Friday, 17 December 2010

জরিপকালে পদুয়ায় ২৩০ একর জমি দখল করল ভারতীয়রা : সতর্কাবস্থায় বিডিআর

সিলেট ও জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পদুয়ায় গতকাল সন্ধ্যার পর বিএসএফের ছত্রছায়ায় ভারতীয় নাগরিকরা প্রায় ২৩০ একর জমি দখল করে নিয়েছে। তীর ধনুক ও দোনলা বন্দুক নিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক ভারতীয় নাগরিক পদুয়া সীমান্তের ১২৭০ থেকে ১২৭১নং পিলার পর্যন্ত প্রায় ২৩০ একর জমি দখল করে সেখানে অবস্থান নেয়। এ সময় বিএসএফ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ওই এলাকা থেকে বাংলাদেশীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র যাচ্ছে। এ ঘটনায় বিডিআর সতর্কাবস্থায় রয়েছে। এর আগে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের প্রতাপপুর সীমান্ত ফাঁড়ির আওতাধীন ১২৭০ থেকে ৭১নং মেইন পিলারের ৪এস পর্যন্ত জরিপ কাজ হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় উভয় দেশের ভূমিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এবং বিডিআর-বিএসএফের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে বেলা পৌনে ৪টা পর্যন্ত চলে জরিপ কাজ। কিন্তু এ সময় জরিপ কাজে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সীমান্তের পান্তুমাই, উত্তর প্রতাপপুর, হাজীপুরসহ কয়েকটি গ্রামের অর্ধ-সহস্রাধিক কৃষক। এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষকরা জরিপ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। জরিপ চলাকালে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ছিল সতর্কাবস্থায়। বিএসএফের প্রায় সহস্রাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয় পদুয়া ও আশপাশের অপদখলীয় ভূমিতে। এ সময় সীমান্ত পিলার যে স্থানে আছে সেখান থেকেই জরিপ কাজ চালানোর দাবি জানায় কৃষকরা। বিক্ষুব্ধ কৃষকরা জরিপ কাজের সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বিএসএফের উপস্থিতির তীব্র প্রতিবাদ জানান। পান্তুমাই গ্রামের মদরিছ আলী জানান, আমার বাড়ির ওপর দিয়ে জরিপ হতে দেব না। কৃষক সরফ উদ্দিন জানান, ৪০ বছর থেকে পদুয়া সীমান্তঘেঁষা আমার রেকর্ডীয় জায়গায় নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করতে পারছি না বিএসএফের কারণে। ১২৮৪-এর পূর্বাংশে জরিপ কাজ শুরু হলে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে থাকলে বিএসএফ শক্তিবৃদ্ধি করে অস্ত্র উঁচিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় সিলেট ২১ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর আবদুল্লাহ্ আল-মামুন ভূঁইয়া ও সিলং ১ ব্যাটালিয়ন বিএসএফের কমান্ড্যান্ট শেখর গুপ্তা, দু’জন মিলে চলমান জরিপ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সংযত থাকতে বৈঠকে মিলিত হন। কিন্তু গোবিন্দ্র সিংয়ের বাধারমুখে চলমান যৌথ কমিশনের ভূমি জরিপ কাজ করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে গোবিন্দ সিংয়ের ইন্ধনে ভারতীয় নাগরিকরা দলবদ্ধ হয়ে ২৩০ একর জমি দখল করে নেয়। এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে বিএসএফ। সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জোট সরকার আমলের বাজার দরের সঙ্গে তুলনা : নিত্যপণ্যের চড়া দামে দিশেহারা মানুষ



