Saturday 17 April 2010

নববর্ষে বস্ত্রহরণ খাবার লুট শিল্পীকে লাঞ্ছনা : ঢাবিতে ছাত্রলীগ নেতার কনসার্ট বাণিজ্য : অর্ধশত তরুণী লাঞ্ছিত

নববর্ষে বস্ত্রহরণ খাবার লুট শিল্পীকে লাঞ্ছনা : ঢাবিতে ছাত্রলীগ নেতার কনসার্ট বাণিজ্য : অর্ধশত তরুণী লাঞ্ছিত
স্টাফ রিপোর্টার
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে তরুণী লাঞ্ছনার রেকর্ড গড়েছে ছাত্রলীগ। কনসার্টের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় কমপক্ষে ৩০ তরুণীসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক নারী লাঞ্ছনার শিকার হন। অবশ্য পুলিশ ২০ তরুণী লাঞ্ছিত হওয়ার খবর স্বীকার করেছে। টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের কনসার্টের এক শিল্পী এবং এফ রহমান হলে এক শিক্ষককেও মারধর করে ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতারা। সন্ধ্যার পর টিএসসির কনসার্টের আশপাশ এলাকায় সম্ভ্রম রক্ষায় তরুণীদের চিত্কার ও ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। এক তরুণীকে উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা বিবস্ত্রও করে ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে রমনা থানার এডিসি নূরুল ইসলাম জানান, টিএসসির কনসার্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে ১৫ তরুণীকে পুলিশ নিরাপদে উদ্ধার করেছে। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তরুণীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। তবে তাদের কেউই নির্যাতন সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ করতে রাজি হননি। এসব ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এসে নগরবাসী আতঙ্ক ও উদ্বেগ নিয়ে বুধবার বাসায় ফিরেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার সময় এক তরুণীর অভিভাবকসহ কয়েকজনকে পেটায় ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহমান জীবনের অনুসারীরা। ওই ঘটনার তদন্তের পর কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে লোক দেখানো সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। বুধবারের ঘটনায়ও তারাই জড়িত ছিলেন।
বর্ষবরণের দিনে ক্যাম্পাসের তিনটি স্পটে কনসার্ট ও শতাধিক দোকান নিয়ে বসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাম দিয়ে বড় বড় কোম্পানির স্পন্সর নিয়ে তারা কনসার্ট আয়োজন করেন। টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে কবি জসীম উদ্্্্্দীন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহমান জীবন, বটতলায় চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার জামিল ইকবাল আজাদ এবং মলচত্বরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদুল মাহমুদ রাসেল কনসার্টের আয়োজন করেন। আর এই তিনটি কনসার্টের আয় ভাগবাটোয়ারা নিয়েই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা চলে। এতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশাসহ বেশ কজন সিনিয়র নেতা। বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও টাকার লেনদেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও জড়িত বলে ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নববর্ষের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ নেতারা অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।
নববর্ষে তরুণী লাঞ্ছিত : বুধবার পহেলা বৈশাখের আনন্দ-উল্লাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রলীগ ও বহিরাগতের হাতে অর্ধশতাধিক তরুণী লাঞ্ছনার শিকার হন। রাত ১০টা অবধি টিএসসি, কলাভবন, মলচত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট ও শাহবাগ এলাকায় এ লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। নারীদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ স্বীকার করলেও গতকাল তা বেমালুম অস্বীকার করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
প্রত্যক্ষদর্শী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ধ্যা নামতেই টিএসসির সামনের গেটে দু’দফায় আটজন, পেছনের গেটে তিনজন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভেতরের প্রবেশদ্বারে চার তরুণী লাঞ্ছিত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছাড়াও বহিরাগতরা ছিলেন।