Thursday 22 April 2010

শিল্পখাতে ধস




সৈয়দ মিজানুর রহমান
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং স্থানীয়ভাবে নাজুক জ্বালানির পরিস্থিতির কারণে দেশের শিল্পখাতে ধস নেমেছে। শিল্প কারখানাগুলোয় গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে দৈনিক কর্মঘণ্টার অর্ধেক সময়ই উত্পাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উত্পাদন কমে গেছে ৫০ শতাংশ। আবার বিকল্প জ্বালানি দিয়ে কারখানা চালু রাখতে উত্পাদন ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
তৈরি পোশাক, স্পিনিং ও বস্ত্রখাত, সিরামিক, প্লাস্টিক কারখানাসহ সব শিল্পেই চলছে দুরবস্থা। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শিল্পখাতে ধস নামায় চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ফেব্রিক মিল, স্পিনিং মিল, টেক্সটাইল, ওভেন গার্মেন্ট, নিটওয়্যার কারখানার উত্পাদন ৫৫ ভাগ কমে গেছে।
দেশের অন্যতম প্রধান ফেব্রিক্স কারখানা ‘মুন্নু ফেব্রিক্স’ গ্যাসের অভাবে ৭-৮ মাস ধরে বন্ধ আছে। কবে মিলটি চালু হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। আরেক বৃহত্ ওভেন কারখানা নোমান ওয়েভিং মিল নতুন করে কাপড়ের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্যাসের অভাবে স্থাপিত জেনারেটরও চালানো যাচ্ছে না। এতে মাসের অর্ধেক সময়ই মিল বন্ধ থাকে। ফলে উত্পাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে।
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে ১৪ হাজার শ্রমিক। এখানে বিনিয়োগ আছে হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছরও এই সময়ে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের হোমটেক্সটাইল ও অ্যাপারেল রফতানি হয়েছে প্রতি মাসে। এ বছর রফতানি কমে গড়ে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। মোট উত্পাদন অর্ধেক কমে যাওয়ায় রফতানি আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন নোমান গ্রুপের কর্ণধার মোঃ নুরুল ইসলাম। গাজীপুরের ছোট গোবিন্দপুর এলাকার মাদার টেক্সটাইল মিলস্ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জ্বালানি সঙ্কটে তাদের কারখানায় গড় উত্পাদন কমেছে ৬০ শতাংশ।
গাজীপুরের সারদাগঞ্জের কাশিমপুর এলাকায় মতিন স্পিনিং মিল। কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক আবুল হোসাইন জানিয়েছেন, তাদের কারখানায় গ্যাস বরাদ্দ নেয়া আছে ১৫ পিএসআই। কিন্তু এখন গ্যাস পাচ্ছেন মাত্র ৩ পিএসআই। গ্যাসের অপর্যাপ্ত প্রেশারের কারণে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৪ লাখ টাকা। মাসে ক্ষতি ১৩৫ কোটি টাকা।
এসব মিলের বাইরে নরসিংদী, মাধবদী, মদনপুরসহ যেসব এলাকায় ছোট ছোট ফেব্রিক মিল আছে সেগুলোর অর্ধেকই বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ছোট মিলগুলো চলে বিদ্যুত্ দিয়ে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুত্ও পাচ্ছে না মিলগুলো। এসব কারণে স্থানীয়ভাবে কাপড় উত্পাদন ৫০ ভাগ কমে গেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রিক কারখানাগুলোর মতো একই অবস্থা হয়েছে ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিলগুলোর। বিটিএমএ’র তথ্য মতে, দেশে প্রায় অর্ধসহস্রাধিক ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিল আছে। ফেব্রিক মিলের উত্পাদিত কাপড় ওভেন গার্মেন্ট মালিকরা কেনার আগে রঙসহ ফিনিশিংয়ের পুরো কাজই হয় এসব মিলে। গ্যাসের অভাবে এসব মিলের বেশিরভাগই এখন বন্ধ হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
রফতানি আয়ের ৭৬ ভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে এ খাত এখন চরম সঙ্কটে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দায় এরই মধ্যে দেশের রফতানি আয় অনেকখানি কমে গেছে। বিশ্বমন্দা কেটে যাওয়ায় রফতানি আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হলেও জ্বালানি সঙ্কটে তা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে চীন-ভারত-ভিয়েতনামসহ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো।
জানা গেছে, বিদেশি ক্রেতারা এখন বেশি বেশি কাজ দিতে চায় বাংলাদেশকে। কিন্তু কাজ নিতে পারছেন না এ দেশের উত্পাদকরা। যারা কাজ নিয়েছিলেন, তাদের বড় অংশই সময়মতো পণ্য সরবরাহের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ক্লাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল্লাহ আজিম আমার দেশকে জানিয়েছেন, তাদের গ্রুপের ৬টি গার্মেন্ট কারখানায় গত তিন মাসে গড়ে উত্পাদন কমেছে ৬০ ভাগ। এজন্য ক্লাসিক গ্রুপের ইউরোপ ও আমেরিকার বায়াররা এ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে আস্থা হারানোর উপক্রম হয়েছে। সময়মতো মাল দেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ অবস্থা আর এক মাস চললে বড় বিপর্যয় ঘটবে। বন্ধ করে দিতে হবে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান। তাতে কর্মসংস্থান হারাবে অসংখ্য মানুষ। নতুন বিনিয়োগ করা নয়, বিদ্যমান উত্পাদন-বিপর্যয় ঠেকানো নিয়েই মালিকরা এখন চিন্তিত বলে মনে করেন তিনি।
বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক পোশাক কারখানা, বেকার হাজার হাজার শ্রমিক : গত ৬ মাসে তৈরি পোশাকখাতের শতাধিক ছোট-বড় কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানা বন্ধ হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহেই এক বা একাধিক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস দিয়ে সংগঠনের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এজন্য দায়ী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে দেশে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
বিজিএমইএ’র গবেষণা সেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে সংগঠনের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাহেদ ফ্যাশন, ওরিয়েন্ট নিটিং অ্যান্ড অ্যাপারেল, নূরজাহান নিটিং, এমকে ফ্যাশন, লাভলী গার্মেন্ট লিমিটেড, কেআরসি টপ শার্টস লিমিটেড, নোভা অ্যাপারেলস লিমিটেড, তমিজউদ্দিন ফ্যাশন লিমিটেড, বাঘশান গার্মেন্টস লিমিটেড, স্পার্ট অ্যাপারেল, শার্প লিমিটেড, উত্তরা নিটওয়্যার লিমিটেড, হক ইন্টারন্যাশনাল, নর্থ স্টার অ্যাপারেল, আলবিন অ্যাপারেল, শতাব্দী ফ্যাশন লিমিটেড, ফ্যাশন কেয়ার লিমিটেড, এআরএন সোয়েটার, রাজ নিটিং অ্যাপারেল, ইরিন নিটওয়্যার, নাইস নিটিংসহ শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে গ্যাস-বিদ্যুত্ সঙ্কট এবং বিদেশে রফতানি বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায়।
গাজীপুরের বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি গার্মেন্ট কারখানার মালিক আরিফিন হক জানান, গত ৩ মাস ধরে দিনের বেলায় গড়ে ৪ ঘণ্টাও বিদ্যুত্ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছিল না তার কারখানায়। এ সময় জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালাতে গিয়ে তার লোকসান হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না দিতে পেরে বিদেশি ৩টি প্রতিষ্ঠানের দেয়া রফতানি আদেশও বাতিল হয়ে গেছে। অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সামনে কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়াই কঠিন। তাই কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন একের পর এক গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা যে কতটা বেকায়দায় আছি তা সরকারকে বোঝাতে পারছি না। গ্যাস ও বিদ্যুতের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা শিল্পের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ অবস্থা থেকে কি করে উত্তরণ সম্ভব তার কোনো উপায় আমরা দেখছি না।’
কমছে উত্পাদন, বাড়ছে খরচ : শিল্প কারখানাগুলোয় বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে একদিকে উত্পাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে বিকল্প জ্ব্বালানি দিয়ে উত্পাদন ঠিক রাখতে বাড়ছে ব্যয়। শুধু তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় বছরে প্রায় সাড়ে ২১ কোটি লিটার ডিজেল পুড়ছে। বিদ্যুত্ না পাওয়ায় কারখানার জেনারেটর চালাতে গিয়ে বাড়ছে ডিজেলের ব্যবহার। এতে মাসেই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বিজিএমইএ’র গবেষণা সেল সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে পোশাক শিল্পে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৬২০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুত্ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৬৫ ভাগ কম । দৈনিক কর্মঘণ্টার (সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা) অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ডিজেলে জেনারেটর চালিয়ে বিকল্প বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে খরচ পড়ে প্রতি কিলোওয়াটে ১৪ টাকা। বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জানিয়েছেন, পোশাক খাতে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে উত্পাদন খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৫৫ ভাগ।