সৈয়দ মিজানুর রহমান

সরকারের বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেলের গতকালের দেয়া তথ্যমতে, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ, মাংস, গুঁড়োদুধ ও চিনি— সবক’টি পণ্যের দরই গত এক বছরে ৪০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে গত এক মাসে দফায় দফায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। চালের দর একদিনেই বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা। আটার দর বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। এসব তথ্য টিসিবির।
সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। আর খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩১ টাকা কেজি দরে। তবে সরেজমিন বাজার ঘুরে জানা গেছে, মোটা চাল ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আটা বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩২ টাকা কেজি দরে। টিসিবি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। সরু চালের দর গত এক মাসে বেড়েছে ৫ ভাগ, যা এক বছরের হিসাবে ২২ শতাংশের বেশি। মাঝারি মানের চালের দর এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকা। এক মাসে মাঝারি মানের চালের দর বেড়েছে ৪ শতাংশ। এক বছরের হিসাবে বৃদ্ধির হার ৩৫ শতাংশের বেশি। মোটা চাল গত এক মাসে বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। গত এক বছরের হিসাবে মোটা চালের দর বেড়েছে ৪১ শতাংশ। তবে টিসিবির হিসাবেই ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাজারে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৬ টাকা দরে। সে সময় মোটা চালের দর ছিল ১৭ থেকে ১৯ টাকা কেজি।
গতকাল প্রতি কেজি খোলা আটা ৩০ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে টিসিবি। আটার দর এক মাসে ৭ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের হিসাবে আটার দাম বৃদ্ধির হার ৪৫ দশমিক ৪৫ ভাগ। এ হিসাব টিসিবির। একই সংস্থার ২০০৬ সালের বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, তখন প্রতি কেজি আটার (খোলা আটা) দর ছিল ১৮ টাকা মাত্র। টিসিবি জানিয়েছে, গতকাল প্রতি কেজি ময়দা (খোলা) বিক্রি হয় ৩৪ টাকা কেজি। প্যাকেট ময়দার দাম গতকাল আরেক দফা বেড়ে বিক্রি হয় ৩৮ টাকা কেজি।
ভোজ্যতেলের বাজার এখনও স্থিতিশীল হয়নি বলে জানিয়েছে টিসিবি। সরকার নির্ধারিত দরে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে না রাজধানীর কোথাও। টিসিবির বাজার দর অনুসন্ধান বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল সয়াবিনের দর কিছুটা কমলেও প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন বিক্রি হয় ৯২ টাকা দরে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়া হয়েছিল ৮৬ টাকা। ২০০৬ সালের টিসিবির বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, তখন সয়াবিন বিক্রি হয়েছে লিটারপ্রতি ৪৮ টাকা মাত্র। গত এক বছরেই সয়াবিনের দর বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। পাম অয়েলের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। টিসিবি জানায়, বর্তমানে প্রতি লিটার লুজ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা দরে। এক বছরে পাম অয়েলের দর বেড়েছে ৪১ শতাংশ। তবে ২০০৬ সালে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রতি লিটার ৩৯ টাকা দরে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৯ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে। আমদানিকৃত পেঁয়াজের দর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। এক বছরের হিসাবে পেঁয়াজের দর বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। তবে ২০০৬ সালেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ছিল ১৩ টাকা কেজি। এক বছরে প্রতি কেজি হলুদের দর ১০১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। বর্তমানে হলুদ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২৫ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা দরে।
রহমতগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী নেসার উদ্দিন জানিয়েছেন, গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮৬ থেকে ৯১ টাকা কেজি দরে, যা খুচরা বাজারে ৯৬ থেকে ১০৪ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে টিসিবি। পাইকারি বাজারেই অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডের মসুর ডাল বিক্রি হয় ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এ ডাল ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা দরে গতকাল বিক্রি হয়। নেপালি মসুর ডাল গতকাল রহমতগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা দরে, যা রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ১০৪ থেকে ১০৬ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, পথে-ঘাটে আবারও বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দর এখন ঊর্ধ্বমুখী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। গতকালও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি টিম ঝিগাতলা কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল হাশেম। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বিসিএসআইআর ও মত্স্য অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং র্যাব ও ডিএমপির দুটি টিম সহায়তা দেয়। ঝিগাতলা বাজারের নেহাল স্টোর, মীম জেনারেল স্টোর, সূচনা জেনারেল স্টোর, মায়াবী ট্রেডার্স, ফরাজী ট্রেডার্স, পাটোয়ারী স্টোর, বার্ড কনফেকশনারি, মমিন স্টোর, মা কনফেকশনারি ও নাজু কনফেকশনারিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ধারা ৩৭ অনুসারে ড্যানিশ কনডেনসড মিল্ক, বাঘাবাড়ী ঘি, ট্যাংসহ মোড়কজাত পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য না থাকা সত্ত্বেও তা জ্ঞাতসারে বিক্রির জন্য ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

গার্মেন্টে আগুন : নিহত ৩০ : আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের কারখানার ৩টি ফ্লোর পুড়ে গেছে



আলাউদ্দিন আরিফ ও নজমুল হুদা শাহীন

এবার ভয়াবহ আগুনে জীবন দিতে হলো প্রায় অর্ধশত গার্মেন্ট শ্রমিককে। অধিকার আদায়ের সংগ্রামকালে চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে তিন শ্রমিক নিহত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটল আরেক ট্র্যাজেডি। রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার নরসিংহপুরে এফবিসিসিআই সভাপিত এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপের ১১ তলা গার্মেন্ট ভবনে গতকাল দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে পুড়ে গেছে ১১ তলা ভবনের ৩টি ফ্লোর। নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০টি লাশ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮টি লাশ আনা হয়েছে। হাসপাতালে মারা গেছে আরও একজন। অন্য লাশগুলো সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে। ভবনের ১১ তলায় আরও কিছু লাশ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুড়ে কয়লা হয়ে যেতে পারে বেশ কিছু লাশ। সেখানে ক্যান্টিনে কয়েকশ’ শ্রমিক ছিল বলে তাদের সহকর্মীরা মিডিয়াকে জানিয়েছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জোর দিয়ে বলেছেন
কারখানা শ্রমিকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে যাবে। তবে সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়িতে হতাহতের স্বজনরা ভেতরে ঢুকতে বা উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে পারছেন না। রাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ মোট ২২টি লাশ উদ্ধারের কথা জানান।
অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক শ্রমিক। নিহতদের অধিকাংশই আতঙ্কে লাফিয়ে অথবা আটকা পড়ে নির্মম পরিণতির শিকার হন। অনেক শ্রমিক পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনের কারণে রাত ৯টা পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল পুড়তে থাকা ১১ তলায় পৌঁছাতে পারেনি। এ ঘটনায় আহতদের ঢাকা মেডিকেল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শিন শিন জাপান হাসপাতাল, নাইটেঙ্গেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের মালিকানাধীন ‘দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার’ নামের ওই কারখানাটিতে গতকাল দুপুর ২টার দিকে আগুন লাগে। ১০ তলার ফিনিশিং বিভাগের খাবার ঘরে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই তা ১১ তলায় ছড়িয়ে পড়ে। নবম তলারও আংশিক পুুড়ে গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর ইউনিটসহ ১২টি ইউনিট আগুন নেভানো এবং উদ্ধার কাজ শুরু করে। ডেকে আনা হয় হেলিকপ্টার। উদ্ধার কাজে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ সন্ধ্যা ৬টায় সাংবাদিকদের বলেন, দশমতলার আগুন নিভেছে। তবে ১১ তলার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে রাত ১১টায়। সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। রাতে স্নোকেল লেডারের সাহায্যে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ১০ তলায় প্রবেশ করেছেন। সেখানে ১২টি লাশ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
আগুন লাগার দেড় ঘণ্টা পর বহুতল ওই ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক মনির হোসেন জানান, দুপুরের খাবারের সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তার অভিযোগ, এ সময় নবমতলার গেট বন্ধ করে দেয়া হলে শত শত শ্রমিক আটকা পড়েন। বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা জিন্সের কাপড় জোড়া দিয়ে দশম ও ১১তলা থেকে নামার চেষ্টা করেন। এতে অনেকেই পড়ে মারা যান।
কারখানার পরিচালক (অপারেশন) সুনীল কুমার সরকার জানান, ১০ তলায় ফিনিশিং বিভাগে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর তা ১১ ও ৯ তলার ক্যান্টিনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ভবনটিতে প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। আগুন লাগা ফ্লোরগুলোতে ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ছিল। তাই অধিকাংশ শ্রমিক ক্যান্টিনে ছিলেন বলে তিনি জানান। এ ক্যান্টিনেই আগুনের সূত্রপাত। এখানে নাশকতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন তিনি।
অগ্নিকাণ্ডের পর দেখা গেছে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে। ওপরের দুটি ফ্লোর থেকে দাউ দাউ করে আগুন বেরিয়ে আসছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড় করছেন এলাকায়। হতাহত শ্রমিকদের আহাজারিতে পুরো এলাকায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এরই মধ্যে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাবের হুইসেল আর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির কানফাটা শব্দে পুরো এলাকায় ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মিলন বড়ুয়া নামে কারখানার এক শ্রমিক জানান, দুপুরে লাঞ্চ করছিলাম। হঠাত্ দেখি দাউ দাউ আগুন। কোনোদিকে সরার উপায় নেই। খেলাধুলার কাপড় তৈরির সরঞ্জাম বোঝাই ছিল ফ্লোরগুলোতে। এর সবই উচ্চদাহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই আগুন লেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও কোনো ফল হয়নি। শ্রমিক মাসুদ জানান, কেরোসিন তেলে আগুন লাগলে যেমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ফ্লোরে। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারদিকে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে থাকে। নামার সময় দেখেন কলাপসিবল গেট আটকানো। পরে জানালা দিয়ে বেরিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেয়া রশি ধরে নেমে আসেন তিনি। অপর শ্রমিক নজরুল জানান, নামার সময় তিনটি অগ্নিদগ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। আগুন লাগার সময় তিনি ১০ তলায় ছিলেন। ওই সময় ভবনের মূল সিঁড়ির কলাপসিবল গেট আটকে দেয়া হয়। ফলে শ্রমিকরা নামতে পারেননি। দাউ দাউ আগুনে অনেক শ্রমিকের শরীর ঝলসে গেছে। তাই জীবন বাঁচাতে যে যেখান দিয়ে পেরেছেন নেমে এসে চিত্কার শুরু করেন।
হাবিবুর রহমান নামে অপর এক শ্রমিক জানান, এরই মধ্যে ১০ ও ১১ তলার বহু শ্রমিক পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেন। তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ওই দুটি ফ্লোরে ৬ হাজার শ্রমিকের মধ্যে তার মতে অর্ধেক শ্রমিক আটকা পড়েছেন। ফ্যাক্টরিতে মোট ২২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। আগুন জ্বলছে—এমন ফোরগুলোতে ৬ হাজার শ্রমিকের অবস্থান ছিল বলে কারখানার সুপারভাইজর আবুল কাশেম জানান।
ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ঢাকা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম সাংবাদিকদের জানান। তিনি আরও বলেন, সিঁড়ি খোলা থাকলে শ্রমিকরা দ্রুত নেমে আসতে পারত। কলাপসিবল গেট আটকে দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪টি অত্যাধুনিক স্নোকেল ল্যাডার দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। ফ্লোরগুলোতে পানি ছিটিয়েছেন ফায়ার ব্রিগেড সদস্যরা। তাদের কয়েকজন কারখানার দশম ফ্লোরে গেছেন। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যা ৭টায়। ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আগুন নেভানোর কাজে সরকারের সহযোগিতাও কামনা করেন।
কত লাশ : আগুনে ঠিক কতজন মারা গেছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। কেউ বলছেন নিহত ৩০। কেউ বলছেন অর্ধশতের বেশি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানান, তারা মোট ২২টি লাশ উদ্ধার করেছেন। এরপরও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন। সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, এনাম মেডিকেল, শিমশিম জাপান হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব হিসাবে লাশের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেহেতু উদ্ধার কাজ চলছে এবং সর্বশেষ সার্চ করলে আরও লাশ পাওয়া যেতে পারে। তাই লাশের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগুন লাগার পর বিকল্প সিঁড়ি দিয়ে কিছু শ্রমিক নেমে আসে। অনেকে কাপড়ের রোল তৈরি করে তা দিয়ে নেমে আসার সময় হাত ফসকে পড়ে মারা যান। নিহত শ্রমিক তানিয়ার স্বামী আবুল বাশার জানান, তারা ১০ তলায় ছিলেন। আগুন লাগার পর সিঁড়ি বন্ধ থাকায় তারা কয়েকজন মিলে কাপড়ের রোল বানিয়ে নিচে নেমে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার স্ত্রী তানিয়া দাঁত দিয়ে কামড়েও দড়ি ধরে রাখতে পারেননি। রক্তাক্ত অবস্থায় তানিয়া পড়ে মারা যান। একইভাবে পড়ে আরও অনেক শ্রমিক মারা গেছেন।
আগুন লাগার পর আশুলিয়ার শিন শিন জাপান হাসপাতালে আনা হয় ১০টি লাশ। নারী ও শিশু হাসপাতালে নেয়া হয় ৭টি লাশ। ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় ৬টি। এনাম মেডিকেলে নেয়া হয় ৩টি। আরও ৪টি লাশ থাকে ঘটনাস্থলে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৩০টি লাশের সন্ধান মেলে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭টি লাশ আনা হয়। এছাড়া আহত অবস্থায় দেলোয়ার হোসেন নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
নিহত কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আশরাফুল ইসলাম ও আজিজুল হক নামে। আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে ছয়টি লাশ দেখা গেছে। সেখানে আহত অবস্থায় ভর্তি আছেন ২৫ জন। আশুলিয়া নাইটেঙ্গেল হাসপাতালে দু’জনের লাশ রয়েছে। এর মধ্যে এক নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম হালিমা বেগম। আশুলিয়া শিন শিন জাপান হাসপাতালে রয়েছে ১০ জনের লাশ। তার মধ্যে একরামুল হক, রুহুল আমিন ও মাসুদ নামে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়া নিহত আরও যাদের পরিচয় মিলেছে তারা হলেন—নওগাঁ সদরের জয়নাল আবেদীনের ছেলে ফরিদ, একই এলাকার জহিরুলের ছেলে ফ্লোর ইনচার্জ এমরান, জামালপুরের শারমিন, ফরিদপুরের মধুখালীর অহিদুর রহমানের কন্যা মানসুরা, ময়মনসিংহ নান্দাইলের টুটুল ওরফে বাবুল, নেত্রকোনার হিমেল ও বরগুনার ইকরাম।
ঢাকা মেডিকেলে ১৮ লাশ : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ১৮ জনের লাশ। ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে হাসপাতলে পাঠানো হয়। চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনজন মারা যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আরও ১৫টি লাশ পাঠানো হয় মর্গে। এরমধ্যে ১০ জন পুরুষ ও পাঁচজন মহিলা। এদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া যায়ানি। রাত ৯টা পর্যন্ত আহত অবস্থায় তিনজন চিকিত্সাধীন ছিলেন।
এদিকে আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্টে আগুন লাগার পর দুপুর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মর্গ সূত্রে জানা যায়, রাত পৌনে ৯টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি টিকআপ ভ্যানে করে ১৫ জনের লাশ আনা হয়। লাশবাহী প্রতিটি গাড়ির সঙ্গে পুলিশ সদস্য ছিল।
পুড়ে কয়লা হওয়ার আশঙ্কা : কারখানা ভবনের ১১ তলায় বহু শ্রমিক পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভবনের ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন কক্ষে আটকেপড়া অনেক শ্রমিক বেরিয়ে আসতে পারেনি। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরাও সেখানে পৌঁছতে পারেনি। ফলে ভবনের উপরের তলায় আসলে কী ঘটেছে কত শ্রমিক মারা গেছে তারও সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উঁচু এ ভবনে উদ্ধার কাজও ব্যাহত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মী জানান, খালি চোখে আগুন দেখা যায় না। কিন্তু দিনভর আগুনে ভবনটি যে মাত্রায় উত্তপ্ত হয়েছে তাতে প্রবেশ করলে তারা কাবাব হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে। সেখানে অগ্নিরোধ জ্যাকেট ব্যবহার করেও ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
গার্মেন্টের মেশিন অপারেটর জাহিদুল আলম জানান, ক্যান্টিনে অনেক শ্রমিক ছিল। তাদের অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারেনি। কেউ কেউ বিকল্প সিঁড়ি বা জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু যারা আটকা পড়েছে ধোঁয়ার কারণে বা আগুনের তাপে তাদের অনেকেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কেউ কেউ কয়লা হয়ে গেছে। এসব শ্রমিকের লাশ উদ্ধার হলেও হয়তোবা কোন দিনই তাদের পরিচয় পাওয়া যাবে না। উপস্থিত লোকজন বলেন, ঢাকার নিমতলীতে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে অনেক মানুষ কয়লা হয়ে গিয়েছিল। তাদের অনেকেরই লাশ শনাক্ত করা যায়নি। এভাবে দ্যাটস ইট স্পোর্টস ভবনেও অনেক শ্রমিকের লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তাদের লাশ কখনোই শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।
