Saturday 3 April 2010

বিদ্যুতের দাবিতে সিলেটে রাজপথ অবরোধ, বিক্ষোভ



সিলেটে বিমানবন্দর সড়কের খাসদবিরে বিদ্যুতের দাবিতে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী । সমকাল
ফয়সল আহমদ বাবলু,

সিলেট ব্যুরো | শনিবার | ৩ এপ্রিল ২০১০ | ২০ চৈত্র ১৪১৬ | ১৭ রবিউস সানি ১৪৩১

একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে লোডশেডিং_ সব মিলিয়ে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের দাবিতে রাজপথে নেমেছে ভুক্তভোগীরা। গতকালও নগরীর খাসদবিরে বিদ্যুতের দাবিতে জুমার নামাজ শেষে শতাধিক লোক রাস্তা অবরোধ করে। এর আগে বৃহস্পতিবার তালতলা ও শিবগঞ্জ দাদাপীর মাজারের সামনে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভ প্রশমিত হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
বিদ্যুৎ ইস্যুকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। এজন্য সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা দায়ী করেছেন বিগত সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়াকে। তাদের মতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন
স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসিয়ে রেখেছে। সিলেটের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ না পেঁৗছলেও খুঁটি আছে।
বিভিন্ন উপজেলা সদর গত ৩-৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। মোমবাতি জ্বালিয়ে তারা গত বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের পরীক্ষা দেয়। বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকমতো তারা পড়ালেখা করতে পারছে না। নগরীর শিবগঞ্জের বাসিন্দা এইচএসসি পরীক্ষার্থী সালোয়া সাবরিন এ প্রতিবেদককে জানায়, তিন দিন ধরে তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে থাকা আইপিএসও বিকল হয়ে পড়েছে। মোমবাতির আলোয় পড়তে গেলে মাথাব্যথা শুরু হয়।
গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার কয়েক দফা ঝড়ে সিলেটে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসে। নগরীর গোয়াবাড়িতে ৩৩ কেভি লাইনের দুটি খুঁটি ভেঙে পড়ে। বটেশ্বর সাবস্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। ২৫-৩০টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ে। নগরীর অসংখ্য স্থানে বিদ্যুতের তারে গাছপালা পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে পারছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় নগরীতে পানি সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরীর শিবগঞ্জ, তালতলা, খাসদবির, জালালাবাদ, পাঠানটুলা, আলুরতল, লাক্কাতুরাসহ বিভিন্ন স্থান অন্ধকারে রয়েছে। খাসদবিরে বিদ্যুতের দাবিতে গতকাল দুপুর ১টায় জুমার নামাজ শেষে শতাধিক লোক রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে তারা বিক্ষোভ করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ থাকার পর জেলা প্রশাসক ও সিটি মেয়র বিদ্যুৎ সংযোগের আশ্বাস দিলে জনতা অবরোধ তুলে নেয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুতের দাবিতে তালতলা এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। পরে মেয়রের আশ্বাস পেয়ে তারা অবরোধ তুলে নেয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় শিবগঞ্জ দাদাপীর মাজারের সামনে সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে এক ঘণ্টা বিক্ষোভ করে এলাকার লোকজন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
এ ব্যাপারে সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের কথা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, ঝড়ে নতুন করে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলে সিলেট নগরীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও দু'একদিন সময় লাগবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রতিদিন ২০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে তাদের দেওয়া হচ্ছে ১০৫ অথবা তারচেয়ে কম বিদ্যুৎ। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেটের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী অলক কুমার। তিনি বলেন, সিলেটে তেমন কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদার সবটুকুই তাদের দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, শুধু ঝড়ের কারণে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটি না হলে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ৯০ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবেন।

No comments:

Post a Comment