতে, সৈয়দ খুরশীদ আনোয়ারকে ময়মনসিংহে, সৈয়দ মুসাকে ফরিদপুরে ও মিজানুর রহমানকে খুলনা আঞ্চলিক উপনির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা এতদিন কমিশন সচিবালয়ে ছিলেন। তাদের স্থলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হবে।
জানা গেছে, ঈদের আগে ও পরে সিইসি দু’জন উপ-সচিবের সঙ্গে বসে কমিশন কর্মকর্তাদের কাকে কোথায় বদলি করা হবে, তার তালিকা চূড়ান্ত করেন। এ নিয়ে কমিশন বৈঠকে দু’দফা আলোচনাও হয়েছে। কয়েক মাস আগে কমিশনের সব কর্মকর্তার কাছে একটি ফরম দেয়া হয়। এ ফরমে কর্মকর্তার নাম, পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মাঠপর্যায়ে তিনটি পছন্দের জায়গা উল্লেখ করতে বলা হয়। কিন্তু বদলির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পছন্দের জায়গাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।
পদোন্নতি পাওয়া ৫৬ কর্মকর্তা : গতকাল পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৬ কর্মকর্তার মধ্যে ২ জন যুগ্ম সচিব, ৯ জন উপ-সচিব ও ৪৪ জন সিনিয়র সহকারী সচিব / অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা / জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা / উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে বেগম জেসমিন টুলী ও বিশ্বাস লুত্ফর রহমান, উপ-সচিব / পরিচালক পদে খোন্দকার মিজানুর রহমান, মো. আনোয়ার হোসেন, এস এম এজহারুল হক, মোস্তফা ফারুক, ফরহাদ হোসেন খান, মো. আবদুল বাতেন, বেগম সুফিয়া জাহান, মো. মহসীন আলী ও মোহাম্মদ ইসরাইল হোসেন পদোন্নতি পেয়েছেন। সিনিয়র সহকারী সচিব / অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা / জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা / উপ-পরিচালক পদে মো. আবদুল হালিম খান, মো. সাবেদ-উর-রহমান, তারাচাঁদ রাজভর, বেগম রাশিদা খানম, মো. আবদুল মোতালেব, মো. নওয়াবুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মাহবুব আলম শাহ, ফয়সল কাদের, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আবদুল হাফেজ, মো. সরওয়ার জাহান, মো. আতিয়ার রহমান, আবদুল মমিন সরকার, মোহাম্মদ মনির হোসেন, মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, মোহাম্মদ নূরুল আলম, মো. শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক, এম মাজহারুল ইসলাম, মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, খানাবি শাহানুর খান, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ এনামুল হক, মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম, মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মো. হেলাল উদ্দিন খান, মো. রোকুনুজ্জামান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, তারেক আহম্মেদ, ওহিদুজ্জামান মুন্সী, মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন মল্লিক, মো. সোহেল সামাদ, মো. মুনীর হোসাইন খান, মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মোতাহসিম, মো. হাবিবুর রহমান, মো. শাহ আলম, মোহাম্মদ আতাউর রহমান, এএইচএম কামরুল হাসান, সুধাংশু কুমার সাহা, মো. আবদুর রহিম, বেগম জাকিয়া সুলতানা ও মো. তারিকুজ্জামান।

No comments:

Post a Comment