আগুন লাগার নেপথ্যে : হা-মীম গ্রুপের এ গার্মেন্টটিতে কী কারণে আগুন লেগেছে তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। কেউ কেউ বলছেন, এটি হা-মীম গ্রুপের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। কারণ, এর আগেও কয়েকবার হা-মীম গ্রুপের কারখানায় আগুন লেগেছিল। গত বছরের জুন মাসেও একই এলাকায় আরও একটি গার্মেন্টে আগুনে ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছিল। এর আগে ২০০৯ সালেও আগুন লেগেছিল হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্টে। ঢাকার তেজগাঁও এই গ্রুপের গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক হতাহত হয়েছিল। এখন একই গ্রুপের গার্মেন্টে আগুন লাগল। আগুন লাগার কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলছেন, এটা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হতে পারে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষও বলছে আগুন লাগার কারণ শর্ট সার্কিট। তবে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তদন্তে সঠিক কারণ বেরিয়ে আসবে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও অগ্নিকাণ্ডের কারণে সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ডিজিএম লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন জানান, ভবনটির ৬টি গেটের মধ্যে সবই খোলা ছিল। সিঁড়ির দিকে ধোঁয়া দেখে শ্রমিকরা লাফিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। এ কারণে অনেকেই পড়ে আহত বা নিহত হয়েছেন। কোনো ধরনের নাশকতার সন্দেহের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, সাধারণ কারও পক্ষে কোনো অবস্থাতেই কারখানার ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
আগুন ভয়াবহ হওয়ার নেপথ্যে : দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার নামের এ কারখানাটিতে রফতানির জন্য ৬ লাখ পিস পোশাক তৈরি করা হচ্ছিল। এর মধ্যে দুই লাখ পিস তৈরি পোশাক ১০ তলায় রাখা ছিল। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা জানান, সিনথেটিক জাতীয় উচ্চদাহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল এসব পোশাক। তৈরি করে রাখা পোশাকগুলোতে আগুন লাগায় প্রচণ্ড ধোঁয়ায় দাউদাউ কারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেক শ্রমিক শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পানি সঙ্কটে কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। এরপর ঢাকা থেকে ওয়াসার পানির গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বলেন, এ ধরনের আগুন নেভাতে অনেক বেশি সময় লাগে। ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের আগুন থেকে আগুন ও ধোঁয়া বেরিয়ে আসে। ফলে আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে না। তিনি বলেন, যেহেতু এটা কাপড়ের আগুন তাই এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সময় লাগে। প্রায় একইরকম বক্তব্য দেন উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও।
হেলিকপ্টারে উদ্ধার কাজ করা যায়নি : অগ্নিকাণ্ডের পর আটকেপড়া শ্রমিকদের হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়। আটকেপড়া শ্রমিকরা যাতে লাফিয়ে নামতে পারেন সেজন্য নিচে জাল বিছানো হলেও সে উদ্যোগও কোনো কাজে লাগেনি। এত ওপর থেকে কেউ লাফ দিতে চায়নি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ওই ২টি হেলিকপ্টার আসার পর এটির বাতাসে আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা সেটিকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
ভয়াবহ যানজট : অগ্নিকাণ্ডের কারণে কারখানা সংলগ্ন আবদুল্লাহপুর-ডিইপিজেড সড়কে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার উত্সুক মানুষ, গার্মেন্ট শ্রমিক ও স্বজনদের ভিড়ে এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। তাদের ভিড় সামাল দিয়ে উদ্ধার কাজ চালানো দুরূহ হয়ে পড়ে। নরসিংহপুরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে আশুলিয়া, মিরপুর বেড়িবাঁধ, উত্তরা, টঙ্গী, সাভার ইপিজেড, নবীনগর সড়কেও ভয়াবহ যানজট দেখা দেয়। এই যানজটের কারণে আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
মালিকের বক্তব্য : হা-মীম গ্রুপের এমডি ও এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ এ ঘটনার পরপরই তার কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগুন এখনও জ্বলছে। তবে তা দ্রুত নেভানোর লক্ষ্যে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে সন্ধ্যা ৭টায় তিনি আসেন ঘটনাস্থলে। ঘোষণা দেন নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ও আহতদের চিকিত্সা ব্যয় বহন করার। তিনি বলেন, কী কারণে আগুন লেগেছে তা পরিষ্কার নয়। আগুনের নেপথ্যে কোনো নাশকতা আছে কিনা? এর উত্তরে তিনি জানান, নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কথা বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া আহতদের ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
দুটি তদন্ত কমিটি গঠন : আগুন লাগার ঘটনা তদন্ত করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এক সদস্যের। এতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইস্রাফিল আলম শাহিন।
বিজিএমইএ গঠন করেছে ৩ সদস্যের আরেকটি কমিটি। বিজিএমইএ’র সভাপতি সালাম মুর্শেদী সাংবাদিকদের বলেছেন, আগুনের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া লাশ পৌঁছানোর জন্য আরও ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, হা-মীম গ্রুপের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের জন্য আরও এক লাখ টাকা ও আহতদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
ঘটনাস্থলে মন্ত্রী-এমপিরা : অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইসরাফিল আলম, সাভারের সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ঘটনাস্থলে আসেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও ৫০ জন। এদের চিকিত্সার পুরো খরচ বহন করবে হা-মীম গ্রুপ। আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব না হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ : বিজিএমইএ’র সভাপতি সালাম মুর্শেদী সাংবাদিকদের বলেছেন, আগুনের ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এছাড়া লাশ পৌঁছানোর জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, হা-মীম গ্রুপের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের জন্য আরও এক লাখ টাকা ও আহতদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান হা-মীম গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আহতদের সর্বোচ্চ চিকিত্সা দেয়ারও নির্দেশ দেন। তিনি রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
খালেদা জিয়ার শোক : প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল এক শোকবার্তায় বেগম জিয়া বলেছেন, আগুনে পুড়ে এতগুলো লোকের জীবনহানিতে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গভীরভাবে ব্যথিত। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে পোশাক তৈরি শিল্পে অসন্তোষ বিরাজ করছে, অথচ তা নিসরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
বিজিএমইএ : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। এক বিবৃতিতে তারা নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই বিজিএমইএ’র সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর নেতৃতে বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উদ্ধারকাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

