Friday 10 December 2010

৬৬ ভাগ মানুষ দুর্নীতির শিকার



স্টাফ রিপোর্টার

বিগত তিন বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। দেশে গড়ে ৬৬ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় পুলিশ, জনপ্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও বিচার বিভাগে। পুলিশি সহায়তা, বিচার, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, বিদ্যুত্, টেলিফোন ও পানিসেবা পেতে গ্রহীতাকে ঘুষ দিতে হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৮৫টি দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি দশজনের ছয়জনই দুর্নীতির শিকার এবং প্রতি চারজনের একজনকে বিভিন্ন কাজের জন্য ঘুষ দিতে হয়। দুর্নীতির জরিপকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) রিপোর্ট থেকে দুর্নীতির এই ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। টিআই জনগণের অভিমত ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক সারাবিশ্বে দুর্নীতি পরিমাপ করে থাকে।
সারাবিশ্বে একযোগে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশে রিপোর্টটি প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ উপলক্ষে গতকাল ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮৬টি দেশের ৯১ হাজারের বেশি জনগণের ওপর পরিচালিত এই জরিপে সাধারণ ঘুষ, জনপ্রতিষ্ঠান দুর্নীতি সম্পর্কে জন-ধারণা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের আস্থা কোন প্রতিষ্ঠানের ওপর কতটুকু এ সংক্রান্ত তথ্য গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার রিপোর্টে উঠে এসেছে। এ ধরনের রিপোর্ট এর আগে আরও ছয়বার প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ বছরই প্রথম বাংলাদেশকে এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে বহু পর্যায় ও স্তরে গুচ্ছ নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে এ বছরের ৯ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত জরিপে ৬৪ জেলার নগর ও পল্লী অঞ্চল থেকে মোট ১ হাজার ৪৯ উত্তরদাতার অভিমত সংগ্রহ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জরিপ গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্নীতির মাত্রা বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী উত্তরদাতাদের শতকরা ৭৯ ভাগ রাজনৈতিক দলকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলেছে। তবে বাংলাদেশের উত্তরদানের ৭৯ ভাগ পুলিশকে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এছাড়া শতকরা ৬৮ ভাগ জনপ্রশাসনকে, শতকরা ৫৮ ভাগ রাজনৈতিক দল এবং শতকরা ৪৩ ভাগ বিচার বিভাগকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিগত ১২ মাসে খাত বা সেবা ভেদে ঘুষ দেয়ার হার এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিশ্বে সর্বাধিক ২৯ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশকে ঘুষ দিতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশকে সর্বাধিক ঘুষ গ্রহীতা বলে উল্লেখ করেছে। এরপর বিচার বিভাগে ৬৪ শতাংশ, ভূমি সেবায় ৪৮ শতাংশ এবং রেজিস্ট্রেশন ও পারমিট সেবায় ৪৮ শতাংশ ও পরিষেবা (বিদ্যুত্, টেলিফোন, পানি) খাতে ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিয়েছে বলে জানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী উত্তরদাতারা সেবা পেতে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য ঘুষ দেয়ার কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক উত্তরদাতা ন্যায্য সেবা পাবার জন্য এবং কাজকে ত্বরান্বিত করতে ঘুষ দিয়েছে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশে বিগত তিন বছরে দুর্নীতির মাত্রায় কোনো পরিবর্তন এসেছে কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন দুর্নীতি বেড়েছে। যার মধ্যে শতকরা ১৮ ভাগ বলেছেন বেশ বেড়েছে, ২৭ দশমিক ৩ ভাগ বলেছেন কিছুটা বেড়েছে, ১৭ দশমিক ৫ ভাগ বলেছেন একই মাত্রায় আছে। আর ২৮ দশমিক ৮ ভাগ বলেছেন কিছুটা কমেছে, ৬ দশমিক ৬ ভাগ বলেছেন বেশ কমেছে এবং ১ দশমিক ৯ ভাগ উত্তরদাতা নিরুত্তর থেকেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মূল্যায়নে ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মত দিয়েছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৪০ দশমিক ৫ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, দুর্নীতি দমন প্রক্রিয়া কিছুটা সক্রিয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংসদের ওপর জনআস্থা কমলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি নির্ভরতার কথা বলেছেন, যা আশাব্যঞ্জক ও সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রতি চলমান জনসমর্থনের পরিচায়ক। অন্যদিকে পুলিশ, জনপ্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও বিচার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি বিরাজ করার যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তা সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে ক্রমান্বয়ে দুর্বলতর করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি

No comments:

Post a Comment