Friday, 9 December 2011

র্যাব পুলিশের নামে গুম ব্যক্তিদের খোঁজ মেলেনি


আলাউদ্দিন আরিফ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে গুম অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। চলতি বছরের শেষ দিনগুলোতে কমপক্ষে ১০০ ব্যক্তি গুম হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। অপহরণ ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের কিছু ক্ষেত্রে লাশ উদ্ধার হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে খোঁজই মিলছে না। এ পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে গুম ও অপহরণ আতঙ্ক। প্রশ্ন উঠেছে এরপর টার্গেট কে? ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরা বলছেন, আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এ সময়েও গুম হয়ে যাওয়া এসব মানুষের স্বজনরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রিয়জনদের সন্ধানে। আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর অফিস, মানবাধিকার সংস্থার অফিস, রাজনৈতিক নেতার দফতর, পত্রিকার অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ধর্না দিয়েও স্বজনের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। জানতে পারছেন না তাদের স্বজন বেঁচে আছে না মরে গেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিরা জীবিত না থাকলে তাদের অন্তত লাশ ফেরত চাইছেন তারা সংবাদ সম্মেলন করে। সে অধিকারটুকু থেকেও তারা আজ বঞ্চিত।
বিশিষ্টজনরা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানবাধিকার উঠে গেছে আমাদের দেশ থেকে। মানুষের বেঁচে থাকারও অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধসহ নানা নামে চলছে মানুষ হত্যা। র্যাব-পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও গুম হওয়া ব্যক্তির হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশে মানবাধিকারের বাণী এখন নিভৃতে কাঁদছে।
জানা গেছে, ২৬ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসেরও কম সময় শুধু মতিঝিল থেকেই ৭ জন গুম হওয়ার বিষয়ে মামলা ও জিডি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগ নেতা সারোয়ার জাহান বাবুল, ভোলার দিদার, বাহার ও জসিম, রামপুরার আরিফ ও মতিঝিলের জুয়েল। র্যাব পরিচয়ধারীদের হাতে গত ২৮ অক্টোবর হাতিরপুল থেকে গুম হয়েছেন ঢাকা বিশ্বদ্যািলয়ের ছাত্র শামীম হাসান সোহেল, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ হাজী ওরফে নুরু হাজী, তার জামাতা আবদুল মান্নান ও জামাতার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ইকবাল। নুরু হাজী গুম হওয়ার দেড় মাসের মাথায় গুম হয়েছেন মান্নান ও ইকবাল। কোরবানীর ঈদের পরদিন সূত্রাপুর থেকে গুম হয়েছেন ব্যবসায়ী মমিন হোসেন। গুম হয়েছেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, বরিশালের উজিরপুরের বিএনপি নেতা ও ঢাকার ব্যবসায়ী হুমায়ন খান। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়দানকারীদের হাতে গুম হয়েছেন। র্যাব পুলিশ রহস্যজনক কারণে এসব গুমের মামলা তদন্ত করছে না। তাদের পরিবারের লোকজনও জানতে পারছে না যে তারা বেঁচে আছে না মরে গেছে।
গত ২৮ নভেম্বর গুম হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শামীম হাসান সোহেল। গুম হওয়ার ১২ দিন পরও তার সন্ধান মেলেনি। সোহেলের মা, ভাইসহ আত্মীয়স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, সাদা পোশাকে র্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে ধরে নেয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সোহেলের ভাই সাইমুন ইসলাম জানান, গত ২৮ নভেম্বর রাত ১০টায় সোহেলের সঙ্গে সর্বশেষ তার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। ওই সময় সোহেল জানায় সে শাহবাগে আছে। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ২৮ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে হাতিরপুল এলাকা থেকে সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যরা সোহেলকে তুলে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে আরও চারজনকে তুলে নিয়ে যায় তারা। সোহেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরে ২০০০-০১ সেশনে অনার্সে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে অনার্স পাস করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ওই ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের ছাত্র। ছাত্রদলের সূর্যসেন হল শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোহেল। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার পাঁচজুনিয়া গ্রামে। সোহেলের নিখোঁজের ঘটনায় ৩ ডিসেম্বর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে করেছে তার পরিবার। র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সোহেলকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
থানায় করা সাধারণ ডায়েরির সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর র্যাব পরিচয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ হাজী ওরফে নূরু হাজী (৭৫)। হাজীর মেয়ে স্বপ্নার করা জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১৮ অক্টোবর রাত একটার দিকে সাদা পোশাকে ২০-২৫ জন যুবক সাভারের কাতলাপুর পালপাড়ার বাড়িতে ঢোকে। তারা নিজেদের র্যাব পরিচয় দিয়ে হাজীকে গাড়ি তুলে নেয়। এরপর থেকে হাজী এখনও নিখোঁজ। র্যাব ও পুলিশ তাকে ধরে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে।
গত ৩ ডিসেম্বর শনিবার ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে কয়েকজন যুবক হাজীর বড় মেয়ের জামাই আবদুল মান্নান ও ইকবাল হোসেন নামের দুই যুবককে ধরে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাদের ধরে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি র্যাব ও পুলিশ। পরিবারের বাসিন্দারা জানান, র্যাব পরিচয়ে শনিবার রাতে কয়েক যুবক হাজীর মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর আলমকে খোঁজ করে। তারা জাহাঙ্গীরকে না পেয়ে আবদুল মান্নান ও ইকবালকে তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তারা নিখোঁজ রয়েছেন।
গত ৬ ডিসেম্বর ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা আবদুর রহিম মানিক বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, পুলিশ পরিচয় দিয়ে গত ২৬ অক্টোবর তার ভাই সারোয়ার জাহান বাবুলকে ঢাকার ফকিরাপুল থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। ঘটনার ৪৫ দিন পার হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। মানিক আরও জানান, তার ভাই ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের নেতা। ঘটনার দিন সোনাগাজী থানায় জনৈক নুরুন্নবী লিটনের দায়ের করা একটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার জন্য ঢাকায় আসে। ওইদিন রাত ৮টায় ফকিরাপুলে হোটেল আসরের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে কয়েক যুবক তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে ঢাকার বিভিন্ন থানা, র্যাব অফিস, ডিবি অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ২৭ অক্টোবর মানিক একটি জিডি করেন এবং ২৯ অক্টোবর ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলাটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। কিন্তু পুলিশ এখনও বাবুলের কোনো হদিস বের করতে পারেনি। সংবাদ সম্মেলনে মানিক দাবি করেন, তার ভাই বেঁচে না থাকলে অন্তত তার লাশটি যেন পরিবারকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
ভাইকে বিদেশ যাওয়ার ফ্লাইটে তুলে দেয়ার জন্য ভোলা থেকে দিদার, বাহার ও জসিম নামে ৩ যুবক ঢাকায় আসে। ওইদিন রাতেই র্যাব পরিচয়ে তাদেরকে গুম করা হয়। ১৭ নভেম্বর এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে জসিমের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দিদার ও বাহারের এখন পর্যন্ত কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এখন মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
এছাড়াও নভেম্বর মাসে মতিঝিল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে আরিফ ও জুয়েল নামে দু’ব্যক্তিকে। জানা গেছে, তাদের মধ্যে আরিফ রামপুরার গ্রামীণ সৌন্দর্যের মালিক ও জুয়েল শতাব্দী সেন্টারের নিরাপত্তারক্ষী। আরিফ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ২০ নভেম্বর মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২ অক্টোবর রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম অপহরণের শিকার হন। দু’মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুরাতন ৭৬/এ, পশ্চিম আশকোনা দক্ষিণখান এলাকার মরহুম আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে সাইফুল ঘটনার দিন অফিসের কাজে বাসা থেকে গুলশানে যান। সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে কথা বলেন মা এবং বোনের সঙ্গে কথা বলেন সাইফুল। এরপর থেকে তার দুটি মোবাইল ফোন ০১৬৭৫০৪৪৮৯৯ ও ০১৮৯১৯৯৬৮১৯ বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের লোকজন জানতে পারছেন না সাইফুল বেঁচে আছে, না মরে গেছে।
৮ নভেম্বর রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে অপহরণের শিকার হন সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. মমিন হোসেন (২৮)। ১০ নভেম্বর মমিনের স্বজনরা সূত্রাপুর থানায় জিডি করেন। মমিনের স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় মমিনের মোবাইল নম্বরে (১৯১৩৭৪৯৫৫৮, ০১৮৩৪০৮৯৭৩৫) অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করলে সে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে গুম করা হয়। বাসা থেকে বের হওয়ার এক ঘণ্টা পর থেকেই মমিনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মমিনের ভগ্নিপতি মো. আলম জানান, কোরবানির ঈদের আগে মমিনের বিয়ের কাবিন হয়েছে। ঈদের তিন দিন পর অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। মমিন নিজেই বিয়ের বাজার-সদাই করেছে। কোরবানির ঈদের পরদিন অজ্ঞাত মোবাইল থেকে তার নম্বরে ফোন আসার পর বেরিয়ে যায় সে। এখন পর্যন্ত সে নিখোঁজ। র্যাব ও পুলিশ মমিনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি দেখাচ্ছে না। মমিনের অপর এক আত্মীয় জানান, র্যাব-পুলিশই মমিনকে অপহরণ করেছে। তা না হলে কললিস্ট পাওয়ার পরও মমিনের বিষয়ে কোনো তদন্ত করেনি কেন।
২৪ অক্টোবর রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও গোদাগাড়ীর পালপুর ধরমপুর মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আমিনুল ইসলামকে র্যাব পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। আমিনুল ইসলামের আত্মীয়রা জানান, ঘটনার দিন রাতে ভাটাপাড়ার বাসায় প্রবেশ করে র্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকে অজ্ঞাত কয়েক যুবক তাকে তুলে নেয়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
২২ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন মীরহাজিরবাগ এলাকা থেকে ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি কাজী আতাউর রহমান লিটু। এ ব্যাপারে ২৩ সেপ্টেম্বর লিটুর স্ত্রী রাশিদা বেগম যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আতাউর রহমান দয়াগঞ্জের দিকে যান। সেখানে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। ওই জিডি পুলিশ তদন্ত করেনি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
৩১ জুলাই গেণ্ডারিয়ার দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে মিজান, জুয়েল সর্দার, রাজীব নামে তিন যুবককে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয়। বেশ কিছু মানুষের সামনে তাদের আটক করে হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার ৫ দিন পর ৫ আগস্ট উদ্ধার হয় তিন যুবকের লাশ। গাজীপুরের পুবাইল এলাকা থেকে উদ্ধার হয় মিজান ও জুয়েল সর্দারের লাশ এবং মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকার ঢাকা-মাওয়া সড়ক থেকে উদ্ধার হয় রাজীবের লাশ।
৮ এপ্রিল বিকালে সূত্রাপুর থানাধীন ফরাশগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টার এলাকা থেকে সাদা পোশাকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায় ব্যবসায়ী তাবির উদ্দিন আহমেদ রানাকে। বড় ভাইয়ের বৌভাত অনুষ্ঠান থেকে সাদা পোশাকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর এখন পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি। স্বজনরা র্যাবের বিভিন্ন ক্যাম্প ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারেননি। সূত্রাপুর থানায় এ ব্যাপারে জিডি করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকার মালিবাগ এলাকা থেকে বরিশালের উজিরপুরের বিএনপি নেতা হুমায়ুন খানকে তুলে নেয়া হয় গত বছরের ২৩ নভেম্বর। ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও হুমায়ুনের কোনো সন্ধান পায়নি তার পরিবার। র্যাব-পুলিশও তাকে উদ্ধারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করেছে তার পরিবার। গত বছর ২৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় হুমায়ুন খান তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকার সূত্রাপুরের ৪৫/ক, ঢালকানগর, ফরিদাবাদের বাসা থেকে ১০৯৩, মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় তার বন্ধু মফিজুলের বাসায় যান। মালিবাগ থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে হুমায়ুনকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। তার ছোট ভাই মঞ্জু খান বাদী হয়ে প্রথমে জিডি এবং ১৩ ডিসেম্বর রামপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হুমায়ুনের সন্ধান মেলেনি বা মামলারও অগ্রগতি হয়নি।
মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, মানবাধিকার কমিশনে বহু মানুষ এসে নালিশ করেন। কারও স্বামী, কারও ভাই, কারও বাবা, কারও ছেলেকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা ধরে নিয়ে গুম করেছে। কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মানবাধিকার কমিশন র্যাব-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও শুধু বলা হয়—দেখছি স্যার। এর বেশি কিছু করারও থাকে না। তিনি জানান, পুলিশের ইউনিফর্ম ছাড়া গ্রেফতার বা আটক অভিযান বন্ধের জন্য সরকারের কাছে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে। গ্রেফতার অভিযান কখনও সাদা পোশাকে হওয়া উচিত নয়। ইউনিফর্ম লাগিয়ে পুলিশের পোশাকে আটক বা গ্রেফতার অভিযান চালাতে হবে। এতে গ্রেফতার ব্যক্তির স্বজনরা জানতে পারেন কোন সংস্থা কী অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, পুলিশ-র্যাবের নাম করে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তবে এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত নয়। অপরাধীরাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করছে। এটা অপরাধীদের একটা কৌশল। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, র্যাব-পুলিশ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি আরও বলেন, আসামি গ্রেফতারের বিষয়ে হাইকোর্টের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। তারা স্ব-স্ব ইউনিটগুলোকে ওই নির্দেশনা মেনে ইউনিফর্ম পরে, ক্ষেত্রবিশেষে নিজেদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে আসামি গ্রেফতার করার জন্য বলেছেন।

