Friday 17 December 2010

যশোরে বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা অন্যান্য স্থানে আরও পাঁচ খুন

ডেস্ক রিপোর্ট

দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃদ্ধা, তরুণী ও শিশুসহ খুন হয়েছে ছয়জন। তাদের মধ্যে যশোরে এক বৃদ্ধাকে চোখ তুলে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাজশাহীতে পাওয়া যায় ক্ষতবিক্ষত পাঁচ বছর বয়সী শিশুর লাশ। হবিগঞ্জে খুন হয় অষ্টম শ্রেণীর আরেক শিশু। নারায়ণগঞ্জে নদীতে পাওয়া গেছে তরুণীর লাশ। খাগড়াছড়িতে অপহরণের ৭ মাস পর মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক যুবকের লাশ। আমাদের অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর :
যশোর : যশোরে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। গতকাল সকালে সদর উপজেলার সাহাপুর গ্রামের আলী বক্সের মেহগনি বাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ, এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নিহত বৃদ্ধার ঘাড়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে একটি চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি চামচ, এক জোড়া স্যান্ডেল, চাদর ও একটি মাফলার উদ্ধার করেছে। পুলিশ ধারণা করছে, অন্য কোথাও খুন করে বৃদ্ধার লাশ ওই স্থানে ফেলে রেখে গেছে খুনিরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
রাজশাহী : রাজশাহীর পবায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। রোববার রাতে বাড়ির পাশের একটি ঝোপের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিশুর নাম বৈশাখী। সে উপজেলার খোলাবোনা গ্রামের আবদুল আলিমের মেয়ে। শিশুর বাবা আবদুল আলিম জানান, রোববার সকালে তার মেয়ে নিখোঁজ হয়। আত্মীয়স্বজনসহ এলাকায় সারাদিন খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৯টায় বাড়ির পাশের একটি ঝোপের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়।
পবা থানার ওসি রমজান আলী জানান, পুলিশ রাত পৌনে ১০টায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি বলেন, পারিবারিক কোন্দলের জের ধরে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই এলাকার দুই মহিলাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো রোজিনা, জমেলা ও আবদুল আজিজ।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আউলিয়াবাদ আরকে উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নিলয় চক্রবর্তী রঘু (১৪) নিখোঁজ হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে উপজেলার বোয়ালিয়া নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের ধারণা অপহরণের পর নিলয়কে হত্যা করে খুনিরা লাশ ফেলে রেখে গেছে। গতকাল দুপুরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিলয় উপজেলার বহরা ইউনিয়নের বুরহানপুর গ্রামের রঞ্জিত চক্রবর্তীর একমাত্র সন্তান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, রোববার বিকাল ৫টায় নিলয়কে তার বাবা ৫০০ টাকা দিয়ে স্থানীয় মনতলা বাজারে পাঠান। এরপর নিলয় আর বাড়ি ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার বাবা গতকাল সকালে মাধবপুর থানায় একটি জিডি করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই নিলয়ের লাশ বোয়ালিয়া নদীতে পাওয়া যায়। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনা নদীতে অজ্ঞাত (২৫) এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া চৌধুরীপাড়া গ্রামে মেঘনা নদী থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে এলাকাবাসী মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে একটি লাশ নদীতে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। অজ্ঞাত (২৫) ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে। তার পরনে ছিল কালো সালোয়ার ও টিয়া রংয়ের কামিজ। পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা, দুষ্কৃতকারীরা তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে পালিয়ে যায়।
খাগড়াছড়ি : অপহরণের ৭ মাস পর রুবেল মিয়া (২৮) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুইমারার রসুলপুর এলাকার পাহাড়ি ঝিরি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, অপহরণ মামলার আটক আসামি জনির দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিকাল ৪টায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে হাত-পা বাঁধা গলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এএসপি (রামগড় সার্কেল) জহির আহমেদ জানান, চলতি বছর মে মাসে পরিবারের লোকজন রুবেল মিয়াকে (২৮) অপহরণ করা হয় বলে মাটিরাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ১১ ডিসেম্বর ঢাকার টঙ্গী থেকে মামলার প্রধান আসামি জনিকে পুলিশ আটক করে। রোববার খাগড়াছড়ি আদালতে তার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। রিমান্ডে সে রুবেল মিয়াকে অপহরণের পর মাটিতে পুঁতে রাখে বলে স্বীকার করে।
মাটিরাঙ্গা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, রুবেল মিয়া একজন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক। ৩০ মে রাতে সে তার মোটরসাইকেলে এক যাত্রীকে নিয়ে গুইমারা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। তার হত্যাকাণ্ডে জনিসহ তিনজন জড়িত। পুলিশ অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
বরগুনা : বরগুনা সদর রোডের উকিলপট্টির আবাসিক হোটেল প্রিন্স টাওয়ারের কক্ষ থেকে রোববার ভোররাতে আল মামুন গনি (৩০) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কক্ষে অবস্থানরত কথিত স্ত্রী নাসরিন (২২), বোর্ডিংয়ের ম্যানেজার বাদশা মিয়া ও পরিচারক সুমনকে আটক করা হয়েছে। বরগুনা পুলিশ সুপার মাহবুব হাকিম গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রিন্স টাওয়ারের মালিক মো. হারুনুর রশিদ জানান, রোববার দুপুর দেড়টার দিকে আল মামুন গনি ও নাসরিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের তৃতীয় তলার ৩০২নং কক্ষ ভাড়া নেয়। রাত ৩টার দিকে নাসরিন হোটেলের ম্যানেজার বাদশা মিয়াকে জানায়, তার স্বামী অচেতন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা ম্যানেজার তাকে জানালে তিনি বরগুনা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মামুনের লাশ উদ্ধার করে। গতকাল মামুনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ সময় মামুনের কক্ষ থেকে ৬২ হাজার টাকা এবং ৬টি মোবাইল সেট উদ্ধার করে পুলিশ।
নাসরিন সাংবাদিকদের জানান, তিনি বরগুনা সদর উপজেলার লেমুয়া গ্রামের মজিবর গাজীর মেয়ে। ছয় মাস আগে পাথরঘাটা উপজেলার হাড়িটানা গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মামুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। রোববার দুপুরে মামুন মোবাইল ফোনে তাকে প্রিন্স টাওয়ারে আসতে বলেন। রাতে তার স্বামী গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের ধারণা, মামুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment