Wednesday 29 June 2011

দেশের আইনি ব্যবস্থা আজ রাহুগ্রস্ত : বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান



স্টাফ রিপোর্টার

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের আইনি ব্যবস্থা এখন রাহুগ্রস্ত। নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এর চর্চা। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়।’উপজাতি আইন বিষয়ক ‘কমপেনডিয়াম অন ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল’স অ্যান্ড ইনডিজিনিয়াস পিপলস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সদ্য প্রকাশিত বই সম্পর্কে বলেন, ‘যেসব সমস্যা নিয়ে এ বই প্রকাশিত হয়েছে সেসব সমস্যা সারাবিশ্বেই রয়েছে। আদিবাসী বা উপজাতিদের ভূমির ১৬ আনা মালিকানা নিয়ে যে কথা হচ্ছে তা দেয়া সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগতভাবে কেউই ভূমির ১৬ আনা মালিকানা দাবি করতে পারে না।’কাপেং ফাউন্ডেশন ও অক্সফাম জিবি আয়োজিত এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ সরেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এস কে সিনহা এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। বইটি সম্পাদনা করেছেন ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, অ্যাডভোকেট প্রতিকার চাকমা ও অ্যাডভোকেট শিরিন লিরা। গতকাল সকালে রাজধানীর পরিকল্পনা একাডেমি মিলনায়তনে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সাবেক প্রধান বিচারপতি উপজাতিদের ভূমির ১৬ আনা দাবি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী বা উপজাতিদের ভূমি অধিকার নিয়ে ২০০ বছর ধরে একাধিক আইন হয়েছে। কিন্তু এখনও নানা সমস্যা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায়ও এ বিষয়ে আইন হয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তিনি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিষয়টি নয়ে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে।’বিচারপতি এস কে সিনহা প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন, ‘এটি আইনের বই নয়, ইতিহাস। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ‘গ্লিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি’ বইয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এ বইটি যেমন মানব সভ্যতার ইতিহাস, আজকে প্রকাশিত বইটিও আদিবাসীদের ইতিহাস। বইটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের কথা যেমন রয়েছে, তেমনি সমতল ভূমির আদিবাসীদের কথাও সংযোজন করতে হবে। তিনি বলেন, অনেক আদিবাসী ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ হয়েছে। তাদের পারিবারিক সম্পত্তির আইন কেমন হবে সে বিষয়টিও ভাবতে হবে। অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারও তা করবে বলে আশা করছি।রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত আইন ছাড়াও পারিবারিক আইন রয়েছে। সারাদেশে যে আইন রয়েছে এ অঞ্চলে তা প্রয়োগ করা যায় না। পার্বত্য অঞ্চলে দেওয়ানি কার্যবিধি প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তির ফলে যে আইন প্রণীত হয়েছে তার কিছু কিছু নিয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিটি যেসব প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে সেখানে মন্দও রয়েছে, ভালোও রয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, সংবিধানেআদিবাসীদের উপজাতি বলা হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আদিবাসী যদি নাই বলা যায় তাহলে সম্মানজনক কিছু বলা হোক। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন কমিটিতে একজন আদিবাসীকেও রাখা হয়নি।অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আদিবাসী ও বাঙালি জাতি গোষ্ঠী উভয়ের জন্যই এ বইটি কাজে দেবে। আমরা সংখ্যাধিক্যের সুযোগে যেন অন্য কোনো গোষ্ঠীর ওপর যেন আইন চাপিয়ে না দেই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অক্সফাম প্রতিনিধি সৈকত বিশ্বাস বক্তৃতা করেন।

No comments:

Post a Comment