Wednesday 23 November 2011

বিশিষ্ট আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া : সরকার বিদেশ থেকে সাক্ষী আনলেও আইনজীবী আনতে বাধা দিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

সরকার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বিদেশি নাগরিকদের ভাড়া করে আনলেও আসামি পক্ষকে বিদেশ থেকে আইনজীবী আনতে বাধা দিয়ে সরকার বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেন, রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিরোধী দল ও মতের নাগরিকদের হেয়প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিদেশি নাগরিকদের এনে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি করছে। অথচ আসামি পক্ষকে তাদের নিজেদের টাকা খরচ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে না। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। বিশিষ্ট ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সরকারের দ্বিমুখী নীতির কারণে দেশের আদালত ও বিচার ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আমেরিকা থেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে লোক আনা হচ্ছে। এফবিআই-এর এজেন্ট পরিচয়দানকারী এ ব্যক্তির আসল পরিচয় কি তা দেশের কেউ জানেন না। তদন্ত ও অনুসন্ধানে তার কি ভূমিকা ছিল তাও অজানা। দুদকের দায়ের করা মামলার বাদী তার অভিযোগপত্রে ১৮ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করেছেন। তাতেও এ ব্যক্তির নাম নেই। চার্জশিটের কোথাও এ ব্যক্তির নাম তো দূরের কথা তার সম্পর্কে একটি শব্দও নেই। এমন একজন ব্যক্তিকে ভাড়া করে একদিনের নোটিশে আদালতে এনে সরকার জবানবন্দি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। গোটা জাতি বিস্ময়ে লক্ষ্য করছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিকে আসতে বাধা দিচ্ছে সরকার। আসামি পক্ষ তাদের নিজেদের টাকায় বিদেশ থেকে আইনজীবী এনে তথাকথিত এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করতে চাইছে। সরকার এতেও বাধা দিচ্ছে। সরকারের এ দ্বিমুখী নীতি ও আচরণের কারণে মূলত দেশের বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকার আদালতে একটি আবেদন দিয়ে বলল- বিদেশি একজন নাগরিক বাদী (সরকার) পক্ষে আসামিদের বিপক্ষে জবানবন্দি দেবেন। আদালত তাত্ক্ষণিকভাবে তা মঞ্জুর করে তার জবানবন্দি গ্রহণ করলেন। অথচ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি পক্ষ আবেদন-নিবেদন করেও একজন বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি লাভ করতে পারেননি। আদালত সেটা দেয়নি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি দিয়েছে সরকারই। অথচ এখানে মামলা পরিচালনার জন্য কোনো বিদেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীকে মামলা পরিচালনার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, আদালত নিজে থেকে মামলা পরিচালনা করেন না। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা ন্যায়বিচার করতে আদালতকে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে সহায়তা করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য ও শুনানি শুনে আদালত ন্যায়বিচারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। আমাদের দেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মামলা পরিচালনার মতো আইনজীবী নেই বললেই চলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে কয়েকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, তাতে অন্যান্য দেশ থেকেই আইনজীবীরা গিয়ে উভয় পক্ষে শুনানি করেছেন। ওইসব আদালতে মামলা শুনানি করেছেন এমন অভিজ্ঞ আইনজীবী আমাদের দেশের ট্রাইব্যুনালে এসে শুনানি করলে বিচারের মানদণ্ড নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। সরকারের দ্বিমুখী নীতি ও আচরণের কারণেই এরই মধ্যে এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুধু দেশেই আন্তর্জাতিকভাবেও বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেছেন, সরকারের এ আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। বিচার বিভাগকে পদদলিত করার কৌশল। একদিকে বিদেশ থেকে ভাড়া করে লোক এনে কোনো ধরনের যাচাই-বাচাই ছাড়াই নিজেদের পক্ষে ও বিরোধী দলের নেতাদের বিপক্ষে ইচ্ছেমতো সাফাই সাক্ষ্য আদায় করে নিচ্ছে। অপরদিকে আসামিরা বিদেশ থেকে আইনগত সহায়তা নেয়ার জন্য আইনজীবী আনতে চাইলেও দেয়া হচ্ছে না। সরকারের এ নীতি দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক ধরনের হুমকি। সরকারের এ নীতিই আদালতের আদেশের মাধ্যমে প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে। আদালতের সমন বা নোটিশ ছাড়াই আমেরিকা থেকে এসে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার আদালত সে জবানবন্দি রেকর্ডও করছেন। এগুলো কিসের আলামত, আমাদের আইনজীবীদের পক্ষেও তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে এদেশে মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের জন্যও বিদেশ থেকে আইনজীবী আনা হয়েছে। এটা আইন ও আদালতের সার্বজনীনতা। অথচ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো বিদেশি আইনজীবী আসতে দেয়া হচ্ছে না।

No comments:

Post a Comment