Wednesday, 23 November 2011

বিশিষ্ট আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া : সরকার বিদেশ থেকে সাক্ষী আনলেও আইনজীবী আনতে বাধা দিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

সরকার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বিদেশি নাগরিকদের ভাড়া করে আনলেও আসামি পক্ষকে বিদেশ থেকে আইনজীবী আনতে বাধা দিয়ে সরকার বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেন, রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিরোধী দল ও মতের নাগরিকদের হেয়প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিদেশি নাগরিকদের এনে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি করছে। অথচ আসামি পক্ষকে তাদের নিজেদের টাকা খরচ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে না। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। বিশিষ্ট ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সরকারের দ্বিমুখী নীতির কারণে দেশের আদালত ও বিচার ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আমেরিকা থেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে লোক আনা হচ্ছে। এফবিআই-এর এজেন্ট পরিচয়দানকারী এ ব্যক্তির আসল পরিচয় কি তা দেশের কেউ জানেন না। তদন্ত ও অনুসন্ধানে তার কি ভূমিকা ছিল তাও অজানা। দুদকের দায়ের করা মামলার বাদী তার অভিযোগপত্রে ১৮ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করেছেন। তাতেও এ ব্যক্তির নাম নেই। চার্জশিটের কোথাও এ ব্যক্তির নাম তো দূরের কথা তার সম্পর্কে একটি শব্দও নেই। এমন একজন ব্যক্তিকে ভাড়া করে একদিনের নোটিশে আদালতে এনে সরকার জবানবন্দি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। গোটা জাতি বিস্ময়ে লক্ষ্য করছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিকে আসতে বাধা দিচ্ছে সরকার। আসামি পক্ষ তাদের নিজেদের টাকায় বিদেশ থেকে আইনজীবী এনে তথাকথিত এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করতে চাইছে। সরকার এতেও বাধা দিচ্ছে। সরকারের এ দ্বিমুখী নীতি ও আচরণের কারণে মূলত দেশের বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকার আদালতে একটি আবেদন দিয়ে বলল- বিদেশি একজন নাগরিক বাদী (সরকার) পক্ষে আসামিদের বিপক্ষে জবানবন্দি দেবেন। আদালত তাত্ক্ষণিকভাবে তা মঞ্জুর করে তার জবানবন্দি গ্রহণ করলেন। অথচ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি পক্ষ আবেদন-নিবেদন করেও একজন বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি লাভ করতে পারেননি। আদালত সেটা দেয়নি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি দিয়েছে সরকারই। অথচ এখানে মামলা পরিচালনার জন্য কোনো বিদেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীকে মামলা পরিচালনার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, আদালত নিজে থেকে মামলা পরিচালনা করেন না। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা ন্যায়বিচার করতে আদালতকে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে সহায়তা করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য ও শুনানি শুনে আদালত ন্যায়বিচারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। আমাদের দেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মামলা পরিচালনার মতো আইনজীবী নেই বললেই চলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে কয়েকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, তাতে অন্যান্য দেশ থেকেই আইনজীবীরা গিয়ে উভয় পক্ষে শুনানি করেছেন। ওইসব আদালতে মামলা শুনানি করেছেন এমন অভিজ্ঞ আইনজীবী আমাদের দেশের ট্রাইব্যুনালে এসে শুনানি করলে বিচারের মানদণ্ড নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। সরকারের দ্বিমুখী নীতি ও আচরণের কারণেই এরই মধ্যে এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুধু দেশেই আন্তর্জাতিকভাবেও বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেছেন, সরকারের এ আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। বিচার বিভাগকে পদদলিত করার কৌশল। একদিকে বিদেশ থেকে ভাড়া করে লোক এনে কোনো ধরনের যাচাই-বাচাই ছাড়াই নিজেদের পক্ষে ও বিরোধী দলের নেতাদের বিপক্ষে ইচ্ছেমতো সাফাই সাক্ষ্য আদায় করে নিচ্ছে। অপরদিকে আসামিরা বিদেশ থেকে আইনগত সহায়তা নেয়ার জন্য আইনজীবী আনতে চাইলেও দেয়া হচ্ছে না। সরকারের এ নীতি দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক ধরনের হুমকি। সরকারের এ নীতিই আদালতের আদেশের মাধ্যমে প্রতিফলিত হতে দেখা যাচ্ছে। আদালতের সমন বা নোটিশ ছাড়াই আমেরিকা থেকে এসে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার আদালত সে জবানবন্দি রেকর্ডও করছেন। এগুলো কিসের আলামত, আমাদের আইনজীবীদের পক্ষেও তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে এদেশে মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের জন্যও বিদেশ থেকে আইনজীবী আনা হয়েছে। এটা আইন ও আদালতের সার্বজনীনতা। অথচ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো বিদেশি আইনজীবী আসতে দেয়া হচ্ছে না।