পণ্য যাচ্ছে আকাশ পথে : নিজেদের রফতানি বাজার ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রফতানিকারকরা। উত্পাদন কমে যাওয়ায় এবং জাহাজীকরণ সময়মতো করতে না পারায় ভাড়া করা কার্গোবিমানে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। বিজিএমইএ’র হিসাব মতে, ভাড়া করা বিমানে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৪ মার্কিন ডলার, যা সমুদ্রপথে পাঠালে খরচ হয় ২০ থেকে ২২ সেন্ট। আর এভাবে প্রায় ২০ গুণ বেশি খরচ করে রফতানি করতে গিয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে দিন দিন কমে যাচ্ছে ক্রেতাদের আস্থা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, গত নভেম্বরে তারা ১ হাজার ৪৮৪ টন রফতানি পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছে। ডিসেম্বরে বিমানে পণ্য পরিবহন হয়েছে ৮৬৫ টন। গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৯০ টন এবং ফেব্রুয়ারিতে এ পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০১ টন। আবার ভাড়া করা কার্গোবিমানে গত নভেম্বর রফতানি পণ্য পরিবহন করা হয়েছে ৭ হাজার ২০৭ টন, ডিসেম্বর ৪ হাজার ৯৯৩ টন, জানুয়ারি ৭ হাজার ৮ টন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৭ হাজার ৩২১ টন। বিমানে পাঠানো পণ্যের ৯৮ ভাগই তৈরি ও নিট পোশাক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টারা।
পাঁচটি সারকারখানা বন্ধ : বিদ্যুত্ উত্পাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পাঁচটি সারকারখানা বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে চিটাগাং ইউরিয়া, যমুনা, ঘোড়াশাল, পলাশ ও কর্ণফুলী সারকারখানা বা কাফকো। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই কারখানাগুলো শতভাগ ক্ষমতায় চললে মোট গ্যাস দরকার হয় ৩০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছিল ২৫ থেকে ২৬ কোটি ঘনফুট। বন্ধ করার পরও কারখানাগুলোর অত্যাবশ্যকীয় কিছু কাজে প্রায় ৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।
অচল ট্যানারি শিল্প : গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে ট্যানারিগুলো প্রায় অচল। বিশেষ করে গত দুই মাসে বিদ্যুত্ সঙ্কটে ট্যানারিগুলোর প্রসেসিং ক্ষমতা ৬৫ ভাগ কমে গেছে। ফলে বিশ্ববাজার চাহিদার কতটুকু পূরণ করতে পারবে বাংলাদেশ তা নিয়েই এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি রেজাউল করিম আনসারি আমার দেশকে জানিয়েছেন, গত বছর চামড়া খাতে অর্ধেক রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কয়েকশ’ বিদেশি ক্রেতা বিভিন্ন ট্যানারি চষে বেড়াচ্ছেন। রফতানি আদেশ নিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। তবে সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুত্ ও গ্যাস নিয়ে। তিনি জানান, যে রফতানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে তার ৬৫ ভাগও নেয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুত্ সরবরাহ পায় ট্যানারিগুলো। অথচ ট্যানারিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ থাকা জরুরি।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সার্বিক রফতানি আয় ও পরিমাণ কমে গেছে। এছাড়া শিল্পখাতে নতুন করে কোনো বিনিয়োগও নেই। এ অবস্থায় গ্যাস ও বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতির আশু অবসান না হলে বাংলাদেশী পণ্য বিশ্ববাজারে নিজেদের সক্ষমতা হারাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ‘সিরামিক, চিনিশিল্প, গ্লাস, প্লাস্টিক শিল্প, রি-রোলিং, কেমিক্যাল কারখানাসহ বেশিরভাগ ভারি শিল্পে টানা গ্যাস ও বিদ্যুত্ সরবরাহ রাখতে হয়। কোনোভাবেই হঠাত্ কারখানার উত্পাদন বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে এসব কারখানা মাঝে-মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুত্ সরবরাহ পাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উত্পাদিত পণ্যের মান।
জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে : মোট দেশজ উত্পাদনের প্রবৃদ্ধি বা জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছর এ অবদান কমে আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি’ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির মৌল ভিত্তি কৃষি, শিল্প ও সেবা। এ তিন খাতের অবস্থাই এখন ভালো নয়। এডিবি’র ভাষ্যমতে, বিশ্ব মন্দার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। অর্থনৈতিক মন্দা স্থানীয় ও বহির্বিশ্বে চাহিদা হ্রাস করেছে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতে ঋণ কমায় স্থানীয় বিনিয়োগও কমে গেছে; আর গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/20/28262

No comments:

Post a Comment