Tuesday 7 December 2010

আজ বিক্ষোভ : হরতাল এ মাসেই : পুলিশি হামলায় ওলামা পরিষদের কর্মসূচি পণ্ড : আহত অর্ধশতাধিক


স্টাফ রিপোর্টার

প্রস্তাবিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল, সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ডিজির অপসারণ দাবিতে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের পূর্বঘোষিত স্পিকার বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পুলিশি হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে। কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর আড়াইটায় ওলামা পরিষদের নেতাকর্মীরা মত্স্য ভবন মোড়ে জড়ো হলে পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আইম্মা পরিষদ সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী ও এক ফটোসাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। পুলিশ এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে আজ বিকালে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা এবং ২৫ তারিখের পর এ মাসেই হরতাল কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। এদিকে ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, আইম্মা পরিষদ, সচেতন যুবসমাজসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে স্পিকার বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের জয়েন সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান, আলমগীর মজুমদারসহ নেতাকর্মীরা দুপুর আড়াইটায় মত্স্য ভবন মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের শিল্পকলা একাডেমির দিকে হটিয়ে দেয়। একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা আবার সংগঠিত হয়ে ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয় এবং বেধড়ক লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির ভেতর থেকে ওতপেতে থাকা একটি লাঠিয়াল বাহিনী ওলামা নেতাকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আইম্মা পরিষদ সভাপতি গোলাম রব্বানীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। একপর্যায়ে পুলিশ আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, ড. খলিলুর রহমান মাদানী, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী ও আহকামে শরীয়াহ হেফাজত কমিটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর মাতুব্বরসহ উলামা নেতাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পুলিশি হামলার কারণে স্মারকলিপি দিতে পারেননি তারা।
এ অবস্থায় ওলামা পরিষদ নেতারা ঘটনার প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে তারা পুরানাপল্টনে তাদের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২৫ তারিখের পরে এ মাসেই হরতাল কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. খলিলুর রহমান আলমাদানী, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী ও আহকামে শরীয়াহ হেফাজত কমিটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আবদুস সবুর মাতুব্বরসহ নেতারা।
বিএনপি মহাসচিবের প্রতিবাদ : ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং নিন্দা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার কোন বিদেশি প্রভুর মদতে এবং ইশারায় একের পর এক বিরোধী দলগুলোর ওপর হামলা, নির্যাতন চালাচ্ছে তা দেশাবাসীর অজানা নয়। তবে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ, ন্যায়সঙ্গত দাবির তোয়াক্কা না করা, হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার অদূরদর্শী কর্মকাণ্ড দেশের সচেতন জনগণ রুখে দেবে। তিনি এসব অরাজকতা ছেড়ে জনগণের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানান।
মকবুল-আজহারের প্রতিবাদ : এদিকে গতকাল সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের পূর্বঘোষিত স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচালের জন্য ওলামাদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে প্রমাণ করেছে যে, এ সরকার ইসলাম ও গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। এ সরকার ক্ষমতার জোরে জাতির ঘাড়ে ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে জাহেলিয়াতের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।
আহকামে শরীয়াহ : এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আহকামে শরীয়া হেফাজত কমিটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আবদুছ ছবুর মাতুব্বর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ, মিছিল, স্মারকলিপি প্রধান, প্রতিষ্ঠিত নাগরিকের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার। কিন্তু সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি হামলা স্বৈরাচারী নগ্ন আচরণের বহিঃপ্রকাশ। অবিলম্বে সরকারের এহেন আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
সচেতন যুবসমাজ : অপর এক বিবৃতিতে ওলামাদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সচেতন যুবসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম শহীদুল্লাহ, সহ-সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মাওলান আবু সালমান মোহাম্মদ আম্মার ও জেনারেল সেক্রেটারি মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ ফাহীম ছিদ্দিকী

No comments:

Post a Comment