রাত ৮টার দিকে টিএসসির পূর্বপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথে চার যুবতীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উঠতি বয়সের কিছু যুবক। দুষ্কৃতকারীরা চার যুবতীর কামিজ ছিঁড়ে ফেলে, ওড়না টেনে নিয়ে যায় এবং তরুণীকে ঝাপটে ধরে। নিজেকে রক্ষা করতে ওই তরুণী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিত্কার শুরু করে। এ সময় দু’যুবক নিজের গায়ের শার্ট খুলে দিয়ে বিবস্ত্র তরুণীর সম্ভ্রম রক্ষা করেন। টিএসসির সামনের গেটে নির্যাতনের শিকার হন পাঁচ ছাত্রী। এ অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ উদ্বিগ্ন এক তরুণীকে রক্ষা করে। অন্যরা আগেই টিএসসির ভেতরে ঢুকে নিজেদের উজ্জত রক্ষা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ওপর কয়েকজন যুবক হামলে পড়লে টিএসসির সাংবাদিক সমিতির নিচের গেটে আশ্রায় নেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে তিনজন ও কলাভবনের সামনে আরও দু’ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র রোকন জানান, ডাসের সামনে দুই ছাত্রীকে অপরিচিত কয়েক যুবক লাঞ্ছিত করে। উপস্থিত ছাত্ররা এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। পরে তারা শাহবাগ থানার এএসআই মনিরুল ইসলামের সহায়তায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বাসায় ফেরেন। জানা গেছে, ছাত্রী নির্যাতনকারীরা অধিকাংশই জিয়াউর রহমান হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী।
রাত সোয়া ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে ১৫/১৬ জন ছাত্রী ও যুবতী লাঞ্ছিত হন। মোবাইল কোম্পানি ‘বাংলালিংক’-এর অর্থ সহায়তায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবান সাংস্কৃতিক সংসদ’ নামে নতুন একটি সংগঠন এ কনসার্ট আয়োজন করে। এ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি হচ্ছেন কবি জসীম উদ্দীন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহমান জীবন। এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নাম একাধিকবার ঘোষণা করা হলেও রাত সোয়া ৮টার দিকে মঞ্চে ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদের ‘মেলায় যাইরে’ গান পরিবেশনের আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি টিপু ও সাধারণ সম্পাদক বাদশার নাম ঘোষণা করতে বলেন জীবন। গানের আগে ওই শিল্পী নাম ঘোষণায় অনীহা প্রকাশ করায় মঞ্চেই তাকে গালাগাল করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি টিপু, সাধারণ সম্পাদক বাদশা ও কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্দিকী নাজমুল আলমের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মঞ্চে উঠে হট্টগোল শুরু করেন। গান শেষ হওয়ার পর বিশ্রাম কক্ষে গেলে মাকসুদ ও যন্ত্রশিল্পীদের ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করে। এ সময় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টিপু মাইকে আগামী দু’বছরের জন্য শিল্পী মাকসুদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় হট্টগোলের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মীরা কনসার্টে আসা ছাত্রী ও তরুণী মেয়েদের নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। কয়েকজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা জাতি কখনও প্রত্যাশা করে না। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা অবশ্যই একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের রচনা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, নববর্ষের অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে দু’চারজন তরুণীর উদ্বেগের খবর আমাদের কাছে আছে। তবে যুবকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগের কথা লোকমুখে শুনছি। কনসার্টে টাকার লেনদেন নিয়ে অভিযোগ থাকলেও তাতে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে প্রক্টর দাবি করেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোর ৬টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবকরা দলে দলে ক্যাম্পাসে ঢোকে। এর মধ্যে টিএসসির রাস্তায় কনসার্টের কারণে সেখানে ব্যাপক ভিড়ের সৃষ্টি হয়। ভিড়ের মাঝে কয়েকদফা শিশু ও মহিলাদের নিয়ে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে পুলিশের রমনা থানার এডিসি নূরুল ইসলাম জানান, কনসার্ট সংলগ্ন জায়গা থেকে ১৫ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। মানুষের ভিড় এতো বেশি ছিল যে, চলাচলের কোনো জায়গা ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে একজন তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসে। টিএসসি ব্যাংকের সামনেও তরুণী লাঞ্ছনার অভিযোগ শুনেছি। তবে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তেমন পরিস্থিতি পায়নি। এভাবে নানা ঘটনা ঘটেছে, তবে তরুণীদের সরাসরি লাঞ্ছনার ঘটনার বিষয়টি আমাদের চোখে পড়েনি। আবার একেবারেই যে কিছু ঘটেনি, এতো ভিড়ের মাঝে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, নিরাপদে সরিয়ে নেয়া তরুণীদের কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় কাউকে আটক করা হয়নি।
অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য : বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র, ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, ক্যাম্পাসে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বর্ষবরণ উপলক্ষে ব্যবস্যা খুলে বসেছিল। তার থেকে লব্ধ আয় প্রক্টর, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দু’শীর্ষ নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। বাকিরা না পাওয়ায় সব তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে বাংলালিংক, মল চত্বরে প্রাণ ফ্রুটো, কলা ভবনের সামনে ফোন কোম্পানি রবির অর্থসহায়তায় প্রভাতফেরির উত্সব থেকে ৪০ লাখ টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রধান দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার জামিল ইকবাল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক বাদশা ও তার অনুসারীদের ডিঙ্গিয়ে আয়োজন ও দরকষাকষিতে না মেলায় ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এসব অনুষ্ঠানের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপসরফার পর আয়োজিত হয় এসব অনুষ্ঠান। রবির কাছ থেকে ছাত্রলীগ ৫ লাখ টাকা নিয়েছে বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদ মাহমুদ রাসেলের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব মলচত্বরে প্রাণফ্রুটোর অর্থ সহযোগিতায় কনসার্ট আয়োজন করে। এখান থেকে প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে। তবে টিপু-বাদশা টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক ও প্রভোস্ট লাঞ্ছিত : এএফ রহমান হলের ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের খাবার হরিলুটের ঘটনা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে রেফায়েত ও সুমনকে মারধর করে রেজা সেকান্দর গ্রুপের সমর্থকরা। এসময় প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি রেজা সেকান্দার। এসময় প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুস সাত্তারসহ চারজন আবাসিক শিক্ষককে হল মেসে প্রায় একঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে রেজা সেকান্দার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দফতর সম্পাদক অঙ্কুর।
এ বিষয়ে নির্যাতিত শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, হলে মারামারি হয়েছে। আমাকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এটা কেন করা হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, রেজা সেকান্দারের নেতৃত্বে কিছু ছেলে আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। ওই ঘটনায় হল ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুজ্জমান ফারুক গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে। এরপর থেকে হলে নতুন দখলদার হয়েছেন রেজা সেকান্দার।
পাঁচ হলে সংঘর্ষ : বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সায়েন্স এনক্সে ভবনের সামনে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে শহীদুল্লাহ ও অমর একুশে হলের ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয় । অমর একুশে হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ ইসলাম ও শহীদুল্লাহ হলের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মাসুম বিল্লাহসহ পাঁচজন আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরের খাবার বণ্টনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মী মাসুম ও মারুফ এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়। এক পর্যায়ে উভয়ে নিজ নিজ হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মলচত্বরে প্রাণ ফ্রুটোর আয়োজনে গানের অনুষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী আরিফকে মারধর করে মুহসীন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া আরও দু’ছাত্রলীগ কর্মী এসময় আহত হয়। গোয়েন্দা ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ফ্রুটো আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান থেকে প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি টিপু, সাধারণ সম্পাদক বাদশা, সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ সভাপতি সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এদিকে বর্ষবরণ উপলক্ষে স্যার এএফ রহমান হলে খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরের দিকে হল কর্তৃপক্ষ খাবার বিতরণ করছিল। এ সময় খাবার সরিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগ কর্মী রেফায়েত, সুমনসহ ৫ জন আহত হয়।
বৈশাখী খাবার হরিলুট : বর্ষবরণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক’টি হলে বিনামূল্যে ছাত্রদের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্যার এএফ রহমান ও সূর্যসেন হল দু’টিসহ অধিকাংশ হলে খাবার হরিলুট হয়েছে। এফ রহমান হলে ২০০ প্যাকেট খাবার হরিলুট করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ১০০ প্যাকেট খাবার তারা বাইরে বিক্রি করে বলে অভিযোগ করেছে সাধারণ ছাত্ররা। সূর্যসেন হলেও কয়েকশ’ প্যাকেট খাবার হরিলুট হয়েছে বলে জানা গেছে।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/16/27599

No comments:

Post a Comment