Friday 17 December 2010

জঙ্গি দমনের নামে নাটক সাজানোর অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে : ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি ইজহার গ্রেফতার



চট্টগ্রাম ব্যুরো

ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীকে গতকাল বিকালে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের বিরুদ্ধে জঙ্গি দমনের নামে নাটক সাজিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ বেশকিছু অভিযোগ আনার পর পরই তাকে গ্রেফতার করা হলো।
দুপুরে তিনি তার মাদ্রাসায় র্যাবের সাম্প্রতিক একটি অভিযান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানের দুর্গম এলাকায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ট্রেনিং শিবিরের সন্ধান ও সেখান থেকে হুজির ৫ নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনা ছিল র্যাবের সাজানো নাটক। এই ৫ জন কোনো জঙ্গি নয়। তাদের মাসাধিককাল আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপহরণের পর জঙ্গি শিবির থেকে গ্রেফতার দেখিয়েছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য দেয়ার ঘণ্টাখানেক পর বেলা ২টার দিকে র্যাবের শতাধিক সদস্য লালখান বাজার মাদ্রাসা ঘিরে ফেলে। তারা মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে তারা কোনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। এ সময় মাদ্রাসার কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভের মুখে বিকাল ৪টার দিকে র্যাব সদস্যরা মুফতি ইজহারকে কালো কাঁচে ঘেরা একটি গাড়িতে করে নিয়ে চলে যায়। অভিযান চলাকালে র্যাব চট্টগ্রামের কমান্ডার লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব চট্টগ্রামের অ্যাডজুটেম্লট মেজর আশরাফ জানান, মুফতি ইজহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। তবে তার মাদ্রাসা থেকে কোনো অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যায়নি।
এদিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুফতি ইজহার বলেন, র্যাবের অতিউত্সাহী কিছু সদস্য ১২ ডিসেম্বর রাউজান থেকে জঙ্গি গ্রেফতার ও বিস্ফোরক উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমাণ করতে এ ধরনের তত্পরতা চালানো হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, গ্রেফতারকৃতদের কেউই জঙ্গি তত্পরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাদের সবাইকে মাসাধিককাল আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে অপহরণ করে। পরে ১৩ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তাদের জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করে মিডিয়ার সামনে । ট্রেনিং শিবির থেকে তাদের আটক করার যে তথ্য র্যাব দিয়েছে তা ডাহা মিথ্যা। কারণ তাদের এর আরও আগেই অপহরণ করা হয়। সারাদেশে যে বিচারবহির্ভূত অপহরণ ও হত্যা চলছে, তারই ধারাবহিকতায় ৫ জন নিরপরাধ মেধাবী আলেমকে জঙ্গি সাজানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম হচ্ছে। আলেম সমাজসহ দেশের মানুষকে সুকৌশলে দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। তিনি র্যাবের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গি তত্পরতায় সম্পৃক্ত নন। তাদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকার ও বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মুফতি ইজহার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত মাওলানা আবুল কালাম ইসলামী ঐক্যজোটের গণসংযোগ কর্মকর্তা। ৪ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার বনানী এলাকায় ভায়রার বাসা থেকে ট্রেনের টিকিট ফেরত দেয়ার জন্য বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে গত ১০ ডিসেম্বর তার ভাই শামসুদ্দিন গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রায় ৯ দিন গুম করে রাখার পর র্যাব ১৩ ডিসেম্বর মিথ্যা ব্রিফিং দিয়ে সাংবাদিকদের জানায়, তাকে নাকি রাউজানের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইভাবে মাওলানা সালাহুদ্দিন, আবু ফারাহ রুম্মান, আবদুল্লাহ আল আমীন ও মাহফুজুর রহমানকেও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক মাস আগে অপহরণ করা হয় সাদা পোশাকে। তাদেরও রাউজানের ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে র্যাব।
মুফতি ইজহার বলেন, সরকার দাড়ি-টুপিওয়ালাদের ধরে নিয়ে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনের নামে এলোপাতাড়ি প্রচারণা ও অভিযান চালিয়ে দেশকে অরাজকতা এবং সংঘাতের পথে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের এ ধরনের তত্পরতা চলতে থাকলে আলেম সমাজ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে আমাদের জানালে আমরা নিজেরাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা তার বিশেষ দূত বর্তমান বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে পাঠিয়ে আমাকে ডেকে নেন। শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না এমন ১১টি শর্ত মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিলে আমি তখন মহজোটে যোগ দিই। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন। তিনি জানান, তিনি এখন আর মহাজোটে নেই। চারদলীয় ঐক্যজোটেই আছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চারদলীয় জোট প্রার্থীর জন্য তিনি কাজ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি আবদুর রহমান, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা হাছান, মুছা বিন ইজহার, কস্ফারী ফজলুল করিম, মাওলানা সানাউল্লাহ ফিরোজ প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment