Saturday 1 October 2011

অভিজাত উত্তরার বেশকিছু সড়ক পাড়াগাঁয়ের রাস্তার মতোই বেহাল



আলাউদ্দিন আরিফ
অভিজাত আবাসিক এলাকা উত্তরার অধিকাংশ রাস্তা এখন অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তার মতোই বেহাল। রাস্তায় জমে আছে কাদা, নোংরা আবর্জনা, নেই কার্পেটিং। এভিনিউ সড়কগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও মহল্লার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা দীর্ঘদিন থেকে। উত্তরার পার্শ্ববর্তী নিকুঞ্জ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কাওলার এলাকার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা দেখা গেছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ দুর্বিষহ নাগরিক যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করছে। উত্তরাজুড়েই বিভিন্ন বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রাখা। ফলে রাস্তা খারাপ হচ্ছে, ড্রেন বন্ধ হচ্ছে, এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরার ১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টরের মধ্যে ১, ৩, ৫ নম্বর সেক্টর ও এভিনিউ সড়কগুলো মোটামুটি ভালো। বেহাল অবস্থা ২, ৪, ৯, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের রাস্তাগুলোর। ৯ নম্বর সেক্টরের একটি সড়কও ভালো নেই। সবক’টিতে নোংরা কাদা আর খানাখন্দে ভরা।
আবদুল্লাহপুর বাসটার্মিনালের পশ্চিম পাশে ৯ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর ও ১০/এ নম্বর সড়ক যেন অজপাড়াগাঁয়ের কাদামাটির বেহাল কোনো সড়ক। এ রাস্তার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সেখানে রাজউকের কিছু জমি রয়েছে। ওইগুলো স্থানীয় সরকারি দল আশ্রিত কিছু সন্ত্রাসী মাস্তান দখল করে দোকানঘর ও বস্তি বানিয়েছে। এসব দোকানে চলে গাঁজা ফেনসিডিলের ব্যবসা। এসব নিয়ে ৯ নম্বর সেক্টরের বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা চরম উদ্বেগ ও অসহনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তারা কয়েক দফা র্যাবকে জানানোর পর র্যাব অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও কয়েক জনকে আটক করে। কিন্তু অবৈধ দখল বা মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি। ১২ ও ১০/এ নম্বর সড়কে অবৈধ দখলদাররা রাস্তার ওপর নোংরা আবর্জনা ফেলে রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ করে রেখেছে। বস্তি ও দোকানের বর্জ্য পানি রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না সারাবছরই সড়কগুলো কর্দমাক্ত থাকছে।
উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড ব্রাক মার্কেটের সামনে থেকে ৪ ও ৬ নম্বর সেক্টরের মাঝখান দিয়ে উত্তরখানের শাহকবির মাজার পর্যন্ত সড়কটিকে এখন আর সড়ক বলা যায় না। পুরোটাই বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী হাবিবুর রহমান বলেন, জীবন হাতে নিয়ে রিকশা বা ম্যাক্সিতে উঠতে হয়। খারাপ রাস্তার কারণে ১৫ টাকার রিকশাভাড়া দিতে হয় ৪০ টাকা। তাও রিকশা চালকরা যেতে চায় না। রিকশায় গেলে কোমর ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয়। আর বৃষ্টি হলে এলাকায় যেন আতঙ্ক নামে। স্কুল -কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিদারুণ কষ্ট স্বীকার করে এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। বৃষ্টির সময় হেঁটে গেলেও পোশাক বদলাতে হয়।
উত্তরখান এলাকার আবদুল্লাহপুর-আঁটিপাড়া সড়কটি বহুদিন থেকেই বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। মাস্টারবাড়ি, রাজবাড়ি, ময়নারটেক, সরকারপাড়া, মাদারবাড়ি, মধ্যপাড়া, মোল্লারটেক, উত্তরখান ও কাচকুড়া এলাকার সড়কগুলোরও বেহাল দশা। দক্ষিণখান থানা এলাকায় হাজীক্যাম্প থেকে দক্ষিণখান, নগরিয়াবাড়ি, বেতুলি, ভাটুরিয়া, দিলনা, তালনা, কাওলা এলাকার সবক’টি সড়ক ও গলির অবস্থা বেহাল। আশকোনা এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন জানান, জরুরি সরকারের দুই বছর ও এ সরকারের আড়াই বছরে এসব রাস্তার সংস্কার হয়নি।
মাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আলমাস হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নির্বাচনী এলাকা এটি। তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সড়ক মেরামতের কিন্তু গত আড়াই বছরে একটি সড়কও ভালোভাবে মেরামত করা হয়নি। ৬ মাস আগে উত্তরা ময়নারটেক সড়কটি কার্পেটিং করা হলেও বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই সেটি ফিরে গেছে আগের অবস্থানে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দলীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ করানোর কারণে এ অবস্থা হয়েছে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৯টি সড়ক, ৯ নম্বর সেক্টরের সবকটি সড়ক, ৭ নম্বর সেক্টরের বেশ কয়েকটি সড়ক, উত্তরা হাইস্কুলের আশপাশের সড়ক, ১৪ নম্বর সেক্টরের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে।
২ নম্বর সেক্টরের র্যাব-১ কার্যালয়ের উত্তর পাশের সড়ক, ৪ নম্বর সেক্টরের মূলসড়ক ও আশপাশের সড়ক, ৪ নম্বর সেক্টরের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সামনের সড়ক, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের আশপাশের সড়ক, ৬ নম্বর সেক্টরের বেশ কয়েকটি সড়ক, ৮ নম্বর সেক্টরের সড়কগুলো অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। উত্তরা-৮ নম্বর সেক্টরের আলাউল এভিনিউর শেষ প্রান্তের সড়কগুলোর দু’পাশ এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে।
১২ নম্বর সেক্টরের ১২, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর সড়কের অবস্থাও বেহাল অনেক দিন থেকে। ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কটি ভেঙে কার্পেটিং ধুয়ে-মুছে ছোট জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। ১২ নম্বর সেক্টরের ১৮ থেকে ২০ নম্বর সড়ক দিয়ে বর্ষা মৌসুমে হাঁটার উপায় থাকে না। রাস্তার মাঝে মাঝে দেড় থেকে দুই ফুট গভীর গর্ত। প্রাইভেট কার এসব গর্তে একবার পড়লে আর তোলার উপায় থাকে না।
উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, গুলশানের পরই দেশের সবচেয়ে অভিজাত বনেদি আবাসিক এলাকা উত্তরা। ৯ নম্বর সেক্টরসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে সড়কের অবস্থা এমন হয়েছে যে মনে হয় অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তা। কোনো কোনো সড়কে বর্ষার দিনে গাড়ি নিয়ে বেরুলে আটকা পড়তে হয়, হেঁটে চলতে গেলে জামা-কাপড় নষ্ট হয়।
এদিকে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাটগুলোও বহু বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে সবগুলো সড়কই খারাপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬-৭ বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। একবার বৃষ্টি হলে ৭-৮ ঘণ্টা সময়েও সড়কের জলাবদ্ধতা দূর হয় না। সড়কগুলোর অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে এ আবাসিক এলাকায় ভাড়াটিয়ার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যাদের বাড়িভাড়া একমাত্র আয় তাদের অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে। যেসব বাড়ির মালিক ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি করেছেন তাদেরও ত্রাহি অবস্থা। বাসিন্দারা জানান, রাস্তাগুলো এতই খারাপ যে রিকশা পর্যন্ত যেতে চায় না। নিকুঞ্জ-২ এর ৫ নম্বর সড়ক থেকে ১৬ নম্বর সড়ক পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ম্যানহোলের বর্জ্য সড়কের ওপর পড়ছে। নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশাসহ এলাকার সমস্যা সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি তারা স্থানীয় এমপি সাহারা খাতুনকে দিয়েছেন। কিন্তু বার বার তিনি আশ্বাস দেয়ার পরও বর্তমান সরকারের আমলে ওই এলাকার এক চুল পরিমাণও উন্নয়ন হয়নি। হয়নি বেহাল রাস্তাগুলোর সংস্কার।
উত্তরা, নিকুঞ্জ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই এলাকার সড়কগুলোর উন্নয়ন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেটা করছেন না। বেহাল রাস্তা সম্পর্কে স্থানীয় এমপি সাহারা খাতুনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment