Friday 17 December 2010

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীনদের হামলা : বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক পুলিশসহ আহত ৪০



ডেস্ক রিপোর্ট

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে। এতে আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশসহ ৪০ জন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর :
রাজাপুর (ঝালকাঠী) : রাজাপুরে বিজয় দিবসের শুরুতে সকাল সাড়ে ৭টায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা বিএনপির মিছিলে হামলা ও এর পরপরই সৃষ্ট সংঘর্ষে উপজেলা যুবদল সভাপতি, দুই সাংবাদিক, এক পুলিশ কর্মকর্তা ও বাসযাত্রীসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসার সময় বিএনপির মিছিলে এ হামলা হয়।
আহতদের মধ্যে যুবদল সভাপতি আলহাজ নাসিম আকনের অবস্থা বেশ গুরুতর। হামলার পরপরই আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিআরটিসির বাসসহ তিনটি যান ভাংচুর হয়। ভাংচুরের সময় বাসের কমপক্ষে ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
আহত নেতাকর্মীরা রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে আলহাজ নাসিম আকনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে নয়া দিগন্তের সাংবাদিক এনামুল হক ও বিপ্লবী বাংলাদেশ পত্রিকার সাংবাদিক মো. কাওছার হোসেন ছবি তুলতে গেলে আওয়ামী সশস্ত্র কর্মীরা তাদের মারধর করে এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় এনামুল হক রাজাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে রাজাপুর থানার এসআই আবদুল হালিম আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে পৃথক মিছিল নিয়ে বাইপাস সড়কে দু’দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের মিছিলের মধ্য থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজাপুর উপজেলা যুবদল সভাপতি আলহাজ নাসিম আকনের ওপর হামলা হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় উভয় দলের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠিসোটা দিয়ে মারামারি শুরু হয়। ভাংচুর হয় তিনটি যানবাহন। এতে বাসের যাত্রীসহ উভয় দলের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। পুলিশ ও দু’দলের নেতারা চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। হামলার ঘটনায় থানা পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে। তারা হলেন ফোরকান, মজিবর ও আবদুল্লাহ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রদল মুক্তবাংলায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যায়। কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের পর ছাত্রদলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে আহ্বান জানায়। কিন্তু জাসদ ছাত্রলীগ জোর করে ছাত্রদলের আগে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মেইন গেটে জড়ো হয়। এ সময় ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ সম্মিলিতভাবে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি রতন অধিকারীসহ ১০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের শেখপাড়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। এ ব্যাপারে জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান বলেন, বিজয় দিবসের মহান দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ যেভাবে ছাত্রদলের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ক্ষমতাসীন দলের হামলা ও মঞ্চ ভাংচুরের ঘটনায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ওয়াজির হাইস্কুল মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সভা পণ্ড হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে জেলা কার্যালয়ে বিএনপির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, গতকাল বিকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে স্থানীয় ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত সময় নেতাকর্মীরা সভাস্থলে আসতে শুরু করলে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা হামলা চালায় এবং মঞ্চ ভাংচুর করে। এতে বির্ধারিত সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। পরে দলের জেলা কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক এমপি মসিউর রহমানসহ নেতারা বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, একদল যুবক মঞ্চ ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে জানতে পেরে আমি সেখানে তাত্ক্ষণিকভাবে পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত নয়।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা এলাকার টিপরদী গ্রামে বুধবার রাতে বিজয় দিবস উপলক্ষে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, টিপরদী গ্রামে মঞ্চ করে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বুধবার রাতে মঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
আয়োজক কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন, সদস্য রাশেদুল ইসলাম ও রাহাতুল ইসলাম জানান, দুর্বৃত্তরা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড করার জন্য মঞ্চে আগুন দেয়। সোনারগাঁও থানার ওসি ইউনুস আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘৃণ্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জলঢাকা (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় গতকাল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় পণ্ড হয়ে গেছে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজক-দর্শক ও কুজকাওয়াজে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের দিগ্বিদিক ছোটাছুটিতে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশি প্রহরায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। জানা গেছে, সকাল ৯টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্থানীয় স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়ার আগ মুহূর্তে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় হট্টগোল। একপর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক শহিদ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অধ্যক্ষ আ. সালামের ওপর চড়াও হয়ে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাংচুর শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে স্থানীয় শহীদ মিনারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে স্থানীয় সাংবাদিকের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

No comments:

Post a Comment