Friday 10 December 2010

জামায়াতের সমাবেশে আজহার : নব্বইয়ের মতো গণঅভ্যুত্থানের দিকে দেশ

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বর্তমান মহাজোট সরকার ডিজিটাল কায়দায় দুর্নীতি করছে। এজন্য কেউ ধরতে পারছে না। অথচ তারা মুখে শুধু বিগত চারদলীয় জোটের দুর্নীতির কথা বলেন। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দুর্নীতিমুক্ত হলে চালের দাম ৪০ টাকা কেন? সবকিছুর দাম আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা ভয় পায়। কেউ যাতে তাদের দুর্নীতির কথা তুলে ধরতে না পারে সেজন্য টুঁটি চেপে ধরেন। এজন্যই মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে সরকার আটক করে রেখেছে। তারা মানুষের গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। এ ধরনের আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার কাজ না করলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ নব্বইয়ের মতো গণঅভ্যুত্থানের দিকে চলে যাচ্ছে। সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে জনগণের ক্ষোভ ওই গণঅভ্যুত্থানের চেয়েও ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের ষড়যন্ত্র, ধর্মহীন শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির প্রতিবাদ এবং ভারতকে করিডোর দেয়া, সম্পাদিত চুক্তি বাতিল, গ্যাস-বিদ্যুত্-পানি সঙ্কটের সমাধান, দলের শীর্ষ নেতাসহ গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল পুরানা পল্টনের অফিস চত্বরে মহানগর জামায়াত আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আমির এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এমপির সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুলের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম, মহানগর নেতা ডা. রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদি, মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কবির আহমদ প্রমুখ।
এটিএম আজহার জামায়াতে ইসলামীর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও পুলিশ উপরের নির্দেশে পালন করতে দিচ্ছে না। এই উপরের নির্দেশ বেশি উপরে গেলে আপনাদের সমস্যা হবে। বর্তমান সরকার শুধু অতীতের কুত্সা রটনা ও ভবিষ্যত্ স্বপ্ন দেখাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এভাবে স্বপ্ন দেখিয়ে ও কুত্সা রটনা করে চালের দাম কমাতে পারবেন না। জনগণ স্বপ্ন নয় আপনাদের দেয়া ওয়াদার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারাই সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়েছেন এবং সম্পদ বিদেশে পাচারের ব্যবস্থা করছেন। আপনারা অদক্ষ, অযোগ্য। আপনারা দেশ চালাতে পারবেন না। শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা বলেন, সংসদে এক মিনিট আলোচনাও না করে যে শিক্ষানীতি পাস করেছেন তা জনগণ মানে না। নব্বই শতাংশ মুসলমানের এদেশে নাস্তিক নাহিদ যে শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিয়েছেন তা জনগণ বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আটক নেতাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একটি জিডিও আওয়ামী লীগ করেনি। অথচ বর্তমানে বিনা অপরাধে তাদের গ্রেফতার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সরকার। একদিন অবশ্যই এজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। তিনি একদলীয় শাসন থেকে বাঁচা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ১৬ ডিসেম্বরের পর চারদলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জামায়াতের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার জুলুম-নির্যাতনের সব সীমা অতিক্রম করেছে। তারা বিরোধী দল দমনে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা জামায়াতকে বিশেষ করে টার্গেট করে নেতাদের ওপর নির্যাতন করছে। সরকার দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ইভটিজিং এখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। কিন্তু সরকার দেশকে ধর্মহীন করার জন্য নাস্তিক শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস করেছে। এ ধরনের বর্বর শিক্ষানীতি জাতি কোনোদিনই মেনে নেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ইসলামের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নামে। তারা ক্ষমতায় এসে জনগণের ওপর দলন-পীড়ন চালায়। ভারতের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। মূলত তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। তারা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য নাস্তিক শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস করেছে। কিন্তু এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সরকারের গৃহীত এ শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি সরকারকে হঠকারী সিদ্ধান্ত পরিহার করার আহ্বান জানান। অন্যথায় জনগণই সরকারকে সমুচিত জবাব দেবে। তিনি আটক সব নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানান।

No comments:

Post a Comment