জনপ্রশাসনে চলছে চরম অরাজকতা : ২৪ বছরের সিনিয়র জুনিয়র একই পদে কাজ করছেন

কাদের গনি চৌধুরী

জনপ্রশাসনে পদোন্নতিবন্ধ্যত্ব কাটছে না। শুধু সিনিয়র সহকারী সচিব পদে কাজ করছেন ১৬টি ব্যাচের কর্মকর্তারা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ২৪ বছরের সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তারা একই পদে কাজ করছেন। একই ব্যাচের কোনো কোনো কর্মকর্তা যখন সচিব হিসেবে ক্ষমতা এনজয় করছেন, তখন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে কাজ করছেন ওই ব্যাচেরই অনেকে। দলীয় কালার না থাকায় এসব কর্মকর্তা বারবার পদোন্নতিবঞ্চিত হন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। সিভিল সার্ভিসের ইতিহাসে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও এমন নজির নেই।
উপ-সচিব পদেও একইভাবে ৯টি ব্যাচের ১ হাজার ৫৪০ কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। চাকরিজীবনের ১২ বছরের জুনিয়র ও সিনিয়র কর্মকর্তাকে একই পদে কাজ করতে হচ্ছে। এর ফলে প্রশাসনজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড থাকছে না। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সময়মত পদোন্নতি দিতে না পারা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত সুস্থ ধারা না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ২০০৬ সালের ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন ২৪ বছর আগের ’৮২ ব্যাচের কর্মকর্তারা। ’৮২ ব্যাচের ৯ জন, ’৮৪ ব্যাচের ১১, ’৮৫ ব্যাচের ১৭, ’৮৬ ব্যাচের ৪০, ’৯১ (জানুয়ারি) ব্যাচের ৪৮, ’৯১ (ডিসেম্বর) ব্যাচের ৫৩, ১১তম ব্যাচের ৬৮, ১৩তম ব্যাচের ১১০, ১৫তম
ব্যাচের ১০৮, ১৭তম ব্যাচের ৬৩, ১৮তম ব্যাচের ৯১, ২০তম ব্যাচের ২৭৪, ২১তম ব্যাচের ১৭০, ২২তম ব্যাচের ২৬৮, ২৪তম ব্যাচের ২৯১ এবং সম্প্রতি পদোন্নতি পাওয়া ২৫তম ব্যাচের ৭৫ কর্মকর্তা একই পদে কাজ করছেন।
উপসচিব পদে ’৮২ ব্যাচের পাশাপাশি ১২ বছরের জুনিয়র ৯৪ সালের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এদের মধ্যে ’৮২ ব্যাচের ৩৩, ’৮৪ ব্যাচের ১৯৬, ’৮৫ ব্যাচের ৫০৯, ’৮৬ সালের ২০৬, ৯১ (জানুয়ারি) ব্যাচের ৮১, ’৯১ (ডিসেম্বর) ব্যাচের ১৪৫, ১১তম ব্যাচের ১৫০ এবং ১৩তম ব্যাচের ১৪ কর্মকর্তা রয়েছেন। যুগ্ম সচিব পদে কাজ করছেন ’৮২ (রেগুলার), ’৮২ (স্পেশাল) ও ’৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রশাসনে ৯টি ব্যাচের ১ হাজার ৫৪০ কর্মকর্তা উপ-সচিব। উপ-সচিবের ৮৩০টি পদের বিপরীতে এখন অতিরিক্ত কর্মকর্তার সংখ্যা ৭১০ জন। এটিও প্রশাসনের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন রেকর্ড। পদের তুলনায় এত বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। বড় বড় ব্যাচের চাপ সামাল দেয়াসহ রাজনৈতিক পছন্দ ও অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে গত কয়েক বছরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পদের বাইরে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অর্থাত্ পদ নেই, তবু পদোন্নতি দিতে হয়েছে। এসব অতিরিক্ত কর্মকর্তার চাপ সামাল দিতে গিয়ে ২০০৬ সাল থেকে প্রশাসনে উপ-সচিবের সুপারনিউমারি পদ সৃষ্টি করা হয়। মোট ৪৫০ উপ-সচিবের পদকে সুপারনিউমারি দেখিয়ে বছর বছর সংরক্ষণ করে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে। যারা সিনিয়র সহকারী সচিবের চেয়ারে (পূর্বপদ) বসেই কাজ করছেন।
একই পদে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার কারণে সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনে এটাই এখন বড় সঙ্কট। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তারাও সিনিয়র সহকারী সচিব এবং তার চেয়ে ১৬ ব্যাচ জুনিয়র ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও সিনিয়র সহকারী সচিব। দেখা গেছে, ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে প্রবেশ করেছেন ১৯৮৩ সালে। আর ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে এসেছেন ২০০৬ সালে। অর্থাত্ ’৮২ ব্যাচ যখন সহকারী কমিশনার, তখন ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের কারও কারও জন্মও হয়নি। প্রায় সমসাময়িক চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ১৯৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তারা। ’৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ১৯৮৬ সালে এবং ’৮৫ ব্যাচ ১৯৮৮ সালে। ৬৫০ কর্মকর্তার বড় ব্যাচ ’৮২ বিশেষ ব্যাচের কর্মকর্তারা উপ-সচিব হয়েছেন ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে। সাড়ে চারশ’ সংখ্যার ’৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে উপ-সচিব হন। ’৮৫ ব্যাচ ও ’৮৬ ব্যাচ ২০০৬ সালে। বর্তমান সরকারের সময় উপ-সচিব পদে দু’দফায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে ৩ শতাধিক কর্মকর্তাকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়, যেখানে ১৩তম ব্যাচের কয়েকজন পদোন্নতি পান। ’৮২ বিশেষ ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপ-সচিব হতেই ২০ বছর পার হয়ে গেছে। এ ব্যাচের ৩১ কর্মকর্তা বর্তমানে উপ-সচিব পদে কর্মরত রয়েছেন। তারা তিন দফায় পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। অনেকে প্রাপ্য পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে গেছেন। এ ব্যাচের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এখন সচিব। অথচ অন্যরা পদোন্নতি না পেয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপ-সচিবের চেয়ারে কাজ করছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে উপ-সচিবদের মধ্যে তিনটি সিনিয়র ব্যাচের ২৩১ কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরা হলেন ’৮২ নিয়মিত ব্যাচের ৩ জন, ’৮২ বিশেষ ব্যাচের ৩১ জন এবং ১৯৮৪ ব্যাচের ১৯৭ জন। ১৯৮৪ ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা ২০০৩ সালে উপ-সচিব হয়েছেন, তারা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন ২০০৬ সালে। অথচ পাঁচ বছরেও তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়নি; দু’দফায় বঞ্চিত হয়েছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির তালিকায় রয়েছেন ’৮১ ব্যাচ ৯৫%, ’৮২ নিয়মিত ব্যাচ ৯৬%, ’৮২ বিশেষ ব্যাচ ৯০% ও ’৮৪ ব্যাচ ৫২%। এতে দেখা যায়, যুগ্ম সচিব পদে সবচেয়ে কম পদোন্নতি পেয়েছেন ’৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা। অপরদিকে ১৯৮৫ ব্যাচের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ও ১৫ অক্টোবর উপ-সচিব হওয়ার তিন বছর পর ২০০৯ সালে এসে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু গত দু’বছরেও তারা পদোন্নতি পাননি। এরই মধ্যে ’৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তারাও যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত ও নতুন করে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা গেলে ঢাউস উপ-সচিব পদসংখ্যার ভার কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তা না হলে প্রশাসন ভারসাম্যহীন হয়ে আরও অচল ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে।
প্রশাসনে পদোন্নতির অপেক্ষায় দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা : প্রশাসনে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেতে দুই হাজারের বেশি কর্মকর্তা অপেক্ষায় রয়েছেন। ওপরের দিকে পদোন্নতি আটকে যাওয়ায় জুনিয়র কর্মকর্তারা পদোন্নতির জ্যামে আটকে পড়েছেন। এর ফলে প্রশাসনে ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়ায় তাদের বসানোর জায়গা পাচ্ছে না সরকার।
এদিকে সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও ’৮৪ ও ’৮৫ ব্যাচেরই প্রায় ৮০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ’৮৪ ব্যাচের ২২৩ আর ’৮৫ ব্যাচের রয়েছেন ৫৫০ জন। ’৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি। এরই মধ্যে চাকরিজীবনের ২৬ বছর পার করে দিয়েছেন তারা। তাদের চাকরির বয়স আছে গড়ে তিন থেকে পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে আর পদোন্নতি পাবেন বলে মনে করছেন না অনেকেই। ’৮৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তারা উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান ২০০৩ সাল থেকে। ২০০৫ সালের মধ্যে প্রায় সবার পদোন্নতি হয়ে যায়। এরপর এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২২৭ জনকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তা এরই মধ্যে দুই বছর পার করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কেউই অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যেও চরম হতাশা বিরাজ করছে।

গ্যাস পানি বিদ্যুত্ সঙ্কটে ভোগান্তি চরমে

স্টাফ রিপোর্টার

বিদ্যুতের লোডশেডিং আবার অসহনীয় হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র হচ্ছে গ্যাস এবং পানি সমস্যা। আর তীব্রতর হচ্ছে যানজট। জনদুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। অতিষ্ঠ এখন নগর জীবন।
রাজধানীর বারিধারার জে ব্লকের বাসিন্দা শিক্ষিকা সালমা ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। কোনো দিন থাকলেও গ্যাসের চাপ এতই কম থাকে যে এ দিয়ে রান্না সম্ভব নয়। পেশাগত কারণে আমাকে প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছতে হয় সে কারণে রান্নার জন্য প্রতিদিন আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হয় ভোর ৫টার আগে। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে এ এলাকায় গ্যাসের এমন সঙ্কট চলছে। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে আমাদের জীবন।
উত্তরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না বাসায়। কেরোসিন স্টোভে রান্না করতে হয়। বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আবদুল করিম জানান, তার এলাকায় প্রায় ৬ ঘণ্টা গ্যাসের প্রেসার থাকে না। মিরপুর পাইকপাড়া, শেওড়াপাড়ায় সকাল ৭টা-৮টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা-৬টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। ভুক্তভোগীরা জানান এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একের পর এক অভিযোগ করেও তারা কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।
শুধু বারিধারা, উত্তরা, রামপুরা এবং মিরপুর এলাকায় নয়—রাজধানী জুড়েই চরম গ্যাস সঙ্কট। পুরনো ঢাকার শাঁখারিবাজার, লালবাগ, চকবাজার, ইসলামপুর থেকে শুরু করে মুগদাপাড়া, মাণ্ডা, আফতাবনগর, বাসাবো, গোড়ান, খিলগাঁওয়ের একাংশ, শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, শ্যামপুর, হাজারীবাগ, জিগাতলা, রায়েরবাজার, শুক্রাবাদ, মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক, জাপান গার্ডেন সিটি, কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া, নাখালপাড়া, তেজগাঁও প্রভৃতি স্থানেও দেখা দিয়েছে চরম গ্যাস সঙ্কট।
রাজধানীর সব জায়গাতেই বিশুদ্ধ পানি বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। পানিতে দুর্গন্ধ। আসছে ময়লা,
শেওলা। অনেক এলাকায় পানির রং ঘোলা, লালচে কিংবা কালচে। বাধ্য হয়েই এই পানি ব্যবহার করেন রাজধানীর মানুষ। সামর্থ্যবানরা পানি কিনে পান করেন। আর যাদের সামর্থ্য নেই তারা ওই পানি ফুটিয়ে, ফিটকারী ব্যবহার করে ফিল্টারের মাধ্যমে ছেঁকে পান করেন। তাতেও পানি বিশুদ্ধ হওয়ার গ্যারান্টি মিলছে না।
পুরনো ঢাকার বেগম বাজার এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ শামিমা খাতুন বলেন, ওয়াসার পানিতে গোসল করলে শরীর চুলকায়, চোখ জ্বলে। পানিতে উত্কট গন্ধ, মুখে তোলা যায় না, বমি আসে। ফুটালে পানি বিবর্ণ হয়ে যায়। দুর্গন্ধ দূর হয় না। ফুটানোর পর পানিতে প্রচুর ফেনা হয়। পানিতে আসা গাদ বালতি বা পাতিলের তলায় জমে কালো হয়ে বসে যায়। দেখতে আলকাতরার মতো। সাবান কিংবা ভিম দিয়েও ওই পাত্র পরিষ্কার করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে জারভর্তি পানি কিনে রান্নার কাজ করতে হয়। খাওয়ার পানি কিনতে হয় বছরজুড়েই। একই তথ্য জানালেন বাড্ডা এলাকার গৃহবধূ ফাতেমা বেগম।
বাসার লাইনে দূষিত পানি আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে গুলশান-২ এলাকার জাহের ভিলার স্বত্বাধিকারী বলেন, ওয়াসা দূষিত পানি সরবরাহ করায় পান করে আমাদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে নানা ধরনের রোগ হচ্ছে।
রাজধানীসহ সারাদেশে বিদ্যুত্ সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ গ্রাহকদের। রাজধানীর অভিজাত এলাকায়ও দৈনিক ৪-৫ দফা লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার অন্যসব এলাকাসহ সারাদেশে রাত-দিন প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং তো আছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিতরণ ত্রুটিজনিত বিভ্রাট। শীত আসার প্রাক্কালে বিদ্যুতের এ ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী, জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী দফায় দফায় আশ্বস্ত করেছিলেন এক বছরের মাথায় লোডশেডিং থাকবে না। ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশের। কুইক রেন্টালের নামে টেন্ডারবিহীন ব্যয়বহুল বিদ্যুেকন্দ্র বসিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার পরও সরকারের অদূরদর্শী ও ভ্রান্ত পরিকল্পনার কারণে বিদ্যুত্ ভোগান্তি থেকে গ্রাহকের মুক্তি মিলছে না।
রাজধানীর পল্টন, লালবাগ, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, খিলগাঁও, কমলাপুর, সূত্রাপুর, বংশাল, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, পার্শ্ববর্তী টঙ্গী এলাকা থেকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন, মাঝে ক’দিনের জন্য লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় থাকলেও এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একবার বিদ্যুত্ চলে গেলে দু’ঘণ্টায়ও আর দেখা মেলে না। সন্ধ্যার পর বিদ্যুত্ থাকে খুবই কম সময়ের জন্য। রাত ১১টার পর যখন শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ থাকে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যায়। কিন্তু তারপরও গভীররাত থেকে শুরু করে ভোররাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকছে না।

Monday, 31 October 2011

নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষের হাপিত্যেশ

স্টাফ রিপোর্টার
ভালো মানের কাটারিভোগ ৬২-৬৫ টাকা ও নাজিরশাল ৫৬-৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ১২০ টাকা। ৫০ টাকার কমে কাঁচাতরকারি কেনা যায় না। একইভাবে তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দাসহ সব পণ্যই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে আটা, ময়দা ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। ক্রেতারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে কাঁচাতরকারিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে অগ্নিমূল্য। তিন বেলা খাবার কিনতেই রোজগারের বেশিরভাগ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবন ওষ্ঠাগত। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় মানুষের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, একই পণ্য বাজারভেদে ১০-২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে নেই কোনো তদারকি। সেই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন সাপ্তাহিক বাজার করতে গতকাল কারওয়ান বাজারে আসেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৪ টাকা, সিম ৭০ টাকা ও ছোট আকারের প্রতি পিস কপি ৩০ টাকা দরে কিনেছেন। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বসুন্ধরা কাঁচাবাজার থেকে গতকাল সিম ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা ও বাঁধাকপি আকারভেদে ৩০-৬০ টাকা দরে কিনেছেন। এ দুই বাজারের কাঁচাতরকারির দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একই শহরের দুই বাজারে প্রতিটি পণ্যের দামের পার্থক্য ১০-২০ টাকা বেশি। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৫৬-৫৮ টাকা, মাধ্যম মানের ৫২-৫৪ টাকা, মিনিকেট ৪৬-৪৮ টাকা, কাটারিভোগ ৬২-৬৫ টাকা, পোলাও চাল ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা চিনি ৬৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৭০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১২১-১২৪ টাকা, পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্রান্ডের সয়াবিন তেল ৬০০-৬১০ টাকা, মসুর ডাল ৯০-১০০ টাকা, মধ্যম মানের মসুর ডাল ৮০ টাকা, মুগ ডাল ১২৫-১৩০ টাকা, খোলা আটা ২৮-৩০ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৩৩ টাকা, খোলা ময়দা ৩৮-৪০ টাকা, প্যাকেটজাত ময়দা ৪২ টাকা, পেঁয়াজ ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। আগে তা ১২৫-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া গরুর মাংস ২৭০ টাকা ও খাসির মাংস ৪২০-৪৪০ টাকা। প্রতি হালি ডিমের দাম ২৮ টাকা।

নির্বাচন সামনে রেখে কমিশনে গণবদলি : আ’লীগ ঘেঁষা কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে নেয়া হচ্ছে

কাজী জেবেল
নির্বাচন কমিশনে গণবদলি শুরু হয়েছে। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে কমিশন সচিবালয় পর্যন্ত সর্বত্র বদলির প্রক্রিয়া চলছে। সচিবালয়ে কর্মরত উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কর্মকর্তাদের তৃণমূল থেকে ঢাকায় পদায়ন করা হচ্ছে। একই অবস্থা উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও। এবারই প্রথম এত বড় রদবদল করল নির্বাচন কমিশন।
গণবদলির প্রতিবাদে কর্মকর্তারা যাতে আন্দোলনে না যান তার কৌশল হিসেবে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৫৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন যুগ্ম সচিব ছাড়া বাকিদের মাঠপর্যায়ে বদলি করা হচ্ছে। বাকিদের বিষয়ে শিগগিরই আদেশ জারি করবে কমিশন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গণবদলির কারণ হিসেবে কমিশন বলছে, একই পদে কর্মকর্তারা বছরের পর বছর থাকায় তাদের মধ্যে একগুঁয়েমি, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা এসে গেছে। বদলির ফলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা সচিবালয়ে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। এতে কমিশনের কাজে গতি আসবে। তবে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানান, আমরা অসত্ হলে বিগত জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে বলে কমিশন কোন যুক্তিতে দাবি
করে? বরং জাতীয় সংসদ ও ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে সুবিধা করে দিতেই কমিশন গণবদলি শুরু করেছে। এতে কমিশন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বে দলীয় তকমা লেগে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দাফতরিক অভিজ্ঞতা কম থাকায় কমিশনের কাজে স্থবিরতা দেখা দেবে। এ নিয়ে সচিবালয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদাসহ তিন নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে। কমিশন পুনর্গঠন করা হবে। জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচন নতুন কমিশনারদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। ওই কমিশন তাদের সুবিধা অনুযায়ী প্রশাসনে রদবদল করবেন। কিন্তু মাত্র চার মাস মেয়াদ থাকতে বর্তমান কমিশন সংশোধিত চাকরিবিধির দোহাই দিয়ে বড় ধরনের রদবদল করছে। কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উপ-সচিব পদের কর্মকর্তাদের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র সহকারী সচিব পদের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী সচিবদের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, গতকাল ৫৬ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ে কর্মরত উপ-সচিব জেসমিন টুলী এবং ঢাকার বিভাগীয় উপনির্বাচন কমিশনার ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুত্ফর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। কমিশনে কর্মরত আরেক উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদকে ঢাকা বিভাগীয় উপনির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। তবে আপাতত তাকে পদায়ন করা হচ্ছে না। দু’মাস পর বিশ্বাস লুত্ফর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে ওই দায়িত্বে দেয়া হবে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদার পিএস মোস্তাফা ফারুককে বরিশালে, সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল বাতেনকে সিলেটে, ফরহাদ আহম্মেদ খানকে চট্টগ্রামে, ইসরাইল হোসেনকে রংপুরে, আবুল কাশেমকে কুমিল্লায়, সুভাষ চন্দ্রকে রাজশাহীতে, সৈয়দ খুরশীদ আনোয়ারকে ময়মনসিংহে, সৈয়দ মুসাকে ফরিদপুরে ও মিজানুর রহমানকে খুলনা আঞ্চলিক উপনির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা এতদিন কমিশন সচিবালয়ে ছিলেন। তাদের স্থলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হবে।
জানা গেছে, ঈদের আগে ও পরে সিইসি দু’জন উপ-সচিবের সঙ্গে বসে কমিশন কর্মকর্তাদের কাকে কোথায় বদলি করা হবে, তার তালিকা চূড়ান্ত করেন। এ নিয়ে কমিশন বৈঠকে দু’দফা আলোচনাও হয়েছে। কয়েক মাস আগে কমিশনের সব কর্মকর্তার কাছে একটি ফরম দেয়া হয়। এ ফরমে কর্মকর্তার নাম, পদবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মাঠপর্যায়ে তিনটি পছন্দের জায়গা উল্লেখ করতে বলা হয়। কিন্তু বদলির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের পছন্দের জায়গাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি।
পদোন্নতি পাওয়া ৫৬ কর্মকর্তা : গতকাল পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৬ কর্মকর্তার মধ্যে ২ জন যুগ্ম সচিব, ৯ জন উপ-সচিব ও ৪৪ জন সিনিয়র সহকারী সচিব / অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা / জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা / উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে বেগম জেসমিন টুলী ও বিশ্বাস লুত্ফর রহমান, উপ-সচিব / পরিচালক পদে খোন্দকার মিজানুর রহমান, মো. আনোয়ার হোসেন, এস এম এজহারুল হক, মোস্তফা ফারুক, ফরহাদ হোসেন খান, মো. আবদুল বাতেন, বেগম সুফিয়া জাহান, মো. মহসীন আলী ও মোহাম্মদ ইসরাইল হোসেন পদোন্নতি পেয়েছেন। সিনিয়র সহকারী সচিব / অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা / জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা / উপ-পরিচালক পদে মো. আবদুল হালিম খান, মো. সাবেদ-উর-রহমান, তারাচাঁদ রাজভর, বেগম রাশিদা খানম, মো. আবদুল মোতালেব, মো. নওয়াবুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. মাহবুব আলম শাহ, ফয়সল কাদের, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. আবদুল হাফেজ, মো. সরওয়ার জাহান, মো. আতিয়ার রহমান, আবদুল মমিন সরকার, মোহাম্মদ মনির হোসেন, মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, মোহাম্মদ নূরুল আলম, মো. শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক, এম মাজহারুল ইসলাম, মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, খানাবি শাহানুর খান, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ এনামুল হক, মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম, মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মো. হেলাল উদ্দিন খান, মো. রোকুনুজ্জামান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, তারেক আহম্মেদ, ওহিদুজ্জামান মুন্সী, মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন মল্লিক, মো. সোহেল সামাদ, মো. মুনীর হোসাইন খান, মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মোতাহসিম, মো. হাবিবুর রহমান, মো. শাহ আলম, মোহাম্মদ আতাউর রহমান, এএইচএম কামরুল হাসান, সুধাংশু কুমার সাহা, মো. আবদুর রহিম, বেগম জাকিয়া সুলতানা ও মো. তারিকুজ্জামান।

Saturday, 1 October 2011

অভিজাত উত্তরার বেশকিছু সড়ক পাড়াগাঁয়ের রাস্তার মতোই বেহাল



আলাউদ্দিন আরিফ
অভিজাত আবাসিক এলাকা উত্তরার অধিকাংশ রাস্তা এখন অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তার মতোই বেহাল। রাস্তায় জমে আছে কাদা, নোংরা আবর্জনা, নেই কার্পেটিং। এভিনিউ সড়কগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও মহল্লার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা দীর্ঘদিন থেকে। উত্তরার পার্শ্ববর্তী নিকুঞ্জ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কাওলার এলাকার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা দেখা গেছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ দুর্বিষহ নাগরিক যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করছে। উত্তরাজুড়েই বিভিন্ন বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর নির্মাণ সামগ্রী রাখা। ফলে রাস্তা খারাপ হচ্ছে, ড্রেন বন্ধ হচ্ছে, এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তরার ১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টরের মধ্যে ১, ৩, ৫ নম্বর সেক্টর ও এভিনিউ সড়কগুলো মোটামুটি ভালো। বেহাল অবস্থা ২, ৪, ৯, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের রাস্তাগুলোর। ৯ নম্বর সেক্টরের একটি সড়কও ভালো নেই। সবক’টিতে নোংরা কাদা আর খানাখন্দে ভরা।
আবদুল্লাহপুর বাসটার্মিনালের পশ্চিম পাশে ৯ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর ও ১০/এ নম্বর সড়ক যেন অজপাড়াগাঁয়ের কাদামাটির বেহাল কোনো সড়ক। এ রাস্তার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সেখানে রাজউকের কিছু জমি রয়েছে। ওইগুলো স্থানীয় সরকারি দল আশ্রিত কিছু সন্ত্রাসী মাস্তান দখল করে দোকানঘর ও বস্তি বানিয়েছে। এসব দোকানে চলে গাঁজা ফেনসিডিলের ব্যবসা। এসব নিয়ে ৯ নম্বর সেক্টরের বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ারা চরম উদ্বেগ ও অসহনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তারা কয়েক দফা র্যাবকে জানানোর পর র্যাব অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও কয়েক জনকে আটক করে। কিন্তু অবৈধ দখল বা মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি। ১২ ও ১০/এ নম্বর সড়কে অবৈধ দখলদাররা রাস্তার ওপর নোংরা আবর্জনা ফেলে রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ করে রেখেছে। বস্তি ও দোকানের বর্জ্য পানি রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না সারাবছরই সড়কগুলো কর্দমাক্ত থাকছে।
উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড ব্রাক মার্কেটের সামনে থেকে ৪ ও ৬ নম্বর সেক্টরের মাঝখান দিয়ে উত্তরখানের শাহকবির মাজার পর্যন্ত সড়কটিকে এখন আর সড়ক বলা যায় না। পুরোটাই বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী হাবিবুর রহমান বলেন, জীবন হাতে নিয়ে রিকশা বা ম্যাক্সিতে উঠতে হয়। খারাপ রাস্তার কারণে ১৫ টাকার রিকশাভাড়া দিতে হয় ৪০ টাকা। তাও রিকশা চালকরা যেতে চায় না। রিকশায় গেলে কোমর ভেঙে যাওয়ার অবস্থা হয়। আর বৃষ্টি হলে এলাকায় যেন আতঙ্ক নামে। স্কুল -কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিদারুণ কষ্ট স্বীকার করে এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। বৃষ্টির সময় হেঁটে গেলেও পোশাক বদলাতে হয়।
উত্তরখান এলাকার আবদুল্লাহপুর-আঁটিপাড়া সড়কটি বহুদিন থেকেই বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। মাস্টারবাড়ি, রাজবাড়ি, ময়নারটেক, সরকারপাড়া, মাদারবাড়ি, মধ্যপাড়া, মোল্লারটেক, উত্তরখান ও কাচকুড়া এলাকার সড়কগুলোরও বেহাল দশা। দক্ষিণখান থানা এলাকায় হাজীক্যাম্প থেকে দক্ষিণখান, নগরিয়াবাড়ি, বেতুলি, ভাটুরিয়া, দিলনা, তালনা, কাওলা এলাকার সবক’টি সড়ক ও গলির অবস্থা বেহাল। আশকোনা এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন জানান, জরুরি সরকারের দুই বছর ও এ সরকারের আড়াই বছরে এসব রাস্তার সংস্কার হয়নি।
মাদারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আলমাস হোসেন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নির্বাচনী এলাকা এটি। তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সড়ক মেরামতের কিন্তু গত আড়াই বছরে একটি সড়কও ভালোভাবে মেরামত করা হয়নি। ৬ মাস আগে উত্তরা ময়নারটেক সড়কটি কার্পেটিং করা হলেও বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই সেটি ফিরে গেছে আগের অবস্থানে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দলীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ করানোর কারণে এ অবস্থা হয়েছে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৯টি সড়ক, ৯ নম্বর সেক্টরের সবকটি সড়ক, ৭ নম্বর সেক্টরের বেশ কয়েকটি সড়ক, উত্তরা হাইস্কুলের আশপাশের সড়ক, ১৪ নম্বর সেক্টরের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে।
২ নম্বর সেক্টরের র্যাব-১ কার্যালয়ের উত্তর পাশের সড়ক, ৪ নম্বর সেক্টরের মূলসড়ক ও আশপাশের সড়ক, ৪ নম্বর সেক্টরের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সামনের সড়ক, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের আশপাশের সড়ক, ৬ নম্বর সেক্টরের বেশ কয়েকটি সড়ক, ৮ নম্বর সেক্টরের সড়কগুলো অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। উত্তরা-৮ নম্বর সেক্টরের আলাউল এভিনিউর শেষ প্রান্তের সড়কগুলোর দু’পাশ এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে।
১২ নম্বর সেক্টরের ১২, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর সড়কের অবস্থাও বেহাল অনেক দিন থেকে। ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কটি ভেঙে কার্পেটিং ধুয়ে-মুছে ছোট জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। ১২ নম্বর সেক্টরের ১৮ থেকে ২০ নম্বর সড়ক দিয়ে বর্ষা মৌসুমে হাঁটার উপায় থাকে না। রাস্তার মাঝে মাঝে দেড় থেকে দুই ফুট গভীর গর্ত। প্রাইভেট কার এসব গর্তে একবার পড়লে আর তোলার উপায় থাকে না।
উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শওকত আলী বলেন, গুলশানের পরই দেশের সবচেয়ে অভিজাত বনেদি আবাসিক এলাকা উত্তরা। ৯ নম্বর সেক্টরসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে সড়কের অবস্থা এমন হয়েছে যে মনে হয় অজপাড়াগাঁয়ের রাস্তা। কোনো কোনো সড়কে বর্ষার দিনে গাড়ি নিয়ে বেরুলে আটকা পড়তে হয়, হেঁটে চলতে গেলে জামা-কাপড় নষ্ট হয়।
এদিকে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাটগুলোও বহু বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। নিকুঞ্জ-২ আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে সবগুলো সড়কই খারাপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬-৭ বছরের বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। একবার বৃষ্টি হলে ৭-৮ ঘণ্টা সময়েও সড়কের জলাবদ্ধতা দূর হয় না। সড়কগুলোর অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে এ আবাসিক এলাকায় ভাড়াটিয়ার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যাদের বাড়িভাড়া একমাত্র আয় তাদের অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে। যেসব বাড়ির মালিক ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি করেছেন তাদেরও ত্রাহি অবস্থা। বাসিন্দারা জানান, রাস্তাগুলো এতই খারাপ যে রিকশা পর্যন্ত যেতে চায় না। নিকুঞ্জ-২ এর ৫ নম্বর সড়ক থেকে ১৬ নম্বর সড়ক পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ম্যানহোলের বর্জ্য সড়কের ওপর পড়ছে। নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশাসহ এলাকার সমস্যা সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি তারা স্থানীয় এমপি সাহারা খাতুনকে দিয়েছেন। কিন্তু বার বার তিনি আশ্বাস দেয়ার পরও বর্তমান সরকারের আমলে ওই এলাকার এক চুল পরিমাণও উন্নয়ন হয়নি। হয়নি বেহাল রাস্তাগুলোর সংস্কার।
উত্তরা, নিকুঞ্জ, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই এলাকার সড়কগুলোর উন্নয়ন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেটা করছেন না। বেহাল রাস্তা সম্পর্কে স্থানীয় এমপি সাহারা খাতুনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।