Saturday 29 January 2011

বিনিয়োগকারীদের কুলখানির মিষ্টি খেতে চান অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

শেয়ারবাজারে দরপতনের ঘটনায় অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্যের কারণে শেয়ারবাজারে আজও (গতকাল) দরপতন হয়েছে। শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন হলেও তিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার পরিবর্তে তাদের সঙ্গে উপহাস করেছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে উপহাস করেছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের ‘মিষ্টি না খাওয়ানোর’ কথা বলছেন। ফারুক আহমেদ নামে এক বিক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি (অর্থমন্ত্রী) মিষ্টি খেতে চেয়েছিলেন। আমরা অর্থমন্ত্রীকে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর কুলখানির মিষ্টি খাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, রোববার একদিনেই ডিএসই সাধারণ সূচকে ৬০০ পয়েন্টের পতন হলে ওইদিন সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, শেয়ারের দাম ৫ টাকা কমে গেলে রাস্তায় নেমে এসে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করে; কিন্তু শেয়ারের দাম ৫০০ টাকা বাড়লে তো মিষ্টি খাওয়ান না।’
অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যকে বিনিয়োগকারীরা দায়িত্বজ্ঞানহীন উল্লেখ করে বলেন, পুঁজিবাজারের এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর উচিত ছিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া। বাজারে ভয়াবহ দরপতন হওয়ার পেছনে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার ঘোষণা দেয়া; কিন্তু তিনি এসব কিছুই বলেননি। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। তার বক্তব্যের কারণেই শেয়ারবাজারে আরও দরপতন হয়েছে। শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর সঙ্গে তাদের পরিবারের ভাগ্য জড়িত। তিনি এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অযোগ্য বলে মন্তব্য করেন।
আমরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসেছি। কর্মসংস্থান না থাকার কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আসতে বাধ্য হয়েছি উল্লেখ করে সারোয়ার আহমেদ নামে এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, আমার লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পেয়ে শেয়ারবাজারে এসেছি। কিন্তু এখন আমরা পুঁজি হারিয়েছি। এর দায় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।
বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কড়া সমালোচনা করে বলেন, সরকারি শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বারবার ঘোষণা দিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারি শেয়ার ছাড়া হলে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক দর সংশোধন হতো। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না। তিনি গত বছরের জুনের মধ্যে সরকারের ২৬টি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন; কিন্তু একটি কোম্পানিরও শেয়ার ছাড়া হয়নি। এরপর অর্থমন্ত্রী ৩১ অক্টোবর আবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তালিকাভুক্ত ৮টি কোম্পানির আরও শেয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ছাড়া হবে এবং ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের মধ্যে আরও ২৪টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া হবে। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর তালিকাভুক্ত সরকারি ৮টি কোম্পানির শেয়ারের দর কমে যায়। কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি ওইসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়া হয়নি। এ জন্য বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাই এর দায় অর্থমন্ত্রীকে নিতে হবে। বিনিয়োগকারীরা আরও বলেন, অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির কারণে বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অভিহিত মূল্য পরিবর্তন হলে কোম্পানির আয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন না হলেও কারসাজি করে কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ানো হয়েছে। শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ বলে অভিযোগ করে বিনিয়োগকারীরা বলেন, এসব দায় অর্থমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। তাই অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সারাদিনই বিনিয়োগকারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করেছে। এসব মিছিলে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসইসির চেয়ারম্যান ও ডিএসইর প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

No comments:

Post a Comment