Saturday 29 January 2011

১০ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার : বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৫ শতাধিক রি-রোলিং মিল

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বন্ধ হয়ে গেছে দেশের ৫ শতাধিক রিরোলিং মিল ও স্টিল মিল। দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকার কারণে গত কয়েক মাস ধরে লৌহজাত শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। রড তৈরির কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায় রিরোলিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং বেকার হয়ে পড়েছে ১০ লাখ শ্রমিক।
স্ক্র্যাপ জাহাজের অভাবে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত অর্ধশত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ৪০টি ইয়ার্ড এরই মধ্যে কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৮-১০টি ইয়ার্ডে কাঁচামাল থাকলেও আদালতের নির্দেশনার কারণে কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে নির্মাণ সামগ্রীর প্রধান উপাদান রডের মূল্য হু-হু করে বাড়ছে।
বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, দেশের রিরোলিং মিলগুলোতে রড তৈরিতে প্রায় ৮০ ভাগ কাঁচামাল আসে শিপইয়ার্ড থেকে। পুরনো জাহাজ আনতে না পারায় এরই মধ্যে অধিকাংশ ইয়ার্ড বন্ধ রয়েছে। যে কয়টি ইয়ার্ডে জাহাজ কাটা হচ্ছে তারা লোহার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোলিং মিল চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা ঘোষণা দিয়ে মিলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি। এরই মধ্যে অনেক রোলিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে রডের দাম দিন দিন বাড়ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি টন লোহার দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৪০ গ্রেডের এমএস (ম্যানুফেকচারিং স্টিল) রডের দাম প্রতি মেট্রিক টন ৪৯ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আর প্রতি মেট্রিক টন ৬০ গ্রেড রডের দাম ৫৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে দাম বাড়ছে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার চেয়ে উচ্চ আদালতে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে জাহাজ কাটা নিয়ে অচলাবস্থার শুরু হয়। পরে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে একসঙ্গে আমদানি করা ১৬টি জাহাজ নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। শিপইয়ার্ডে বিচিংয়ের অনুমতি না পাওয়ায় এসব জাহাজ বহুদিন বন্দরের বহির্নোঙরে ভেসে ছিল। পরে পরিবেশ অধিদফতর থেকে জাহাজগুলোর বিচিংয়ের অনুমতি দেয়া হলেও কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে আমদানি করা আরও ৪টি স্ক্র্যাপ জাহাজ বন্দর বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। মোট ২০টি স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা অনিশ্চিত রয়েছে। হাইকোর্টের সর্বশেষ রায়ে বিধিমালা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত জাহাজ ভাঙার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজগুলো কোনো কাজে আসছে না। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠন সূত্র জানায়, শিপইয়ার্ডগুলোতে অন্তত ১৫ লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখন কাটার কাজ চলছে এমন স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে রিরোলিং মিলে সরবরাহ করার মতো এক লাখ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপও নেই। এজন্য বাজারে রডের দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ রিরোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং স্টিল স্ক্র্যাপ বায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ সভায় অচলাবস্থা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত গতকাল থেকে রিরোলিং ও স্টিল মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেলা এবং শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে ১০ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হতে চলেছে। সেইসঙ্গে ভেস্তে যাবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। রিরোলিং শিল্পের মালিকরা দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ অচলাবস্থার নিরসন না হওয়া পর্যস্ত সব রিরোলিং ও স্টিল মিল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

No comments:

Post a Comment