Friday 17 December 2010

পদুয়া দখলের প্রতিবাদ : ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পদুয়া গত ১৪ ডিসেম্বর দখল করে নিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলেছে, ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
এছাড়া জাগপা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়া গণতান্ত্রিক মোর্চা ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের নেতারা সীমান্তে যৌথ জরিপ চলার সময় বিএসএফ কর্তৃক পদুয়া দখলের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গতকাল অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তিনশ’ বিএসএফ সদস্য ও দুইশ’ ভারতীয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশের আধা কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে ১২৭০ ও ১২৭১ নম্বর পিলার সংলগ্ন ৩০০ একর বাংলাদেশের ভূমি দখল করে নেয়। এ সময় তারা লাল পতাকা উঁচিয়ে ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে সীমান্তবাসী পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের কয়েকশ’ বাংলাদেশী নাগরিক লাঠিসোটা নিয়ে বিএসএফকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে চরম সংযম প্রদর্শ করে এ সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভারত সরকার বা তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিক থেকে কোনো আশাপ্রদ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট রাষ্ট্র হিসেবে যাবতীয় হুমকির মুখে থেকেও বাংলাদেশ বরাবর আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের সীমানা, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই গত কয়েক দিন ধরে যৌথ আন্তর্জাতিক সীমারেখা নির্ধারণে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করছিল। কিন্তু ভারত সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্থিতিশীলতা রক্ষায় বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে। যখন সীমান্তে জরিপ কাজ চলছে ঠিক তখনই বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারী অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশ ও দখলের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এটি ধারণা করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই যে, ঘটনাটি হঠাত্ এবং বিছিন্নভাবে ঘটেছে।
অধিকার বলেছে, আমরা বিএসএফের যে আচরণের সঙ্গে পরিচিত তাতে একে তাদের ধারাবাহিক অস্থিতিশীলতা তৈরির অংশ বলেই মনে হচ্ছে। সীমান্তে এ সময় এরকম একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি ও সীমানা নির্ধারণের সময় বাংলাদেশের ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টির কৌশলের অর্থ খুব পরিষ্কার। তারা যেভাবে চায়, যতটুকু চায়, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশকে তার ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। এটাই তারা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এখানে কোনো আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতে ভারত প্রস্তুত নয়। শান্তিপূর্ণভাবে সীমানা নির্ধারণে ভারতের সদিচ্ছার প্রতি আস্থা রাখাটা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে, যেন ভারত জোর করেই আমাদের একটি সংঘাতময় অবস্থার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
অধিকার মনে করে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সেই রাষ্ট্রের কোনো অংশ দখল করে নেয়া আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। পদুয়া বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত তা অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল। ১৯৯৮ সালে বিডিআর বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তা উদ্ধার করেছিল। ভারতের এ আগ্রাসনের ফলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা আবার হুমকির মুখে পড়েছে।
অধিকার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং অবিলম্বে ভারতের দখল থেকে পদুয়া দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে।
সরকারের নতজানু নীতি বিএসএফকে পাদুয়া দখলের সাহস দিয়েছে : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সিলেট সীমান্তে পাদুয়া এলাকা দখল করায় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সরকারের নতজানু ও তাঁবেদারি নীতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ভারতের এ আগ্রাসী তত্পরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলে আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের পাদুয়া এলাকা দখলে নেয়। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে বিএসএফ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়াগণতান্ত্রিক মোর্চা এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের নেতারা গতকাল এক বিবৃতিতে পাদুয়া দখলের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, হাসিনা সরকারের তাঁবেদার নীতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নেতারা সব গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে হিন্দুস্থানি হানাদারদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড পাদুয়া দখল কিসের আলামত? চেতনাওয়ালি সরকারই বা নীরব কেন? তিনি বলেন, ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করলাম আমরা। রক্ত দিল এদেশের জনগণ। অথচ আমাদের স্বাধীনতার দলিলে সই করল হিন্দুস্থান আর পাকিস্তান। গদিতে বসেই আওয়ামী লীগ আমাদের ভূখণ্ড বেরুবাড়ী দিল্লিকে নজরানা দিলেন। ফারাক্কা চালুর অনুমতি দিয়ে আমাদের ভাতে-পানিতে মারার বন্দোবস্ত করা হলো। ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রে গদিতে বসে এখন শেখ হাসিনা সরকার ইনাম হিসেবে পাদুয়া দিল্লির হাতে তুলে দিতে চায়। তিনি বলেন, যারা বেরুবাড়ী-পাদুয়া হিন্দুস্থানের হাতে তুলে দেয়, তাদের মুখে মুক্তিযোদ্ধার চেতনা শোভা পায় না।

No comments:

Post a Comment