Tuesday 7 December 2010

ইভটিজিং : নওগাঁয় ব্লেডে চিরে দেয়া হয়েছে স্কুলছাত্রীর দেহ : চিতলমারীতে ছাত্রী অপহরণ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এত লেখালেখি ও আলোচনার পরও থামছে না ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য। একের পর এক অপকর্ম ঘটিয়ে চলেছে তারা। ওদিকে থেমে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের তত্পরতা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঠানো প্রতিনিধিদের রিপোর্টে বিস্তারিত :
নওগাঁ : শহরের তাজের মোড় এলাকার একটি গলির ভেতরে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে এক স্কুলছাত্রীকে একা পেয়ে বখাটে কয়েক যুবক ওই স্কুলছাত্রীর শরীরে ব্লেড দিয়ে চিরে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে নওগাঁ সদর থানা পুলিশ ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরে মেয়েটির অভিভাবকরা চিকিত্সার জন্য তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেন।
শহরের বয়েজ হোমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মেয়েটির বাবা আলমগীর হোসেন জানান, এলাকায় তার কোনো শত্রু নেই। শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আহত সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী জানায়, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে সে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে শহরের পারনওগাঁ এলাকায় স্থানীয় মিনার বিস্কুট ফ্যাক্টরির গলিতে ঢোকা মাত্র কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা এক যুবকসহ বোরকা পরা অপরিচিত আরও দুই যুবক তার পথরোধ করে। এ সময় বোরকা পরা দুই যুবক তার হাত ও মুখ চেপে ধরলে মুখোশধারী অন্য যুবক ধারাল ব্লেড ও চাকু দিয়ে উপর্যুপরি তার শরীরে আঘাত করে। এ সময় সে চিত্কার দিলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। মেয়েটির পরিবারের দাবি, এলাকার বখাটে যুবকরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তাদের ধারণা।
চিতলমারী (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের চিতলমারীতে ইভটিজিংয়ের শিকার এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে বিয়ের জন্য আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ওই ছাত্রীর মা ও ভাই তাকে উদ্ধার করতে গেলে অপহরণকারীরা তাদের মারধর করে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে ইভটিজিংয়ের শিকার ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, উপজেলার কচুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী ও কচুড়িয়া গ্রামের আবদুল আউয়াল গাজীর মেয়ে লাবণী আক্তারকে (১৪) স্কুলে যাওয়া-আসার পথে সন্তোষপুর ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ আশ্রাব শেখের ছেলে জাহিদ শেখ (২২) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। এতে ওই ছাত্রী কোনো কর্ণপাত না করায় জাহিদ তার ভাবি হেনা বেগমকে দিয়ে তাদের বাড়িতে (স্কুলছাত্রীর) বিয়ের প্রস্তাব দেয়। লাবণীর মা জাহানারা বেগম নাবালিকা মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়। এ ঘটনার জের ধরে ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় হেনা বেগম জরুরি কথা আছে বলে লাবণীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তাকে জাহিদসহ ৩-৪ জন লোক মুখ চেপে ধরে কচুড়িয়া গ্রামের রশিদ শেখের বাড়িতে নিয়ে আটকে জাহিদকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এ খবর পেয়ে ওই স্কুলছাত্রীর মা জাহানারা বেগম ও ভাই রফিকুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করতে গেলে অপহরণকারীরা তাদের মারধর করে। পরে কৌশলে মেয়েটি উদ্ধার করা হয়। খরব পেয়ে গতকাল দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে ইভটিজিংয়ের শিকার লাবণীর ভাই বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ওসি মো. রেজাউল করিম জানান, অভিযোগের কপি এখনও হাতে পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই মামলা হবে।
শেরপুর (বগুড়া) : গতকালও বখাটের শিকার হয়েছে নবম শ্রেণীর এক মেধাবী স্কুলছাত্রী। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে জাকারিয়া (১৮) নামের ওই বখাটে প্রথমে ছাত্রীর পথরোধ করে। পরে বখাটের প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জোর করে সে ওই ছাত্রীর ওড়না ও হাত ধরে টানাহেঁচড়া করে। ঘটনাটি ঘটে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের তেঘরি গ্রামে। এ ঘটনায় ওই মেয়ের বাবা তেঘরি গ্রামের আবদুর রশিদ বাদী হয়ে একই গ্রামের লুত্ফর রহমানের ছেলে বখাটে জাকারিয়াকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার পরপরই বখাটে জাকারিয়াকে ধরতে ওই গ্রামে অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি।
ঝালকাঠি : বরগুনার কলেজছাত্রী সুমা আক্তারের পা কেটে ফেলার ঘটনার মূল নায়ক ইভটিজার মহসীনকে (২২) গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার কর হয়। ঝালকাঠি থানার ডিউটি অফিসার জানান, বরগুনার ডিবি পুলিশ ঝালকাঠি পুলিশের সহায়তায় মহসীনকে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, মহসীন বরগুনা সদরের গডবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রহিম শিকদারের ছেলে।
উল্লেখ্য, শনিবার বরগুনার গডবাড়িয়া আদর্শ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সুমা আক্তারকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে সকাল ৯টায় ইভটিজার মহসীন গাছ কাটার দা দিয়ে কুপিয়ে তার ডান পা কেটে ফেলে এবং তার হাতও কুপিয়ে জখম করে।
সিলেট : সিলেটে চলতি বার্ষিক পরীক্ষায় স্কুলগামী ছাত্রীদের সঙ্গে ইভটিজিংয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল নগরীতে দুই ছাত্রী ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। পরে এলাকাবাসী, স্কুলের শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই ইভটিজারকে কারাদণ্ডের রায় দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নগরীর আম্বরখানা বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী শিক্ষককে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, গত কয়েকদিন থেকে রিকশাচালক শাজান বাসায় যাওয়ার পথে তাদের লক্ষ্য করে অশ্লীল মন্তব্য ও উত্ত্যক্ত করে আসছে। তখন কলেজের অধ্যক্ষ দুজন শিক্ষক ও ছাত্রীদের ঘটনাস্থলে পাঠান। তারা রিকশাচালককে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী কলেজে আসেন। ছাত্রীদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে নিশ্চিত হয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে রিকশাচালককে আটক করে। শাজান (২৫) নামের এ রিকশাচালকের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সাজুরা গ্রামে। সে নগরীর ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা।
ওদিকে বাগবাড়ী পিডিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে স্থানীয় এক বখাটে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গতকাল শাহেদ নামের এ বখাটে ছাত্রীটিকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করলে আশপাশের লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এদিকে স্কুলছাত্রীদের সঙ্গে ইভটিজিংয়ের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সিলেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযুক্ত দুজনকে কারাদণ্ড দেন। গতকাল বিকালে আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ আদালত বসে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ রায় দেন। অভিযুক্ত নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সাজুরা গ্রামের শাজাহানকে দুই মাসের কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও দেড় মাসের কারাবাসের রায় দেয়া হয়। অপর রায়ে লালদীঘির পাড়ের জাকির হোসেন জিতু মিয়ার ছেলে শাহেদ আহমদকে (১৮) এক মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও দেড় মাসের কারদণ্ড দেয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment