Tuesday 7 December 2010

বগুড়ায় শাসক দলের পরিচয়ে কবরস্থান দখলের অপচেষ্টা


বগুড়া অফিস

শাসক দলের পরিচয়ে একটি চক্র বগুড়া শহরের কৈগাড়ী এলাকায় আহমদীয়া মুসলিম জামাতের কবরস্থান দখলের অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন আহমদীয়া মুসলিম জামাতের লোকজন। ওদিকে গতকাল দুপুরে বগুড়া ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন আমিনুর রহমান মাস্টারের দখলীয় ভাড়াটে দোকান উচ্ছেদ করেছে শাসক দলের লোকজন। বগুড়ায় এ দুটি ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলের মানুষজন।
বগুড়া প্রেস ক্লাবে গতকাল লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রেসিডেন্ট খন্দকার আজমল হক। তিনি জানান, বগুড়া শহরের কৈগাড়ী এলাকায় আহমদীয়া মুসলিম জামাতের কবরস্থান অবস্থিত। ওই কবরস্থান জমির পরিমাণ ৭৫ শতক, জেলা-বগুড়া, থানা-বগুড়া সদর হালে শাজাহানপুর, দাগ নং-২৫৮, জেএল নং-১২০, সিএস খতিয়ান নং-২৫, এমআরআর খতিয়ান নং-৩৩, ডিপি খতিয়ান নং-১০, মৌজা-কৈগাড়ী— যার আনজুমানে আহমদীয়া বগুড়ার নামে দলিলমূলে অছিম উদ্দিন মোল্লা, বাবা-মৃত হাজী মিয়াজান মোল্লা, সাং-চকমালগ্রাম, থানা ও জেলা-বগুড়া-এর কাছ থেকে ১৯৬১ সালে কেনা হয় এবং এটি সরকারিভাবে কবরস্থান হিসেবে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। ক্রয়ের সময় থেকে আজ পর্যন্ত জমিটি জামাতের কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কবরস্থানটির চারদিকে ইটের প্রাচীর দ্বারা ঘেরা। বর্তমানে আহমদীয়া জামাতের ২৩ মরহুম কবরস্থানে শায়িত রয়েছেন।
বেশ কিছুদিন বগুড়ার সূত্রাপুর এলাকায় বিপুল শেখ, পিতা মৃত কালু শেখ; হান্নান শেখ, পিতা মৃত কানচা কসাই সরকারি দলের লোকজনের ছত্রছায়ায় ওই সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের পাঁয়তারা শুরু করলে আহমদীয়া মুসলিম জামাত বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নং-১৬৭ পি/২০১০ (শাজাহানপুর) মোকদ্দমা দায়ের করে। ওই মামলায় গত ৪ অক্টোবর থেকে উল্লিখিত ব্যক্তিদ্বয় বিবাদীদের বিরুদ্ধে বর্ণিত তফসিল জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না মর্মে আদেশ দেন। এর ফলে আহমদীয়া মুসলিম জামাত নিম্ন তফসিল সম্পত্তিতে আদালতের আদেশের বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিপুল তার দলবল শাসক দলের নাম ভাঙিয়ে কবরস্থান দখলের পাঁয়তারা করে এবং একাধিকবার ওই স্থানে মহড়া দেয়। উল্লেখ্য, কবরস্থান জমির ওপর অবৈধ অনুপ্রবেশের আদেশের তারিখ গতকাল শেষ হলে উল্লিখিত লোকজন তা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এদিকে ওই কবরস্থান এলাকায় গতকাল যাওয়া হলে জানা যায়, আহমদীয়া মুসলিম জামাত রেজিস্ট্রিমূলে যে ৭৫ শতক জমি দাবি করে আসছে, আসলে তাদের জমির পরিমাণ সঠিক নয়। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ওই কবরস্থানের কিছু অংশ জমি নিয়ে বিবাদ এবং কোর্টে মামলা রয়েছে। অপরপক্ষ তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
আহমদীয়া মুসলিম জামাত বগুড়ার প্রেসিডেন্ট খন্দকার আজমল হক, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও আহমদীয়া জামাতের স্কুলশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম আমার দেশ’কে অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক দলে মদতপুষ্ট হয়ে ওই বিপুল শেখ ও হান্নান শেখ শাসক দলের ছত্রছায়ায় দলবল নিয়ে তাদের জমি দখলের অপচেষ্টা করছে এবং কবরস্থান জমি দখল করবে মর্মে প্রচারণা চালাচ্ছে।
এদিকে এ জমি নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তাদের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেছেন, ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে এবং এ আদেশের বিরুদ্ধে বর্ণিত বিবাদী বিপুল শেখ উচ্চ আদালতে আপিল করেছে, যার শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩ জানুয়ারি ২০১১। অথচ বিপুল শেখ শাসক দলের নাম ভাঙিয়ে তার দলবল নিয়ে আদালতের শুনানির দিনের আগেই কবরস্থান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে আহমদীয়া মুসলিম জামাত এই প্রচেষ্টা রোধে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে।
এদিকে গতকাল দুপুর ১২টায় শাসক দলের লোকজন ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে আমিনুর রহমান মাস্টারের দখলকৃত একটি দোকান দখল করে নেয়। অভিযোগে জানা যায়, আমিনুর রহমান মাস্টারের কাছ থেকে ১৫ বছর আগে আকরাম হোসেন দোকানঘরটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। গতকাল হঠাত্ করেই শাসক দলের নেতা ফেম-লিটন ও নজরুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এসে দোকানঘরটি ভেঙে দেয়। ঘরের ভাড়াটিয়া সূত্রে জানা গেছে, কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই তারা অতর্কিতভাবে দোকানটি ভেঙে ফেলে। এমনকি দোকানের মালামাল সরাতে কোনো সময় দেয়া হয়নি। দোকানঘরটির মালিক আমিনুর রহমান। স্থানীয় পৌর কমিশনার আবদুর রহিম জানান, ওই সম্পত্তির পার্শ্ববর্তী জায়গা নিয়ে মালিকের বিরোধ থাকলেও সালিশের আগেই তা জোর করে ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় শত শত লোক জড়ো হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই শাসক দলের নেতারা দোকানঘরটি ভেঙে ফেলে বীরদর্পে চলে যায়। বগুড়ায় একদিকে কবরস্থান দখলের প্রক্রিয়া এবং প্রকাশ্যে দোকানঘর ভাংচুরের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীসহ সব মহলের মানুষজন

No comments:

Post a Comment