Saturday 3 April 2010

ছয় মাস আগে চালু বিদ্যুেকন্দ্র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রায় ৬ মাস আগে চালু হয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ ৫১ মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার বিদ্যুেকন্দ্র। এরই মধ্যে এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত্ সরবরাহ করা হচ্ছে। গতকাল ঘটা করে বিদ্যুেকন্দ্রটি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুেকন্দ্রটির কাজ শুরু হয়। কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী যথারীতি অভিযোগ করলেন, গত ৭ বছরে বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
গত বছর ১৮ অক্টোবর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত্ সরবরাহকারী এই উত্পাদন ইউনিটটি কেন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রয়োজন পড়ল, সে ব্যাপারে বিদ্যুত্ খাতের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তীব্র বিদ্যুত্ সঙ্কটে দেশজুড়ে গণঅসন্তোষ যখন চরমে, তখন লোক দেখানোর জন্য ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুেকন্দ্র উদ্বোধন করা হলো বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন।
ছয় একর জায়গার ওপর নির্মিত ৫১ মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার ওই বিদ্যুেকন্দ্রটি ১২০ জন উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছেন। দেড় বছরে নির্মিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রটি থেকে ১৫ বছর সরকার বিদ্যুত্ কিনবে। এ প্রকল্পে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের ৭৫ ভাগই প্রবাসী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেসরকারি খাতে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে তার সরকার।
গতকাল সকালে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৫১ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক, মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে ৭ হাজার, ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের মধ্য দিয়ে দেশ বিদ্যুত্ উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হবে। বেসরকারিভাবে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের পথ তৈরি করে দেয়ার পাশাপাশি গত মাসে ৭ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুেকন্দ্র গড়ার অনুমোদনের কথাও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলেই বিদ্যুত্ উত্পাদনের সব ধরনের চেষ্টা থাকে। কিন্তু যখনই বিএনপি আসে বন্ধ হয় বিদ্যুত্ উত্পাদন। সঞ্চালন লাইন তৈরি না করে চলে খাম্বা নিয়ে দুর্নীতি। বিরাজমান সমস্যার জন্য বিগত সাত বছরের শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশের মানুষ বিদ্যুতের বদলে খাম্বা পেয়েছে। এ সময় দেশের বিদ্যুত্ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তারা বিদ্যুত্ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি রেখে গিয়েছিল।
বিদ্যুত্ ঘাটতি পূরণে শিগগিরই পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বিদ্যুত্ আমদানি করা হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বিকল্প উেসর বিদ্যুত্ ব্যবহারেরও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিদ্যুত্ ব্যবস্থার উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত্ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হবে। বেসরকারি খাতে আরও প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। গত মাসে ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার কারখানা বন্ধ করে বিদ্যুেকন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহের জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সুফল আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভোগ করবে দেশবাসী।
শহরের বিদ্যুত্ সমস্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শহর থেকে বিদ্যুত্ নিয়ে তা গ্রামাঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সিলেটে আরও বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এরই মধ্যে কৃষিকার্ড চালু করেছি। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। সারের দাম ২২ টাকা করা হয়েছে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল প্রথমবাবের মতো সিলেট সফর করেন। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ফেঞ্চুগঞ্জে অবতরণ করে। এরপর ফেঞ্চুগঞ্জে ৫১ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের উদ্বোধন করেন তিনি।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/04/25830

No comments:

Post a Comment