Friday 17 December 2010

জোট সরকার আমলের বাজার দরের সঙ্গে তুলনা : নিত্যপণ্যের চড়া দামে দিশেহারা মানুষ



সৈয়দ মিজানুর রহমান

সরকারের বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেলের গতকালের দেয়া তথ্যমতে, চাল, ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ, মাংস, গুঁড়োদুধ ও চিনি— সবক’টি পণ্যের দরই গত এক বছরে ৪০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে গত এক মাসে দফায় দফায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। চালের দর একদিনেই বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা। আটার দর বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। এসব তথ্য টিসিবির।
সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। আর খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩১ টাকা কেজি দরে। তবে সরেজমিন বাজার ঘুরে জানা গেছে, মোটা চাল ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আটা বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩২ টাকা কেজি দরে। টিসিবি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। সরু চালের দর গত এক মাসে বেড়েছে ৫ ভাগ, যা এক বছরের হিসাবে ২২ শতাংশের বেশি। মাঝারি মানের চালের দর এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকা। এক মাসে মাঝারি মানের চালের দর বেড়েছে ৪ শতাংশ। এক বছরের হিসাবে বৃদ্ধির হার ৩৫ শতাংশের বেশি। মোটা চাল গত এক মাসে বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। গত এক বছরের হিসাবে মোটা চালের দর বেড়েছে ৪১ শতাংশ। তবে টিসিবির হিসাবেই ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাজারে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৬ টাকা দরে। সে সময় মোটা চালের দর ছিল ১৭ থেকে ১৯ টাকা কেজি।
গতকাল প্রতি কেজি খোলা আটা ৩০ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে টিসিবি। আটার দর এক মাসে ৭ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের হিসাবে আটার দাম বৃদ্ধির হার ৪৫ দশমিক ৪৫ ভাগ। এ হিসাব টিসিবির। একই সংস্থার ২০০৬ সালের বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, তখন প্রতি কেজি আটার (খোলা আটা) দর ছিল ১৮ টাকা মাত্র। টিসিবি জানিয়েছে, গতকাল প্রতি কেজি ময়দা (খোলা) বিক্রি হয় ৩৪ টাকা কেজি। প্যাকেট ময়দার দাম গতকাল আরেক দফা বেড়ে বিক্রি হয় ৩৮ টাকা কেজি।
ভোজ্যতেলের বাজার এখনও স্থিতিশীল হয়নি বলে জানিয়েছে টিসিবি। সরকার নির্ধারিত দরে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে না রাজধানীর কোথাও। টিসিবির বাজার দর অনুসন্ধান বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল সয়াবিনের দর কিছুটা কমলেও প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন বিক্রি হয় ৯২ টাকা দরে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়া হয়েছিল ৮৬ টাকা। ২০০৬ সালের টিসিবির বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, তখন সয়াবিন বিক্রি হয়েছে লিটারপ্রতি ৪৮ টাকা মাত্র। গত এক বছরেই সয়াবিনের দর বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। পাম অয়েলের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। টিসিবি জানায়, বর্তমানে প্রতি লিটার লুজ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা দরে। এক বছরে পাম অয়েলের দর বেড়েছে ৪১ শতাংশ। তবে ২০০৬ সালে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রতি লিটার ৩৯ টাকা দরে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৯ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে। আমদানিকৃত পেঁয়াজের দর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৮ শতাংশ। এক বছরের হিসাবে পেঁয়াজের দর বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। তবে ২০০৬ সালেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ছিল ১৩ টাকা কেজি। এক বছরে প্রতি কেজি হলুদের দর ১০১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। বর্তমানে হলুদ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২৫ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা দরে।
রহমতগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী নেসার উদ্দিন জানিয়েছেন, গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮৬ থেকে ৯১ টাকা কেজি দরে, যা খুচরা বাজারে ৯৬ থেকে ১০৪ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে টিসিবি। পাইকারি বাজারেই অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডের মসুর ডাল বিক্রি হয় ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এ ডাল ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা দরে গতকাল বিক্রি হয়। নেপালি মসুর ডাল গতকাল রহমতগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা দরে, যা রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ১০৪ থেকে ১০৬ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, পথে-ঘাটে আবারও বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দর এখন ঊর্ধ্বমুখী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। গতকালও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি টিম ঝিগাতলা কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল হাশেম। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বিসিএসআইআর ও মত্স্য অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং র্যাব ও ডিএমপির দুটি টিম সহায়তা দেয়। ঝিগাতলা বাজারের নেহাল স্টোর, মীম জেনারেল স্টোর, সূচনা জেনারেল স্টোর, মায়াবী ট্রেডার্স, ফরাজী ট্রেডার্স, পাটোয়ারী স্টোর, বার্ড কনফেকশনারি, মমিন স্টোর, মা কনফেকশনারি ও নাজু কনফেকশনারিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ধারা ৩৭ অনুসারে ড্যানিশ কনডেনসড মিল্ক, বাঘাবাড়ী ঘি, ট্যাংসহ মোড়কজাত পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য না থাকা সত্ত্বেও তা জ্ঞাতসারে বিক্রির জন্য ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

No comments:

Post a Comment