Tuesday 7 December 2010

সুজনের জাতীয় সম্মেলনে অভিমত : আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে

স্টাফ রিপোর্টার

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিজেদের বিরুদ্ধে গেলে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা আক্রমণ, বিষোদগার করছেন ওই গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ গণতন্ত্রের সহায়ক। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের পর ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিবাদ করার ব্যবস্থা আছে। অথচ জাতীয় সংসদে সংবাদ মাধ্যমকে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তা গণতন্ত্রে কাম্য নয়। সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংগঠনের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিস্বার্থ ক্ষুণ্ন হলেই গণমাধ্যমের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। আসক’র কাছে তথ্য আছে, ৩০ জন সাংবাদিক সরকারি দলের নেতাদের হাতে সরাসরি নির্যাতিত হয়েছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করতে সব শ্রেণীপেশার মানুষকে সোচ্চার, প্রতিবাদী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সাবেক আমলা, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে আইনের শাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রশাসনে চলছে নির্লজ্জ দলীয়করণ। তারা দেশের উন্নয়ন ও জনস্বার্থে এর বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন। তবে এ সরকারের চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভির সম্প্রচার, দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া, পরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে পত্রিকাটির পুনঃপ্রকাশনা, এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমানের কারাগারে থাকা প্রসঙ্গ তাদের বক্তব্যে আসেনি। ‘সচেতন, সোচ্চার ও সংগঠিত নাগরিকই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ’ স্লোগান সামনে রেখে গতকাল এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এ সম্মেলনে সারাদেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রায় এক হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। তারা নানা বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদ আরও বলেন, সাধারণ মানুষরাই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই জনগণের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে হবে।
বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আজ চরম বিপর্যয়ের মুখে। ফলে স্থানীয় পর্যায়েও গণতন্ত্র বিকাশের ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে নিয়োগ না দিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরকম ঘোষণা গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নেই।
আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পাবনায় প্রশাসন কাঁদছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কিছু করা হয়নি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে এখনকার সুশাসনের নমুনা।
বিশিষ্ট গবেষক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় সংসদে মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদগার করাটা অগণতান্ত্রিক। এ সরকার মন্ত্রিপরিষদ নাকি উপদেষ্টা শাসিত সরকার, বোঝা মুশকিল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ড. হামিদা হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুল আলম ফকু।
বদিউল আলম মজুমদার সুজন’র নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাব, এর সপক্ষে জনসচেতনতা তৈরিসহ নানা সাফল্যজনক কর্মকাণ্ড এবং সংগঠনটির আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সুজন’র সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

No comments:

Post a Comment