Wednesday 29 June 2011

শেওড়াপাড়া ও সাভারে ৩ গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষ : আহত অর্ধশত : সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর, আটক ১৩













স্টাফ রিপোর্টার

রাজধানীর মিরপুর থানার শেওড়াপাড়ায় গতকাল সকালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ শ্রমিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে মিনা ও সুলতানার অবস্থা গুরুতর। তাদের স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কমপক্ষে ৮টি গাড়ি ভাংচুর করেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৫ গার্মেন্ট শ্রমিককে আটক করেছে। এদিকে গতকাল সাভারে দুটি গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পুলিশের হামলায় আহত হয়েছে অর্ধশত। আটক করা হয়েছে ৮ জনকে। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন দাবি নিয়ে শেওড়াপাড়ার এস কিউ গার্মেন্টের কয়েক হাজার শ্রমিক গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে। তারা রাস্তা অবরোধ করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই রাস্তায় চলাচলকারী কমপক্ষে ৮টি যানবাহন ভাংচুর করেছে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকরা লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। মিরপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, গার্মেন্ট শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে সামান্য লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে পুলিশের চেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। ঘটনাস্থল থেকে ৫ শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ। সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারে গতকাল দুটি রফতানিমুখী পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান কবিরপুর এলাকার ত্বো-হা টেক্সটাইল ও কলমা এলাকার হট ড্রেস লিমিটেডে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে ত্বো-হা টেক্সটাইলের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে এবং হট ড্রেস লিমিটেডের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অর্ধশত আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮ শ্রমিককে আটক করেছে। কারখানা দুটি কাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।শ্রমিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, সাভারের কবিরপুর এলাকার ত্বো-হা টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল দুপুরে কারখানার ভেতর কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন চলতি মাসের ১৫ তারিখে দেয়ার ঘোষণা করলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ভাংচুর চালিয়ে নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কারখানাটির প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত শিল্পাঞ্চল ও আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের প্রহারে অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮ শ্রমিককে আটক করেছে। কারখানাটি শনিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অপর ঘটনায় সাভারের কলমা এলাকার হট ড্রেস লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পিস রেট বৃদ্ধি, বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, বেতনের অর্ধেক ঈদ বোনাস, এপিএম নাহিদের অপসারণ ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধসহ ১৪ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ, ডিভিশনাল কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ারসহ ৫ জনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। খবর পেয়ে সাভার থানা পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের কর্মকর্তারা এসে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে কারখানার জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম কাল পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ এবং রোববার কারখানাটি খোলা ও বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা শান্ত হয়।জালিয়াত গ্রেফতার : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জালিয়াতির মাধ্যমে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার ঘটনায় মহিউদ্দিন আজাদ রাব্বী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার রাত পৌনে ১২টায় ডিবি পুলিশ বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।ডিবির ডিসি (দক্ষিণ) জানান, গত বছরের ২৪ মার্চ গুলশানে ব্যবসায়ী সাদিকুর রহমান দম্পতি খুন হন। ওই খুনের আসামি রুবেল ও মিথুন চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি জালিয়াতির মাধ্যমে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গা-ঢাকা দেয়। এই জালিয়াতচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মহিউদ্দিন আজাদ রাব্বীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ডিবি পুলিশ জানায়।
উল্লেখ্য, জোড়া খুনের ঘটনায় মহিউদ্দিন আজাদ রাব্বী চার্জশিটভুক্ত আসামি। গত ৬ জুন আদালত রুবেল ও মিথুনকে মৃত্যুদণ্ড ও অন্যজনকে যাবজ্জীবন সাজা এবং মহিউদ্দিন আজাদকে অব্যাহতি দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন।

No comments:

Post a Comment