Wednesday 29 December 2010

পেঁয়াজ ও তেলের বাজারে আগুন



অর্থনৈতিক রিপোর্টার

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) বাজারদর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেলের তথ্যমতে গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। গত সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রীয় কৃষি সমবায় সংস্থা নাফেডকে পেঁয়াজ রফতানি ছাড়পত্র দিতে নিষেধ করেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে সয়াবিনের দাম মিলগেটে ৮৩ টাকা ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। গতকাল তা বাড়িয়ে ৮৮ টাকা করা হয়। নতুন দাম অনুযায়ী ঢাকায় লুজ সয়াবিন প্রতি লিটার খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকা কেজি। টিসিবি জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। টিসিবির মতে, এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। গতকালও রাজধানীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে টিসিবি জানায়।
ভোজ্যতেলের উত্পাদন, বিপণন ও বাজার মূল্য নিয়ে ভোজ্যতেল মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল মতবিনিময় সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সচিব গোলাম হোসেন। সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ, অতিরিক্ত সচিব এটিএম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, প্রধান আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রক এমএ সবুর, টিসিবি’র চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা, সিটি গ্রুপের কর্ণধার মো. ফজলুর রহমান, এসএ গ্রুপের সাহাবুদ্দিন আলম, টি.কে গ্রুপের তারিক আহমেদ, নূরজাহান গ্রুপের জহির আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বর্ধিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় মিলগেটে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ৮৮ টাকা, যা আগে নির্ধারিত ছিল ৮৩ টাকা। চট্টগ্রামে মিলগেটে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাম অয়েল ঢাকায় মিলগেটে প্রতি লিটার ৮৪ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ৮৬ টাকা এবং চট্টগ্রামে মিলগেটে প্রতিলিটার ৮৩ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৫ দিন পর আবারও তেলের দাম পুনর্নির্ধারিত হবে। এ পনের দিনের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দরেই ভোজ্যতেল বিক্রি হবে। তিনি দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩২০ ডলারে। সে হিসাবে প্রতি লিটারের দাম দাঁড়ায় ১২৪ টাকা।
চট্টগ্রামে পেঁয়াজ, চাল ও তেলের বাজারে আগুন : আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দর নগরীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। পেঁয়াজ, চাল ও তেলের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা থেকে এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে চাল এবং তেলের দাম প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এক-দু’টাকা করে বাড়ছে। বাজারে দেশি চালের সঙ্কট চলছে। ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত আতপ চাল দিয়ে এই সঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া মাছ, মাংস, তরিতরকারি ও শাক-সবজির বাজারও বেশ চড়া।
১৫/২০ দিন আগেও চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকা। গত দু’তিন দিন থেকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার একটি বিরাট অংশ মেটানো হয় ভারত থেকে আনা পেঁয়াজের মাধ্যমে। কিন্তু চলতি মৌসুমে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় সেখানেই দাম এখন আকাশচুম্বী। নিজেদের চাহিদা মেটাতে ভারত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আগে ভারত প্রতি টন পেঁয়াজ ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলারে রফতানি করত। এখন তাদের রফতানি মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ন্যূনতম ১ হাজার ২০০ ডলার। এ কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
অপর দিকে দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলেও তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তাই দাম বাড়ছে হু হু করে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১১০ থেকে ১১৫ এবং খোলা ১০০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল

No comments:

Post a Comment