Friday 17 December 2010

নাকে প্রচণ্ড ঘুষি খেয়ে ঘুরে পড়ি : আদালতে সা. কাদের চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার

গ্রেফতারের সময় এবং পরে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ও ডিবি কার্যালয়ে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্মম নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আদালতে তিনি বলেন, আমাকে আটকের পর চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্টের একটি অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে আমার সারাশরীরে একাধিক ব্যক্তি কিল ও ঘুষি মারতে থাকে। একটি শক্ত দণ্ড দিয়ে একজন আমাকে পেটাতে থাকে। এদের একজন আমাকে বলল- আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আপনাকে এ কথা স্বীকার করতে হবে। তার এ বক্তব্যের পর আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, এটা কি বললেন। কথা শেষ করার আগেই আমার নাকে প্রচণ্ড ঘুষি মারা হয়। তত্ক্ষণাত আমি ঘুরে পড়ে যাই। আদালতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মাননীয় আদালত আপনি আমার দিকে দয়া করে একটু লক্ষ্য করুন। আমার নাক দিয়ে এখনও রক্ত পড়ছে। আমার শরীরে নির্যাতনের এ চিহ্ন দেখেন। গতকাল ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করার পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতের কাছে কিছু বলার জন্য সময়ের প্রার্থনা জানান। এতে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা তীব্র আপত্তি করে বলেন, আদালতে আসামিকে কোনো কথা বলতে দেয়া উচিত নয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে আদালত সরকারপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, তিনি যেহেতু কিছু বলতে চাচ্ছেন আর তার আইনজীবীরাও আবেদন করেছেন। আপনাদের একটু সহনশীল হওয়া উচিত। আদালত সময় মঞ্জুর করলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওই বক্তব্য রাখেন।
আদালতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী আরও বলেন, আমি ওয়ান ইলেভেনের সময়েও গ্রেফতার হয়েছি। ওই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী দলের অনেক নেতাও গ্রেফতার হয়েছেন। কিভাবে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতন করা হয়েছে, এটা তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ওই সময় আমাদের সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যে আচরণ করা হয়েছে। আজ আমার সঙ্গে একই কায়দায় একই আচরণ করা হয়েছে। ওই সময়ের সরকারের মধ্যে আর আজকের গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যে কোনো তফাত্ দেখছি না। একই কায়দায় বর্তমানে আমাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে, আশা করছি দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন। আজ আমাকে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তিনি আমার ওপর এ নির্যাতন হতে দিতেন না। তিনি নিজেই আমাকে এ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতেন। আমার ওপর যে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে, তা কোনো সভ্য সমাজের ঘটনা নয়। আদালতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ২৬ জুনের তিন দিন আগে থেকেই আমি চট্টগ্রামে ছিলাম। চট্টগ্রামে থেকে আমি কীভাবে ঢাকায় গাড়িতে আগুন দিলাম? আদালত আজ স্বাধীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকারের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে প্রভাবিত না হয়ে আশা করি আদালত তার জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করে আমার ওপর ন্যায়বিচার করবেন। তিনি বলেন, আমি ৬ বার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছি। আমরা সংসদে আইন তৈরি করি। অথচ আমিই আজ নির্মম নির্যাতনের শিকার।

No comments:

Post a Comment