সংসদে যে ভাষায় সমালোচনা হয় তা সভ্যতা বিবর্জিত : মির্জা ফখরুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার

জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা যে ভাষায় আলোচনা ও বিরোধী দলের নেতাদের সমালোচনা করেন তা শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সংসদে যাওয়ার পরিবেশ না থাকায় বিএনপি সংসদে যাচ্ছে না। সংসদ সদস্যরা যে ভাষায় আলোচনা করেন তা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যরা যে ভাষায় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন তা সভ্যতা বিবর্জিত। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস’র নবনির্বাচিত কমিটির পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাসাসের নবনির্বাচিত সভাপতি এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক শিল্পী মনির খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি নায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, যুগ্ম সম্পাদক আহমেদ করিম, ফয়েজ উল্ল্যাহ ফয়েজ, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দিচ্ছে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করছে। বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন মনিটরিং করার জন্য একটি সেল গঠন করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেবে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ সময় জাসাসের শত শত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের দুই বছরের কুশাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত : মওদুদ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নয়ন। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সরকারের ২ বছরের কুশাসনের ফলে সেই চেতনা ম্লান ও ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এখন গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্র চলছে।
গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) ঢাকা মহানগরী শাখা এর আয়োজন করে। মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন পিপলস্ পার্টির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেকুজ্জামান দুদু, মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এসএম জহিরুল হক, অহিদুর রহমান, ফরিদ প্রমুখ।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করে জাতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি বলেন, সরকার দেশে কোন স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। বরং হত্যা, হামলা, মামলা, নির্যাতন করে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার।
সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার প্রমাণ চট্টগ্রাম সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনেও তাদের চরম পরাজয় হবে ভেবেই নির্বাচন দিচ্ছে না। সরকারের সত্ সাহস থাকলে তাদের জনপ্রিয়তা আছে কিনা, তা নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুক।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে সরকার বাড়িছাড়া করেছে, আওয়ামী লীগ সরকারকে একইভাবে ক্ষমতা ছাড়া করা হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা এ সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল চায়, তীব্র আন্দোলন চায়। প্রয়োজনে আবারো হরতাল দেয়া হবে।
শেখ শওকত হোসেন নিলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা করছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার। তবে তার পরিকল্পনা মানুষ সফল হতে দেবে না।

মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ : ইফা ডিজির অপসারণে সরকারের পতন ঘটাতে হবে : আমিনী

স্টাফ রিপোর্টার

ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির নাম সামীম ‘আফজাল’ নয় ‘আখবাছ’ রাখা উচিত। এই ডিজি শুধু ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ধ্বংস করেনি, সারাদেশের ইমামদের ডেকে এনে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করে তাদের অপমান এবং প্রতিটি মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে। এই কুখ্যাত ইসলাম বিদ্বেষী ডিজিকে নেপথ্যে উদ্দীপনা দিচ্ছে বর্তমান সরকার। তাই এই সরকারের পতন ছাড়া ডিজির অপসারণ আশা করা যায় না। সম্প্রতি আর্মি স্টেডিয়ামে ভারতের নায়ক/নায়িকাদের কনসার্টে অশ্লীল ও আপত্তিকর নাচ-গানের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মুফতি আমিনী বলেন, ভারতীয় নর্তকীরা এসে বাংলাদেশের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করে গিয়েছে। মুসলমান হয়ে যদি এই অপসংস্কৃতির প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে কারও ঈমান থাকবে না। আর্মি স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিটি মুসলমানকে অবিলম্বে তওবা করা উচিত। অন্যথায় আল্লাহর গজব নামতে পারে।
গতকাল বিকালে রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে নৈতিকতা বিবর্জিত ও ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ইমামদের সামনে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের প্রধান হোতা ইফা ডিজি অপসারণ দাবিতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
কমিটির নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি তৈয়্যেব, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, মাওলানা যোবায়ের আহমদ, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা নোমান মাজহারি, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা বেলাল হোসাইন, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা জুনায়েদ গুলজার, মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ, আবদুল আজিজ, ইমরান হোসাইন প্রমুখ।
মুফতি আমিনী বলেন, বর্তমান সরকার শুধু ইসলাম নয়, দেশের স্বাধীনতা ধ্বংস করার জন্য যা যা দরকার সব করছে। এসবের প্রতিবাদে সরকার আমাদের আন্দোলন করতে দিচ্ছে না। তারা মনে করছে তাদের পর আর কেউ ক্ষমতায় আসবে না আর নির্বাচন হবে না। তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, জনগণ মাঠে নামলে আর্মি, পুলিশ-বিডিআর দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। শেখ হাসিনার সরকার যত শক্তিশালীই হোক তাদের পতন হবে। এ দেশে ঈমান ও ইসলাম নিয়ে যারা কাড়াকাড়ি করবে, তারাই ধ্বংস হবে।
তিনি বলেন, সরকার শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার ইসলাম ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যা করছে তার পরিণামে তাদের ওপর যে অল্লাহর গজব নেমে আসতে শুরু করেছে তওবা না করলে এই গজব থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। তিনি দেশ ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগামী ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার দেশব্যাপী তওবা দিবস পালন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে খতম ও দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাছাড়া ইফা ডিজির অপসারণ দাবিসহ সরকারের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন এবং ২৪ জানুয়ারি জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ ও প্রতিনিধি সম্মেলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। বক্তব্য শেষে সংক্ষিপ্ত দোয়ায় তিনি সামীম মোহাম্মদ আফজাল এবং আর্মি স্টেডিয়ামে গান আয়োজনকারীদের ধ্বংস এবং বর্তমান সরকারের পতন কামনা করেন।
মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে দেশ থেকে ইসলাম বিতাড়িত করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র থেকে বিরত না হলে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েকরা ঘরে বসে থাকবেন না। সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে মাঠে নামবেন। সমাবেশের পর এক বিক্ষোভ মিছিল জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

যশোরে বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা অন্যান্য স্থানে আরও পাঁচ খুন

ডেস্ক রিপোর্ট

দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃদ্ধা, তরুণী ও শিশুসহ খুন হয়েছে ছয়জন। তাদের মধ্যে যশোরে এক বৃদ্ধাকে চোখ তুলে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজশাহীতে পাওয়া যায় ক্ষতবিক্ষত পাঁচ বছর বয়সী শিশুর লাশ। হবিগঞ্জে খুন হয় অষ্টম শ্রেণীর আরেক শিশু। নারায়ণগঞ্জে নদীতে পাওয়া গেছে তরুণীর লাশ। খাগড়াছড়িতে অপহরণের ৭ মাস পর মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক যুবকের লাশ। আমাদের অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর :
যশোর : যশোরে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। গতকাল সকালে সদর উপজেলার সাহাপুর গ্রামের আলী বক্সের মেহগনি বাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ, এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নিহত বৃদ্ধার ঘাড়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে একটি চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি চামচ, এক জোড়া স্যান্ডেল, চাদর ও একটি মাফলার উদ্ধার করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, অন্য কোথাও খুন করে বৃদ্ধার লাশ ওই স্থানে ফেলে রেখে গেছে খুনিরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
রাজশাহী : রাজশাহীর পবায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাতে বাড়ির পাশের একটি ঝোপের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিশুর নাম বৈশাখী। সে উপজেলার খোলাবোনা গ্রামের আবদুল আলিমের মেয়ে। শিশুর বাবা আবদুল আলিম জানান, রোববার সকালে তার মেয়ে নিখোঁজ হয়। আত্মীয়স্বজনসহ এলাকায় সারাদিন খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৯টায় বাড়ির পাশের একটি ঝোপের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
পবা থানার ওসি রমজান আলী জানান, পুলিশ রাত পৌনে ১০টায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি বলেন, পারিবারিক কোন্দলের জের ধরে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকার দুই মহিলাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো রোজিনা, জমেলা ও আবদুল আজিজ।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আউলিয়াবাদ আরকে উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নিলয় চক্রবর্তী রঘু (১৪) নিখোঁজ হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে উপজেলার বোয়ালিয়া নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের ধারণা অপহরণের পর নিলয়কে হত্যা করে খুনিরা লাশ ফেলে রেখে গেছে। গতকাল দুপুরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিলয় উপজেলার বহরা ইউনিয়নের বুরহানপুর গ্রামের রঞ্জিত চক্রবর্তীর একমাত্র সন্তান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, রোববার বিকাল ৫টায় নিলয়কে তার বাবা ৫০০ টাকা দিয়ে স্থানীয় মনতলা বাজারে পাঠান। এরপর নিলয় আর বাড়ি ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার বাবা গতকাল সকালে মাধবপুর থানায় একটি জিডি করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই নিলয়ের লাশ বোয়ালিয়া নদীতে পাওয়া যায়। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা নদীতে অজ্ঞাত (২৫) এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া চৌধুরীপাড়া গ্রামে মেঘনা নদী থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে এলাকাবাসী মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে একটি লাশ নদীতে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। অজ্ঞাত (২৫) ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে। তার পরনে ছিল কালো সালোয়ার ও টিয়া রংয়ের কামিজ। পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা, দুষ্কৃতকারীরা তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে পালিয়ে যায়।
খাগড়াছড়ি : অপহরণের ৭ মাস পর রুবেল মিয়া (২৮) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুইমারার রসুলপুর এলাকার পাহাড়ি ঝিরি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, অপহরণ মামলার আটক আসামি জনির দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিকাল ৪টায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে হাত-পা বাঁধা গলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এএসপি (রামগড় সার্কেল) জহির আহমেদ জানান, চলতি বছর মে মাসে পরিবারের লোকজন রুবেল মিয়াকে (২৮) অপহরণ করা হয় বলে মাটিরাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ১১ ডিসেম্বর ঢাকার টঙ্গী থেকে মামলার প্রধান আসামি জনিকে পুলিশ আটক করে। রোববার খাগড়াছড়ি আদালতে তার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। রিমান্ডে সে রুবেল মিয়াকে অপহরণের পর মাটিতে পুঁতে রাখে বলে স্বীকার করে।
মাটিরাঙ্গা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, রুবেল মিয়া একজন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক। ৩০ মে রাতে সে তার মোটরসাইকেলে এক যাত্রীকে নিয়ে গুইমারা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। তার হত্যাকাণ্ডে জনিসহ তিনজন জড়িত। পুলিশ অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
বরগুনা : বরগুনা সদর রোডের উকিলপট্টির আবাসিক হোটেল প্রিন্স টাওয়ারের কক্ষ থেকে রোববার ভোররাতে আল মামুন গনি (৩০) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কক্ষে অবস্থানরত কথিত স্ত্রী নাসরিন (২২), বোর্ডিংয়ের ম্যানেজার বাদশা মিয়া ও পরিচারক সুমনকে আটক করা হয়েছে। বরগুনা পুলিশ সুপার মাহবুব হাকিম গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রিন্স টাওয়ারের মালিক মো. হারুনুর রশিদ জানান, রোববার দুপুর দেড়টার দিকে আল মামুন গনি ও নাসরিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের তৃতীয় তলার ৩০২নং কক্ষ ভাড়া নেয়। রাত ৩টার দিকে নাসরিন হোটেলের ম্যানেজার বাদশা মিয়াকে জানায়, তার স্বামী অচেতন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা ম্যানেজার তাকে জানালে তিনি বরগুনা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মামুনের লাশ উদ্ধার করে। গতকাল মামুনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ সময় মামুনের কক্ষ থেকে ৬২ হাজার টাকা এবং ৬টি মোবাইল সেট উদ্ধার করে পুলিশ।
নাসরিন সাংবাদিকদের জানান, তিনি বরগুনা সদর উপজেলার লেমুয়া গ্রামের মজিবর গাজীর মেয়ে। ছয় মাস আগে পাথরঘাটা উপজেলার হাড়িটানা গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মামুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। রোববার দুপুরে মামুন মোবাইল ফোনে তাকে প্রিন্স টাওয়ারে আসতে বলেন। রাতে তার স্বামী গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের ধারণা, মামুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।